চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৩ জানুয়ারি দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম খন্দকার এদিন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি জানিয়ে আরও সময়ের আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল নতুন করে ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেন।
সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর গত ২০ অক্টোবর তার মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম এ মামলাটি করেন। মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, সামিরা হকের মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খল অভিনেতা ডন, ডেডিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন। আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজ ফ্ল্যাটে সালমান শাহ মারা যান। সে সময় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই আদালতে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি আবেদন করা হয়। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন।
তবে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। তার দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।
সালমান শাহর বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। সে সময় তিনি ১১ জনের নাম তুলে ধরে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
এরপর মামলাটির তদন্তে নামে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। পরে তদন্তের দায়িত্বে বর্তায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির দেন। কিন্তু সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন আদালত রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন।
এরপর চলতি বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।