প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ খুলনার কয়রা উপজেলায় চাহিদার তুলনায় নেই সাইক্লোন সেল্টার। বিদ্যমান ১১৭টি সাইক্লোন সেল্টার দুর্যোগের সময় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। আর এসবের মধ্যে আবার নারী ও শিশুদের পড়তে হয় নতুন আরেক ভোগান্তিতে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপজেলার অনেক মানুষকে একই রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সেখানে পর্যাপ্ত থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। নেই নারী-পুরুষের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থাও। এ কারণে দুর্যোগের সময় চরম সংকটে পড়তে হয় এই উপজেলার বাসিন্দাদের।
দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসে নারী ও শিশুবান্ধব সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসী জানায়, সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ৭টি ইউনিয়নের ১৩১টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।
কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, শিবসা ও আড়পাঙ্গাসীয়া নদী বেষ্টিত উপজেলাবাসী সারা বছরই থাকেন আতঙ্কগ্রস্ত।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
প্রতি বছর কোনো না কোনো অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজে। সে সময় একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো সাইক্লোন সেল্টার।
প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্ফান, ইয়াস, রিমেলের আতঙ্ক কেটে গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক কাটেনি উপকূলীয় জনপদ কয়রাবাসীর। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে দুর্যোগের সময় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৯৮টি।
ফায়েল খায়ের ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে ১৯টি।
কয়রার সর্ব দক্ষিণের জনপদ জোড়শিং গ্রামের মিজানুর রহমান (৫০) বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিটি মুহূর্তে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংবাদ বয়ে আনে দুর্দশা। তারপরেও সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বসবাস করছি। দুর্যোগকালীন সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের নারী নেত্রী মুর্শিদা আক্তার বলেন, এই অঞ্চলে দুর্যোগকালীন সময় আশ্রয় নেওয়া সাইক্লোন সেল্টারগুলো নারী ও শিশু বান্ধব নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সেখানে গর্ভবতী, বয়সন্ধীকালীন ও পিরিয়ড নারীদর আশ্রয় নিতে হয়। তাই নারীবান্ধব সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা এখন জনমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
কয়রা সদর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিনা আক্তার লাইলি বলেন, কয়রায় কোন সাইক্লোন সেল্টারে আলাদা টয়লেট নেই। তাই প্রতিটি সেল্টারে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সমন্বয়ক নিরাপদ মুন্ডা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদী ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়ন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। সেজন্য ৬টি ইউনিয়নে আরও সাইকোন সেল্টার নির্মাণ করা দরকার।
জেজেএসের সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী শেখ নাজমুল হুদা বলেন, কয়রা সদর, দক্ষিণ বেদকাশি ও উত্তর বেদকাশি ৩টি ইউনিয়নের সাইক্লোন সেল্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কমিটিগুলো সক্রিয় করার কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া প্রস্তুতি প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র সিপিপি সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
উপেজলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার মানুষ। দুর্যোগের সময় ওইসব মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আরও সাইক্লোন সেল্টার প্রয়োজন। যা রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কয়রাবাসীর আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্ববধানে আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপকূল অতিক্রম করে খুলনার কয়রায় অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল