প্রশাসন
বাকৃবি: ২ দাবি মেনে নিল প্রশাসন, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত
ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুটি দাবি মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসন। বাকি চারটি দাবির বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাসে আপাতত আন্দোলন স্থগিত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলোচনা শেষ হয়। এ সময় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানোর পর চলমান ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
আলোচনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ছয় দফা দাবির প্রথম দুটি মেনে নেওয়া হয়েছে, বাকি চার দাবি নিয়ে আলোচনা চলবে।
আলোচনা শেষে বাকৃবির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই হলে থাকতে পারবেন। আগামীকাল (আজ বুধবার) সিন্ডিকেট মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে বিজ্ঞপ্তি আকারে হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হবে। তাছাড়া আগামী সাত দিনের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে বলে জানান এই শিক্ষক।
আরও পড়ুন: বাকৃবির একাডেমিক কাউন্সিল সভার পরবর্তী ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
তিনি আরও জানান, বহিরাগতদের হামলায় শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ এন এম এহসানুল হক হিমেল জানান, কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি। পরবর্তীতে এই বিষয়ে আরও আলোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবির পক্ষেই আমরা অবস্থান করছি। তবে আগামীকাল আমরা কোনো আন্দোলন কর্মসূচি রাখিনি।’
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী শিবলী জানান, আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল, তাদের প্রশাসনিক বা অ্যাকাডেমিক কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্ট করা হবে না বলে উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা লিখিত চাইলে উপাচার্য আজকের (বুধবার) মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষার্থী।
৯৩ দিন আগে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলেও প্রশাসনে, মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনের বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুখলেস উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করে দেশ পুনর্গঠনে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিনা কারণে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন আর আন্দোলন বা অকারণ কর্মবিরতি সহ্য করা হবে না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এটি সরকারের সবচেয়ে কঠোরতম প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আন্দোলন, অনিয়মে প্রশাসনে অস্থিরতা
গত এক বছরে এনবিআর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মাঠ প্রশাসন ও সচিবালয়ের বেশ কিছু স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি-দাওয়ার নামে ধর্মঘট, সমাবেশ, মানববন্ধন, কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন সরাসরি দেশের অর্থনীতি, রাজস্ব আদায় ও আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহব্যবস্থা ও কাস্টমস প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সচিবালয়ে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ৭০ শিক্ষার্থী
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ দাবির মধ্যে জারি করা সবশেষ দুটি বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। তাদের মধ্যে প্রথমে আটজন, পরে আরও ছয়জনকে বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কতা জারি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, সতর্ক না হলে প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিঠিতে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের শামিল। অনেক ক্ষেত্রে তা জাতীয় নিরাপত্তা হানিকারক এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।
চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়ে এ ধরনের প্রতিটি ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন সংশোধনে নমনীয়তা: তদন্ত ছাড়া শাস্তি নয়
প্রশাসনিক অস্থিরতা ও সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ায় কিছু নমনীয় সংশোধনী এনেছে। আগের নোটিশভিত্তিক শাস্তির বিধান বাতিল করে এখন থেকে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। অভিযোগ গঠনের ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং জবাবের পর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন
আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশে যা আছে
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। গত ২৩ জুলাই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে গেলে, অর্থাৎ নিজে নিয়ম লঙ্ঘন করে একজন সরকারি কর্মচারী আরেকজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিলে বা তাকে তার কাজ থেকে বিরত রাখলে, তাকে বাধ্যতামূলক অবসরসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
শৃঙ্খলা ফেরাতে পদোন্নতি ও পুনর্বিন্যাস
প্রশাসনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের পদোন্নতি ও পদায়নের বৈষম্য দূর করতেও কাজ শুরু করেছে সরকার। গত ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আন্তঃবৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।
সচিবালয়ের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ক্যাডার-নন ক্যাডার মিলিয়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিধিমালা জারি করেছে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
তবে সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনে কখনোই নরম থাকা চলে না। যাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও জনগণের ভাগ্য, তাদের ওপর জবাবদিহিমূলক কঠোর নজরদারি ছাড়া দুর্নীতি ও গাফিলতি রোধ অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানটি অনেক কঠোর, কেউ কেউ কালো আইন বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালাতে গেলে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সরকার চাইলে চাকরিতে অনুপস্থিত কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এর জন্য পিএসসির মতামত বা তদন্তের প্রয়োজন হবে না।’
