ভ্রমণ
দার্জিলিংয়ের টংলু ও সান্দাকফু যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
পিলে চমকানো উচ্চতায় মেঘ ছুঁয়ে যাওয়া পাহাড় ভ্রমণের মাঝে কেবল দুঃসাহসিকতা নয়, থাকে অজানাকে নতুন করে জানার হাতছানি। উঁচু-নিচু দুর্গম পথ পদব্রজে ভ্রমণের আনন্দ আশেপাশের বীথিকার রাজ্য দু’চোখ ভরে দেখার অনুভূতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রোমাঞ্চ আরও একধাপ বেড়ে যায় যখন এর সঙ্গে যুক্ত হয় তুষারপাত। নিদেনপক্ষে বাংলাদেশি ট্রেকারদের জন্য তা নিতান্তই এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। দার্জিলিংয়ের টংলু হয়ে সান্দাকফু অভিমুখের যাত্রাপথটি তেমনই এক গন্তব্য। অতিক্রম করা যথেষ্ট সহজ হওয়ার কারণে ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এই ট্রেকিং পথটি। চলুন, জনপ্রিয় পর্যটন স্থানটিতে ভ্রমণ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
দার্জিলিং
পূর্ব হিমালয়ে অবস্থিত ভারতের উত্তরাঞ্চলের শহর দার্জিলিং, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার গড় উচ্চতা ৬ হাজার ৭০৯ ফুট। এর উত্তরে সিকিম এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ। মেঘমুক্ত দিনে উত্তর দিগন্ত জুড়ে দেখা যায় বিশ্বের তৃতীয়-সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরে প্রায় সারা বছরই থাকে শীতের মৌসুম। মেঘে ঢাকা নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য, চা-বাগান ও ঐতিহাসিক রেলওয়ের জন্য দার্জিলিং বিশ্বজুড়ে একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এর প্রধান আকর্ষণ বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং টয় ট্রেন ও নান্দনিক পাহাড়ি রাস্তাগুলো। কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম দৃশ্যের পাশাপাশি টাইগার হিলের সূর্যোদয় বিশ্ব পরিব্রাজকদের কাছে টানে এক অমোঘ আকষর্ণে।
আরো পড়ুন: তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
টংলু
দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত ছোট্ট একটি ট্রাঞ্জিট শহর মানেভঞ্জন, যেখান থেকে সান্দাকফু চূড়ায় যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি গ্রাম পড়ে। এগুলোরই একটি হচ্ছে টংলু, মানেভঞ্জন থেকে যার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। ১০ হাজার ১৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটিই যাত্রা বিরতির জন্য ট্রেকারদের প্রিয় স্থান। সমতলে যখন গ্রীষ্মের উষ্ণতা, তখনও ভারত ও নেপাল সীমান্তবর্তী এই নিরিবিলি গ্রামে থাকে কনকনে শীত। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেও চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় দৃশ্য।
এছাড়া কাছেই রয়েছে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক। মানেভঞ্জন থেকে গাড়ি করে গেলে মেঘমা পর্যন্ত যেয়ে তারপর সেখান থেকে ২ কিলোমিটার ট্রেকিং করে টংলুতে পৌঁছা যায়।
সান্দাকফু
ভারত ও নেপালের সীমান্তে অবস্থিত সিঙ্গালিলা রিজের একটি পর্বতশৃঙ্গের নাম সান্দাকফু বা সান্দাকপুর যার উচ্চতা ১১ হাজার ৯৩০ ফুট। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই সর্বোচ্চ স্থানটিতে আরোহণ করতে হলে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের একদম শেষ প্রান্তে যেতে হয়।
আরো পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
এখানে রয়েছে কয়েকটি হোটেল ও ছোট্ট একটি গ্রাম, যেখান থেকে বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ পবর্তশৃঙ্গের মধ্যে চারটিই চোখে পড়ে। সেগুলো হলো- এভারেস্ট, কাঞ্চচনজঙ্ঘা, লোটসে, এবং মাকালু শৃঙ্গ।
২ দিন আগে
নেপালের অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অজানা ও রহস্যময় জনপদ অন্বেষণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার নাম ট্রেকিং, যেখানে ভাঙতে হয় দুঃসাহসিকতা ও শারীরিক সহনশীলতার বাঁধ। পিলে চমকে দেওয়া উচ্চতায় বিস্তৃত বীথিকাজুড়ে আন্দোলিত হয় ভয়ঙ্কর সুন্দরের উপাখ্যান। নতুন কিংবা অভিজ্ঞ; যে কোনো ট্রেকারের মনেই এই নৈসর্গ সৃষ্টি করে দুর্গমকে আলিঙ্গনের এক অদম্য নেশা। আর ঠিক এ কারণেই অবিস্মরণীয় হিমালয়ের বুকে নেপালের অন্নপূর্ণা পরিণত হয়েছে ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্যে। এই জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য নিয়েই আজকের ভ্রমণ নিবন্ধ। চলুন, অন্নপূর্ণা ভ্রমণের উপায় ও প্রয়োজনীয় খরচ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অন্নপূর্ণার ভৌগলিক অবস্থান
উত্তর-মধ্য নেপালের গন্ডাকি প্রদেশের অন্নপূর্ণা পর্বতশ্রেণীর প্রধান পর্বত অন্নপূর্ণা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮ হাজার ৯১ মিটার। এর সুপরিচিত ট্রেকিং অঞ্চলটি হলো ৭ হাজার ৬২৯ বর্গ-কিলোমিটারের অন্নপূর্ণা কন্জার্ভেশন এরিয়া। এখানকার ট্রেকিং রুটগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হলো-
· অন্নপূর্ণা অভয়ারণ্য থেকে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের রুট
· অন্নপূর্ণা হিমাল ও জমসম রুটসহ অন্নপূর্ণা সার্কিট
· জমসন থেকে জোমসম ও মুক্তিনাথ মন্দিরের রুট
এছাড়াও ঘোরেপানি বা ঘান্ড্রুকের মতো আরও কিছু প্রসিদ্ধ রুট রয়েছে। প্রায় সবগুলো রুটেরই শুরু হয় পোখারা শহর থেকে। বিভিন্ন আকারের হওয়ায় প্রত্যেকটি রুট অতিক্রম করতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রয়োজন হয়। ন্যূনতম ৩ থেকে ৪ দিন থেকে শুরু করে কোনো কোনো রুটে ২ সপ্তাহেরও অধিক সময় লেগে যায়।
আরো পড়ুন: ট্রেকিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে নিরাপদে থাকার উপায়
নেপালের পর্যটন ভিসা আবেদনের পদ্ধতি
সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নেপালে রয়েছে বিনামূল্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা। মূলত ১৫ দিনের কম সময়ের জন্য ভ্রমণ করা হলে কোনো ভিসা ফি’র প্রয়োজন হয় না। বিমানবন্দরেই কাস্টম্সের সময় ‘পর্যটন ভিসা’ এবং ‘আগমন কার্ড’-এর জন্য দরকারি ফর্ম পূরণ করা যায়। তবে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় নেপাল অভিবাসনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও ভিসার আবেদন করা যায়। এতে করে কাস্টম্সে সময় বাঁচে। ভ্রমণের ন্যূনতম ১০ দিন আগে থেকে আবেদন জমা দেওয়া যায়।
আবেদনের লিংক: https://nepaliport.immigration.gov.np/on-arrival/IO01
এই পর্যটন ভিসার আবেদনের জন্য যে নথিপত্র লাগবে, তা হচ্ছে-
· নেপালে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকা বৈধ পাসপোর্ট
· সম্পূর্ণ পূরণ করা ভিসা আবেদন ফর্ম
· সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· জন্ম সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড)
বিমানবন্দরে অভিবাস সংক্রান্ত কাজের সময় সঙ্গে রিটার্ন টিকেট, নেপালে হোটেল বুকিংয়ের কাগজ, এবং পাসপোর্ট রাখতে হবে।
এরপর ট্রেকিংয়ের জন্য অতিরিক্ত পার্মিট নিতে হবে। একটি এসিএপি (অন্নপূর্ণা কন্জার্ভেশন এরিয়া প্রোজেক্ট) অফিস থেকে এসিএপি পার্মিট। এর জন্য পাসপোর্ট আর ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগে। পার্মিট ফি ১ হাজার নেপালি রুপি বা ৮৮৯ টাকা (১ নেপালি রুপি = ০ দশমিক ৮৯ বাংলাদেশি টাকা)।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে- টিআইএমএস (ট্রেকিং ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) কার্ড, যার জন্য খরচ হবে আরও ১ হাজার রুপি (৮৮৯ টাকা)।
আরো পড়ুন: এভারেস্টজয়ী ৬ বাংলাদেশি: লাল-সবুজের পতাকা হাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের অনুপ্রেরণা
অন্নপূর্ণা ভ্রমণে কি কি দেখবেন
রাজকীয় পর্বতমালার পটভূমিতে এখানে রয়েছে অবারিত রডোডেনড্রন বন, আলপাইন তৃণভূমি ও হিমবাহ উপত্যকা। চোখে পড়ে তুষার চিতাবাঘ, নীল ভেড়া ও দুর্লভ প্রজাতির পাখি। অনন্য সংস্কৃতির প্রতিনিধিরূপে বহুকাল ধরে এখানে বসবাস করছে গুরুং, থাকালি ও মানাঙ্গির মতো সম্প্রদায়গুলো। ফলে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় জন কোলাহলের গ্রামগুলোতে দেখা যায় প্রাচীন মঠের মতো নানা ধর্মীয় স্থান।
