মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে খুলনা। মাদক কারবারিরা নানা কৌশল অবলম্বন করে কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে যশোর রুটে ইয়াবা চোরাচালান করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সড়কপথকে মাদক কারবারিরা রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে।
তবে খুলনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাদক উদ্ধারসহ মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি)’র সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের অভিযানে রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম (২৫) এবং ইমরান খানকে (৩১) আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার পিস ইয়াবা, ৪টি এক হাজার টাকার জাল নোট, ২টি মোবাইল ফোন ও গ্রেপ্তারককৃত রোহিঙ্গার কাছ থেকে বাংলাদেশের ভূয়া এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। খুলনায় এই প্রথম সর্বোচ্চ ইয়াবার চালানটি আটক করা হয় গতকাল।
আটক ইমরান খান জানায়, রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম যশোর কোতয়ালি থানার ঘোষপাড়া পালবাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে এবং তারা দুজনে মিলে নানা কৌশল অবলম্বন করে কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে যশোর রুটে ইয়াবা চালান করে। ইমরান যশোরের কেশবপুর থানার শ্রীফলা গ্রামের মো. শহিদুল খানের ছেলে এবং রোহিঙ্গা তৌহিদুল ইসলাম কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং ক্যাম্প- ১ ইস্ট, এ ১৬ ব্লকের বাসিন্দা মোজার মিয়ার ছেলে।
খুলনা মেট্রোপলিটনের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কুতুবউদ্দিন জানান, এই প্রথম কেএমপি’র সর্বোচ্চ ইয়াবার চালানটি আটক করেছেন তারা। এর আগে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘মাদক নিয়ে বিবাদে’ বগুড়ায় বন্ধুর হাতে যুবক নিহত
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম এর কাছ থেকে একটি ভুয়া বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, জব্দকৃত মাদকের উৎস, পরিবহনে সহায়তাকারী, অর্থ লগ্নিকারীসহ মাদকের গডফাদারদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চোরাকারবারিরা সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা থেকে খুলনার চুকনগর অথবা আরেক সীমান্তবর্তী জেলা যশোর থেকে কেশবপুর হয়ে চুকনগর এবং অভয়নগর হয়ে ফুলতলায় বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে।
অন্যদিকে, যশোরের বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনকেও মাদক বহনের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। এদিকে, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য খুলনা শহরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই চক্রের সদস্যরা সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে সুকৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিবহন করছে। শহরের জিরো পয়েন্ট ও খানজাহান আলী থানার পথের বাজার এলাকা এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনে করে মাদকদ্রব্য দৌলতপুর ও খুলনা স্টেশনে পাচার হচ্ছে বলে জানা যায়। মাদক পাচারের কাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তালিকায় জানানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে লুকিয়েও মাদক পাচার হচ্ছে। এরপর বিভিন্ন স্তরের কারবারিদের হাত ঘুরে এসব মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা অনেকেই আবার একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এ ছাড়া খালিশপুর থানা এলাকায় ৪৪টি, খুলনা সদরে ১৪টি, খানজাহান আলীতে ১৪টি, লবণচরায় ১১টি, দৌলতপুরে ১০টি, আড়ংঘাটায় ৭টি, সোনাডাঙ্গায় ৬টি এবং হরিণটানা থানা এলাকায় ৩টি স্থানে মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা হওয়ার তথ্য ওই তালিকায় উঠে এসেছে। এছাড়া তেরখাদা উপজেলার ৭টি, দাকোপে ৯টি, পাইকগাছায় ৪টি, কয়রায় ২টি গ্রামে এবং বটিয়াঘাটায় ২টি গ্রাম, দিঘলিয়ায় ৩টি এলাকায় এবং রূপসা উপজেলার তিনটি গ্রামসহ পাশের এলাকায় মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় বলে জানা যায়।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সোনাডাঙ্গার বাসস্টান্ড থেকে ৪৪টি বাস যাতায়াত করে। ফলে এগুলোর মাধ্যমে যশোর, সাতক্ষীরাসহ সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান হয়ে থাকে। এর মধ্যে অনেক মাদক ঢাকায় প্রবেশ করে, আর কিছু মাদক সীমান্ত অতিক্রম করে যায়।