রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
ঢাকা-বেইজিংয়ের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন স্তরে উন্নীত হবে: রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, এই মাসের শেষের দিকে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাওর নেতৃত্বে চীন থেকে বাংলাদেশে আসা সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সফর করবেন। এই সফর উন্মুক্ত বাণিজ্য, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুবিধার একটি 'জোরালো সংকেত' দেবে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ ও চীনের অর্থনৈতিক-বাণিজ্য সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করবে।
তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, এই সফর উন্মুক্ত বাণিজ্য, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুবিধার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত দেবে। চীন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করবে।’ বলেন, এই মাসের শেষে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে শতাধিক চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফর করবেন।
আরও পড়ুন: মানবিক করিডর ইস্যুতে চীন জড়িত নয়: রাষ্ট্রদূত
সফরকালে, উভয় পক্ষ একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিনিময় অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজন করবে। যেখানে শতাধিক চীনা এবং বাংলাদেশি উদ্যোগ অংশগ্রহণ করবে এবং আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হতে বাংলাদেশ-চীনের যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিশনের ১৫তম বৈঠক হবে।
আম ও ইলিশ শিগগিরই পৌঁছাবে চীনের বাজারে
তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশি আম চীনে রপ্তানি ত্বরান্বিত করছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বছরের জুনের প্রথম দিকে তাজা আমের প্রথম চালান চীনের বাজারে যাবে।
তিনি বলেন, এরপর, বাংলাদেশি কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা আশা করছি বাংলাদেশ শিগগিরই চীনে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ পাবে। সর্বোপরি, চীনা খাদ্যপ্রেমীরা তাদের খাবারের টেবিলে এই সুস্বাদু মাছ উপভোগ করার জন্য অধীর আগ্রহে আর অপেক্ষা করতে পারছেন না।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের আরও উন্নতমানের কৃষিপণ্য চীনে আসার সঙ্গে সঙ্গে ও আরও বেশি চীনা কোম্পানি এই উর্বর ভূমিতে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবন নিয়ে আসবে। ফলে তারা অবশ্যই অবিশ্বাস্য কিছু ঘটতে দেখবে!
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প আরও শক্তিশালী হবে, সরবরাহ শৃঙ্খল আরও শক্তিশালী হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - নতুন সুযোগ ও বৃহত্তর সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নত হবে।’ ‘আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা একসঙ্গে এটি করতে পারি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য চীনের সমর্থন একটি প্রকৃত এবং স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। ‘পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল হোক না কেন, এটি সর্বদা অপরিবর্তিত থাকবে।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিনিয়োগকারী চীন।
চীনে রপ্তানি করা বাংলাদেশি করযোগ্য পণ্যের শতাভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই অগ্রাধিকারমূলক নীতি সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে, যার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৩০টিরও বেশি কোম্পানি চট্টগ্রাম চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চলে বিনিয়োগের ইচ্ছাপত্রে সই করেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে 'বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক: একটি নতুন উচ্চতার দিকে' শীর্ষক দেশীয় বক্তব্যের আয়োজন করে।
বিআইআইএসএস’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস স্বাগত বক্তব্য দেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান এএফএম গাউসূল আজম সরকার অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন। সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস, বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ একটি উপস্থাপনা করেন।
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান হামলা: নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান চীনা রাষ্ট্রদূতের
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশন, গণমাধ্যম, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে তাদের মতামত, মন্তব্য, পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
বক্তব্যে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ যখন তার উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং চীন তার বিশ্বব্যাপী প্রচারণা অব্যাহত রাখছে—তখন এই সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায় আরও বৃহত্তর সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়।
তারা বলেন, উদ্ভাবন, আস্থা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীন এমন একটি ভবিষ্যত তৈরি করতে পারে, যা তাদের জনগণ ও বৃহত্তর এশীয় অঞ্চলের জন্য কল্যাণকর।
২১১ দিন আগে