সাবেক এই সচিব বলেন, ‘সরকার যেসব কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তা প্রশংসনীয় হলেও তা যেন কাগুজে নির্দেশনা হয়েই না থাকে। আগেও এমন অনেক আইন, নির্দেশনা, কমিটি হয়েছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং চূড়ান্ত সফলতা নির্ভর করবে আইনের প্রকৃত অনুসরণ ও স্বচ্ছতামূলক প্রয়োগের ওপর।’
১৩১ দিন আগে
ঢাবি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছয়টি প্রধান প্রবেশপথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে আনসার ও সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) উপাচার্যের কার্যালয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। ছয়টি প্রধান প্রবেশদ্বারে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে, যাতে অংশ নেবেন প্রক্টরিয়াল টিম, আনসার এবং সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে ভবঘুরে ব্যক্তিদের উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালাবে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম। তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের আশপাশে সেনা টহল বৃদ্ধির জন্য সেনাবাহিনীকে চিঠি দেওয়া হবে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সভা করার মাধ্যমে নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা ও সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, নষ্ট ক্যামেরাগুলো সংস্কার করা হয়েছে এবং রাতের আলোকসজ্জা আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে পুলিশের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে আইন মন্ত্রণালয়কে এবং তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের বিচার ত্বরান্বিত করতে পিবিআইকে পৃথকভাবে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমও আরও জোরদার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা প্রকাশ করেছে, এসব পদক্ষেপ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ, সিটি এসবির ডিআইজি মীর আশরাফ আলী, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি কর্নেল আব্দুল্লাহ, রমনা জোনের ডিসি মো. মাসুদ আলম, শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর, এনএসআই ও ডিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৬৯ দিন আগে
খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধস এড়াতে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান প্রশাসনের
খাগড়াছড়ি, ৩০ মে (ইউএনবি)- নিম্নচাপের প্রভাবে খাগড়াছড়িতে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে চেঙ্গী, মাইনীনদীতে হু হু করে বাড়ছে পানি। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কাও বেড়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ মে) স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এ বিষয়ে মাইকিং করাসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড ও সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধার নেতৃত্বে আজ শহরের শালবন, কলাবাগানসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্যহাতির আক্রমণে বৃদ্ধা নিহত
একই সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় জানান, পাহাড় ধসের আশঙ্কায় জেলা সদরে ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। যদিও এখনো কেউ কোন আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি।
এদিতে মাইনীনদীতে লাকড়ি ধরতে নেমে একজন নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৮৮ দিন আগে
প্রশাসনের বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে অপসারণ করা হচ্ছে: মির্জা আব্বাস
বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, প্রশাসন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের সরিয়ে আওয়ামী লীগ বা জামায়াতপন্থীদের বসানো হচ্ছে।
সোমবার (১২ মে) এক আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘সচিবালয়ের ভেতরে কী ঘটছে? ফ্যাসিস্ট দলের অনুসারীরা এখনও নিজের জায়গায় আছেন। যাদের কারাগারে থাকার কথা ছিল—তারা এখন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ শাসনামলে সচিব ছিলেন এবং এখনও একই পদে আছেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, আবার, বিএনপির আমলে প্রশাসনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও অবসর নেননি, তাদের এখন উপেক্ষা করা ও দূরে রাখা হচ্ছে।
বিএনপির প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো বিএনপির প্রভাব দূর করা। ‘বিএনপি-সমর্থিত কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অথবা অন্তত জামায়াতে ইসলামীর অনুগতদের পদ দেওয়া হচ্ছে... এই ধারা এখন থানা, আদালত এবং সচিবালয়ের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি-নির্মূলের এই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খুনের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় খুশি বিএনপি
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি বিএনপিকে নির্মূল করা যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের মতো বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করা যেতে পারে... বিএনপিই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা এখন বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে এবং বাইরের প্রভুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট। যদি অন্য কোনো দেশপ্রেমিক দল থাকত, তাহলে তারা এখনই তাদের আওয়াজ তুলত।’।
তবে আব্বাস বর্তমান সরকারকে মনে করিয়ে দেন যে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারও বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ভিআইপি গেট ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ায় তিনি সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদপত্রে পড়েছি যে তিনি লুঙ্গি, টি-শার্ট এবং মাস্ক পরেছিলেন... কিন্তু তিনি কীভাবে ভিআইপি এলাকায় প্রবেশাধিকার পেলেন? যদি না আপনি একজন সুসম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি বা ভিআইপি হন, তাহলে কীভাবে তা সম্ভব?’
