এনবিআরের আন্দোলন
এনবিআর আন্দোলনে সরকারি ক্ষতি নিরূপণে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে দেশের রাজস্ব ও অর্থনৈতিক খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আদেশে আরও জানানো হয়, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হওয়ার কারণে রাজস্ব হারানোসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করবে এ কমিটি।
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় বরখাস্ত ৮ এনবিআর কর্মকর্তা
আইআরডির যুগ্মসচিব সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক ও উপসচিবকে (প্রশাসন-১) সদস্যসচিব করে গঠিত এ কমিটিতে অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ওই আদেশে কমিটির কার্যপরিধি নিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বন্ধ থাকার কারণে যে পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ নিরূপণ; দুই মাসব্যাপী চলমান ধর্মঘট ও কর্মবিরতির ফলে কাস্টম হাউস, ভ্যাট অফিস, বন্ড কমিশনারেট, কর অঞ্চল ও আপিল সংস্থাসমূহে রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিমাণ নির্ণয় এবং দীর্ঘ ২ মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম এবং সকল স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ক্ষয়ক্ষতিসহ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এদিকে, রাজস্ব কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এতে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং আমদানি-রপ্তানিকারকদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
১৪২ দিন আগে
এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘নিরীহ’ আন্দোলন সরকারবিরোধী রূপ নেয়: উপদেষ্টা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের নিরীহ আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এই কথা জানান। এ সময় কমিটির সদস্য শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এটি নিরীহ আন্দোলন ছিল। পরে এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। অর্থনৈতিক ক্ষতি করার উদ্দেশ্য হয়ে পড়েছিল। রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত করার একটা উদ্দেশ্য ছিল।'
একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী অবস্থান তৈরি হয়েছে। সরকার কিন্তু অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের বলেছেন, আপনারা এতদিন এটাকে (আন্দোলন) কন্টিনিউ করতে দিলেন কেন? এটা ১৫ দিনের মাথায় কেন থামালেন না? নিপীড়নমূলক না হয়ে কীভাবে এটার সমাধান করা যায় সেজন্য উনি বারবার আলোচনা করেছেন, কিন্তু সেটাতে কাজ হয়নি।’
আরও পড়ুন: এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা সাময়িক বরখাস্ত
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ইতোমধ্যে পাঁচটি সভা করেছে। ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন, আয়কর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, এনবিআর, সংস্কার কমিশন এবং সর্বশেষ ব্যবসায় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রম দেখব। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের প্রধান বক্তব্য ছিল, এনবিআর অটুট রাখতে হবে; রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়নের যে দুটি ডিভিশন, সেখানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে। তবে তারা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন আর দুই বিভাগ করার ক্ষেত্রে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সংস্কার কমিটির যে বক্তব্য, সেটিও অভিন্ন।’
‘ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুই মাস আন্দোলনের কারণে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা এটাও জানিয়েছেন যে প্রতিনিয়ত শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন তাদের আছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। কিছু কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা (ব্যবসায়ীরা) বলেছেন, এটি ঠিকই আছে, তবে এ বিষয়ে একটু ধীরগতি অবলম্বনের জন্য তারা অনুরোধ করেছেন।’
গত ৩০ জুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা
পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে আরও সদস্য হিসেবে রয়েছেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
উল্লেখ্য, ফাওজুল কবির খান ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক।
১৪৫ দিন আগে
এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ভ্যাট বিভাগের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা, মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা প্রমুখ।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ বলেন, ‘আজ (রোববার) সারা দিন সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এনবিআরের আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি। সেই অনুসারে আমরা পরবর্তীতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করি। কিছু ভুল–বোঝাবুঝির জন্য হয়তো এ রকম একটা বিপর্যয় দেখতে হয়েছে। আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার বিষয়টি চান। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হবে, এমন আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এটা আমরা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্বস্ত করেছি।’
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের আলোচনায় কিছু বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে সরকার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে, এই উদ্যোগকে ঐক্য পরিষদ স্বাগত জানায়।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের আমদানি–রপ্তানি ও সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখা তথা অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। তবে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারে আমাদের উদ্যোগ ও কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
১৫৮ দিন আগে