বিনিয়োগ সম্মেলন
বিদেশি বিনিয়োগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকছে না: নাহিয়ান রহমান
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ব্যবসা উন্নয়ন (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) প্রধান নাহিয়ান রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসে যে পাঁচটি সমস্যার কথা বলেন, তার একটি হচ্ছে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঝামেলা। সরকার সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এছাড়া সিদ্ধান্তগুলো অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত ও সহজ হওয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও থাকছে না।
বিনিয়োগ সম্মেলনের চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে এনবিআরের হয়রানি নিয়ে কথা ওঠে। সে বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিয়ান বলেন, ‘বিডা থেকে যখন দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলি, তখন তাদের মূল পাঁচটি সমস্যার একটি ছিল এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে জিনিসপত্র বের করতে যে অনেক সময় লাগে বা ঝামেলায় পড়তে হয়, সেটি।’
‘কীভাবে আমরা এই জিনিসটা আরও সহজ করতে পারি, সেটি এখন আমাদের অগ্রাধিকার এজেন্ডা। আর আমরা এখন গ্রিন চ্যানেল বা অথরাইজড ইকনোমিক অপারেটর চালু করেছি; আমাদের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু হয়েছে। সুতরাং এনবিআরের পক্ষ থেকে এই জিনিসগুলো কীভাবে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা চলছে।’
সম্মেলনে এদিন তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল অধিবেশনে মূল বক্তব্য রাখেন ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিহাক সাং।
বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনামে শ্রমিকের ক্ষেত্রে ত্রিশ শতাংশ বেশি খরচ হওয়ার পরও সেখানে তাদের লাভ বেশি হচ্ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা কম। এটি নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন—প্রশ্নে নাহিয়ান বলেন, ‘কিহাক সাংয়ের অভিযোগটিকে আমরা ভ্যালিড (বৈধ) বলে মনে করি। কিন্তু ভিয়েতনামে যে পণ্য তিনি বানান, সেগুলো মোর ভ্যালু অ্যাডেড গার্মেন্টস ও সিনথেটিক গার্মেন্টস। এজন্য সেখানে খরচ বেশি পড়লেও লাভ পুষিয়ে নিতে পারেন।’
‘আমাদের এখানে তাদের ব্যবসায়ের পুরোনো দিনের কিছু সমস্যা ছিল। সে কারণে সেই সমস্যার সমাধানের আগে নতুন করে সিনথেটিক বা হাইভ্যালু গার্মেন্টসে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। কিন্তু কেইপিজেডে নতুন করে একটি সিনথেটিক লাইন খুলেছেন। ওখানে এখন তারা হাইভ্যালু গার্মেন্টস উৎপাদন করছেন। যেটি অবশ্যই লাভজনক হবে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল চীনের হান্ডার সঙ্গে একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করা হয়েছে। সেখানে তাদের বড় একটি বিনিয়োগ ছিল এই সিনথেটিক গার্মেন্টেসের ওপর। আমরা যদি এভাবে আরও দুয়েকটি হাইভ্যালু অ্যাংকর ইনভেস্টমেন্ট পাই, তখন ভ্যালু অ্যাডেড গার্মেন্টসে আরও বেশি বিনিয়োগ পাওয়া শুরু করব।’
বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার বিনিয়োগকারীরা এসে দেখেছেন যে, এ বিষয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে ৭০ জনের মতো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় তাদের অনুমোদন পেতে কষ্ট হতো, এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন—২৫ থেকে ২৬ জন উপদেষ্টা আছেন। এখন সিদ্ধান্তগুলোও অনেক বেশি সেন্ট্রালাইড (কেন্দ্রীভূত) ও সহজ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা নিজেরাও তা বলেছেন। তবে আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে।’
এই সম্মেলনে কতগুলো দেশ থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ পেলাম—প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গতকাল আমরা যে কয়েকটি হাইভ্যালু সমঝোতায় সই করেছি, তার মধ্যে হান্ডার ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যেটা এই সম্মেলনেই সই হয়েছে। তার আগে গতকাল সকালে জানলাম, ১১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানি শপআপ। কোনো কিছু আসলে একদিনে হয় না, অনেক দিনের কাজের ফল এগুলো।’
কী পরিমাণ বিদেশি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন—প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সম্মেলনের বিভিন্ন অংশে আমরা ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০’র মতো বিদেশি অংশগ্রহণকারী পেয়েছি। তবে একই কোম্পানি থেকেও দুজন করে এসেছেন।’
এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে বেসরকারি খাতকেও মোবিলাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে নাহিয়ান রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দিক থেকেও অনেক তৎপরতা ছিল। আমরা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে সবকিছু না করে সবাইকে নিয়ে কীভাবে বিনিয়োগের পাইপলাইনটিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটিই ছিল আজকের অন্যতম লক্ষ্য।’
এ সময়ে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব ও প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
২৩৮ দিন আগে
বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেলেন ইয়াংওয়ানের চেয়ারম্যান
দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতির বিকাশে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর সিটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাককে নাগরিকত্ব সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় কিহাকসহ মোট পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এর আগে, গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছিলেন কিহাক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) ও টেক্সটাইল খাতের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
এই খাতগুলোতে প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাকে অনুসরণ করে অনেক কোরিয়ান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করেন।
আরও পড়ুন: ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান
তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিও চট্রগ্রাম ইপিজেড, ঢাকা ইপিজেড ও কোরিয়ান ইপিজেডে বিনিয়োগ করে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করে। সক্রিয় হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইপিজেডগুলো।
এই সম্মাননা পেয়ে কিহাক বলেন, ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এছাড়াও বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ফেব্রিক লাগবে কোম্পানি, ওয়াল্টন, বিকাশ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট’ পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সময় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতামত জানতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যদূত ব্যারোনেস রোজি, ইন্ডিটেক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া মাসিরাস ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর।
পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ অনেকে।
২৪০ দিন আগে