তিনি বলেন, ভিআইপি সুবিধার সুযোগ নিয়ে হামিদ বিমানবন্দর পেরিয়ে গেলেও সরকার কিছুই না জানার ভান করেছে। ‘প্রায় ৬২২ জন আওয়ামী লীগের সদস্যও দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু সরকার বলেছে তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। আপনাদের যা জানেন না, তা জানা প্রয়োজন।’
আব্বাস অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন ধরে জাতি বাংলাদেশে সার্কাসের মতো দেখতে এক ধরণের নাটক, এক ধরণের সার্কাস প্রদর্শনী দেখছে।
তিনি বলেন, ‘অতীতে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে শেখ হাসিনা যখনই কোনো পদক্ষেপ নিতে যেতেন, তখনই তিনি আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে অন্য কোথাও কিছু গোপনীয় কাজ করতেন—আমার কাছে এটা তেমনই মনে হয়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে আমরা ধরে নিতে পারি যে, তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: সীমান্তে ভারতের পুশ-ইন: সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ ঝাড়লেন রিজভী
আব্বাস আরও প্রশ্ন তোলেন, শাহবাগে হঠাৎ করে নাটক কেন শুরু হলো, কারণ এলাকাটি আগে সমাবেশ ও বিক্ষোভের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, ‘ক্ষমতাসীন’ এনসিপির সদস্যরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে সমাবেশ এবং মিছিল বের করে। ‘তাদের দাবি ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। তাদের (সরকার) এটা করতে কে বাধা দিচ্ছিল? বিএনপি কি তাদের বাধা দিচ্ছিল?’
আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করার জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করার জোরালো প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ‘আমরা কেন এটা করব? তারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের জীবনের ১৭ বছর কেড়ে নিয়েছে। আমরা আমাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি, গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছি এবং আমাদের পরিবারের কেউই শান্তিতে বাস করেনি। ১৭ বছরে আমাদের একজনও কর্মী শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। আর এখন আওয়ামী লীগকে লালন-পালন ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব আমাদেরই?’
