কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
গত বসন্তে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, প্রবেশন ও ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘আইভি লীগের’ একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই গাজা যুদ্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে হওয়া আন্দোলন প্রতিহত করতে না পারার অজুহাতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করে প্রশাসন।
সম্প্রতি এই তহবিল ফেরাতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে কলাম্বিয়া প্রশাসন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিষয়ক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন ও ইহুদিবিদ্বেষের নতুন সংজ্ঞা গ্রহণকরাসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবিতে সম্মতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, ‘একটি সমৃদ্ধ অ্যাকাডেমিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পরস্পরের প্রতি এবং প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাজ, নীতিমালা ও নিয়মকানুনের প্রতি সম্মান থাকা আবশ্যক। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও নিয়মের লঙ্ঘন, এবং এমন লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারিক বোর্ডের মাধ্যমে আরোপিত শাস্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবেশন, ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
তবে যেসব শিক্ষার্থীদের এই শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে মে মাসে তারা জানিয়েছিল, অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৮০ জন কর্মী ছাঁটাই করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। একইসঙ্গে গবেষণার পরিসরও সীমিত করবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের একটি অধিকার-সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে ১-৩ বছরের জন্য বহিষ্কার বা তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আগের যেকোনো আন্দোলনের শাস্তির নজিরকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে হলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, নাহলে তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মুখে পড়তে হবে। তবে অনেকেই এটি করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন বলে মনে করছে তারা।
এর আগে, গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘঠিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়।
এরপর তাকে অবৈধভাবে বন্দি, বিদ্বেষপূর্ণভাবে মামলা ও ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাহমুদ।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
আরও পড়ুন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা কেবল যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী ও তাদের কয়েকটি সংগঠনও ছিল।
১৩৫ দিন আগে
ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সেই যুবক এখন বিপাকে
গত বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে দেশটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় নির্ভীক চাহনির এক ফিলিস্তিনি যুবকের মুখ বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আন্দোলনের সংবাদে দেখা যায় ওই যুবকের দীপ্ত চেহারা।
সম্প্রতি আবার আলোচনায় ফিরেছে সেই চেহারা। কারণ তখনকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে এবার আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
ওই যুবকের নাম মাহমুদ খলিল। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ের শিক্ষার্থী। যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করেছিল ইসরায়েল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই উপক্যতাটিতে হামলা বন্ধে গত এপ্রিলের সংঘঠিত তীব্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এই যুবক।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘আইভি লীগের’ একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অভিবাসী শিক্ষার্থী হিসেবে খলিলের এই সাহসিকতা বাস্তবিকই প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আবার অনেক সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছে তার এই কর্মকাণ্ড।
খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহ্যাটন ক্যাম্পাসের আন্দোলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। পাশাপাশি তিনি যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে আন্দোলনরতদের মুখপাত্র ও আলোচকের ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে খলিল বলেছিলেন, ‘আমরা সবার নজর কাড়তে চাই।’
খলিল সত্যিই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নজর কেড়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ এই শনিবার (৮ মার্চ) দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক।
মাহমুদ খলিলের মতো একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর চেহারা বোধহয় দেশটির প্রশাসনের বুকে শেলের মতোই বিঁধেছিল। এ কারণেই গ্রিনকার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দা এবং এক মার্কিনকে বিয়ে করার পরও তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করতে উঠেপড়ে লেগেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বর্তমানে তাকে লুইজিয়ানার জেনায় একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, খলিলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করায় অভিযুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযানের শুরু হয়েছে।