তন্মধ্যে ঘোরেপানি গ্রামের কাছাকাছি অবস্থিত পুন হিল অন্নপূর্ণা ও ধৌলাগিরি রেঞ্জ সূর্যোদয় দর্শনের জন্য বিখ্যাত।
তিব্বতি শৈলীতে প্যাগোডার মতো ছাদ ও জটিল কাঠের খোদাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিনাথ মন্দির। এখানে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১০৮টি জলধারা সম্বলিত স্থাপনা মুক্তিধারা। ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে মন্দির কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে একাধিক চিরন্তন শিখার ‘জ্বালা মাই’।
মন্দিরের পেছনে অভিজাত থুরং লা পাস এবং অন্নপূর্ণা ও ধৌলাগিরি পর্বতমালার তুষারাবৃত শৃঙ্গ।
নার্ফু নদীর পাশে রয়েছে নিঃসঙ্গ অথচ অপরুপ সুন্দর নার্ফু ভ্যালি। মাস্তাঙ জেলার উপরের অংশে পাওয়া যাবে নেপালের প্রাচীন গুপ্ত শহর লো মান্থাংর দেখা। তিলিকো লেকের স্বচ্ছ পানিতে চারপাশের পাহাড়ের প্রতিফলন যেন সম্মোহনের নামান্তর।
ট্রেকারদের যাত্রা বিরতির জন্য জনপ্রিয় স্টপেজ ঘান্ড্রুক গ্রাম, যেখান থেকে পাহাড়ি বীথিকার সবচেয়ে আশ্চর্য রূপটা দেখা যায়।
থুরং লা পাস ধরে ৫ হাজার ৪১৬ মিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সময় চোখে পড়ে অন্নপূর্ণা ১, ২, ৩ ও ৪, মানাস্লু, গঙ্গাপূর্ণা ও ল্যাংট্যাং হিমাল।
আরো পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ের সেরা সময়
অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে শীতকালে প্রায়ই ট্র্যাক বন্ধ থাকে। অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে বসন্তকাল। অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের সময়কে বেছে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া শীতের আগ দিয়ে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মৌসুমটাও ভালো।
সরাসরি নেপালের ফ্লাইট এবং হোটেল বুকিং করবেন যেভাবে
অভিবাসন সংক্রান্ত কাজের জন্য আগাম ফ্লাইট টিকেট এবং হোটেল বুকিং করে নেওয়াটা জরুরি। বিমানের টিকেটের জন্য অনলাইন পোর্টালগুলোর মধ্যে রয়েছে গোজায়ান, ফ্লাইট এক্সপার্ট ও শেয়ার ট্রিপ। এগুলোতে রাউন্ড ট্রিপের টিকেট কিনতে খরচ হতে পারে মাথাপিছু ৩৪ হাজার ৯১১ থেকে ৩৬ হাজার ২৫৫ টাকা।
শেয়ার ট্রিপ ও গোজায়ানের মাধ্যমে প্রতি রাতের জন্য জনপ্রতি ৬৯৪ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫১৩ টাকার মধ্যে হোটেল বুকিং দেওয়া যাবে।
কাঠমান্ডু ও পোখারার অনেক ট্রাভেল স্টোরে স্লিপিং ব্যাগ ও ডাউন জ্যাকেট ভাড়া পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে স্লিপিং ব্যাগ ভাড়া প্রতিদিনের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ রুপি বা ১৭৮ থেকে ৪৪৪ টাকা। অপরদিকে, ডাউন জ্যাকেট ভাড়া দিনপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ রুপির (১৭৮ থেকে ৩৫৬ টাকা) মধ্যে।
আরো পড়ুন: ভিয়েতনাম ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অন্নপূর্ণার সামগ্রিক ভ্রমণ খরচ কেমন হতে পারে
একদম নতুনদের জন্য অন্নপূর্ণা ভ্রমণে গাইড সঙ্গে নেওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জন্য গাইডকে দিতে হতে পারে ৩ থেকে ৪ হাজার রুপি (২ হাজার ৬৬৬ থেকে ৩ হাজার ৫৫৫ টাকা)।
বিভিন্ন আকারের পাহাড়ি পথগুলোতে যাত্রা পথে থাকার জন্য ট্রেকারদের প্রথম পছন্দ থাকে ট্রি-হাউসগুলো। প্রতি রাতের জন্য এখানে ভাড়া দিতে হয় ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপি (৩৫৬ থেকে ১ হাজার ৩৩৩ টাকা) পর্যন্ত। এখানে সরবরাহকৃত খাবারের দাম সাধারণত ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপির (৪৪৪ থেকে ১ হাজার ৩৩৩ টাকা) মধ্যে হয়ে থাকে।
তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো যাত্রার জন্য খাবারের জন্য দিনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার রুপি (১ হাজার ৭৭৮ থেকে ২ হাজার ৬৬৬ টাকা) বাজেট রাখা উচিত। শহরের রেস্তোরাঁ বা স্ট্রিট ফুডগুলোতে খরচ হতে পারে ২০০ থেকে ৫০০ রুপি (১৭৮ থেকে ৪৪৪ টাকা)।
পদব্রজে ভ্রমণ শুরুর পূর্বে যানবাহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শেয়ার্ড জিপের খরচ জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ রুপি (৪৪৪ থেকে ৭১১ টাকা)। তবে লোকাল বাসে এই খরচটা ২০০ থেকে ৩০০ রুপিতে (১৭৮ থেকে ২৬৭ টাকা) নেমে আসে। তবে কাঠমান্ডু থেকে সরাসরি পোখারার ট্যুরিস্ট বাসের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রুপি (৮৮৯ থেকে ১ হাজার ৬৭ টাকা)।
সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৪ দিনের ট্রেকিংয়ের উদ্দেশ্যে নেপাল ভ্রমণের জন্য সম্ভাব্য বাজেট ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই বাজেট ৫৩ হাজার ৩২৭ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৫৪ টাকার সমান।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডের ক্রাবি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ট্রেকিংয়ের জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
· মাইনাস ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় থাকার জন্য উপযোগী কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেওয়া
· কাপড়ের ফেব্রিক পলেস্টার বা সিনথেটিক হওয়া উচিত। এতে করে ঘামে ভিজে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে না।
· পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার জন্য আরামদায়ক বুট, ট্রেকিং স্যান্ডেল ও ৩ থেকে ৪ জোড়া মোজা
· ক্যামেরার সঙ্গে চার্জারসহ অতিরিক্ত ব্যাটারি ও পাওয়ার ব্যাংক
· ব্যাগ খুব ভারী হওয়া চলবে না
· পাঞ্চ টাইপের রেইনকোর্ট
· ত্বকের আর্দ্রতার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি
· পোলার্ড আইস সানগ্লাস
· পাতলা ও মোটা মোট ২ রকমের গ্লাভ্স
· পাসপোর্ট ও এনআইডির মূল্য কপির সঙ্গে ফটোকপি ও কমপক্ষে ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি |
আরো পড়ুন: ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ট্রেকিংয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে হবে। এছাড়াও নিতে হবে:
· মেডিকেল ফার্স্ট এইড
· হেক্সিসল (বিমানে বহন নিষেধ, তাই নেপালে প্লেন থেকে নেমে কিনে নিতে হবে)
· ওয়ান টাইম ব্যান্ড এইড ও মাইক্রোপোর ব্যান্ডেজ
· আইস কুল ম্যাক্স
শেষাংশ
নেপালের অন্নপূর্ণা ট্রেকিং মানেই অমূল্য এক অভিজ্ঞতা, যেখানে বিস্ময়কর প্রকৃতির সঙ্গে সন্নিবেশ ঘটে অনন্য জনগোষ্ঠীর সান্নিধ্য। এই অভিজ্ঞতা লাভের জন্য নেপালের অন-অ্যারাইভাল ভিসার পাশাপাশি নিতে হবে এসিএপি ও টিআইএমএস পার্মিট। বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি পথগুলোর কোনো কোনোটি অতিক্রম করতে ২ সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। তাই ভ্রমণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা জরুরি। ট্রেকিংয়ের সময় যাত্রা বিরতির জন্য স্লিপিং ব্যাগ বা ডাউন জ্যাকেট নেওয়া একই সঙ্গে আরামদায়ক ও রোমাঞ্চকর। সর্বোপরি, একটি স্বাস্থ্যকর ট্রেকিং অভিজ্ঞতার জন্য ওষুধপত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সঙ্গে রাখা অপরিহার্য।
আরো পড়ুন: তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
৬ দিন আগে
ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকার ১০টি ঐতিহাসিক মন্দির
জনাকীর্ণ নগরী ঢাকার শত বছরের ইতিহাসের এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এর আনাচে-কানাচে এখনও টিকে থাকা মন্দিরগুলো। তীর্থস্থানগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতিফলন। একই সঙ্গে স্থাপনাগুলো তৎকালীন সময়ের স্থাপত্যশৈলীর নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অধিকাংশগুলোতে এখনও পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠান। চলুন, ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকার এমনি ১০টি মন্দির সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার ১০টি প্রাচীন মন্দির
.
