সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন
ক্যাফে: কোক স্টুডিও বাংলায় হৃদয়ের সুর আর পুরনো দিনের স্মৃতির এক দারুণ ফিউশন
কিছু গান শুধু শোনা হয়, আর কিছু গান আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে—যেন একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। ঠিক তেমনি ‘ক্যাফে’ গানটি শুনলে মনে হবে বাংলা ও ল্যাটিন সুরের মিশ্রণ ঘটেছে, কারণ এটি একটি আধুনিক বাংলা গান যা ল্যাটিন সঙ্গীতের প্রভাবকে ধারণ করে।
শায়ান চৌধুরী অর্ণবের এই নতুন কাজ, ‘ক্যাফে’ ঠিক সেইরকম একটি গান ও আধুনিক বাংলা সংগীতের অংশ। যেখানে ঐতিহ্যবাহী বাংলা গানের সঙ্গে ল্যাটিন সুরের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।
এছাড়া একটা উষ্ণ, আবছা আলোয় ভরা ঘরকে যদি শব্দ দিয়ে ধরে রাখা যেত, সেটা এই গানটাই হতো। এটি মূলত একটি সংগীত শৈলী, যা দুইটি ভিন্ন ধারার সুর ও তালকে একত্রিত করে।
তাছাড়াও এই গানটি আমদের মধ্যে নতুন ও আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দেয় যে— জীবনের "Real Magic" আসলে দুটো মনের নীরবতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ঢাবিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ক্যাম্পাস স্ট্যান্ডআপ কমেডি শো ‘হাসির আড্ডা'
গানটিতে বাংলা গানের স্বাভাবিক ঢঙ এবং ল্যাটিন সঙ্গীতের ছন্দ, যেমন সালসা বা অন্যান্য ল্যাটিন নাচের গানের সুরের প্রভাব থাকে। বিশেষ করে ঐতিহ্য আর নতুনত্বের দারুণ বোঝাপড়া।
এই গানের শেকড়টা মজবুত দুটো জায়গায়— একটা হলো গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের (মহীনের ঘোড়াগুলি) সেই প্রিয় নস্টালজিক সুর "আমার প্রিয় ক্যাফে", আর অন্যটা হলো এডি পালমিয়েরির ক্লাসিক "Café"-এর দারুণ ছন্দ। এছাড়া প্রযোজক শুভেন্দু দাশ শুভ খুব দক্ষতার সঙ্গে দুটো ভিন্ন ধারাকে এমনভাবে এক করে দিয়েছেন যে সুরটা শুনতে একইসঙ্গে চেনা আর দারুণ ফ্রেশ লাগে।
এদিকে তানযীর তুহিনের কণ্ঠস্বরে বাংলার সেই চেনা "নস্টালজিয়া" দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ক্যাফে যেন ছোট ছোট ব্যক্তিগত গল্পের একটি জীবন্ত বই। এই গানের ভেতরের কথাগুলো তার আন্তরিক উষ্ণতায় যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
গাবুর পারকাশন যেন সেই পুরনো ছন্দের ধারক, একটা জটিল অথচ মসৃণ রিদম তৈরি করেছে। আর লিভিয়া মাত্তোসের অ্যাকর্ডিয়ন ইউরোপীয় ফোক-জ্যাজের একটা জাদুকরী, মিষ্টি ছোঁয়া দিয়েছে। যখন ব্রাস সেকশন (ফ্র্যান্সিস আর অপূর্ব) বাজনা শুরু করে, তখন শান্ত গানটা যেন উড়তে শুরু করে, ভেতরের সেই নীরব ভাবনাগুলো একটা প্রাণবন্ত নাচে বদলে যায়।
আরো পড়ুন: ‘আমিই নজরুল সম্মাননা’ পেলেন খিলখিল কাজী, ইয়াসমিন মুশতারী ও অনুপম হায়াৎ
‘ক্যাফে’কে একটা ফিউশন বলার চেয়ে আগে একটা অনুভূতি বলাই ভালো। গানের নোটে বলা সেই শান্ত শক্তিকে এটা ধরে রেখেছে: শেষ বিদায়, প্রথম দেখা, বা দুটো মনের মাঝে একটুখানি চুপ থাকা। এই দারুণ মিউজিক পিসটা প্রমাণ করে যে কিছু আবেগ—যেমন নিখুঁত কফি বা নীরব মুহূর্ত—ভাষা বা দেশের সীমানা বোঝে না।
এই একটা গান তৈরি করতে যতজন যুক্ত ছিলেন, সবার জন্যেই এটা একটা দারুণ অর্জন। মিথুন চক্রবর্তী, প্রদ্যুৎ চ্যাটার্জিয়ার মতো শিল্পীরা তো আছেনই, সঙ্গে আছেন ফয়জান আর আহমদ (বুনো) এবং সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের নেতৃত্বে থাকা বিশাল ক্রিয়েটিভ আর সাউন্ড টিম।
তারা শুধু একটা গান বানাননি; তারা এমন একটা জায়গার নীরবতা ধরে রেখেছেন যেখানে সবার ব্যক্তিগত গল্পের টুকরোগুলো মিশে থাকে।
আরো পড়ুন: ধ্রুপদী সঙ্গীতে মুগ্ধতা ছড়াল সিদ্ধেশ্বরী ’৬৯ ব্যাচের সঙ্গীতানুষ্ঠান
৩৯ দিন আগে