উত্থান দিয়ে শেষ হলেও সামগ্রিকভাবে সপ্তাহজুড়ে ভালো যায়নি দেশের পুঁজিবাজারের হালচাল। টানা পতনে বাজারের ওপর বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। প্রশ্ন জেগেছে—এ বেহাল দশা থেকে কবে মুক্তি পাবে পুঁজিবাজার?
গত বুধবার ঢাকার পুঁজিবাজারে এক ধাক্কায় সূচক কমে ১৫০ পয়েন্ট, যা এ বছরের সর্বোচ্চ পতন। পরদিন শেষ কার্যদিবসে প্রধান সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বাড়লেও ৫০০ কোটির ঘর থেকে লেনদেনে নেমে এসেছে ৩০০ কোটির ঘরে। এতে করেই বোঝা যায়—বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
তারেক হাসান শেয়ার ব্যবসা করেন প্রায় একদশক ধরে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বাজারের প্রতিটি বিনিয়োগকারী হতাশ। উত্থান-পতন বিশ্বের সব বাজারেই থাকবে। কিন্তু এমন লাগামছাড়া পতনের উদহারণ বিশ্বের আর কোথাও নেই।’
আরেক বিনিয়োগকারী কাওসার হাবিব বলেন, ‘মানুষ আগে দেদারসে বাজারে বিনিয়োগ করতো। এমনকি ২০১০ সালের বড় কারসাজির পরেও বাজার এতটা নিচে নামেনি যতটা এখন। ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে প্রতিনিধিরা অলস বসে থাকে, বিনিয়োগকারীর দেখা নেই।’
আরও পড়ুন: ধস কাটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান
টানা পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা দুষছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে। তাদের ভাষ্য, ‘কমিশন নিজেই একের পর এক উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নিজেদের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। কিন্তু বাজার বদলাতে যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা সেটি কমিশনের থেকে আসছে না।’
গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ১৫ পয়েন্ট। এছাড়া শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৯, বাছাইকৃত ব্লু-চিপ ডিএস-৩০ সূচক ২ এবং সিএমই সূচক কমেছে ৭ পয়েন্ট।
একই দশা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। এক সপ্তাহের লেনদেনে চট্টগ্রামের সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া ৩০৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১১১ এবং কমেছে ১৬৮। অপরিবর্তিত ছিল ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
বাজারের বেহাল দশা নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে প্রতিনিয়ত প্যানিক সৃষ্টি করা হচ্ছে। আরেকটা গোষ্ঠী গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। পান থেকে চুন খসলেই বাজারে বড় পতন হয়। এর প্রধান কারণ দুর্বল বাজার ব্যবস্থা।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কমিশন সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করছে। গিনিপিগ বানিয়ে তারা বাজারে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন, তাতে করে আগামীতেও বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।’
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে সূচক কমলো দেড়শ' পয়েন্ট, দায়ী পাক-ভারত উত্তেজনা নাকি অন্যকিছু?
তবে আশাবাদ প্রকাশ করেছে বাজারে অর্থ যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, ‘শিগগিরই কমিশনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আলোচনায় বসবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বাজার ঠিক করতে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
এ বছরের মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।