সামগ্রিকভাবে পোশাক আমদানি কমালেও গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বস্ত্র ও পোশাক বিষয়ক সরকারি দপ্তর ওটেক্সার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি ডলার। সেখানে ২০২৪ সালে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ এই এক দশকে দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে ৩৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির ধারা ইতিবাচক থাকলেও করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে রপ্তানি ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে যায়। ২০১৯ সালে যেখানে রপ্তানি ছিল ৫৯২ কোটি ডলার, ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫২২ কোটিতে।
তবে ২০২০ সালে পোশাক রপ্তানির পালে ফের হাওয়া লাগে। ওই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক আমদানি বৃদ্ধির হারকেও (২৩.৭২ শতাংশ) ছাড়িয়ে যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫১৬ কোটি ডলার, ২০২৪ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি ডলারে। অর্থাৎ, এক দশক পর দেশটির পোশাক আমদানি কমেছে বছরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার স্থির থাকলেও করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালে বড় ধরনের ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি খাত। ২০১৯ সালে দেশটি ৮ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করলেও পরের বছর তা নেমে আসে ৬ হাজার ৪০৬ কোটিতে, এক বছরের ব্যবধানে যা ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।
করোনা-পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা এতটাই গভীর ছিল যে, ২০২৪ সালেও তারা ২০১৫ সালের আমদানির স্তরে ফিরে যেতে পারেনি।
ওটেক্সার প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশটির ভোক্তারা তাদের ব্যয় কমিয়ে দেয়, যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে পোশাক খাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পোশাক বাজারের ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের আগে থেকে আরোপিত উচ্চ শুল্কহার (গড়ে ১৮.৫ শতাংশ), ক্রমবর্ধমান পরিবহন খরচ ও পোশাকের স্বল্প বিপণন আয়ুর মতো বিষয়গুলো সরবরাহ ব্যবস্থায় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
এতসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেশের শিল্পের সক্ষমতারই প্রমাণ দেয়।