শহীদ পরিবার
উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারে এককালীন আর্থিক সহায়তা ও মাসিক ভাতা বিতরণে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। ফলে সহায়তা বিতরণ নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। একদিকে শহীদদের মা–বাবা, অন্যদিকে স্ত্রী—উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে। এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন সহায়তা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে, ভোগান্তিতে ফেলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদিকে শহীদের স্ত্রী, অন্যদিকে মা–বাবা, উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সরকারের কাছে দাবি তুলছেন। এতে করে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) ইউএনবিকে বলেন, ‘কে কত টাকা পাবে, তা নিয়ে এখন দ্বন্দ্বের শেষ নেই। কেউ বলছেন, বউ বেশি পাচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন, মা–বাবা বেশি পাচ্ছেন। শহীদের মা–বাবা বলছেন, বউ তো আবার বিয়ে করে চলে যাবে, কিন্তু আমরা সন্তান হারিয়েছি। অন্যদিকে স্ত্রীদের দাবি, তারাও স্বামী হারিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।’
জানা গেছে, সহায়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র যে, শহীদের মা–বাবা ও স্ত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ওই গ্রুপ থেকে সংগঠিত হয়ে তারা দল বেঁধে মন্ত্রণালয়ে আসছেন, একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুসলিম পরিবারগুলোতে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬’-এর ভিত্তিতে সহায়তা বণ্টন করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এই আইনি কাঠামো মানতে চাইছেন না। বিশেষ করে স্ত্রীদের পক্ষ থেকে বেশি আপত্তি আসছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ফারুক ই আজম বলেন, ধর্মীয় আইন মেনে হিসাব করে টাকা দিলেও তা নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট নন। ফলে আমাদের ওয়ান-টু-ওয়ান সমাধান করতে হচ্ছে। এতে সময় ও কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, টাকা–পয়সা আর স্বার্থ যখন সামনে আসে, তখন কেউ শহীদের মহিমা বা আত্মত্যাগের গৌরব নিয়ে ভাবেন না। অথচ সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে—এই আত্মত্যাগের মহিমা ও চেতনা ধরে রাখা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার জুলাই শহীদদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে মোট ৩০ লাখ টাকা এককালীন সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ও চলতি (২০২৫–২৬) অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারগুলো মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবে।
এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ৭৭৪ পরিবারকে। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাকি ৭০টি পরিবার এখনো প্রথম কিস্তির অর্থ পায়নি। এ কারণে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বিতরণও শুরু করা যাচ্ছে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী অর্থ বণ্টন করছি। কিন্তু পরিবারগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় আমাদের প্রতিদিন দেন–দরবার করতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ৫৯ জন স্ত্রী মন্ত্রণালয়ে এসে সমবেতভাবে দাবি জানিয়েছেন। এর আগেও মা–বাবাদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছেন।
তিনি জানান, একজন শহীদের একাধিক উত্তরাধিকার থাকায় কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা যাবে, তা নির্ধারণ করতে সময় লাগছে। এ জন্য সহায়তা কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে আহতদের ক্ষেত্রেও সহায়তা কার্যক্রম চলছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—ক-শ্রেণির (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে, বাকি ৩ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে।
খ-শ্রেণির (গুরুতর আহত) ৯০৮ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এদের মধ্যে ১ লাখ টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে। গ-শ্রেণির (সাধারণ আহত) ১০ হাজার ৬৪২ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ১ লাখ টাকা এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
তিন শ্রেণির আহতরা আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকবে এবং পুনর্বাসন সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সরকারি/আধা-সরকারি চাকরিতে শহীদ পরিবারের উপযুক্ত সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘সহায়তার কাজ শেষ হলেই আমরা পুনর্বাসন কার্যক্রমে যাব। আমরা চাই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি টাকা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অন্তত একটি বিভাগে আগামী সপ্তাহে ভাতার অর্থ বিতরণ শুরু করতে। পরিবারগুলো যত দ্রুত তথ্য পাঠাবে, আমরা তত দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।
সচিব বলেন, কেউ যদি গ-শ্রেণি থেকে ক-শ্রেণিতে যেতে চান, তবে তা নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৩৭ দিন আগে
রাজধানীতে শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, রামপুরা ও বাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের কুমিল্লা বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. মজিবুর রহমান গত দুই দিনে এ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম সদস্য হারানো নিঃস্ব অনেক পরিবার স্বজন হারানোর পাহাড়সম কষ্টের মাঝেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পাঠানো ঈদের উপহার সামগ্রী ও তার সই করা চিঠি পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও তাদের স্মরণ রাখায় শহীদ পরিবারের স্বজনরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।’
ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা জীবন দিয়ে দেশকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, এসব শহীদদের পরিবারের হাতে সামান্য ঈদ উপহার পৌঁছে দিতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত।’
তিনি রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বেশ কয়েকজন শহীদের শিশু সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহন ও ও যে কোনো বিপদ-আপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
২৫০ দিন আগে