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির
রাজধানীর পলাশীতে অবস্থিত বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম এই উপাসনালয়টি ঢাকার প্রথম হিন্দু মন্দির। এর গোড়াপত্তন হয় সেন রাজবংশের সম্রাট বল্লাল সেনের হাতে ১২শ শতকে।
কথিত আছে যে, বল্লাল সেনের জন্ম হয় বুড়িগঙ্গার এক জঙ্গলে। সেখানে বেড়ে ওঠার সময় একদা তিনি এক দুর্গা মূর্তি পান। তার বিশ্বাস ছিল যে, জঙ্গলের যাবতীয় বিপদ থেকে তাকে রক্ষার পেছনে রয়েছে এই দেবী। পরবর্তীতে রাজ ক্ষমতায় বসার পর বল্লাল সেন এই স্থানে একটি মন্দির স্থাপন করেন। বনের ভেতর আবৃত অবস্থায় ছিল বলে এই দেবীকে ডাকা হতো ‘ঢাকেশ্বরী’ তথা ‘ঢাকা ঈশ্বরী’। অতঃপর মন্দিরটিও এই নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে।
কয়েকটি মন্দির ও সৌধের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ভবনগুলোর রঙ লাল ও উজ্জ্বল হলুদাভ। এখানকার চারটি শিব মন্দিরের প্রত্যেকটি একই নকশায় গড়া।
প্রতি বছর রাজধানীর দুর্গা পূজার সব থেকে বড় আয়োজনটি হয় এখানে। এছাড়া জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রাও শুরু হয় এই মন্দির প্রাঙ্গণ থেকেই।
গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটো, রিকশা বা পাবলিক বাসে করে সরাসরি আসা যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।
আরো পড়ুন: রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
জয় কালী মন্দির
পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজার এবং ওয়ারীর ঠিক মাঝামাঝি ২৪ নম্বর জয় কালী মন্দির সড়কটির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই মন্দির।
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই উপাসনালয়টি তৈরি হয় ১০০১ বঙ্গাব্দে তৎকালীন নবাব তুলসী নারায়ণ ঘোষ এবং নব নারায়ণ ঘোষের তত্ত্বাবধানে।
মন্দিরের মোজাইক করা মেঝে আর টালি করা দেয়ালে খচিত রয়েছে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে দেখা যায় স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি ঐশ্বরিক প্রতীক ‘ওম’। পুরো স্থাপনাটি মূলত একটি বর্গাকার কাঠামো, যার কলামগুলো আপাদমস্তক যথেষ্ট ভারী ও পুরু উপাদান দিয়ে গড়া। আর উপরের দেয়ালগুলো করা হয়েছে খিলান আকৃতির।
গুলিস্তান বাস-স্টপেজ থেকে এই তীর্থস্থানটি ১৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
রমনা কালী মন্দির
বাংলা একাডেমির বিপরীতে ও ঢাকার রমনা পার্কের বহির্ভাগে অবস্থিত গোটা মন্দির কমপ্লেক্সের আয়তন প্রায় ২ দশমিক ২৫ একর।
জনশ্রুতি অনুসারে, আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে গোপালগিরি নামের এক সন্ন্যাসী ঢাকায় সাধন-ভজনের একটি আখড়া গড়ে তোলেন। এই আখড়াতেই আরও ২০০ বছর পর আরেক বড় সাধু হরিচরণ গিরি নির্মাণ করেন মূল রমনা কালীমন্দির।
সেই থেকে মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে বড় দিঘিটি একসময় দর্শনার্থী ও উপাসকদের সাঁতার কাটার জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রধান অনুষ্ঠান কালী পূজা হলেও এখানে দুর্গাপূজাও বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়।
গুলিস্তান থেকে বাসে করে মৎস্য ভবন পর্যন্ত এসে অথবা রিকশা যোগে গুলিস্তান থেকে সরাসরি যাওয়া যায় রমনা কালীবাড়িতে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
১ সপ্তাহ আগে
তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
উচ্চশিক্ষা, চাকরি ও ভ্রমণসহ নানা কাজে বিদেশ যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিমানের টিকিট কেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এবং সবচেয়ে কম সময় লাগে বলে বিদেশগামী মানুষ ভ্রমণের জন্য আকাশপথ বেছে নেয়। কিন্তু বিমান ভাড়ার চওড়া মূল্যের কারণে বাজেট-সচেতন ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাটি খুব একটা সুখকর হয় না। তাই ব্যয়বহুল যাত্রাপথের চাপ এড়াতে আগে থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। সাশ্রয়ী বিকল্পের এই অনুসন্ধান অর্থসংকটের বিড়ম্বনা অনেকটাই লাঘব করতে পারে। চলুন, অপেক্ষাকৃত কম দামে ফ্লাইট বুকিং দেওয়ার দশটি কার্যকর কৌশল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
স্বল্পমূল্যে বিমানের টিকিট কেনার ১০টি টিপস
অগ্রিম টিকিট বুকিং
বিমান ভাড়ায় খরচ বাঁচানোর সাধারণ এবং কার্যকরি উপায় হচ্ছে অগ্রিম ফ্লাইট বুক করা। এয়ারলাইন্সগুলোর সাধারণত প্রস্থানের সর্বোচ্চ ১১ মাস আগ পর্যন্ত টিকিট প্রকাশ করে। যত আগে টিকিট সংগ্রহ করা যায় ততোই ভালো। তবে এর সর্বনিম্ন সময়সীমা হলো ভ্রমণের তারিখের ন্যূনতম ১ থেকে ৩ মাস। এই শেষ সময়ের আগেই বুকিং দেওয়া হলে নিজের পছন্দসই সিট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। টিকিট ছাড়ার সময় থেকে চালু হওয়া প্রচারণামূলক ভাড়া এবং ছাড়ের সুবিধাগুলোর মেয়াদ সাধারণত এই সময়ে এসেই শেষ হয়।
এই সুযোগগুলো পাওয়ার জন্য যেকোনো উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা রাখা উচিত।
আরো পড়ুন: ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ইন্টারনেট ব্রাউজারের ইন্কগ্নিটো মুড ব্যবহার করা
অনেক ট্রাভেল ওয়েবসাইট যাত্রীদের টিকিট খোঁজার বা কেনার ইতিহাস ট্র্যাক করে। কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো এয়ারলাইন্সের একই ফ্লাইট বা রুট বারবার সার্চ করলে এই অনুসন্ধান কুকিজ আকারে তার ব্যবহৃত ব্রাউজারে জমা হয়। এতে করে সেই এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীর সার্চ করা রুটগুলো দেখে তার চাহিদা বুঝতে পারে। এর ফলে তারা সেই নির্দিষ্ট রুটে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভাড়া আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই সেই যাত্রী দ্রুত টিকিট কিনে ফেলার জন্য তাগাদা অনুভব করেন। এমন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার বশবর্তী হয়ে অধিকাংশরাই টিকিট কিনেও ফেলেন।
কিন্তু ইন্কগ্নিটো মুডে গিয়ে এই সাইটগুলো ব্রাউজ করলে সেই ট্র্যাকিং সিস্টেম আর কাজ করে না। ফলে একজন ব্যবহারকারী যেকোনো সময়ের স্বাভাবিক দামটি দেখতে পারেন। এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে কয়েকটি টিকিট বিক্রি প্লাটফর্মের দামগুলো পক্ষপাতহীনভাবে যাচাই করা যায়।
এই সুবিধাটি পাওয়ার জন্য যেকোনো ব্রাউজারের একদম ওপরে ডান কোণে উল্লম্বভাবে থাকা তিনটি বিন্দুতে ক্লিক করতে হবে। অতপর ড্রপডাউন লিস্ট থেকে বাছাই করতে হবে ‘নিউ ইন্কগ্নিটো উইন্ডো। অথবা কিবোর্ড থেকে এক সঙ্গে প্রেস করতে হবে কন্ট্রোল, শিফ্ট এবং এন বোতাম তিনটি। এরপর নতুন যে উইন্ডোটি ওপেন হবে এখানেই পাশাপাশি একাধিক ট্যাবে ওপেন করা যাবে বিভিন্ন ট্র্যাভেল ওয়েব পোর্টাল।
আরো পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
৩ সপ্তাহ আগে
রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শত বছরের ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতিফলক দেশের মন্দিরগুলো। এগুলোর কোনো কোনোটির স্থাপত্য সৌন্দর্য্য অভিভূত করে দর্শনার্থীদের। কোনো কোনোটির ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় একে ঘিরে শত শত চড়াই-উৎরাইয়ের কিংবদন্তির কথা। এসব বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুভূতির সবগুলো একসঙ্গে এসে ধরা দেবে রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণে গেলে। কারণ দেশের ভেতর এই একমাত্র অঞ্চলে সর্বাধিক সংখ্যক মন্দিরের সন্নিবেশ ঘটেছে। অল্প দূরত্বে থাকা ছোট-বড় স্থাপনাগুলো ধারণ করে রয়েছে গোটা একটি শতাব্দীকে।
চলুন, দেশের এই প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থানটিতে ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্সের অবস্থান
