জুলাই শহীদ
জুলাই শহীদ পরিবারে অনুদান-ভাতা বণ্টনে সরকারের নতুন বিধিমালা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে দেওয়া এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমান তিন ভাগে বণ্টনের বিধান রেখে নতুন বিধিমালা জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারি সহায়তাকে কেন্দ্র করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক শহীদ পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার বণ্টনের এই পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিল।
সমস্যা সমাধানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসব দ্বন্দ্ব মেটাতে হয়রান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতিনিয়তই এ বিষয়ে বিচার-সালিশ আসছে। এমনকি শহীদদের উত্তরাধীকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যার যার ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন মেনে সহায়তার এককালীন অর্থ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের অনেক সদস্য এটি মানছিলেন না। যেহেতু অনুদান-ভাতার অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোনো সম্পদ নয়, তাই এটি কেন ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টন করা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বিধিমালা করে সহায়তার অর্থ বণ্টন করার পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। সরকারিভাবে জুলাই শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র চলতি (২০২৫-২০২৬) অর্থবছরে দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই থেকে শহীদ পরিবারকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানায় সরকার। এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, পরে অবশ্য আটজনের গেজেট বাতিল করা হয়।
গত ৭ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও সরকারি এসব সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিধিমালা করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই শহীদদের পরিবারের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব দেখছি, শহীদদের জন্য যে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে। কে টাকাটা পাবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। এজন্য একটি বিধি করে দেওয়া হবে। কে কতটুকু অংশ পাবে সেটা বিধিতে উল্লেখ করা হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তার অর্থ কীভাবে বণ্টন করা হবে সেটি বিধিমালয় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে অনুদানের প্রথম কিস্তির যে অর্থ বণ্টন করা হয়েছে সেটি বিধিমালা অনুযায়ী সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। অনুদানের বড় অংশটি চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে; এটি বিধিমালা অনুযায়ী হবে। এই অর্থ বিতরণের কাজটি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার মাধ্যমে জুলাই শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি গাইডলাইন পেলাম। প্রাথমিকভাবে কোনো বিধি-বিধান না থাকায় আমরা ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছিলাম। এখন বিধিমালা অনুযায়ী সহযোগিতার কার্যক্রম চলবে।’
অর্থ যেভাবে বণ্টন হবে
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে শহীদদের স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান এবং মাতা ও পিতার মধ্যে সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা তিন ভাগে বণ্টন করতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক স্ত্রী থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
শহীদের ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তানও আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক সন্তান থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শহীদের বাবা-মা আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে মা ও বাবার অনুকূলে দেওয়া আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। আবার মা ও বাবার মধ্যে কোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন আর্থিক সহায়তা উভয়ের সম্মিলিত অংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই পাবেন। তবে যদি শহীদের স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তবে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আর্থিক সহায়তার অংশটি শহীদের সন্তান ও বাবা মায়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে।
তবে সন্তান না থাকলে সন্তানের সহায়তার অংশটি স্বামী বা স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। আর যদি বাবা-মা না থাকেন, তবে বাবা-মায়ের অংশ স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে।
এ ছাড়া কোনো অবিবাহিত ব্যক্তি শহীদ হলে তার জন্য প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা তার বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করতে হবে। তবে বাবা ও মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাতাপ্রাপ্ত সদস্য মারা গেলে ভাতা বন্ধ
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের মাসিক ভাতা সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো সদস্য মারা গেলে মারা যাওয়ার তারিখ থেকে ভাতার অবসান ঘটবে। পরবর্তী সময়ে এ ভাতা শহীদ পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দাবি করতে পারবেন না।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করলে বিয়ে হওয়ার তারিখ থেকে তার মাসিক অনুদান বা ভাতার অংশের অবসান ঘটবে। পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এই ভাতা পাবেন না।
এককালীন সহায়তা গ্রহণের আগে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তা তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। শহীদ পরিবারের মত এক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে তার মাসিক ভাতার অংশের অবসান ঘটবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে ‘শহীদ’
বিধিমালায় জানানো হয়েছে, যদি কোনো জুলাই যোদ্ধা অভ্যুত্থানের সময় এক বা একাধিক শারীরিক আঘাতজনিত কারণে অতি গুরুতর হয়ে অব্যাহতভাবে দেশে বা বিদেশে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন এবং তার পরিবার সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা এককালীন ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের পরিবার সঞ্চয়পত্র পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে যদি তিনি আহত হিসেবে এককালীন আর্থিক সহায়তা নেন, সেই অংশ কেটে রাখা হবে। একই সঙ্গে তার পরিবার শহীদ পরিবারের মতো মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
যেভাবে চিকিৎসা নিতে হবে
সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতাল সব শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবে।
চিকিৎসা সহায়তা নিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো লিখিত আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। তবে সেবা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দেওয়া পরিচিতিমূলক হেলথ কার্ডের মূল কপি দেখিয়ে জুলাইযোদ্ধার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
