বড় পতনের মুখে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। একদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে দেড়শ পয়েন্ট। সূচক হ্রাসের কারণ হিসেবে পাক-ভারত উত্তেজনাকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। অনেকে আবার বলছেন গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) লেনদেন শুরু হওয়ার প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসই'র প্রধান সূচক কমে ১২০ পয়েন্ট। এরপর লাগাতার পতনে লেনদেন শেষে সূচকের পতন ঠেকেছে ১৪৯ পয়েন্টে।
পুঁজিবাজারে অর্থ যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বাজার পতন প্রসঙ্গে বলেন, ‘স্পষ্টত পাক-ভারত উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে করে একদিনে বাজারের এই হাল। যদি দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়বে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আবু আহমেদ বলেন, ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বড় ধাক্কা খেয়েছে। তখন বাজার স্বাভাবিক করতে ফ্লোর প্রাইস চালু করা হয়েছিল। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হলে বাজার আবারও বড় অস্থিরতার সম্মুখীন হবে।’
ঢাকার বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪৯৫১ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু করে দিন শেষে প্রধান সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮০২ পয়েন্টে। একদিনের লেনদেনে বাজার সূচক হারিয়েছে ৩ শতাংশ।
শুধু প্রধান সূচক না, শরিয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস কমেছে ৪১ এবং ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৪০ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৯ কোম্পানির মধ্যে ৩৮৫ কোম্পানি দর হারিয়েছে, বেড়েছে মাত্র ৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম। ৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ,বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া এ ক্যাটাগরির ২১৯ ভালো কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে দর কমেছে ২১৫ কোম্পানির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই দশা; সিএসইতে সারাদিনের লেনদেন শেষে সার্বিক সূচক কমেছে ২৭০ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া ২৭০ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৮৭ কোম্পানির। ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
তবে পাক-ভারত উত্তেজনাকে বাজার পতনের একমাত্র কারণ হিসেবে মানছে না ডিএসই। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘যদি পাক-ভারত যুদ্ধের কারণেই বাজারে পতন হয় তাহলে বাংলাদেশের বাজারের থেকে খারাপ অবস্থা হওয়ার কথা পাকিস্তান এবং ভারতের বাজারের। কিন্তু তেমনটা হয়নি। এতে করে বোঝা যায় পাক-ভারত উত্তেজনা বাজার পতনের অনুঘটক হলেও প্রধান কারণ না।’
আরও পড়ুন: ঢাকার পুঁজিবাজারে এ বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন
ভারতের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশটির সেনসেক্স সূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট এবং নিফটি ১৫০ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছিল, তবে বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এবং লেনদেনেও ফিরেছে স্থিতিশীলতা। খাতভিত্তিক সূচকে মধ্যে মিডিয়া, ভোগ্যপণ্য এবং ওষুধ খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। তবে অটো স্টক এবং ব্যাংক খাত তুলনামূলক ভালো করেছে যা বাজারের মন্দাভাব অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে।
যেখানে ভারত বাজার সামাল দিলো সেখানে বাংলাদেশ কেন ব্যর্থ- এমন প্রশ্নের জবাবে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাক-ভারত উত্তেজনার পুরোটাই কৃত্রিম প্যানিক। বাজারে প্যানিক সৃষ্টি করায় দরপতন হয়েছে। আগে থেকেই বাজারের অবস্থা বেহাল ছিল। এখন পাক-ভারত উত্তেজনার আতঙ্ক ছড়িয়ে বাজারকে একদম তলানিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘অযোগ্য মানুষ দিয়ে কমিশন চালানো হচ্ছে। যতদিন না কমিশনে পরিবর্তন আনা হবে ততদিনে বাজার ভালো হবে না। বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের ভরসা পুরোপুরি উঠে গেছে। বাজারের অংশীজনরা আর অর্থলগ্নি করতে চাচ্ছেন না। পাক-ভারত উত্তেজনা একটি ইস্যুমাত্র। মূল সমস্যা বাজার কাঠামো এবং প্রশাসনিক দুর্বলতায়।’
সূচকের পতনের মধ্যেই ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। ব্রোকারেজ হাউজের কর্তাব্যক্তিরা জানান, বুধবার লেনদেনের শুরু থেকেই বাজারে প্যানিক ছড়ানো হয়। এতে করে বিনিয়োগকারীরা দেদারসে শেয়ার বিক্রি করেছেন। ফলশ্রুতিতে বাজারের এ বেহাল দশা।