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকগুলো পুরাতন মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত এই কমপ্লেক্সটির অবস্থান রাজশাহীর পুঠিয়ায়। রাজশাহী থেকে নাটোর অভিমুখী মহাসড়কের কাছে বিশাল পরিসর জুড়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছড়িয়ে আছে মন্দিরগুলো। জায়গাটি পড়ছে রাজশাহীর ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং নাটোর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে।
পুঠিয়া মন্দিরগুলোর ইতিহাস
১৭ শতকের এই অঞ্চলের প্রভাবশালী রাজবংশের নাম পুঠিয়া, যাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরগুলো। ১৮ এবং ১৯ শতক জুড়ে তাদের শাসনামলে নির্মিত হওয়ায় পুঠিয়া রাজবংশের নামেই অভিহিত হয় এই মন্দিরগুলো। ধর্মীয় কার্যাবলির পাশাপাশি এগুলো ব্যবহৃত হতো তৎকালীন জমিদারের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে।
পুঠিয়া অধ্যুষিত এলাকা ছিল ব্রিটিশ বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য। ১৭৭৮ সালে ভুবনেন্দ্র নারায়ণের নির্দেশে নির্মাণ করা হয় দোল মন্দির। ১৭৯০ থেকে ১৮০০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় চৌচালা ছোট গোবিন্দ মন্দির। ১৮২৩-এ রাণী ভুবনময়ী দেবী শিব সাগরের উপকণ্ঠে গড়ে তোলেন ভুবনেশ্বর শিব মন্দির। পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের গোড়াপত্তন হয় ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বর্তমানে পর্যটকদের নিকট সর্বাধিক জনপ্রিয় পুঠিয়া রাজবাড়ি নির্মাণকাল ১৮৯৫ সাল। তৎকালীন পুঠিয়ার রানী হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ি শরৎ সুন্দরী দেবীকে উৎসর্গ করে নির্মাণ করেছিলেন মন্দিরটি। সে সময় স্থানীয়ভাবে এটিকে পাঁচআনি প্রাসাদ নামে ডাকা হত।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স যাওয়ার উপায়
সড়কপথে বাসে যেতে হলে ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী, বা আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠতে হবে। এসি কোচগুলোতে সম্ভাব্য ভাড়া মাথাপিছু ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর নন-এসিতে ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৭১০ থেকে ৭৫০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন সময়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। এগুলোতে শ্রেণিভেদে ভাড়া নিতে পারে সর্বনিম্ন ৩৪০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৭৩ টাকা পর্যন্ত।
দ্রুত সময়ে পৌঁছানোর জন্য উত্তরা বিমান বন্দর থেকে আকাশপথেও যাওয়া যেতে পারে। তবে এই যাত্রাপথে ভাড়া বেশ ব্যয়বহুল; জনপ্রতি প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড নেমে যাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে মন্দির কমপ্লেক্সের দূরত্ব ৫ থেকে ১০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
ট্রেন বা বিমানের ক্ষেত্রে স্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে লোকাল বাসে করে পুঠিয়ায় যেতে হবে। এছাড়া নাটোরগামী আন্তঃনগর বাস বা রিজার্ভ গাড়িতে করেও পুঠিয়া যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণে কি কি দেখবেন
এখানকার পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী এবং ১৩টি মন্দির।
এগুলো হলো- বড় শিব মন্দির, রথ মন্দির, দোল মন্দির, পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির, কৃষ্ণপুর শিব মন্দির, কেষ্ট ক্ষ্যাপার মঠ, বড় গোপাল মন্দির ও জগদ্ধাত্রী মন্দির।
অধিকাংশ মন্দিরেরই বিশেষত্ব হচ্ছে সূক্ষ্ম পোড়ামাটির ফলক। জোড় বাংলা স্থাপত্য রীতির সাদৃশ্য থাকলেও এগুলোতে বিদেশি নকশারও মিশেল ঘটেছে। যেমন প্রধান পর্যটন আকর্ষণ পুঠিয়ার রাজবাড়িটিতে অনুসরণ করা হয়েছে ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্য রীতি। কক্ষের দেওয়াল ও দরজায়, কাঠের কাজে, ভবনের সম্মুখের স্তম্ভ, অলংকরনে লতাপাতা ও ফুলের চিত্রকর্ম। এখানে গতানুগতিক হিন্দু স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রেনেসাঁ যুগের ইউরোপীয় নকশা। একটি বিশালাকার লেকের চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মন্দিরগুলোর মাঝে রয়েছে একটি নান্দনিক সবুজ চত্বর।
আরো পড়ুন: বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পঞ্চ রত্ন গোবিন্দ মন্দিরকে বড় গোবিন্দ মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। এর দেওয়ালে চমৎকার পোড়ামাটির অলঙ্করণে প্রকাশ পেয়েছে কৃষ্ণ এবং রাধার ঐশ্বরিক প্রণয়। দরজার দুপাশ ও ভবনের চারপাশের কর্ণারেও পোড়ামাটির ফলকের জয়জয়কার। এগুলোতে ফুটে আছে যুদ্ধের কাহিনী এবং বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবীর চিত্র।
চৌচালা ছোট গোবিন্দ মন্দির নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে চার চালা শৈলী। দক্ষিণের সম্মুখ ভাগটিতে দেখা যায় ব্যাপক পোড়ামাটির কাজ। এই অঙ্কনের বিষয়বস্তু হচ্ছে বিষ্ণুর দশ অবতার, ফুলের নকশা, জ্যামিতিক আঁকিবুকি এবং তৎকালীন নাগরিক জীবনাচরণ।
ভুবনেশ্বর বা পঞ্চরত্ন শিব মন্দিরটি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিব মন্দির। এর সজ্জায় ব্যবহৃত পাঁচটি চূড়া মূলত পূর্ব ভারতে প্রচলিত মনোমুগ্ধকর পঞ্চ রত্ন শৈলীকে প্রতিনিধিত্ব করে। পাঁচটির মধ্যে চারটি চূড়ার প্রত্যেকটিতে রয়েছে ছোট ছোট ১৭টি উপ-চূড়া। কেন্দ্রীয় বৃহত্তর চূড়াটিতে উপ-চূড়ার সংখ্যা ১০৮।
ছোট শিব মন্দিরের অবস্থান পুঠিয়া রাজবাড়ীর ঠিক পিছনে। চার চালা স্থাপত্য শৈলীতে গড়া ছোট এই মন্দিরের সামনের অংশটি ঢেকে আছে পোড়ামাটির ভারী অলঙ্করণে।
ভুবনেশ্বর শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে রথ মন্দির, যেটি অন্য নাম জগন্নাথ মন্দির। দ্বিতল এই স্থাপনাটির কাঠামো অষ্টভুজাকৃতির। দরজার চৌকাঠে ব্যবহার করা হয়েছে বেলে পাথর, যেটি চমৎকার অলঙ্করণে সজ্জিত।
আরো পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
পুঠিয়া রাজবাড়ির সামনের মাঠ পেরিয়ে গেলেই পড়ে দোল মন্দির। এর নিচতলার প্রত্যেক দেওয়ালে সাতটি করে ২৮টি দরজা রয়েছে। দোতলায় পাঁচটি করে ২০টি, তিন তলায় তিনটি করে ১২টি এবং চতুর্থ তলায় একটি করে চারটি দরজা। সব মিলিয়ে প্রবেশের জন্য মোট দরজার সংখ্যা ৬৪। এ কারণে স্থানীয়রা মন্দিরটি নাম দিয়েছে হাজারদুয়ারী। পুরো কমপ্লেক্সে শুধু এই মন্দিরে কোনো প্রতিমা বা পূজার ঘর নেই। সে কারণে এখানে পুরোহিত বা পূজারিদেরও খুব একটা আনাগোনা দেখা যায় না।
পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের কাছেই ছোট আহ্নিক মন্দিরে ব্যবহার করা হয়েছে দো চালা শৈলী। পুরোটা পাতলা ইট ও চুনসুরকিতে বানানো হলেও মন্দিরের কর্ণার ও কার্নিশগুলো রাঙানো হয়েছে পোড়ামাটির চিত্রফলকে। ভেতরের চার দেওয়ালে চারটি পদ্ম এবং পূর্ব দেওয়ালের বাইরের দিকে পোড়ামাটির কারুকাজে জীবজন্তু ও লতা-পাতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা।
অন্যদিকে, বড় আহ্নিক মন্দিরে নকশাটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের একটি অভূতপূর্ব মিশ্র রূপ। এখানে দুই পাশে দুটি চার চালা কাঠামো, আর কেন্দ্রীয় ভাগে দেওয়া হয়েছে দোচালা শৈলী।
পাশাপাশি অবস্থিত বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির, ও ছোট গোবিন্দ মন্দির মূলত চারআনি জমিদারবাড়ীর অংশ।
পোড়ামাটির নান্দনিক চিত্রকর্ম আরও দেখা যায় কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দিরে, যাকে স্থানীয়রা সালামের মঠ নামে ডাকে। এছাড়া খিতিশ চন্দ্রের মঠ বা কৃষ্ণপুর শিব মন্দিরটিতেও রয়েছে পোড়ামাটির অপূর্ব চিত্রফলক।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
৪ সপ্তাহ আগে
