ট্রাম্পের শুল্কারোপ
দেশগুলো ট্রাম্পের শুল্কারোপের পাল্টা জবাব দেবে কীভাবে?
কোনো কথার কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা-মেক্সিকো ও চীনের ওপর চড়া শুল্কারোপ করে সেটিই প্রমাণ করলেন। এরমধ্য দিয়ে ওভাল অফিস থেকে প্রথম তোপধ্বনি ছুড়লেন তিনি।
বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কতটা শক্তিশালী থাকে, তার ওপর নির্ভর করছে দেশগুলো কীভাবে এই শুল্কারোপের জবাব দেবে।
বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় এরআগে কখনো এমন ধাক্কা লাগেনি। প্রথমে ইউরোপের বিরুদ্ধে একই ধরনের শুল্কারোপের প্রস্তুতি নিয়েছেন ট্রাম্প। পরে সেটা সার্বজনীন পর্যায়ে কমিয়ে আনা হয়েছে।
সবমিলিয়ে বিশ্ব আবারও একটা বাণিজ্যযুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেটার ফল কী আসবে? বিশ্ব কীভাবে জবাব দেবে? এসবের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী অর্জন করতে যাচ্ছেন?
শুল্কারোপ নিয়ে নিজের যুক্তিতে বারবার পরিবর্তন আনছেন ট্রাম্প—বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় হয় বলপূর্বক কূটনৈতিক পরিবর্তন কিংবা বড় অংকের রাজস্ব বাড়াতে জোর দিতে হয়েছে তাকে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো-কানাডা ও চীনা পণ্যে ট্রাম্পের শুল্কারোপ, বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা
তবে সব অর্জন ট্রাম্প একইসাথে করতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অভিজ্ঞতা থেকে উদহারণ দিয়ে বলা যেতে পারে—তখন হোয়াইট হাউসকে কিছুটা জয় এনে দিতে আরও বেশি মার্কিন পণ্য কেনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে পশ্চিমা কূটনীতিকদের।
এবারও সেই প্রবণতা থাকুক কিংবা না-থাকুক, সেটা কোনো বিষয় না; বিজয়ের ছক কষতে কর্মকর্তাদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই তাড়া দেবেন।
এখানে কী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাই ট্রাম্পের লক্ষ্য?
প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদক ফেনটানিলের প্রবাহ রোধ করতে কানাডা-মেক্সিকো ও চীনকে সাজা দিচ্ছেন তিনি। সাধারণত এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু জরুরি পদক্ষেপের অজুহাতে নির্বাহী আদেশে এই শুল্কারোপকে আইনসিদ্ধ করছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপের জবাব দেবে কানাডা, মেক্সিকোর ধীরে চলার নীতি
মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি কানাডা অনেকটা তেজি মনোভাব দেখিয়েছি। মানে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রবণতা দেখায়নি উত্তর আমেরিকার দেশটি। এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বি মার্ক কারনি।
‘আমরা পাল্টা পদক্ষেপ নেব...ডলারের বদলে ডলার,’ বলেন তিনি। ফেনটানিলের অজুহাতকে পরিহাস করে তিনি বলেন, ‘কানাডা এসব ধমকের মোকাবিলা করবে।’
জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত কিংবা জি সেভেনের সভাপতি হতে পারুক কিংবা না পারুক মার্ক কারনির এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর হিসেবে জি২০ ও জি সেভেন বৈঠকে সরাসরি ট্রাম্পকে প্রত্যক্ষ করেছেন মার্ক কারনি। সেখান থেকে তার একটি স্পষ্ট ধারণা জন্মেছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেবল শক্তিমত্তাকে সমীহ করেন।
যেসব দেশ চুপচাপ থাকতে চায় ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের চোখে চোখ রাখতে চায় না, তাদের জন্য একটি গোপনীয় সতর্কবার্তা রয়েছে তার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের প্রতিই জোর দিচ্ছেন ইউরোপীয় বাণিজ্য আলোচকরা। এমনকি গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে ন্যাটোমিত্র ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্কারোপের হুমকি দিলেও সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে দেখা গেছে তাদের।
প্রশ্ন হচ্ছে—এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে বিশ্বের অন্য দেশগুলো, অন্তত নীরবে, সহযোগিতা করে যাবে কিনা? প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের প্রভাবশালী সমর্থক হলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক। এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন তিনি।
এতে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণভাবেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্বন বাণিজ্য কর প্রয়োগের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হলেও এই প্রভাব পড়তে পারে।
আসলে এসব কিছু নির্ভর করছে, যুক্তরাষ্ট্র কতটা শক্তিশালী থাকে, তার ওপর। কোনো কোনো দেশের জন্য বিকল্প উৎস থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্ব যখন এক অজানা গন্তব্যে, তখনই প্রতিনিয়ত এই শুল্কারোপের হুমকি বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
৩০৬ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপের জবাব দেবে কানাডা, মেক্সিকোর ধীরে চলার নীতি
কানাডীয় পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে যে কোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প খুবই ভালো আলোচক, তিনি তার আলোচনার অংশীদারকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চান।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরআগে সোমবার কানাডা ও মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে ব্যাপক শুল্কারোপের আভাস দিয়েছেন তিনি, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে।-খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের।
যদিও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার করলেও শুল্কারোপের বিষয়ে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। আর ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে ট্রুডো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ অনিশ্চয়তা ডেকে আনে, পরবর্তী আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতার অপেক্ষায় থাকুন।’
আমেরিকায় যে সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ট্রাম্প করেছেন, সে জন্য কানাডীয় সম্পদের প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রুডো বলেন, আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেক প্রয়োজনীয় যোগান কানাডা সরবরাহ করে। কাজেই দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য তা অপরিহার্য।
এদিকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে বসার কথাও বলেছেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ আগের মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানিয়ে ক্লাউদিয়া বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করবো।’
‘গতকাল ট্রাম্প যেসব ডিক্রিতে সই করেছেন, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমি বলতে চাই: মেক্সিকোর জনগণ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার সুরক্ষা দেব।’
তিনি যখন এমন অঙ্গীকার করেন, তখন দেশটির পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দুই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ক্লাউদিয়া বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।’
গেল অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মেক্সিকোর এই বামপন্থি নেতা। ক্লাউদিয়া দেশটির প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট। তবে মেক্সিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের যে আভাস ট্রাম্প দিয়েছেন, পাল্টা জবাবে মার্কিন পণ্যে কোনো শুল্কারোপের হুমকি তিনি দেননি। ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ক্লাউদিয়া।
এরআগে যদি মেক্সিকান পণ্যে মার্কিন সরকার শুল্কারোপ করে, তাহলে সমানভাবে জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ক্লাউদিয়া ও তার অর্থমন্ত্রী। দেশটির আশি শতাংশ রফতানির গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
৩১৭ দিন আগে