কালাল্লিত নুনাত
কালাল্লিত নুনাত আমাদের: ট্রাম্পকে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
‘গ্রিনল্যান্ড আমাদের, আমরা বিক্রির জন্য না, আমেরিকানও হতে চাই না’—এমন বার্তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়েছেন দ্বীপটির প্রধানমন্ত্রী মুৎসি বোওরব এয়েদে। বুধবার (৫ মার্চ) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ‘যে করেই হোক; গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার’ অভিলাষের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।
‘কালাল্লিত নুনাত আমাদের,’ বলেন মুৎসি বোওরব। নিজেদের গ্রিনল্যান্ডিক ভাষায় এই নামেই ডাকেন তারা। যার অর্থ, গ্রিনল্যান্ডবাসীদের দেশ।
‘আমরা আমেরিকান হতে চাই না, ডেনিসও না; আমরা কালাল্লিত। আমেরিকান ও তাদের নেতাদের এই বিষয়টি বুঝতে হবে। আমরা বিক্রির জন্য না এবং তারা আমাদের নিয়ে নিতেও পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডবাসীরাই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।’ মুষ্টিবদ্ধ হাতের ইমোজি ও জাতীয় পতাকা দিয়ে ফেসবুক পোস্টটি শেষ করেন গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: প্রায় চল্লিশ বছরের যাত্রা শেষে আটকে পড়ল সেই হিমদানব
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসেই নানা সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড দখল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের ভাষণেই সেই অভিব্যক্তিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।গ্রিনল্যান্ডের জনগণের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করবেন, এতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে আপনারা যদি চান, আমেরিকা আপনাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।’
‘আমরা আপনাদের নিরাপদে রাখবো, আপনাদের ধনী বানাবো। একসঙ্গে কাজ করে গ্রিনল্যান্ডকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে; যা কেউ কখনো ভাবেননি। তার প্রশাসন গ্রিনল্যান্ড দখলের চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কাজ করছে।’
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড আমেরিকার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘আমি মনে করি, এটা (গ্রিনল্যান্ড) আমরা পেতে যাচ্ছি। যেভাবেই হোক, আমরা এটা (গ্রিনল্যান্ড) পেতে যাচ্ছি।’
গ্রিনল্যান্ডের দিকে নজর ট্রাম্পের এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদের সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ওই সময়ও ডেনমার্ক তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সম্পতি জনমত জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গ্রিনল্যান্ডবাসী যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না, তারা বরং ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায়।
গ্রিনল্যান্ড সরকার বর্তমানে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে রয়েছে। ১১ মার্চ সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে গ্রিনল্যান্ডের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরফের চাদরে ঢাকা গ্রিনল্যান্ড কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম এই দ্বীপে মাত্র ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সাল থেকে ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
আরও পড়ুন: কানাডা-মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর, ঘোষণা ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী কৌশলগত অবস্থানে এই দ্বীপটি অবস্থিত। দেশটিতে প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে। ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডে লিথিয়াম ও গ্রাফাইটসহ ৩১ ধরনের খনিজের বিশাল মজুদ থাকতে পারে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এসব কারণে এই ভূমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে নারাজ ডেনমার্ক প্রশাসন। ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লুকে রাসমুসেন বলেন, ‘আমি মনে করি না গ্রিনল্যান্ডের মানুষ ডেনমার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমেরিকার অঙ্গরাজ্য হতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের মানুষ যেটা চাইবে; সেটাই হবে। তারা যদি ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করতে চায়, সেক্ষেত্রেও ডেনিস সরকার কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক বলে চান লার্স লুকে।
২৭৪ দিন আগে