আরও পড়ুন: জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
তিনি দাবি করেন যে, বিএনপির প্রতি ঈর্ষান্বিত ও দলকে সহ্য করতে বা গ্রহণ করতে না পেরে একটি অজনপ্রিয় দল এবং কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
বিএনপি নেতা আরও দাবি করেন, তিনিসহ তাদের দলের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্যে দ্ব্যর্থহীনভাবে আওয়ামী লীগের বিচারের কথা বলছেন। ‘বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়, যারা এমন দাবি করেন—তারা জাতির শত্রু।’
২০৬ দিন আগে
প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিলেন চা শ্রমিকরা
প্রশাসনের আশ্বাসে সিলেটে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন চা শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন, বোনাস ও রেশন পরিশোধ, বাড়ি নির্মাণ ও মেরামত, চিকিৎসা সেবা চালু, ঔষধ প্রদান, চা বাগানের গাছ কাটা ও বিক্রি বন্ধসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন চা শ্রমিকরা।
রবিবার (৪ মে) বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সিলেট-বিমানবন্দর সড়কের লাক্কাতুড়া চা বাগান এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। এদিকে অবরোধের ফলে বন্ধ হয়ে যায় আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল। আটকা পড়ে শত শত গাড়ি, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।
খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরও পড়ুন: বকেয়া মজুরির দাবিতে রবিবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা চা শ্রমিকদের
এসময় শ্রমিকরা বলেন, বেতন ও রেশন না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। বুরজান চা-কোম্পানির অধীনে থাকা দুই হাজার ৫০০ শ্রমিকের বেতন-রেশন ও বোনাস বকেয়া পড়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা তিন বেলা খাবার খেতে পারছে না। পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। মলিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে-দিচ্ছে বলে যাচ্ছে। কবে তাদের বেতন দেবে, তার কোনো ঠিক নেই।
বিকাল ৩টায় স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা। এ সময় ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত দাবি জানান।
ইউএনওয়ের আশ্বাসে তারা দাবি পূরণে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিয়ে আন্দোলন তুলে নেন।
২১৪ দিন আগে
প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সর্বোচ্চ, কাজে স্থবিরতা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জনপ্রশাসনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থামছে না। মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থায় শীর্ষ পদে বা সচিব ও সমমর্যাদার পদে ধারাবাহিকভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এতে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পদোন্নতির স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা কমে যাচ্ছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করলেও বর্তমান সরকার নিজেরাই একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে চলেছে। বাড়ছে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সংখ্যা, যার ফলে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমছে।
প্রেক্ষাপট
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ওই দিনই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়। পরদিন, ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর পর থেকেই প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা দীর্ঘদিন চাকরি থেকে বাইরে ছিলেন, দীর্ঘ ৭/৮ বছর পর তাদের হঠাৎ চুক্তিতে ফিরিয়ে আনা হলে কাজ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কাজের গতি কমে গেছে। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ২২ ডিসি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সচিব, সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার পদ রয়েছে ৮৪টি। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১৭ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে রয়েছেন। এর আগে শীর্ষ পদে একসঙ্গে এতসংখ্যক কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে মোট ওএসডি আছেন ১২ জন। তবে বর্তমানে অন্যান্য পদে প্রশাসনে সবমিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিকের উপরে ওএসডি কর্মকর্তা রয়েছেন।
বর্তমানে শীর্ষ পদে যারা চুক্তিতে আছেন
৫ আগস্টের পর যারা চুক্তিতে, যেসকল কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এমএ আকমল হোসেন আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এজেএম সালাহউদ্দিন নাগরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) কাইয়ুম আরা বেগম, বিশ্বব্যাংকে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শরীফা খান, সচিব মর্যাদায় পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মাহফুজুল হক চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন।
চুক্তি বাড়ার কারণ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সময় শীর্ষ পদে থাকা বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি থাকতে হচ্ছে। তাদের বছরের পর বছর পদোন্নতি দেয়নি। তাদের সময়ে সময়ে দলীয়করণ ও নিয়ম-নীতিহীন পদায়ন-পদোন্নতির কারণে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে গত সরকারের সময়ে বঞ্চিত আমলাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়। যে কারণে পট পরিবর্তনের পর পরিস্থিতির প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বেড়েছে।তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমে যাবে