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশের স্থাপত্য নিদর্শন ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলো। অনন্য নকশা, কিংবদন্তি শাসক ও সম্প্রদায় এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্মিকতার সন্নিবেশে মহাকালের বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আছে এই স্থাপনাগুলো। যুগ যুগ ধরে শত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাওয়া তেমনি এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির। কেবল বাংলাদেশেই নয়; গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের মন্দিরের ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করছে তিনশত বছরেরও বেশি সময়ের পুরাতন এই নান্দনিক তীর্থস্থানটি। চলুন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ নিয়ে যাবতীয় তথ্যাবলি জেনে নেওয়া যাক।
কান্তজীর মন্দিরের ভৌগলিক অবস্থান
উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম জেলা দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার অন্তর্গত সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগর গ্রামে এই মন্দিরের অবস্থান। জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমের নদীটির নাম ঢেঁপা। এই নদীর তীরবর্তী শ্যামগড় এলাকার কান্তনগর গ্রামটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে প্রাচীন কান্তজীউ মন্দিরের জন্য।
কান্তজিউ মন্দির বা কান্তজীর মন্দিরের নামকরণ
হিন্দু পুরাণ মতে এই অঞ্চলে শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠান হয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দেবতা শ্রীকৃষ্ণের ১০৮ নামের একটি হচ্ছে শ্রীকান্ত বা রুক্সিনীকান্ত। শ্রীকৃষ্ণের নামের এই কান্ত শব্দটি দিয়েই দিনাজপুরের তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ মন্দিরটির নাম রাখেন কান্তজীউ মন্দির। জীউ বা জী শব্দটি ব্যবহৃত হয় সম্মানার্থে। মন্দিরের গোড়াপত্তনের আগে স্থানীয় গ্রামটির নাম ছিলে শ্যামনগর। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামের নাম বদলে রাখা হয় কান্তনগর।
মন্দিরটিতে ছিলো ৯টি রত্ন বা চূড়া, যার কারণে একে নবরত্ন মন্দির নামেও অভিহিত করা হতো।
আরো পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কান্তজীর মন্দিরের ইতিহাস
শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠানকে চির স্মরণীয় করে রাখতে জমিদার প্রাণনাথ রায় ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পোড়ামাটির অলঙ্করণ সমৃদ্ধ এ মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয় শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রুক্মিণীর প্রতি।
মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত রেখেই মারা যান প্রাণনাথ। পরে তার পালক পুত্র রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে সফলভাবে মন্দির নির্মাণের বাকি কাজ সম্পন্ন করেন। সব মিলিয়ে পুরো নির্মাণ কাজে সময় লেগেছিলো প্রায় ৪৮ বছর।
১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মন্দিরটির ৯ চূড়ার সবগুলোই ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাজা গিরিজনাথ মন্দিরের সংস্কার করলেও নবরত্নের চূড়াগুলো আর পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সরকার কান্তনগর মন্দিরকে সংরক্ষিত প্রাচীন কীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন, এবং বিমান তিনভাবে যাওয়া যায় দিনাজপুর। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী, টেকনিক্যাল মোড়, এবং উত্তরা থেকে পাওয়া যাবে দিনাজপুরের বাস। প্রায় সারাদিনই ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পরপর গাড়িগুলো দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়। নন-এসি এবং এসি কোচগুলোর ভাড়া পড়তে পারে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
ট্রেনে যেতে হলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে দিনাজপুরের ট্রেন। অধিকাংশ ট্রেনগুলো সন্ধ্যা ৭টা ৪০ এবং সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। শ্রেনীভেদে এই ট্রেনগুলোর টিকেট মূল্য নিতে পারে ৫৭৫ থেকে ১ হাজার ৯৭৮ টাকা পর্যন্ত।
আকাশপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি সৈয়দপুরের বিমান রয়েছে। আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোতে খরচ পড়তে পারে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৭৯৯ থেকে ৫ হাজার ৩২৫ টাকা পর্যন্ত। সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে অথবা পাবলিক বাসে সরাসরি কান্তজীও মন্দির যাওয়া যায়।
বাস ও ট্রেন যাত্রার ক্ষেত্রে দিনাজপুর সদর থেকে সরাসরি মন্দির যাওয়ার অটোরিক্সা বা ইজিবাইক পাওয়া যায়। শহর থেকে অটোরিকশায় মন্দির পর্যন্ত যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে।
কান্তজীর মন্দিরের যে বিষয়গুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরের ১০ জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
কান্তনগর মন্দিরের স্থাপত্য সৌন্দর্য্য
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ২৬৬টি পোড়ামাটির অলঙ্কৃত মন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে এই মন্দির। এর পুরো অবয়বে স্পষ্ট ফুটে আছে ইন্দো-পারস্য ভাস্কর শৈলীর নকশা।
মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে রয়েছে পোড়ামাটির উৎকৃষ্ট ফলকচিত্রের অলংকরণ। ফলকগুলোতে লিপিবদ্ধ রয়েছে মহাভারত ও রামায়ণসহ নানা পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে টেরাকোটা টালির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো মন্দিরের আসল উচ্চতা ৫০ ফুট। মন্দিরের নিচতলায় খিলান সংখ্যা ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি এবং তৃতীয় তলায় ৩টি। নিচের প্রতিটি প্রবেশপথের বহু খাঁজযুক্ত খিলানগুলোর যে কোনওটিতে চোখ রাখলে দেখা যায় ভেতরের দেবমূর্তি। খিলানগুলোকে আলাদা করা অলঙ্করণযুক্ত ইটের স্তম্ভগুলোও বেশ সুন্দর।
মন্দিরের টেরাকোটা ও ইটগুলো স্থানীয় নদী ও পুকুরের এটেঁল মাটি দিয়ে তৈরি। তবে ভিত্তির পাথরগুলো আনা হয়েছে হিমালয়ের তড়াই, আসামের পার্বত্য এলাকা, বিহারের রাজমহল ও বিন্ধ্যাঞ্চল পার্বত্য এলাকা থেকে। টেরাকোটা ও ইটগুলোর প্রত্যেকটি আগুনে পোড়ানো এবং রক্তের মতো লালবর্ণের। এ সমস্ত ইটের কাজ ও টেরাকোটাগুলোর করেছেন স্থানীয় গ্রাম্য মিস্ত্রি ও কারিগররাই।
আরও পড়ুন: শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
কান্তনগর মন্দিরে ধর্মীয় উৎসব
মন্দির ভ্রমণে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো রাস মেলা। প্রতি বছর শীতের শুরুতে মন্দির প্রাঙ্গণে এক মাস ধরে উদযাপিত হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব। রাস মেলা রাজা রামনাথ রায়ের শাসনামল থেকেই পালিত হয়ে আসছে। এ সময় বাংলাদেশসহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক তীর্থ যাত্রী এই মন্দিরে আসেন।
মেলা উপলক্ষে পুরো মাস ধরে বসে নানা ধরণের বিপণী। এগুলোতে বিক্রি করা হয় বিশেষ করে গুড়ের জিলাপী, শাখা-সিদুর, মুনহারী, জুতা, কাপড়, খেলনা এবং ফার্নিচার। এছাড়াও মেলায় আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু থাকে নাগরদোলা, সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলা, এবং যাত্রাপালা।
জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথী অথবা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ বা আষাঢ়ের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় শ্রীকৃষ্ণ স্নান উৎসব। এ সময়টাতে গোটা কান্তনগরে থাকে হাজার হাজার শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের আরও একটি প্রথা হচ্ছে ফাল্গুন মাসের দোল পুর্ণিমা। গৌড় পুর্ণিমার এই দিনে একে অপরকে হলি ছিটিয়ে বা লাল রঙে রাঙিয়ে উৎসব পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে
ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অনন্য সংস্কৃতি এবং রাফটিং ও হাইকিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই এমন ভ্রমণের সুযোগ মিলবে যথেষ্ট সাশ্রয়ী খরচে। স্বতন্ত্র স্থাপত্য শিল্পকর্মের সাক্ষী হতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিশ্বপরিব্রাজকরা ভীড় করেন এই দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে বাজেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দের দেশ ভুটান। সার্কভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই বৌদ্ধ রাজ্য ভ্রমণ বেশ সুবিধাজনক। চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে তাদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর দর্শন এক অভূতপূর্ব অনুভূতির সঞ্চার করে। চলুন, দেশটির সেরা পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি জেনে নেওয়া যাক।
ভুটানের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
থিম্পু
রাজধানী শহর থিম্পুতে হাঁটা দূরত্বেই দেখা যাবে থিম্পু নদী, মেমোরিয়াল চর্টেন, সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু জং, পার্লামেন্ট হাউস, লাইব্রেরি ও থিম্পু ডিজং। শহর থেকে একটু দূরেই রয়েছে বুদ্ধ দর্দেন্মা স্ট্যাচু, থিম্পু ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চর্টেন ও চিড়িয়াখানা, যেখানে সংরক্ষিত আছে ভুটানের জাতীয় পশু তাকিন।
পুনাখা
এখানে কম সময়ে অনেকগুলো পর্যটন এলাকা ঘোরার উপায় হচ্ছে সর্বপ্রথম দোচুলা পাস যাওয়া। অবশ্য পুরো দোচুলা পাস ঘুরতে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। তবে ফেরার পথে একে একে পড়বে পুনাখা জং, আর্ট স্কুল, ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ফোক হেরিটেজ যাদুঘর।
ভুটানের যে স্থানটি রাফটিংয়ের জন্য জগদ্বিখ্যাত, সেটি হচ্ছে এই পুনাখা। রাফটিংয়ের জন্য এই শহরে একটা দিন থাকা উচিত।
আরো পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
লাখাং মন্দির, তালো মনস্ট্রি ও পেলিরি মন্দির ঘুরে চলে যাওয়া যেতে পারে ফু ছু নদীতে। এখানে রাফটিংয়ের সময় চোখে পড়বে সাস্পেন্শন ব্রিজ। এছাড়া পুনাখার নান্দনিক ঐশ্বর্যের পরশ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে টর্সা ন্যাচারাল রিজার্ভার ও ন্যাশনাল পার্ক।
পারো
ভুটানের সর্বোচ্চ রাস্তা চেলে লা পাস অবস্থিত এই শহরে। মেঘমুক্ত দিনে এই রাস্তা থেকে চোখে পড়ে দূরের জলমহরি পর্বত। পারোর জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারস নেস্ট, রিনপুং জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, পারো মনস্ট্রি, পারো চু ও কিচু মনস্ট্রি। শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান তাং সাং। হিমালয়ের এই দর্শনীয় জায়গাটি দেখার জন্য পারোতে ন্যূনতম একটি দিন অবশ্যই থাকতে হবে।
ভুটান ভ্রমণের সেরা সময়
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাস ভুটান ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়। বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের সময়টা পারোতে ভুটানিদের নানান ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরিষ্কার আকাশসহ এ সময়ের অনুকূল আবহাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি রাফটিং ও হাকিংয়ের জন্যও উপযোগী। এছাড়া মার্চ থেকে মে মাসে পুনাখাতে পর্যটকদের বেশি ভীড় থাকে।
আরো পড়ুন: ভিয়েতনাম ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে
দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর সঙ্গে মিশে আছে শত বছরের ঐতিহ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেশ-বিদেশি পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। একদিকে যেমন ভ্রমণের ক্ষুধা মিটে, অন্যদিকে পুরাতন সভ্যতার অবশিষ্টাংশের সান্নিধ্য দেয় অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর অনুভূতি। এমনি রেশ থেকে অভিজ্ঞতার সঞ্চার করতে পারে দিনাজপুরের রামসাগর ভ্রমণ। বিংশ শতাব্দীর শেষ সময়ে গড়ে তোলা এই দর্শনীয় স্থানটি স্থানীয়সহ দেশজুড়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। চলুন, স্থানটির বিশেষ আকর্ষণ, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচসহ যাবতীয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত জেনে নেওয়া যাক।
রামসাগর দীঘির ভৌগলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগ রংপুরের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে রামসাগরের অবস্থান। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে দেখা মিলবে এই দীঘিটির।
রামসাগর বাংলাদেশের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট দীঘি, তটভূমিসহ যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার এবং আয়তন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার। দীঘিটি গড়ে প্রায় ১০ মিটার গভীর। এর পাড় ১৩ দশমিক ৫ মিটার উঁচু।
আরো পড়ুন: তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
অনেক আগে দীঘির পশ্চিম পাড়ের মাঝখানে একটি ঘাট ছিল, যেটি বানানো হয়েছিল বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথরের স্ল্যাব দিয়ে। ঘাটটি ছিল ৪৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ ও প্রস্থে ১৮ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত। প্রতিটি পাড় ছিল ১০ দশমিক ৭৫ মিটার উঁচু। এই পাড়ের কিছু অবশিষ্টাংশ এখনও দৃশ্যমান রয়েছে।
রামসাগর দীঘির নামকরণের ইতিহাস
পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খনন করা হয় রামসাগর দীঘি। সে সময়ে দিনাজপুরের এই অঞ্চলটির রাজা ছিলেন রামনাথ আলীবর্দী খান। তার নামানুসারেই দীঘিটি রামসাগর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। দীঘিটি খননে কাজ করেছিল ১৫ লাখ শ্রমিক এবং খরচ হয়েছিল তৎকালীন সময়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
এই দীঘির নামকরণ নিয়ে নানা ধরনের লোককথা প্রচলিত রয়েছে। ১৭৫০ সালে এক প্রচণ্ড খরায় রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ পানির অভাব দেখা দেয়। এ সময় রাজ্যের রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নযোগে পুকুর খননের নির্দেশ পান। পানি সমস্যার এমন সমাধানের উপায় পেয়ে তিনি মাত্র ১৫ দিনে তিনি একটি পুকুর খনন করে ফেলেন। কিন্তু অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে খনন করা জায়গা থেকে কোনো পানি উঠছিল না। এতে করে রাজ্যে চরম হতাশা নেমে এলো। কিছু দিন বাদে রাজা আবার স্বপ্নাদেশে নতুন বার্তা পেলেন। আর সেটি ছিল যে, দীঘি পানিতে ভরে যাবে যদি তার একমাত্র ছেলেকে বলি দেওয়া হয়। অতঃপর রাজার নির্দেশে দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির তৈরি করা হয়। তারপর একদিন ভোরবেলা রাজার ছেলে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাক পরে হাতির পিঠে চড়ে সেই দীঘির উদ্দেশে যাত্রা করেন। দীঘির পাড়ে পৌঁছানোর পর যুবরাজ হাতি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান সেই মন্দিরে। আর সঙ্গে সঙ্গে দীঘির নিচ থেকে অঝোর ধারায় পানি বেরুতে থাকে। সবার বিস্ফারিত দৃষ্টির সামনে নিমেষেই যুবরাজ রামনাথসহ কানায় কানায় পানিতে ভরে যায় বিশাল দীঘি। সেই সঙ্গে রচিত হয় রাজপুত্র রামনাথের জীবন্ত জলজ সমাধি।
আরো পড়ুন: খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া বা হাতি মাথা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
আরেকটি লোককথায় শোনা যায় যে, রাজা আসলে স্বপ্নে স্পষ্টভাবে নিজের ছেলেকে বলি দেওয়ার বার্তা পাননি। বার্তাটি ছিল- দিঘিতে পানি পেতে হলে কারও প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক স্বেচ্ছায় দিঘিতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তীতে রাজা এই আত্মত্যাগী যুবকের নামে দীঘিটির নাম রাখেন রামসাগর।
