উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র
গাইবান্ধার তিন নদীর বাঁধ হতে পারে উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র
তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান তীরের প্রশস্ত বাঁধ হতে পারে মানুষের বিনোদনের উন্মুক্ত এলাকা। একটু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই এই এলাকাকে শুধু মৌসুমি নয়, বরং স্থায়ীভাবে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করতে পারে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে নদীর দুই তীরের অনেক মানুষের।
গাইবান্ধার চার উপজেলাজুড়ে নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চকচকে বাঁধ, বাঁধের পাশে সারি সারি সিমেন্টের বোল্ডার, বিস্তীর্ণ নদী ও বালুচর এই এলাকাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার সৌন্দর্য। ডান তীরে রয়েছে বিস্তৃত জনপদ ও সবুজ আবাদি জমি। ছুটির দিন ছাড়াও সকাল-বিকালে এখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। দূরদূরান্ত থেকেও নানা বয়সী নারী-পুরুষ ছুটে আসেন এই নদীতীরের দৃশ্য উপভোগ করতে।
সরকারি উদ্যোগে আধুনিকায়ন করা হলে এটি হতে পারে একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। গাইবান্ধা শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালাসীঘাট। ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এখানে ৬৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের দুপাশে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এছাড়া বালাসীঘাটে গড়ে তোলা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ-এর সুদৃশ্য গেস্ট হাউস, ট্রাক টার্মিনালসহ নানা অবকাঠামো।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ধুবনি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা চাই গাইবান্ধার চরাঞ্চল, বালাসীঘাট ও নতুন নির্মিত বাঁধগুলো পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হোক। কী নেই সেখানে—ঘোড়ার গাড়ি, ছোট-বড় নৌকা, নৌযান, নৌপুলিশ। বিকেলে বালাসীঘাট থেকে দেখা যায় ভারতের গারো পাহাড়।’
বালাসীঘাটের ইজারাদার জানান, বর্ষায় নদীর ভরা মৌসুমে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড় দেখা যায় না। বালাসীঘাট থেকে নৌকা চলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর, গঙ্গাচড়া, জামালপুরের ইসলামপুর, বাহাদুরাবাদঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব পথে নৌপথে পণ্য বহন করে পাঠানো হয় ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা জায়গায়।
উৎসব এলে তো কথাই নেই। নদী ভরা হোক বা শুকনো—দুই সময়েই নদী নেয় ভিন্ন রূপ। নববর্ষ, পূজা, ঈদ কিংবা ছুটির দিনগুলোতে বালাসীঘাট পরিণত হয় আনন্দঘন মিলনমেলায়। কেউ নৌকায় এপার-ওপার হন, কেউ বা নৌকায় চরে ঘুরে বেড়ান। নদীর হিমেল হাওয়ায় নারী-পুরুষ একত্রিত হন আনন্দ উপভোগে। নদীতীরের এই বাঁধকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চরাঞ্চল ভ্রমণ, বালুচরে ঘোরাঘুরি, নদীপারে বসে আড্ডা দেওয়ার সংস্কৃতি।
বর্ষায় যখন নদী যৌবনে, তখন শত শত নৌকায় করে উত্তরাঞ্চল থেকে ধান-পাটসহ নানা পণ্য চলে যায় বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যত্র। দুই মৌসুমে নদী নেয় ভিন্ন রূপ—বর্ষায় এক রকম, শীতে আরেক রকম। ছুটির দিনে শত শত মানুষ বালাসীঘাটে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে। অনেকে ছোট বড় নৌকায় চরে বেড়ান, চরাঞ্চলের জীবনযাপন দেখেন।
বালাসীঘাট ছাড়াও ফুলছড়ি ঘাট, সৈয়দপুর ঘাট, কামারজানি ঘাট, শ্রীপুর ঘাট, পোড়ার চর, হরিপুর ঘাটসহ রয়েছে আরও অনেক ঘাট। দিনের বেলা চরাঞ্চল ঘোরা কিংবা সুযোগ বুঝে এনজিও কর্মীদের আবাসস্থলে রাত যাপন করাও সম্ভব।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খুব অল্প খরচে এখানে খাবার পাওয়া যায়। ২০ টাকায় গাইবান্ধা শহর থেকে অটোতে চড়ে চলে আসা যায় বালাসীঘাটে। নদীর টাটকা মাছের ঝোল খাওয়ার মজাই আলাদা। চরাঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তা মন ভরিয়ে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে দেখা যাবে চরের হাটবাজার, জীবন-জীবিকা ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য।’
চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম, চিনা, কাউন, তিল, তিশি, টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স, পটল, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। এক সময়ের বালুচর এখন রূপ নিয়েছে সোনার চরে। তবে বর্ষায় সেই চরাঞ্চল ডুবে যায়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট—সবই চলে যায় পানির নিচে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ৮ দাবিতে পদযাত্রা
এই তিন নদীর পারে বাঁধের পাশে বসার স্থান, দোলনা, স্পিডবোটে ভ্রমণের ব্যবস্থা, রিসোর্ট, আনন্দতরী, হোটেল-মোটেল তৈরি হলে এই স্থান হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নিরাপত্তায় রয়েছে নৌপুলিশ ফাঁড়ি। এসব বাস্তবায়িত হলে শুধু পর্যটন নয়, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহম্মদ বলেন, ‘বালাসীঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে ভালো ভূমিকা রেখেছে। আমরা সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
১২৭ দিন আগে