জিম্মি মুক্তি
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি
গাজায় ৬০ দিনের নতুন যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করতে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৭ আগস্ট) কাতার ও মিসর যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল, সেটি গ্রহণ করেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামাস।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য বাছেম নাইম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীদের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে হামাস। এর মধ্য দিয়ে গাজার মানুষ সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়ছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মির প্রায় অর্ধেককে দুই দফায় মুক্তি দেবে হামাস, বিনিময়ে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। একইসঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাও চলবে বলে জানিয়েছে মিসরের একটি সূত্র।
হামাসের সম্মতির বিষয়টি ইসরায়েলি সরকারও অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির দুই কর্মকর্তা। তবে তারা সিএনএনকে বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার শর্তেই কোনো চুক্তি যাবে তেল আবিব।
এমন একটি সময়ে এই প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি এল, যখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির জন্য রোববার সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এসব বিক্ষোভ হামাসের দর কষাকষির অবস্থানকে আরও শক্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
কাতার ও মিসরের নতুন প্রস্তাবটি গতকাল সোমবার ইসরায়েলের কাছে উপস্থাপনের কথা ছিল। তবে ইসরায়েল আর কোনো আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী নয় বলে জানান নেতানিয়াহু।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হবে, যখন হামাস একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে, নিরস্ত্র হবে এবং গাজার সামরিকীকরণ শেষ করতে সম্মত হবে। হামাসের সম্মতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস তীব্র চাপে রয়েছে।’
এদিকে, সম্প্রতি সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। গাজায় প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এই অভিযান শুরুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।
তবে দীর্ঘমেয়াদে দখলে রাখার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা গাজাকে নিজেদের দখলে রাখতে চাই না। আমরা সেখানে একটি নিরাপত্তা বলয় চাই।’
তবে এই পরিকল্পনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাহারে একের পর এক মৃত্যু ঘটে চলেছে। এ পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ালেন ট্রাম্প
গত জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নতুন করে আলোচনা শুরু করতে নতুন এই প্রস্তাব এনেছে কাতার ও মিসর।
সিএনএন বলছে, মিসর ও কাতারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবটি গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া দুই পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে। তার প্রস্তাবের ৯৮ শতাংশই সর্বশেষ প্রস্তাবে বজায় রাখা হয়েছে। ইসরায়েল ওই প্রস্তাবে আগেই সম্মতি দিয়েছিল। মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে চাপ দিয়েছেন।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবে ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১৫ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ৬০ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এ ছাড়া সব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নারী বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নয়ন বিবেচনায় উইটকফকে কায়রোয় আসার আমন্ত্রণ জানাবে মধ্যস্থতাকারীরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই দফা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-মুক্তির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
১০৭ দিন আগে
গাজায় ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি ইসরায়েলের
দুদিনের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে গাজাবাসীর জন্য ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এমন হুমকি দিয়েছেন।তার এই হুমকিকে পরোয়া করছে না বলেও পাল্টা জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এতে দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আগামী শনিবারে (১৫ ফেব্রুয়ারি) তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে স্থানীয় সময় সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানায় হামাসের সামরিক শাখা কাশেম ব্রিগেডের এক মুখপাত্র।
হামাসের এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির পুরোপুরি লঙ্ঘন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
হামাসকে হুমকি দিয়ে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “হামাস যদি জিম্মি মুক্তির সময়সীমা মেনে না চলে, ‘তীব্র লড়াই’ শুরু করবে ইসরায়েল।”
আরও পড়ুন: চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ: জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে না হামাস
নেতানিয়াহু আরও বলেন, তিনি গাজার ভেতরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো ও রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
এ ছাড়াও হামাসের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবারের মধ্যে বন্দিবিনিময় সম্পন্ন না করা হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হওয়া উচিত।’
তবে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছে হামাস। গতকাল মঙ্গলবার হামাসের এক নেতা সব ধরনের হুমকি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘কেবল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চললেই গাজা থেকে জিম্মিদের ফেরত নিতে পারবে ইসরায়েল।’
এ পরিস্থিতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো চুক্তি বজায় রাখতে তৎপরতা শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসরে অবস্থান করছে।
এই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিসরীয় কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল ও গাজা একটি সমঝোতায় আসতে চলেছে। গাজায় আরও বেশি তাঁবু, আশ্রয়কেন্দ্র ও ভারী সরঞ্জাম পাঠানোতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাওই বলেন, শনিবারে ৩ ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ রয়েছে। তবে চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা তারা পাননি।
চুক্তি বজায় রাখার এই চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
২৯৪ দিন আগে