১৯৬০ সালে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আসে রামসাগর দীঘি। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালে এই দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় সবুজ ছায়াঘেরা উদ্যান, যা স্থানটিকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এই রামসাগর উদ্যান জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়।
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের রামসাগর যাওয়ার উপায়
রামসাগর ঘুরে দেখার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যেতে হবে। বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, কলেজগেট ও উত্তরা থেকে সরাসরি দিনাজপুরগামী বাস পাওয়া যায়। আধঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা পর পর দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হয় গাড়িগুলো। এসি বা নন-এসি কোচভেদে বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
যারা ট্রেন যাত্রা করতে ইচ্ছুক, তাদের ঢাকার কমলাপুর থেকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট, রাত ৮টা ও সাড়ে ১১টার দিনাজপুরগামী ট্রেনগুলোতে উঠতে হবে। শ্রেণিভেদে ট্রেনগুলোতে টিকেট মূল্য হতে পারে ৫৭৫ থেকে ১ হাজার ৯৭৮ টাকা পর্যন্ত।
আকাশপথে যেতে হলে সৈয়দপুরগামী বিমানে উঠতে হবে। বিমানযোগে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ প্রায় ১ ঘণ্টা। পরিবহন কোম্পানি ও মানভেদে বিমান ভাড়া পড়তে পারে ৩ হাজার ৭৯৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। দিনাজপুরে প্লেন থেকে নেমে গাড়িতে করে দিনাজপুর পর্যন্ত যেতে হবে।
দিনাজপুর সদর থেকে পাওয়া যাবে রামসাগর যাওয়ার অটোরিকশা বা সিএনজি। এই যাত্রায় সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এছাড়া শহরের কাচারি ঘুন্টি মোড়ে ইজিবাইক পাওয়া যায়, যেগুলো জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় নিয়ে যায় রামসাগর মোড় পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
রামসাগর দীঘি ঘুরতে যেয়ে যা যা দেখতে পাবেন
.
রামসাগর দীঘি
পূর্ণিমা রাতে ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম রামসাগর দীঘি। দীঘির চারপাশে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত পায়ে চলা পথের দুই পাশে লাগানো হয়েছে মুছকন্দ, দেবদারু ও ঝাউ গাছ। পাড়ের কাছাকাছি অংশে আরও রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, হরীতকী, সেগুন, আমলকী, জারুল, কাঁঠালিচাঁপা, কাঞ্চন, নাগেশ্বর এবং বটসহ ১৫২ রকমের গাছ।
রামসাগর জাতীয় উদ্যান
দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা রামসাগর জাতীয় উদ্যানটিতে রয়েছে ৭টি পিকনিক স্পট। স্পটগুলোতে আছে- ক্যাফেটেরিয়া, বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি দিয়ে গড়া শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় দেখা যাবে হরিণ, অজগর সাপ, বানর, মুখপোড়া হনুমান ও ময়ূর।
উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি পাঠাগার, যেটি বানানো হয় ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। রামসাগরের উত্তর পার্শ্বের প্রাচীন মন্দিরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্বীকৃত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই উঁচু গোলাকার মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে তিনটি কক্ষ। পরিচর্যার অভাবে বর্তমানে ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি ঢাকা পড়েছে ঘন গাছগাছালিতে। দীঘির পশ্চিম দিকে রয়েছে সুদৃশ্য একটি দ্বিতল ডাকবাংলো।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
১ মাস আগে
সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
বঙ্গোপসাগরের ফেনিল প্রান্তরে ‘ব’ আকৃতির দ্বীপের প্রাণকেন্দ্রে এক টুকরো বাংলাদেশের নাম সুন্দরবন। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি সারা বিশ্বের কাছে এর প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। যতই গভীরে যাওয়া যায়, বনটি তার রহস্য ঘেরা নান্দনিকতা ততই যেন মেলে ধরে। তেমনি এক অত্যাশ্চর্য এলাকা কটকা, যার আদিম প্রকৃতি ও রোমাঞ্চের অভূতপূর্ব সন্নিবেশ বিমোহিত করে পর্যটকদের। চলুন, সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত এলাকাটিতে ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
সুন্দরবনের কটকা সৈকতের ভৌগলিক অবস্থান
বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের একটি উপকূলবর্তী এলাকা কটকা। সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতটি সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণগুলোর একটি। মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর ঘেষা কটকা অভয়ারণ্য সুন্দরবন ইকো-ট্যুরিজমের প্রাণকেন্দ্র।
কটকার ইতিহাস
বিগত দশকে সুন্দরবনের ভূতাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে একটি গবেষণা করে জার্মানির ব্রেম্যান বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় এই কটকা অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায় বহু যুগ আগের লবণ তৈরির কয়েকটি চুল্লি ও পাত্র। এগুলোর মধ্যে একটির বয়স এক হাজার বছর, তিনটির ২৫০ থেকে ৩০০ বছর, এবং দুটির ৬০০ বছর।
আরও পড়ুন: ট্রেকিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে নিরাপদে থাকার উপায়
কটকায় আরও পাওয়া যায় টাইগার হিল নামের একটা ঢিবি। যেখানে ছিল পানি পরিশোধনের ছাঁকনি এবং বর্জিত পানি নিষ্কাশনের নালা। গবেষকদের মতে, এটি মূলত লবণ তৈরির উন্নত প্রযুক্তির নিদর্শন। ২৫০ থেকে এক হাজার বছর আগে এখান থেকে উৎপাদিত লবণ রপ্তানি করা হতো ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায়।
কটকার সমুদ্র সৈকত কটকাবাসীদের কাছে জামতলা সমুদ্র সৈকত নামেই অধিক পরিচিত।
ঢাকা থেকে সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায়
সুন্দরবনের গহীনে অবস্থিত হওয়ায় কটকা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। ঢাকা থেকে প্রথমে চলে যেতে হবে খুলনা বা বাগেরহাট জেলায়। খুলনা থেকে রুপসা অথবা বাগেরহাটের মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে সুন্দরবনগামী নৌযানগুলো কটকা নিয়ে যায়।
ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা বা সরাসরি বাগেরহাটগামী বাস পাওয়া যায়। এগুলো সাড়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বাসের কোম্পানি ও মানভেদে ভাড়া নিতে পারে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এসি কোচের টিকেটের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সেমি চেয়ার কোচ ননএসি বাসগুলো ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে সরাসরি মোংলায় পৌঁছে দেয়। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে বাসে করে খুলনা বা মোংলায় যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
যারা ট্রেনে যেতে চান, তাদেরকে কমলাপুর থেকে খুলনাগামী ট্রেনে উঠতে হবে। সিটের ধরণভেদে ভাড়া পড়তে পারে ৫০৫ থেকে ২ হাজার ১৬৮ টাকা।
দ্রুত যাতায়াতের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে আকাশপথ। এর জন্য প্রথমে বিমানে ঢাকা থেকে যশোর যেতে হবে। এখানে মানভেদে বিমান ভাড়া বাবদ খরচ হতে পারে ৪ হাজার ২১৮ থেকে ৪ হাজার ৯০৮ টাকা। অতঃপর এয়ারলাইন্সের বাসে যশোর থেকে খুলনা যাওয়া যাবে। তবে বিকল্প হিসেবে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি মোংলা পর্যন্ত যাওয়া যায়। আর ইন্টারসিটি বাসে গেলে যশোর থেকে প্রথমে খুলনা, তারপর বাস বদল করে আরেক বাসে খুলনা থেকে মোংলা যেতে হবে।
মোংলা বন্দর থেকে নেওয়া নৌযান কটকা খালের পশ্চিম পাড়ের জেটিতে নামিয়ে দেবে। জেটি থেকে উপরে উঠলেই দেখা যাবে বন কার্যালয়। সেখান থেকে খানিকটা পশ্চিম দিকে হেঁটে গেলেই পড়বে ইট বাঁধানো রাস্তা, যেটি সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে সমুদ্রে।
