খলিলুর রহমান
গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়: খলিলুর রহমান
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরে রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি না বলি, তাহলে কোনো সমাধান হবে না। আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের এই কাজ করতে হবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
সোমবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম, সরকার, সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সঙ্গে কথা বাংলাদেশ সরকার যোগাযোগ করেছে কিনা— এই প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের এক সাংবাদিককে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে এক সাংবাদিক বন্ধুকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনারা আসতে থাকুন, আরও নিয়ে আসুন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাইরে রেখে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটিই বাস্তবতা। আলোচনা মানেই সেটি যেকোনো সমাধানের জন্য, আর সেই সমাধান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
‘যদি কোনো পক্ষকে বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোনো চুক্তি বাস্তবায়িত হবে না বা খুব দ্রুত ভেঙে পড়বে। তাই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে, ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর গুরুতর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যা সক্রিয় আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে অবশ্যই মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ১৯৭৮ সালে কুতুপালং ক্যাম্পের প্রথম ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলাম এবং আমার রোহিঙ্গা বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করেছি। সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং তা তাদের উদ্যোগেই সমাধান করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ফুয়াদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আখতার হোসেনসহ অনেকে এই সেশনে বক্তব্য রাখেন।
রাশেদ খান বলেন, আমরা চাই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিক। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই মিলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার জানান, তার দল রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক সহায়তা, ন্যায়বিচার ও টেকসই সমাধানের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১০১ দিন আগে
আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে: খলিলুর রহমান
রোহিঙ্গা সংকটকে গাজা উপত্যকার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে। সেটি নিয়ে কারও মিছিল-মিটিং নেই।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিথ ছিলেন।
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নামে বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলা চালিয়েছে একদল তরুণ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড (ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া) করারই একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটার একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গাজাতে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্ব বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া হবে খুবই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে—রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারও মিটিং-মিছিল নেই, আলাপ-আলোচনা নেই। আছে, হচ্ছে,...এগুলো নিয়ে রাস্তায় নামা, লুটপাট করা। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।’
‘পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে বাংলাদেশ মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়, এই দায় আমাদের সবসময় মেটাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
খলিলুর রহমানের ভাষ্য, “কিন্তু আমার ঘাড়ের ওপর একটা সমস্যা বসে আছে। নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? আর অন্যরা একটু বেশি মুসলমান। আমরা কিন্তু খুব লজ্জা লাগে, যখন বাইরের দেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ‘আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তো কোনো কথাবার্তা নেই? তোমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলো’।”
‘আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের বুঝতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করবো, দেখুন, বাইরের কথা...আলাপ আপনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঘরের সমস্যা, এটা নিয়ে প্রথম দাঁড়িয়ে যাবেন। তানাহলে আমরা দেশের স্বার্থ রাখতে পারবো না,’ বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হলেন ড. খলিলুর রহমান
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এতে আরও বলা হয়, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গত রাতে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। পরবর্তীতে গাজা যুদ্ধে আইডিএফের নির্বিচার হামলায় অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
২৪১ দিন আগে
আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
আরাকানে বর্তমানে যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, সেটার নিরসন না করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান। তবে সেই যুদ্ধাবস্থা পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘বিমসটেক বৈঠকের ফাঁকে আমার সঙ্গে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউর আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটা বড় অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমরা ছয়টি কিস্তিতে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা তারা রিভিউ করেছেন। তার মধ্য থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছেন, যারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আর বাকি ৭০ হাজারের ছবি ও নাম নিয়ে কিছু কনফিউশন (বিভ্রান্তি) আছে। সেটা দূর করতে আমরা দুপক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবো।’
‘একইসাথে তারা বলেছেন, বাকি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার রিভিউ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করবেন।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হলেন ড. খলিলুর রহমান
কবে নাগাদ এই এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তো আর কালকেই চলে যাচ্ছেন না। এটার জন্য একটি প্রক্রিয়া দরকার। যেকোনো প্রত্যাবাসনের একটি প্রক্রিয়া লাগে—তারা যাবেন, কী করে যাবেন, সেই জায়গাটা কী অবস্থায় আছে, নিরাপত্তা-সুরক্ষা আছে কিনা এবং যাওয়ার জন্য জীবন-জীবিকার সংস্থান আছে কিনা; কেবল রোহিঙ্গাদের বিষয়ে না, যেকোনো প্রত্যাবাসনে এই ধরনের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।’
