চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে ‘টাইট’ দিতেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সফরের শুরুতে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছান শি। হ্যানয়ের বৈঠক শেষেই এ সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রতিবেশী ৩টি দেশে সফর শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্যমতে, শি তার সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন।
এমন একটি সময় শি এই সফর শুরু করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কারোপ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রাম্পের শুল্কারোপে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সফরের প্রথমদিনে ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ দেশ দুটির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মজবুত করতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করেন শি ও লাম।
আরও পড়ুন: চীন বাদে সব দেশের ওপর মার্কিন পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত
এর পরপরই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতির উদ্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এখানে আমি চীনেরও দোষ দেখছি না, ভিয়েতনামেরও না। খুবই ভালো একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আলোচনার বিষয় হলো—কীভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টাইট দিতে পারি!’
বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীনের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ওপর রয়েছে ওয়াশিংটনের ৪৬ শতাংশ শুল্ক। যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তাই শঙ্কা এখনো কাটেনি। এককভাবে ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ চীনের, গুগলের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা
এ কারণে শুল্ক কার্যকর হলে সেটি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আবার চীনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে চীনেরও একটি বিকল্প বাজার দরকার। সে কারণে চীন এবার দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের প্রেডিডেন্ট আগেই তার এই সফরের পরিকল্পনা করলেও কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গণে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। চীন কিংবা কানাডার মতো কিছু দেশ আবার পাল্টা শুল্কও আরোপ করেছে।
এছাড়া, চীন নিজেদের একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছেন শি জিনপিং।
ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক দলের পত্রিকা নিহানদানের একটি প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে আসলে কেউই জয়ী হবে না। এই সুরক্ষাবাদ (শুল্কারোপসহ নানাভাবে বিভিন্নদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করা) কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।’
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। এ সময় রেলসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৪৫টি চুক্তি সই করা হয়েছে বলে চিন ও ভিয়েতনামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।’
শুধু ভিয়েতনামই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি না করতে পেরে নিজেদের পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে চীন। এই আশঙ্কা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আবার চীনকেও অখুশি না করে চলতে চাইছে দেশগুলো।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বের বৃহৎ দুটির অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আবার সম্পর্ক টিকেও যেতে পারে। এছাড়া এক পর্যায়ে গিয়ে একটি বড় চুক্তি হতে পারে।’
কোনো চুক্তি হবে কিনা বা এই শুল্কারোপ আসলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করবে; তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৯০ দিনের জন্য শুল্কের স্থগিতাদেশ সাময়িক।
নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কোনো দেশই এখনো এই শুল্কের আওতাধীন না, চীন তো একদমই না। তারা আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।’
২৩৪ দিন আগে
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত: শি জিনপিং
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া এবং একে অপরকে আঘাত করা ও তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে সফল হতে সহায়তা করা।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে শি জিনপিং এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ৪৫ বছর ধরে, সম্পর্কটি বেশ উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে গেছে। পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা রয়েছে। যেমন- চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিবর্তে অংশীদার হওয়া উচিত; একে অপরকে আঘাত করার পরিবর্তে একে অপরকে সফল হতে সহায়তা করা; নেতিবাচক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে পারস্পরিক মিলের জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন এবং মতপার্থক্যগুলো এড়িয়ে চলুন। এক কথা বলে আরেক কাজ না করে, কাজের মাধ্যমে সম্মান করুন।’
এ বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকী চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও উভয় পক্ষেরই ভালো হয়- এ ধরনের সহযোগিতাকে তিনটি প্রধান নীতি হিসেবে প্রস্তাব করেন তিনি। অতীত থেকে শিখে ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগানোর কথাও বলেন শি।
আরও পড়ুন: চীনের আনহুই প্রদেশের সঙ্গে ডিএনসিসি’র সমঝোতা স্মারক সই
এখন এমন কিছু রূপান্তর দেখা যাচ্ছে যা গত এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অশান্ত বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ জোরদার করা, মতপার্থক্য নিয়ন্ত্রণ এবং সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া উভয় দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা।
তিনি বলেন, 'আমি আগেও অনেকবার বলেছি যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য পৃথিবীটি যথেষ্ট বড়।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে। চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি একটি মৌলিক সমস্যা যা অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে। সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল, উন্নতি এবং এগিয়ে যাওয়া।
গত বছর সান ফ্রান্সিসকোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা সান ফ্রান্সিসকো ভিশন চালু করেছেন যা ভবিষ্যৎমুখী এবং তাদের সাধারণ বোঝাপড়া অনুসরণ করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং গত কয়েক মাসে কিছু ভালো অগ্রগতি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে যা মোকাবিলা করতে হবে যা আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদের ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও আমার মধ্যে এবারের সফরের বিষয়ে একমত হয়েছিলাম। আশা করছি আপনারা এটি ফলপ্রসূ করবেন।’
প্রেসিডেন্ট শির কাছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন। তিনি উল্লেখ করেন, সান ফ্রান্সিসকোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট শির বৈঠকের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দ্বিপক্ষীয় মিথস্ক্রিয়া, মাদক দমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের আদান-প্রদানের মতো ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতায় ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত ও চীন যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ব যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তার বহুবিধতা ও জটিলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সফরকালে তিনি যে সব স্তরের আমেরিকানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তারা সবাই মার্কিন-চীন সম্পর্কের উন্নতি দেখার আশা প্রকাশ করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন কোনো স্নায়ুযুদ্ধ চায় না, চীনের ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না, চীনের উন্নয়ন দমন করতে চায় না, চীনের বিরুদ্ধে তার মিত্রতা পুনরুজ্জীবিত করতে চায় না এবং চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব করার কোনো ইচ্ছাও তাদের নেই।
যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতি মেনে চলে। এটি চীনা পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে, সান ফ্রান্সিসকোতে দুই রাষ্ট্রপতি যা সম্মত হয়েছিলেন তা অনুসরণ করতে, আরও সহযোগিতা চাইতে, ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল হিসাব এড়াতে, দায়িত্বশীলভাবে পার্থক্য পরিচালনা করতে এবং মার্কিন-চীন সম্পর্কের স্থিতিশীল বিকাশ অর্জনের আশা করে।
প্রেসিডেন্ট শি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে তার শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে বলেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইও বৈঠকে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-চীনের রয়েছে গভীর রাজনৈতিক আস্থা ও সহযোগিতা: শি জিনপিং
৫৮৭ দিন আগে
‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণের কাজ পরিদর্শনে উহানে শি জিনপিং
মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ পরিদর্শনের জন্য মঙ্গলবার রোগটির প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহান পৌঁছেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
২০৯৬ দিন আগে