এসব কর্মকর্তা আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আমলাদের ওএসডি করা হয়, অনেককে আবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বিষয়ে- ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’- এর সভাপতি সাবেক সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ইউএনবিকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ভারে প্রশাসন ন্যুব্জ। ফ্যাসিস্ট আমলেও মতোই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন: জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে থাকছে শতাধিক সুপারিশ: কমিশন প্রধান
‘এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
‘কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে কোনো প্রক্রিয়ায় অনুসরণ ব্যতিরেখে ভিনদেশী নাগরিককেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোনো কোনো পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও ১/১১ এর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
সাবেক এই সচিব বলেন, এসব কর্মকর্তা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির করার কাজে সচেষ্ট আছে। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রে বিশেষ উপদেষ্টাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা। কাজেই অবিলম্বে সকল চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।
একই বিষয়ে সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘চুক্তিতে বেশি নিয়োগ দিলে যারা নিচ থেকে ওপরে উঠে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। তাই চুক্তি কমিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে ওএসডি ব্যবস্থা, সেটি পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। এটি শুধু আমাদের দেশে। আর ওএসডি সরকারের একটি মহা অপচয়। ওএসডি ব্যবস্থায় মূলত কোনো কাজ করানো ছাড়াই এই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে হচ্ছে সরকারকে। এই ব্যয় এক ধরনের অপচয়ের শামিল।
১২ জন ওএসডি সচিব
১২ জন ওএসডি সিনিয়র সচিবদের মধ্যে রয়েছেন মো. মোস্তফা কামাল, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেন। সচিব হিসেবে ওএসডি আছেন মো. সামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মো. আজিজুর রহমান, মো. নুরুল আলম, মো. খায়রুল আলম শেখ, ফরিদ উদ্দিন আহমদ, রেহানা পারভীন, শফিউল আজিম ও একেএম মতিউর রহমান।
সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ওএসডি আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ৩৩ কর্মকর্তাকে গত ১৯ জানুয়ারি ওএসডি করা হয়, যারা যুগ্মসচিব হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই কারণে এর আগে ১২ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। আর বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি ও এসপি থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর বা এর বেশি, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি ২২ জন সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদের দুই দিনের রিমান্ড
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিয়োগ পদোন্নতি শাখা থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামাত ট্যাগ লাগিয়ে বহু কর্মকর্তাকে বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়। অনেককেই ওই অবস্থায়ই নীরবে চোখের জল ফেলে চাকরি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে চাকরির মেয়াদ শেষে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের পুরস্কার ছিল এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
২২৬ দিন আগে
মাজারে প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযান, রুখে দিলেন ভক্তরা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঘোড়াশাহ বাবার মাজারে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাজারের ভক্ত-অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা না করেই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হন তারা।
রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সাতবাড়ীয়া বিত্তিপাড়া এলাকায় অবস্থিত ওই মাজারে ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় ঘোড়াশাহ বাবার মাজারে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আভিযানিক দলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযান শুরু করতে গেলে সেখানে বাধা দেন মাজারে উপস্থিত ভক্ত-অনুসারীরা। এ সময় তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন ও আভিযানিক দলের সদস্যদের লাঞ্ছিত করেন। পরে তোপের মুখে পড়ে অভিযান পরিচালনা না করেই তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন: ৫ দিনেও উদ্ধার হয়নি চবির অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন দেখেই উষ্মা প্রকাশ করেন জটাধারী লাল পোশাকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ভক্ত-আশেকান। কাজ শুরুর আগেই তারা আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন। বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় প্রশাসনের লোকজন সেখানে থেকে ফিরে আসেন।’
ফিরে আসার সময়ও তাদের ধাওয়া করা হয় বলে জানান ইউএনও।
অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে মাজারের লোকজন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। যে কারণে অভিযান পরিচালনা করতে না পেরে আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। কারা এই উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তা বলা যাবে। আপাতত এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
২২৮ দিন আগে
যেকেউ সরকারের সমালোচনা করতে পারছেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই যেকেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে সরকারকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, এটিই বর্তমান প্রশাসনের সফলতা। কেউ বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পান না।’
বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সবার প্রতি প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, ‘বছরখানেক কিংবা আট মাস আগে ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা কী আপনি করতে পারতেন, যেটা আপনি বর্তমানে করতে পারছেন? যদি আর কিছু না হয়, তবুও সরকারের অন্তত একটি সফলতা হচ্ছে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। এটাই গণতন্ত্রের মূলকথা।’
এ সময়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, বিম্সটেক সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দ্রা মনি পান্ডে, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক, জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনিচি, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও ডিক্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুই মাসের মধ্যে তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এক কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সব আকাঙ্ক্ষাই যে পূরণ করতে পারছে, তা বলছি না। তবে এমন একটি পথ তৈরি করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে বৈষম্যমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক সমাজের চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাবে দেশকে।’
‘কিছু কিছু সংস্কার নির্বাচনের আগেই করতে হবে। যেটা সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে চেষ্টা করছে, যাতে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। আর কিছু সংস্কার পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে,’ বলেন তিনি।
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘গেল ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন জটিল ইস্যুতে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া—দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক—এগিয়ে নিতে সামনের সারিতে ছিল ডিক্যাব।’
‘সামনের দিনগুলোতে, বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি জনগণ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন ডিক্যাব সদস্যরা,’ বলেন তিনি।
এ কে এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও শক্তিশালী গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, তখন পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে ডিক্যাব।’
‘আসুন আমরা বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্বপ্ন দেখি, যা আমাদের জাতির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং সাফল্যের জন্য অপরিহার্য,’ তিনি বলেন।
২৬০ দিন আগে
অনিশ্চয়তায় প্রশাসনে স্থবিরতা, দায়িত্ব বণ্টনের জটিলতা কাটছেই না
আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি প্রশাসনিক কার্যক্রম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেরও প্রায় একই দশা।
সচিবালয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পদে কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলি নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা নিয়োগ ও পদোন্নতি পেয়েছে, তাদের মধ্যে এই আতঙ্ক বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে মন্ত্রণালয়ের কাজে এসেছে ধীর গতি।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এখনও সাবেক সরকারের সময়কালে নিযুক্ত সচিব রয়েছেন। ওএসডি বা অবসরে যেতে হয় কি না- এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সচিব-জেলা প্রশাসক নিয়োগ
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া ৮ জন সচিব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করলেও সবার সঙ্গে মিলিয়ে কাজ করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব পদ না পেয়ে বঞ্চিত অবস্থায় অবসরে গিয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে তাদের আবার চুক্তিতে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ায় সাবেক সরকারের আমলের বর্তমান কর্মকর্তারা তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না। যে কারণে কাজের গতি কমে গিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে চলমান প্রকল্পগুলোর অর্থ কাটছাঁট করতে বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলো বুঝতেও সময় নিচ্ছেন উপদেষ্টারা। আবার কিছু প্রকল্পের চলমান কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন করেও প্রকল্প নেওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই এই সরকারের।
এর বাহিরেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাঠ লেভেলের ছোটখাটো উন্নয়নমূলক কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এমনকি বিভিন্ন ভাতাও সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বেশকিছু সরকারি ভাতা যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামে কাবিটা ও কাবিখার কাজও বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যমান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার কারণে দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
চলতি সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যেকোনো সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, তার নিজস্ব টিম (দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী) লাগবে। তাহলে পুরোনো টিমকে তো সরে যেতেই হবে।’
আরও পড়ুন: ‘দ্রুত সংস্কারের পর নির্বাচনই দেশের রাজনৈতিক সমাধান’
