বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
ইউনূস-তারেক বৈঠক: নির্বাচনী প্রস্তুতিতে গতি এনেছে বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই বৈঠকের পরে জাতীয় রাজনীতিতে স্বস্তির বার্তা এসেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা ইউএনবিকে বলেন, ‘এতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতার পথ তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা আরও শক্তিশালী হয়েছে, যদিও এটি কিছু রাজনৈতিক দলের ‘অস্বস্তির’ কারণ হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই বৈঠক নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা দূর করতে সহায়ক হয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি ও এর মিত্রদের সম্পর্ক উন্নত করেছে।
তাদের বিশ্বাস—সরকার আন্তরিক থাকলে প্রয়োজনীয় সংস্কার, জুলাই সনদ প্রণয়ন এবং গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের বিচারের কাজ শুরু করে দ্রুত নির্বাচনসূচি ঘোষণা সম্ভব।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের কোনো টানাপোড়েন ছিল না: পরিবেশ উপদেষ্টা
তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরে দলকে নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন দলটির নেতারা। এতে আসন্ন নির্বাচনে বড় জয় নিশ্চিত করতে দলের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন বলে মনে করেন তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর বড়া আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার দাবিতে লন্ডনের বৈঠকটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করেছে।
বৈঠকের ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। এখন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে এগোবেই বলে মনে করছেন তারা।
সরকার ও বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠকটি দুই নেতার ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দুজন সিনিয়র উপদেষ্টা, কয়েকজন সিভিল সোসাইটি সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক ও তারেকের ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীর সক্রিয় প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে।
তারা বলেন, বৈঠকটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তারেক রহমান এপ্রিলের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চেয়ে জোর দেন। এতে, অধ্যাপক ইউনূস একমত হয়ে বলেন, রমজানের আগেই নির্বাচন হতে পারে।
তারা বলেন, তারেক রহমান সংস্কার, জুলাই সনদ এবং গণআন্দোলনে নিহতদের বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বৈঠকে উভয় নেতাই আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগকে সম্মান জানান এবং দেশ পুনর্গঠনের আহ্বান জানান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে তারেক রহমান ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরেন। অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূস পরিষ্কার করে জানান, তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, তিনি কেবল সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে চান।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন তারেক রহমান।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিশ্চিত করেছেন, ড. ইউনূসকে তারেক রহমান জানিয়েছেন—নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে তার (ড. ইউনূস) অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ পুনর্গঠনে পরামর্শ নেবে বিএনপি।
বিএনপির ওই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সূচি অনেকটা চূড়ান্ত হওয়ায় বিএনপি পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে। ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, ‘তারেক রহমান এরইমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি, তথ্য সংগ্রহ ও নির্বাচনী কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন।’
এদিকে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি শিগগিরই নাগরিক ঐক্য, জাসদ (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, জাতীয় পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, ১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘এই বৈঠক বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনিশ্চয়তা কমিয়েছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দরজা খুলে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক মঙ্গলবার
তিনি বলেন, ‘আগে প্রশ্ন ছিল—নির্বাচন আদৌ হবে কি না। কিন্তু এখন দেশ নির্বাচনমুখী। কেউ কেউ সংস্কার বা বিচারের কথা বলছে, কিন্তু সেগুলো নির্বাচন থামাতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেকদিন ধরেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিল। এখন সেই সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়েছে।’
তার মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচন নিয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এতে দেশের বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন যখনই হোক, ইসিকে প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি
এদিকে, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শাহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘এই বৈঠক দীর্ঘ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পরে দেশবাসীর মধ্যে শান্তি ও আশার আলো এনেছে। এখন আমরা সবাই নির্বাচন উৎসবের জন্য প্রস্তুত।’
১৭২ দিন আগে