আরও পড়ুন: মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণে কি কি দেখবেন
পর্যটকদের জন্য কটকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কটকা অভয়ারণ্য। কেননা এখান থেকে নিরাপদেই দর্শন পাওয়া যায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এমনকি সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় পাখি হিসেবে পরিচিত মদনটাক দেখার জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে এই কটকা। এ ছাড়াও চোখে পড়বে চিত্রা হরিণের দল, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, বন মোরগ, এবং বন্য শুকর। শীতকালে অতিথি পাখির পাশাপাশি ভীড় করে নানান প্রজাতির পাখি। সেই সঙ্গে দেখা যাবে লোনা পানিতে কুমিরের রোমাঞ্চকর দৃশ্য।
এখানে বন বিভাগের অধীনে পরিচালিত একটি রেস্ট হাউস আছে। খুব কাছেই একটি কাঠের জেটি থাকায় লঞ্চ থেকে নেমে কিছু দূর হাঁটলেই রেষ্ট হাউসে প্রবেশ করা যায়। রেস্ট হাউসের আশেপাশে এঁকেবেকে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ছোট বড় খাল। এগুলোতে নৌকা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভেসে বেড়ানো যায়। এ সময় মাঝে মধ্যে শোনা যায় বাঘের গর্জন।
বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছনে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি একটি ট্রেইল রয়েছে। এর উত্তর পাশের খালে ভাটার সময় দেখা যায় সুন্দরী গাছের ঘন শ্বাসমূল। ট্রেইলটির উত্তরে কেওড়া বনের ভেতরে ঢোকার সময় সন্তর্পণে হাঁটতে হবে। কেননা খুব কাছেই দেখা পাওয়া যাবে অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণের।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ট্রেইলের পূর্ব দিকটায় রয়েছে ঘন বন আর মিঠা পানির পুকুর। এই পুকুরই এখানকার স্থানীয়দের পানির একমাত্র উৎস। ঘন বনের দক্ষিণে হেঁটে গেলে পরপর তিনটি টাইগার টিলা পড়বে। এই টিলাগুলো দেখে নিমেষেই শরীরে শিহরণ বয়ে যেতে পারে, কেননা এগুলোতে প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ থাকে।
কটকার আরও একটি জনপ্রিয় স্থান হচ্ছে এর ৪০ ফুট উঁচু চারতলা বিশিষ্ট ওয়াচ টাওয়ারটি। স্থানীয়দের কাছে এটি জামতলা ওয়াচ টাওয়ার নামে পরিচিত। এখান থেকে জীববৈচিত্র্যসহ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
এই টাওয়ারের পরে উত্তরে পথটি সোজা গিয়ে মিশেছে জামতলা সমুদ্র সৈকতে। সৈকতটি বেশ পরিচ্ছন্ন এবং নিরিবিলি। বেলাভূমি জুড়ে যতদূর চোখ যায় শুধুই কাঁকড়াদের আঁকিবুকি। পূর্ব দিকে সৈকতের শেষ প্রান্তরেখা যুক্ত হয়েছে কচিখালি এলাকায়।
আরও পড়ুন: ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে
বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
দেশের সুউচ্চ দুর্গম পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত এক অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে দুঃসাহসিক ভ্রমণপিপাসুদের। বিশেষ করে বর্ষাকালে ঝর্ণার পানিতে স্নান করার অভিজ্ঞতা নিতে মুখিয়ে থাকে হাইকার ও ট্রেকাররা। কিন্তু এই শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যের প্রতি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে মৃত্যু ফাঁদ।
চলতি বছর ২১ জুন বান্দরবানের আলীকদমের মারাইংতাং পাহাড়ে খিঁচুনির পর রহস্যজনকভাবে মারা যান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইফতেখারুল আহমেদ আবিদ (২০)। গত বছর ১২ আগস্ট এই একই অঞ্চলের সাইংপ্রা পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে মারা যান ২৯ বছর বয়সি ট্যুর গাইড আতাহার ইসরাত রাফি।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো একদিকে যেমন বেদনাদায়ক অন্যদিকে হাইকিং ও ট্রেকিং-এ উৎসাহী তরুণ প্রজন্মের জন্য নিরুৎসাহের কারণ। এই লক্ষ্যে দুর্ঘটনাগুলোর নেপথ্যের মূল কারণ এবং তা থেকে নিরাপদ থাকতে করণীয় নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, বর্ষাকালে হাইকিং ও ট্রেকিং-এ সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ এবং তা থেকে সতর্ক থাকতে জরুরি পদক্ষেপ জেনে নেওয়া যাক।
বর্ষাকালে হাইকার ও ট্রেকারদের মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণসমূহ
পিচ্ছিল ঝিরিপথ ও পাহাড় ধস
সারাদিন একটানা বৃষ্টিপাত উঁচু ঝর্ণার ধাপগুলোসহ ভেতরের পাহাড়ি ট্রেইলগুলোকে অত্যন্ত পিচ্ছিল করে রাখে। কাদা ও ভেজা শিলাগুলোতে যে কোনো মুহূর্তে পা পিছলে যেতে পারে। খুব কম হলেও পায়ের এখানে সেখানে শিলার ধারালো জায়গাগুলোতে লেগে জখম হতে পারে। এছাড়াও বৃষ্টির জমে থাকা পানি পাহাড়ি মাটির গঠনকে দুর্বল করে পাহাড়-ধস ঘটায়। এসব ভূমিধ্বস আকস্মিকভাবে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকি প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই ধসের নিচে পড়ার মতো মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
আকস্মিক বন্যা
অতি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা নদী এবং ছোট খালগুলো ভরে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে। এই আকস্মিক বন্যা ট্রেইলসহ সামনে পড়া সেতু এবং ক্যাম্পসাইটগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ভেসে যাওয়ার সময় প্রবাহিত পানির চাপে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা পাথর বা ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে। এর ফলে ট্রেকারদের ভয়ানক জখম হওয়াসহ মৃত্যুর হুমকি সৃষ্টি হয়।
ভারী বর্ষণে পথ খুঁজে পেতে সমস্যা
মুষলধারে বৃষ্টিতে এমনিতেই চারপাশের দৃশ্য আবছা হয়ে যায়। সেখানে ভারী বর্ষণে সর্পিলাকার ঝিরিপথ বা খালের সংকীর্ণ ধারাগুলো একেবারে অস্পষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার নিরাপদ ট্রেইলের সাইনবোর্ডগুলো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি স্থানীয়রাও প্রায় ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টির সময় বিড়ম্বনায় পড়ে যান। আর এই ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে জোর করে পথ চলা মানেই দিকভ্রান্ত হয়ে বিপজ্জনক রাস্তায় চলে যাওয়া।
ক্ষতিকর বন্যপ্রাণী
ভারী বৃষ্টিপাতের সময় মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরাও বন্যা থেকে বাঁচতে আশ্রয় খুঁজে। এ সময় বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়ের মতো নানা ধরনের ক্ষতিকর বাস্তুচ্যুত বন্যপ্রাণী সামনে পড়তে পারে। চারপাশ পানিতে টইটম্বুর থাকার মুহূর্তে এগুলোকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এসময় অতর্কিতে এগুলোর যেকোনোটির ওপর একবার পা পড়া মানেই কামড় খাওয়া। এই বিষাক্ত আক্রমণে থাকে দ্রুত সংক্রমণের ভয়। আর প্লাবিত অবস্থায় এমন সংক্রমণে মাথা ঠান্ডা রেখে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার কথা ভাবা দুস্কর হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ: বাংলার দার্জিলিং যাওয়ার উপায় ও খরচের বৃত্তান্ত
অ্যাকিউট মাউন্টেন সিক্নেস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা
হাইট সিক্নেস, পোকামাকড় বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের তীব্র অ্যালার্জির মতো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকা ব্যক্তিদের পর্বতারোহণ এড়িয়ে চলা উত্তম। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়ে পাহাড়ি অঞ্চলে তীব্র মাউন্টেন সিক্নেসে আক্রান্তদের মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। অবিলম্বে এর চিকিৎসা না করা হলে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র অবস্থা তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকা ব্যক্তিদের প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।
৩ মাস আগে