ইরাকে প্রায় চার দশক পরে অনুষ্ঠিত আদমশুমারিতে দেশটির জনসংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ৬১ লাখে পৌঁছেছে। গত বছর শুমারির শুরুতে করা প্রাথমিক অনুমানের চেয়েও যা ১০ লাখ বেশি। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বি জনসংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে কুর্দিরা। সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে শুমারির ফলাফল ঘোষণা করেন ইরাকের পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ তামিম।
এর আগে ২০০৯ সালের বেসরকারি এক হিসাবে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১৬ লাখ। ইরাকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ভবিষ্যতে ইরাকের সম্পদ বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে এই শুমারির তথ্য সহযোগিতা করবে বলে তদের বিশ্বাস। দীর্ঘদিন পরে শুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় একে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা।’
এ বিষয়ে দেশটির পরিকল্পনা মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কতখানি দৃঢ়সংকল্প, তারই প্রমাণ বহন করে এই উদ্যোগ।’
দশকের পর দশক ধরে চলা যুদ্ধে নানা দিক থেকেই ক্ষত-বিক্ষত ইরাক। দেশটির অর্থনীতিতে চলছে অস্থিরতা। দেশে চলমান বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে দেশটির সরকার।
আরও পড়ুন: আইসিজে’র প্রেসিডেন্ট নওয়াফ সালাম লেবাননের নতুন প্রধানমন্ত্রী
এরই ধারাবাহিকতায় ইরাকের আদমশুমারির আয়োজন করা হয়েছে। শুমারিতে দেশটির অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও বাসস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ইরাক এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলের আধা-স্বায়ত্বশাসিত কুর্দি অঞ্চলের তথ্য শুমারিতে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শুমারির তথ্যমতে, ফেডারেল ইরাকের মোট জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ২ শতাংশ শহরে বাস করেন। অন্যদিকে কুর্দি জনগোষ্ঠীর ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ লোক শহরগুলোতে বাস করেন।
ফেডারেল ইরাকের থেকে অর্থনৈতিক দিক থেকেও তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছেন কুর্দিরা। ফেডারেল ইরাকের তুলনায় কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি কুর্দি অঞ্চলে। কুর্দিতে ৪৬ শতাংশ জনগণ অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল, সেখানে ইরাকে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ।
এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রে যেখানে ৯৩ শতাংশ কুর্দি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সেখানে ফেডারেল ইরাকের ৮৮ শতাংশ শিশু স্কুলে যায়। তবে শুমারির তথ্যমতে, ফেডারেল ইরাকের জনগণ বাড়ির মালিকানা, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
শুমারির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ইরাকের পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘চার দশকের মধ্যে প্রথমবার আয়োজিত এই আদমশুমারি সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে ফেডারেল সরকার।’
গত নভেম্বরে আদমশুমারি পরিচালনা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশটির ১৮টি প্রদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে ১ লাখ ২০ হাজার গবেষক নিয়োগ করে সরকার।
এর আগে ১৯৮৭ সালে যখন সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় থাকাকালীন আদমশুমারি করা হয়েছিল ইরাকে।