কল্যাণ-পুনর্বাসনের জন্য ৩ কমিটি
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য তিনটি কমিটি থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বিধিমালায় তিনটি কমিটির গঠন ও কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
পুনর্বাসনে বিধির প্রয়োগ
শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বা প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিধি দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিধি না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি অনুযায়ী পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ সম্পাদন করা যাবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।
পুনর্বাসনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক; ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স-বিষয়ক; ডিজিটাল মার্কেটিং, আইটি সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট; ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল সার্ভিসিং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মেকানিক্যাল ও অটোমোবাইল-বিষয়ক; ড্রাইভিং, আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও প্রকৌশল-বিষয়ক; খাদ্য ও আতিথেয়তা-বিষয়ক; বিউটিফিকেশন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস; বস্ত্রশিল্প-বিষয়ক; কৃষি, নার্সারি, গবাদি পশুপালন, মৎস্য হ্যাচারি ও মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি ফার্মিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।
উপার্জনমুখী কাজ বা আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি দিতে অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশ বোর্ড
আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিতে একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে। শহীদ পরিবারের বিরোধ-সংশ্লিষ্ট সদস্য, গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মনোনীত কমপক্ষে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, দুই পক্ষের ভিত্তিতে মনোনীত একজন সালিশকারীর সমন্বয়ের সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
১০১ দিন আগে
জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা: প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। জুলাই শহিদদের আত্মত্যাগই আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, জুলাই শহিদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথচলার প্রেরণা, তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা। আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে দেশজুড়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আজ আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে স্মরণ করছি এমন এক দিনকে, যা এ দেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়—এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।
আরও পড়ুন: হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ এনেছে: প্রধান উপদেষ্টা
এ সময় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
তবে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এ দেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায়—১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এ দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ ১৬ বছর ধরে ক্রমাগত হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফল করেও তারা চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরি ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর তদবিরের বাণিজ্য। যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি, সে চাকরি পায়নি।
সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি ছিল মূলত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটি হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি। এই দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল, যারা আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে ও কাজ করবে। স্বৈরাচারের পক্ষের সঙ্গী হলেই চাকরি মিলবে, কাজ পাওয়া যাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এই ধরনের সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছিল। এ দেশের গরিব মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা একেকজন টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছিল। সীমাহীন দুর্নীতির কবলে পড়ে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
ড. ইউনূস বলেন, এই দেড় যুগে প্রতিটি ন্যায্য দাবি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত ১৬ বছরে যারা সরকারের সমালোচনা করেছে বা নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের গ্রেপ্তার কিংবা গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে নির্বিচারে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষ সবাই একত্রিত হয় এক নতুন দিনের প্রত্যাশায়। সমস্বরে তারা বলে ওঠে—এবার ফ্যাসিবাদকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, তবুও দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা চালায় ফ্যাসিবাদী সরকার। তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য গোপন করতে চেয়েছে, রাতের অন্ধকারে এলাকায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন আহতদের ভর্তি না করা হয়। এর ফলে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়ে গেছে।
ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে’ আমি জাতির সূর্যসন্তান—জুলাই শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিয়েছেন—জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই জাতি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
তিনি বলেন, আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি—আমরা একটি শপথ নিতে এসেছি। শপথ এই যে—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র—একটি রাষ্ট্র, যা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ শহিদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ ও যাবতীয় বিষয়াদির প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহিদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে মোট ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট পরিবারের কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তির পর তাদেরও সঞ্চয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল: শফিকুল আলম
এ ছাড়া আহত ১৩ হাজার ৮০০ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ অর্থ ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং চিকিৎসা ব্যয় বাবদ এ পর্যন্ত ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে সব শ্রেণির আহত ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই শহিদ’ ও আহতদের জন্য আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে জুলাইয়ের মহানায়কদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে—যখন এই দেশকে আমরা একটি সত্যিকারের জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
