সিদ্ধিরগঞ্জ লেক
ঝুলে গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ লেক প্রকল্পের কাজ
অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বেড়েছে জনসংখ্যা। এলাকাটিতে শুধু রপ্তানিমুখী আদমজী ইপিজেডেই কাজ করেন প্রায় লাখের কাছাকাছি শ্রমিক। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ।
ক্রমবর্ধমান শিল্পপ্রতিষ্ঠান আর বাড়িঘরের কারণে অঞ্চলটি অনেকখানি হারিয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য— ক্ষেত্র বিশেষে নেই বললেই চলে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াতে আর নগরবাসীকে হাতিরঝিলের পরিবেশ উপহার দিতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন বড় প্রকল্প হাতে নেয় সিটি করপোরেশন। এসব প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ লেক।
সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুনঃখনন, সড়ক, ড্রেন, ওয়াকওয়ে ও ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মে দুই ধাপে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ আটকে যাওয়ায় জনভোগান্তি চরমে
নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা পুল থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং লেকটির ওপর মোট ছয়টি সেতু নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।
মূলত জাইকার অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর বছরখানেকের মধ্যে তা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে করোনা মহামারি আর অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণে সেই কাজের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু, তা পেরিয়ে হয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবুও লেকের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের মাত্র ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে লেক খননে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন তৈরিতে ৪ কিলোমিটার, আরসিসি সড়ক সাড়ে ৫ কিলোমিটার, সিসি ব্লক দিয়ে খালের পাড় বাঁধাই, ডিভাইডার ওয়াল নির্মাণে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, নৌকা চালনার ৯টি ঘাট, তিনটি ভাসমান মঞ্চ, তিনটি ওয়াটার গার্ডেন, তিনটি ঝুলন্ত বাগান, ৯টি পাবলিক টয়লেট, দুটি ফোয়ারা, দুটি ওয়েটিং শেড, ১৫টি প্ল্যান্টার বক্স, ২৮টি ডাস্টবিন, সড়কবাতি সিঙ্গেল ২৮টি এবং ডাবল ১৮২টি, দোলনা ছয়টি, সুইং স্লাইড দুটি, সাতটি ঢেঁকিকল, সেতুর মই তিনটি, ১৩২টি সিটিং বেঞ্চ, তিনটি আরসিসি সেতু এবং তিনটি ফুটওভার ব্রিজ।
লেকের কাজটি শুরু হওয়ার পর থেকে হাতিরঝিলের আদলের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন নগরবাসী। এটি এখন বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে।
লেকে হাঁটতে আসা সালাম নামের এক যুবক বলেন, ‘প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর যেভাবে বলা হয়েছিল তার কিছুই দেখতে পেলাম না। এক বছরের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। আমরা নিয়মিত এই লেকে হাঁটি— আড্ডা দেই। আমরা চাই লেকের কাজটি সম্পন্ন হোক। তাতে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারব।’
জামাল নামের আরেকজন বলেন, ‘ডিএনডি লেকের কাজ অর্ধেক করেই আটকে রাখা হয়েছে। কাজটি শেষ হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আজগর হোসাইন বলেন, প্রকল্পটি ৫ দশমিক ২ কিলোমিটারের। এরমধ্যে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি মূলত জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ছিল। হঠাৎ জাইকা তা বন্ধ করে দেওয়ায় কাজটি শেষ হয়নি। এখন বাকি যে অংশটুকু রয়েছে, সেটুকু নতুন করে বাজেটের পর শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে নিরাপত্তা জোরদার করে খুলে দেওয়া হয়েছে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান
৩১৯ দিন আগে