তবে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত ও ফিলিস্তিনপন্থি মতামত দমনের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন অনেক মানবাধিকার কর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা।
খলিলের গ্রেপ্তারের খবরে মর্মাহত হয়েছেন আন্দোলন চলাকালে তার সহকর্মীরাও। তারা জানান, খলিল তার কূটনৈতিক জ্ঞানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিক্ষোভের উতপ্ত দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মধ্যস্ততার চেষ্টা করেছেন।
অ্যান্ড্রু ওয়ালার নামে খলিলের এক সহকর্মী বলেন, ‘তিনি (খলিল) ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার সঙ্গে যু্ক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন। সিরিয়াতে একটি বৃত্তির ফান্ডও পরিচালনা করেছিলেন খলিল।’
এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই খলিলের অতীত নিয়ে পর্যাপ্ত অনুসন্ধান করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়ালার আরও জানান, খলিলের স্ত্রী গর্ভবতী; অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবীতে আসতে চলেছে তাদের প্রথম সন্তান।
গত সপ্তাহে খলিলের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে উল্লেখ করে ওয়ালার বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানা হওয়ার আশঙ্কা তিনি (খলিল) আগেই করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে
সিরিয়ায় একটি ফিলিস্তিনি পরিবারে খলিলের জন্ম। সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন এই যুব্ক, কিন্তু তার স্বপ্নে বাধ সাধে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ।
২০১৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা সহায়তায় খলিলের দেওয়া এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিরিয়া থেকে পালিয়ে গিয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করে—এমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজে যোগ দেন তিনি। পরে লেবাননের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন খলিল।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময়ে তিনি মার্কিন প্রশাসনসহ সমালোচকদের নজরে আসেন।
শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় তাঁবু স্থাপন করেছিলেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবনের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিলেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের হটাতে পুলিশের শরণাপন্ন হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে ফিলিস্তিনি সমর্থক ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন খলিল। এরপর বিক্ষোভের মাঝে উঁচু স্বরে প্রতিবাদ জানানোর ফলে দ্রুতই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তিনি। এই আন্দোলনকে যারা ইহুদীবিদ্বেষী হিসেবে দেখেছিলেন, তিনি তাদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন।
গত সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খলিল বলেন, ‘এই ফিলিস্তিনির দিকে তাকান, যে কখনও নিজের মুখ লুকায়নি—বলে আমি আসলে বলির পাঁঠা হয়ে গিয়েছি।’
অন্যদিকে, খলিলকে ক্যাম্পাসে ‘অরাজকতার হোতা’ হিসেবে বলে আখ্যা দিয়েছে কলাম্বিয়া ইহুদি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শৃঙ্খলা কমিটি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে।
সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিনকে ‘নরহত্যাকারী’ বলে সম্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় খলিল
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশেই মাহমুদ খলিলকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।
শনিবার আটকের পর খলিলকে লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে তিনি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
এ ঘটনার পর রবিবার (৯ মার্চ) এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমেরিকায় হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিনকার্ড বাতিল করবে প্রশাসন, যাতে তাদের নির্বাসন দেওয়া যায়।’
পরে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘মাহমুদ খলিলকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা উচিত।’
লেভিটের ভাষ্যে, ‘খলিল এমন একটি বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন, যা শুধু কলেজ ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করেনি, আমেরিকার ইহুদি শিক্ষার্থীদেরও হয়রানি করেছে। এছাড়া তাদের নিজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে বিক্ষোভকারীরা।’
হামাসের সমর্থনে খলিল প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেন লেভিট।
তবে লেভিটের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার সঙ্গে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
ম্যারিয়ান আলওয়ান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অন্য কেউ বিক্ষোভ-সংশ্লিষ্ট নয়—এমন কিছু প্রচার করলে সেই দায় যাতে খলিলের ওপর না বর্তায়, এ কারণেই তিনি (খলিল) মুখ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন।’
এদিকে, খলিলের স্ত্রী আট মাসের গর্ভবতী বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। নিজের নাম না প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে খলিলের স্ত্রী বলেছেন, ‘আমার চোখে মাহমুদ খলিল একজন স্নেহপরায়ণ স্বামী এবং আমার গর্ভের সন্তানের বাবা।’
খলিলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার প্রথম সন্তান যখন পৃথিবীতে আসবে, তখন আমার স্বামীকে আমি পাশে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
২৬৭ দিন আগে