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা বিপ্লব হয়েছে। বিপ্লবের পরে কোনোকিছু আগের সিস্টেমে চলে না, কিন্তু আমরা এখনও আগের সিস্টেম ধরে রেখেছি। প্রশাসনের কারো কারো অসহযোগিতার কারণে দেশে স্থবিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন হলে সিস্টেম ভাঙা হবে, প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশাসনে অসহযোগীদের স্থলে নতুন নিয়োগ নিয়েও সরকার ভাববে।’
এর আগে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে, প্রশাসনে স্থবিরতা বিরাজ করছে স্বীকার করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনে স্থবিরতা তো আছে। এটা আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কেটে যাবে।’
এছাড়াও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা তাদের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তারা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। এর ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর।
এমন পরিস্থিতিতে সব ব্যাচের বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে।
শেখ হাসিনার সময় চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ১০০ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি অবসরে থাকা হাসিনার সরকারের আমলে বঞ্চিত ৮ কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগের পর তাদের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চলতি মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ
তাদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া ড. শেখ আবদুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এম এ মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি। মূলত তারাই এখন প্রশাসন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের সিদ্দিক যোবায়ের এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হয়েছেন ১৯৮৫ ব্যাচের এ এস এম সালেহ আহমেদ।
হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছর পর আগস্টে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব। বঞ্চিত ২০৬ অতিরিক্ত সচিবের মধ্য থেকে যে চারজনকে সচিব করা হয়েছে তারা হলেন- তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার উল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের মো. ফাহিমুল ইসলাম এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বেগম মাহবুবা ফারজানা।
এখন পর্যন্ত এর বাইরে অন্য ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাকে সচিব পদে নিয়োগের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শুধু একটি ব্যাচের বঞ্চিতদের মূল্যায়ন ভালো চোখে দেখছেন না বিসিএস ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচ, ১৯৮৪ ব্যাচ, ১৯৮৫ ব্যাচ, ১৯৮৬ ব্যাচ, নবম, দশম, একাদশ ও ত্রয়োদশ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে।
তাদের দাবি, বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তারা অন্তত এক যুগ আগেই অবসরে গেছেন। অথচ বর্তমানে সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন বিসিএস ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে এই ব্যাচের পাঁচ-ছয়জন সচিবও হয়েছেন। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তাদের ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: প্রশাসনে স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সংস্কারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৬৫ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। ৪৫ জন পূর্বের পদে রয়েছেন। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা তাদের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তারা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। বাকিদের পদায়নের ফাইল ঘুরছে।
হাসিনার সরকারের আমলে বঞ্চিত বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শুধু নিয়মিত নামাজ পড়ি বলে বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে আমাকে পাঁচ-ছয়বার পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। যোগ্যতা থাকার পরও আমাকে সচিব বানানো হয়নি। যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০২০ সালের ১৭ মে অবসরে যেতে হয়েছে। অথচ আমার ব্যাচের হেলালুদ্দীন আহম্মদ, ফয়েজ আহমদ, আনিছুর রহমান, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সত্যব্রত সাহা, আক্তার হোসেন, শহীদুজ্জামান, আকরাম আল হোসেনসহ অনেকে সচিব হয়েছেন। এমনকি আমার সিরিয়ালের বহু পরের কর্মকর্তা কবীর বিন আনোয়ার ক্যাবিনেট সচিব হয়েছেন। সুতরাং সব ব্যাচেই বঞ্চিত কর্মকর্তা আছেন। তাদেরও মূল্যায়ন করা দরকার।’
বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আবু মোহাম্মদ ইউসুফ ইউএনবিকে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে সচিব বানানো হয়নি। ব্যাচের মেধাতালিকায় আমার পরের জন সুবীর কিশোর চৌধুরীকেও সচিব বানানো হয়েছিল। আমার ব্যাচসহ প্রশাসনে তার জুনিয়র অন্তত দেড়শ কর্মকর্তাকে সচিব বানানো হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য ব্যাচেও যারা যোগ্যতা থাকার পরও বঞ্চিত হয়েছেন তাদের এখন মূল্যায়ন করা উচিত।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন দুই মাসেরও বেশি হয়েছে। তারপর আমি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনকে একটা সিস্টেমে দাঁড় করাতে কাজ করছি। গত ১৫-১৬ বছরের সমস্যা এই অল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব না। কোন মন্ত্রণালয়ে কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর দপ্তর বা সংস্থাপ্রধান কাকে বানানো হবে- এসব বিষয় বিবেচনা করে, কে ভালো ও দক্ষ তাকে খুঁজে বের করতে একটা তো সময় লাগবেই। তবে আমরা আশা করছি খুব দ্রুত সময়েই সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে যোগ্য লোক পদায়নের কাজ শেষ হবে। তখন কাজের গতি আরও বাড়বে।’
আরও পড়ুন: প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
৪০৪ দিন আগে