১২২ দিন আগে
রায়েরবাজারে অজ্ঞাত ১১৪ জুলাই শহীদের গণকবর রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অজ্ঞাত ১১৪ জন জুলাই শহীদের গণকবর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে গিয়ে গণকবর পরিদর্শন করার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
এ সময় আন্দোলনে নিহতদের কবরগুলো ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই কবরস্থানে ১১৪ জনের গণকবর রয়েছে, যাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
‘আগে নিহতদের পরিবারের লোকজন রাজি না থাকলেও এখন তারা শনাক্তে রাজি হয়েছেন। এজন্য আমরা মরদেহের ডিএনএ শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এরপর পরিবার চাইলে লাশ এই কবরস্থানে রাখতে পারবে, আবার অন্যত্রও সরিয়ে নিতে পারবে।’
আরও পড়ুন: পাঁচ আগস্ট ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তার শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রায়েরবাজার কবরস্থানের নির্মাণকাজে দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী—ইট, সুড়কির মান খুবই খারাপ।’
আফসোস করে তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষগুলোর কবরস্থান নির্মাণে যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে কীভাবে চলবে?’ এসব দুর্নীতির খবর ফুটিয়ে তোলার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, যারা অন্যায় করেছে, তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে মোহাম্মদপুর থানা পরিদর্শন করেন তিনি।
১২৫ দিন আগে
আমরা জুলাই শহীদদের ভুলতে দেবো না: ড. মাহমুদুর রহমান
জুলাই শহীদদের দেশের সম্পদ উল্লেখ করে আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমরা জুলাই শহীদদের ভুলতে দেবো না। তাদের বীরত্বের কাহিনী প্রচার করব।
তিনি বলেন, ‘খুনি শেখ হাসিনা নিজেই গণহত্যার নির্দেশদাতা। আমি আশা করব, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তার বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে।’
ভারত সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, খুনি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন, অনতিবিলম্বে তাকে বাংলাদেশে পাঠান।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জুলাই বিপ্লব-২৪’র শহীদ পরিবারের সদস্য, পঙ্গুত্ববরণকারী ও আহতদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর এই মতিবিনিময় সভার আয়োজন করে।
পড়ুন: হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেন মাহমুদুর রহমান
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, শহীদদেরকে নিয়ে দলীয়করণ করবেন না, তারা আমাদের সম্পদ। জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে এমন আয়োজনের জন্য জামায়াতকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই শহীদেরা রক্ত দিয়ে মুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে বলে আমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছি, মায়ের জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে পেরেছি। আমারদেশ পত্রিকা শহীদদের নিয়ে নিয়মিত ধারাবাহিক নিউজ করছে। আমরা জুলাই শহীদদের ভুলতে দিবো না। তাদের বীরত্বের কাহিনী প্রচার করব।
তিনি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দোসর ও শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
এতে ঢাকা মহানগরী উত্তর এলাকার শহীদ পরিবারের সদস্য, পঙ্গুত্ববরণকারী ও আহত পাঁচ শতাধিক জুলাই যোদ্ধা মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন ও বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন।
পড়ুন: চলতি মাসেই ‘জুলাই সনদ’ সম্ভব: আলী রীয়াজ
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল চব্বিশ নিয়ে টিপ্পনী কাটে, যা দু:খজনক। আপনাদের আস্ফালন জুলাই যোদ্ধাদের সামনে টিকবে না। অবিলম্বে ৫ আগস্টের মধ্যে সকল জুলাই শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন করা, তাদের সুরক্ষা আইন, আহতদের প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।
১৪৬ দিন আগে
জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদেরকে দেওয়া সহায়তা যথেষ্ট নয়: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের যে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
এ সময় আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের অবদানেই নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে উল্লেখ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
রবিবার (৯ মার্চ) খুলনা জেলা শিল্প কলা একাডেমীতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘আহত যোদ্ধাদের পাশে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রবিবার (৯ মার্চ) গণমাধ্যমে দেওয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. মামুন হাসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: মাংস-ডিম আমদানিতে নিরুৎসাহিত করলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৪ এ ছাত্র জনতার আন্দোলন আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে; অন্যায় এবং অবিচার বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ মানুষ কখনোই মেনে নেয় না। তাদের এ আত্নত্যাগেই বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে।’
বর্তমান সরকার আহতদের যতদিন প্রয়োজন ততদিন চিকিৎসা সুবিধা দেবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। আহত এবং শহীদ পরিবারদের সহায়তার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর হচ্ছে বলে জানান ফরিদা আখতার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যে ছাত্ররা সুস্থ আছেন, তারা নারী নির্যাতন বন্ধসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সঠিক রাখতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারেন।’
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্ত্যে দেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবে খুলনার ৬১ জন আহতদের মধ্যে ৪০ জনের প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকার চেক দেওয়া হয়। এ নিয়ে মোট ৫৩ জনকে আর্থিক সহায়তা দিলো জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জুলাই বিপ্লব নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
২৭০ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতি পাবেন: উপদেষ্টা ফারুক
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সনদ ও দেওয়া হবে। আহতরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র পাবেন। একই সঙ্গে তারা অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাবেন।’
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জুলাই বিপ্লব চলাকালে পরিকল্পিত দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন
উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এটি প্রতিষ্ঠা করা হবে ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘শহীদদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। ১০ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে এবং বাকি টাকা আগামী অর্থবছরে দেওয়া হবে।’
২৯০ দিন আগে