বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)
একটি সাংবাদিক ফোরামের জন্যই ১৫ লাখ টাকা, প্রশ্নের মুখে বিএসইসি
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে একটি নির্দিষ্ট ফোরামের সাংবাদিকদের জন্য ১৫ লাখ টাকার ‘বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস অ্যান্ড ফেলোশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করেছে।
তবে সর্বজনীন সুবিধা না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ফোরামের সাংবাদিকদের এ সুযোগ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার (১৬ জুন) কমিশন জানায়, পুঁজিবাজারের ওপর স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য এবং গবেষণামূলক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে এই অ্যাওয়ার্ডস-ফেলোশিপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের ১৬ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত অ্যাওয়ার্ডস এবং ফেলোশিপের জন্য আবেদনের আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।
এই প্রোগ্রামের এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে তিন ক্যাটাগরিতে (প্রিন্ট, অনলাইন, ইলেকট্রনিক) তিনজন সাংবাদিককে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার নগদ অর্থ ও একটি ক্রেস্ট দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএসইসি।
এছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিজম ফেলোশিপের আওতায় পাঁচ লাখ টাকা ও দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পৃথক দুটি ফেলোশিপের ঘোষণা দিয়েছে কমিশন।
কমিশন জানায়, এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিএসইসি পুঁজিবাজার বিষয়ক সাংবাদিকতায় দায়িত্বশীলতা, নৈতিকতা ও সততাকে উৎসাহিত করতে চায়, যা দেশের পুঁজিবাজার ও সর্বোপরি অর্থনীতির গতিশীলতাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
এই ফেলোশিপ সাংবাদিকদের বৈশ্বিক আর্থিক বাজার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করবে, তাদের বিশ্লেষণী দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং নৈতিক সাংবাদিকতার মানদণ্ড নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বলে জানায় কমিশন।
তবে বিএসইসির অ্যাওয়ার্ডস ও ফেলোশিপের যোগ্যতায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট একটি সাংবাদিক ফোরামের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শুধু যারা সেই ফোরামের নিয়মিত সদস্য তারাই আবেদন করতে পারবেন।আরও পড়ুন: সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নে আন্তরিক: বিএসইসি চেয়ারম্যান
একটি নির্দিষ্ট ফোরামের সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের সুযোগ দেওয়ায় বিএসইসির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। ফোরামের বাইরের সাংবাদিকরা বলছেন, এ ধরণের সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক এবং নীতিবিরুদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির ডেপুটি চিফ রিপোর্টার মোস্তফা মাহবুব বলেন, ‘যদি নির্দিষ্ট সাংবাদিক ফোরামের সঙ্গে যৌথভাবে কমিশন এ আয়োজন করে থাকে, তাহলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যদি কমিশন নিজে থেকে উদ্যোগ নেয় তাহলে এটি সঠিক নয়।’
যদিও কমিশনের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যৌথ সমন্বয়ের কোনো কথা উল্লেখ নেই এবং পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কমিশনের উদ্যোগে সাংবাদিকদের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে কমিশন বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাহবুব বলেন, ‘যদি একটি নির্দিষ্ট ফোরামের জন্য এ সুবিধা হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোনো মানে হয় না। আবার ফেলোশিপের যোগ্যতা এবং আবেদন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট ফোরামের সদস্য নাম্বার থাকার বাধ্যবাধকতার মধ্যেও সাংঘর্ষিকতা আছে।’
বিএসইসির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, তিন বছর ধরে পুঁজিবাজার নিয়ে রিপোর্টিং করছে সরকারের এমন নিবন্ধিত ও বাংলাদেশি মালিকানাধীন সংবাদপত্র বা অনলাইন সংবাদমাধ্যম বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে ফেলোশিপের সুবিধা শুধু ফোরামের সদস্যদের মধ্য থেকেই দেওয়া হবে।
কিন্তু অ্যাওয়ার্ডস এবং ফেলোশিপের জন্য নেই কোনো আলাদা আবেদন প্রক্রিয়া, আবেদন করতে গেলে লাগছে ফোরামটির সদস্য নম্বর।
এ প্রসঙ্গে আরেক বেসরকারি চ্যানেল সময় মিডিয়া লিমিটেডের বিজনেস ডেস্ক কোওর্ডিনেটর কামরুল সবুজ বলেন, ‘এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। যে অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ নির্দিষ্ট কিছু সাংবাদিকদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো দূরভিসন্ধিমূলক।’
অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপের পুরো ব্যাপারটি নিয়ে ফোরামের বেশ কয়েকজন সদস্যও বিব্রত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফোরামের সদস্য এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘যদি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ পুঁজিবাজার রিপোর্টিং-এর জন্য এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবং ফেলোশিপের উদ্দেশ্য যদি থাকে পুঁজিবাজার বিষয়ে সাংবাদিকদের আরও দক্ষ করা, তাহলে ফোরামের মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে এ সুযোগ সর্বজনীন করা উচিত ছিল কমিশনের।’
পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি কমিশন। বিএসইসির মুখপাত্র এবং পরিচালক আবুল কালাম বলেন, ‘এভাবেই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং সেই নীতিমালার আলোকেই অ্যাওয়ার্ড-ফেলোশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক পদের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাংবাদিকদের অ্যাওয়ার্ড-ফেলোশিপের নামে উৎকোচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন কমিশন। শিবলী কমিশন পুঁজিবাজারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু তাদের সময়ও এরকম অসামঞ্জস্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, যা বর্তমান কমিশন নিয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের এক সদস্য জানান, ‘বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী নেগেটিভ ক্যাম্পেইন করে আসছে। হয়তো সেই গোষ্ঠীটিকে আটকাতেই আরেক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন তিনি।’
তবে এসব না করে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের উত্তর মিডিয়ার সামনে নিজেরই দেয়া উচিত বলে মনে করেন টাস্কফোর্সের এ সদস্য।
১৭১ দিন আগে
বাজারে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়বে ডাচ-বাংলা ব্যাংক
বেসরকারি ব্যাংক ডাচ-বাংলা পিএলসিকে বাজারে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেট বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আন্তর্জাতিক নীতিমালা ব্যাসেল-৩ অনুসারে, মূলধন বৃদ্ধিতে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাজারে বন্ড ছাড়ার অনুমতি চায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ডাচ বাংলাকে বাজারে বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগকারীদের বাজার বিমুখের ব্যাখ্যা দিল বিএসইসি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, আন সিকিউরড, নন-কনভার্টেবল ও রিডিমেবল ক্যাটাগরির মোট ১ হাজার ২০০ বন্ড বাজারে ছাড়বে ব্যাংকটি। প্রতিটি বন্ডের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
গতবছর তৃতীয় প্রান্তিকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৮ পয়সা। ২০২৩ সালে একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৯৭ পয়সা।
২০২৪ সালের তিন প্রান্তিক মিলিয়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা। ২০২৩ সালের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ৭১ পয়সা আয় হয়েছিল ডাচ-বাংলার।
আরও পড়ুন: বাজার অস্থিরতার মধ্যেই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি বিনিয়োগকারীদের
৩১৬ দিন আগে