ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা ধরে আমরণ অনশন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙতে রাজি নন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ১০ কার্যদিবস সময় চেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হকের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে ১০ কার্যদিবস সময় চাওয়া হয়।
চলমান অনশনের কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য নিজে উপস্থিত হয়ে কয়েকবার তাদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যেতে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত কার্যক্রম দুয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই কাজ সম্পন্ন করার জন্য ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে প্রক্রিয়াটিতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেরোবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে চলমান অনশনে অসুস্থ ৪ শিক্ষার্থী
ছাত্র সংসদের গঠনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯-এ ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত কোনো বিধান না থাকায় প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পরই ১০৮ম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সংরক্ষণের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে এবং সেখানে জমা করা অর্থ রাখা হয়েছে। আগে এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই অর্থ শুধুমাত্র ছাত্র সংসদের কাজে ব্যবহার করা হবে। দ্বিতীয়ত, ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও তিনটি আবাসিক হলের জন্য পৃথকভাবে একটি গঠনতন্ত্র খসড়া তৈরি করেন। গত ১৪ মে সেই খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে পাঠানো হয়।
বর্তমানে গঠনতন্ত্রটি ইউজিসির মাধ্যমে ৩০ জুলাই গঠিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেখান থেকে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির (বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর) কাছে পাঠানো হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গঠনতন্ত্রটি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। এরপর এই গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি দ্রুততর করতে ইউজিসি গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন উপাচার্য। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই খসড়া নীতিমালা যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ছেন উপাচার্য শওকাত আলী। সেই সঙ্গে অনশন ভেঙে খাবার গ্রহণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।