গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই নির্বাচনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এ সময় সকল জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাগণ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের নতুন করে একটি সুযোগ দিয়েছে। অন্য জেনারেশন (প্রজন্ম) এই সুযোগ পাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব, আর যদি না পারি তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি। বিগত আমলে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যেকোনো সুস্থ মানুষ বলবে—এটা নির্বাচন নয়, প্রতারণা হয়েছে।’
‘আগামী নির্বাচন অন্যান্য দায়িত্বের মতো নয়; বরং একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। আমরা যদি ভালোভাবে এই দায়িত্বটি পালন করতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনের দিনটি জনগণের জন্যও ঐতিহাসিক হবে।’
ইউএনওদের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলেই সরকার তার দায়িত্বটি সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।’
আগামী নির্বাচন ও গণভোট—দুটিই জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য, আর গণভোট শত বছরের জন্য। এর মাধ্যমে (গণভোট) আমরা বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারি। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই, তার ভিতটা এর মাধ্যমে গড়তে পারি।’
সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা।
এ সময় তিনি ইউএনওদের নিজ নিজ এলাকার সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, এলাকাবাসী এবং সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।
গণভোট বিষয়ে ভোটারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের বোঝাতে হবে যে, আপনারা মন ঠিক করে আসুন—“হ্যাঁ”-তে দেবেন নাকি “না”-তে ভোট দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়। তাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, নারীরা যেন ঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শীঘ্রই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন, কীভাবে, কোন কাজটি করবেন—তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।