‘সব পক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। এই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছ থেকে ভেরিফিকেশন নিতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি মোতাবেক এই ভেরিফিকেশন হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাখাইন এখনো মিয়ানমারের একটি সভরেন (সার্বভৌম) অঞ্চল। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি আরাকান আর্মির সাথে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের একটি প্রিন্সিপাল পজিশন, তারা এটা প্রকাশ্যে সেপ্টেম্বরে বলেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টার এই উচ্চপ্রতিনিধি।
‘সে কারণে আমরা মনে করি, এই এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবো। তবে সেটা কালকেই হচ্ছে না। তারা যাতে দ্রুততর সময়ে যেতে পারেন, আমাদের সেই প্রচেষ্টা থাকবে। সে কারণে মিয়ানমার, আরাকানের বাস্তব কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ ও আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা কাজটি করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে আগামী ঈদ যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে গিয়ে করতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরবেন, সেখানকার ৮০ শতাংশ এলাকা আরাকান আর্মির অধীন। তাদের দেশের মধ্যকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করবে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি। প্রথম কথা হচ্ছে, বিষয়টি (রোহিঙ্গা) মানুষ ভুলেই যাচ্ছিল। জাতিসংঘে মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা গিয়ে বিষয়টি তোলেন। শুধু তা-ই না, জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনি আদায় করে নিয়ে এলেন।’
গেল ১৫ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন, প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান। আমরা গেলাম চীনে, সেখানকার যৌথ বিবৃতিতেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একমাত্র সমাধান বলা হয়েছে। এই যে এই প্রত্যাবাসন ইস্যু হয়েছে। আর কোনো ইস্যু নেই। এছাড়া প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমরা প্রথমবারের মতো একটি সংখ্যা পেলাম। গেল আট বছরে এই সংখ্যাটা আমাদের কাছে ছিল না। এই প্রথম একটি অ্যাগ্রিড সংখ্যা আমরা পেলাম। আমাদের একটি ভিত্তি হলো।’
‘এখন কথা হচ্ছে, আপনি তো একটি জনগোষ্ঠীকে আগুনের মধ্যে ঠেলে দিতে পারেন না। তার নিরাপত্তা আপনাদের দেখতে হবে। সেখানে গিয়ে তারা যাতে জীবনযাত্রা শুরু করতে পারেন, তার একটি এনবলিং এনভাইরনমেন্ট নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। এটা আমরা একা পারবো না, সবার সঙ্গে আলাপ করে করতে হবে। কাউকে বাদ দিয়ে আমরা এই কাজ করছি না।’
আরাকানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কাজ করছে বাংলাদেশ
আরাকানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ কাজ করছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি বলেন, ‘আরাকানে যাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দ্রুত ফিরে আসে, সেখানকার মানবিক সংকট, সেটা নিরসনে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি, সেখানকার হিউম্যানিটারিয়ান সিচ্যুয়েশন যাতে আমরা কিছুটা হলেও নিরসন করতে পারি। সে জন্য দরকার বিবদমান দুপক্ষের যুদ্ধের বিরতি।’
‘আমি বলতে পারি, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে হিউম্যানিটারিয়ান সাপোর্ট জাতিসংঘ যেমন দেবে, যেটাতে আমরা সাহায্য করবো—সেই সময়টাতে দুপক্ষের যুদ্ধাবস্থা পরিহার করবে।’
তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে একটি স্থিতির সূচনা হবে বলে আমরা আশা করছি। সেই মুহূর্তটার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। খুব বেশি দেরি নেই সেটার। সেই সময় থেকে আমরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটা বাস্তব আলোচনা করতে পারব।’
আরও পড়ুন: 'খলিলুর রহমান নলেজ সেন্টার' চালু করল বিজিএমইএ
জাতিসংঘের মহসচিব এখানে একটি একটি আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটারিয়ান করিডোরের কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করিডোর কথাটি তিনি বলেননি, চ্যানেল বলেছেন। করিডোরের একটি আইনগত মানে আছে, যে কারণে তিনি এটি অ্যাভয়েড করেছেন। আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই তিনি এটা বলেছেন।’
‘আমি যখন তার সঙ্গে ৭ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে গেলাম, আমাদের পরিকল্পনা—মিয়ানমার, আরাকান আর্মি কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থা—সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করেই আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে গিয়েছি। রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা ও সংকট, সেটা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নেই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র কনড্যুয়িট বা চ্যানেল, যার মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘কারণ রাখাইনের উপকূল এখনো তাতমাদোর দখলে। অন্যান্য জায়গা দিয়ে সহজে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না। আমরা কাজটি এই জনগোষ্ঠীর জন্য করতে চাচ্ছি এই কারণে যে সব মানুষই কিন্তু মানুষ। রাখাইনরা নির্যাতিত হয়েছে, সেটা যেমন খুবই পরিতাপের বিষয়, তেমনই রাখাইন সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন না-খেয়ে আছেন, ওষুধপত্র পাচ্ছেন না, এই যুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, এই যুদ্ধে দুই সম্প্রদায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
‘কাজেই যতটুকু সম্ভব দুই পক্ষকে সাহায্য দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটা কেবল আমাদের না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব। আগামী দিনগুলোতে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না এক্ষেত্রে।’
রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ কাজ করছে বলে যে কথা বলেছেন, এটা কতদূর এগিয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেল ৮ বছরে আমরা অনেক কাজ করিনি। পুরো জিনিসটা একটা ইন্টিগ্রিটেড ইউনিট বলে ধরে নিতে পারেন। আমরা একটা একটা বেছে বেছে করতে পারবো না। পুরো জিনিসটা দেখতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে আরাকানের শান্তিশৃঙ্খলা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শান্তিময় পরিবেশ না হলে একটা যুদ্ধের মধ্যে কাউকে (রোহিঙ্গা) ঠেলে দিতে পারেন না। আমরা বলে আসছি, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা। আমরা কাউকে ঠেলে দেব না। যাওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে আছেন। এটা জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার সফরের সময় দেখেছেন, তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছেন।’
‘মহাসচিব নিজে উদ্যোগ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনারা কী যেতে চাচ্ছেন? তারা সবাই যেতে চেয়েছেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু এই যাওয়াটা যাতে স্বেচ্ছায় হয়। বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা কিংবা স্থিতির অভাব আছে, সেটার নিরসন না করে হচ্ছে না। সেই কাজটা আমাদের করতে হবে। আমরা একাই করছি না, সবাই আমাদের সাথে আছেন। এই ডাইমেনশটা আগে ছিল না। অনেক ডাইমেনশনই ছিল না।’
২৪১ দিন আগে