বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাদান না কি ব্যবসা?
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর সর্বসাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় যা জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারকে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ‘অলাভজনক হওয়ার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য শিক্ষাদান না কি মুনাফা অর্জন?’
দেশের নামজাদা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার প্রথম সারির কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়াতে পরিবারের শুধু কোর্স আর ক্রেডিট ফি বাবদই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। অধ্যয়নরত বিষয় বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ খরচ ঠেকে ১৫ লাখে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রথম সারির একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোনো শিক্ষার্থী প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক করতে চাইলে তার খরচ পড়বে ৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। প্রকৌশল বাদে বিজ্ঞান বিভাগের অন্য কোনো বিষয়ে পড়তে চাইলে এ খরচ ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আরেকটি প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে গ্রাজুয়েশন খরচ এর চেয়েও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রেডিটে খরচ পড়ে ৮ হাজার টাকার ওপরে। এর সঙ্গে আছে ভর্তি ফি, কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি ও লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার মতো খরচ। এতে করে সব ক্রেডিট শেষ করে একজন শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েশনে খরচ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
একই অবস্থা আফতাবনগরের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজার বিবেচনায় মানসম্পন্ন কোনো বিষয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ৭ লাখ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট বিবিএ সম্পন্ন করতে প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ লাগে ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এসব খরচের বাইরেও রয়েছে বাড়তি অনেক আনুষঙ্গিক খরচ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বিশাল চাপ
যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের খরচ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ ১৬ গুণ বেশি। খরচের এই বিশাল বড় বৈষম্যের শিকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সানোয়ার আহমেদ, দুই ছেলেকেই ভর্তি করিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে সানোয়ার আহমেদ বলেন, ‘দুই ছেলেকে পড়াতে খরচ হবে ৩০ লাখের মতো টাকা। চাকরি করে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানের আরেক বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা এখনো কলেজে পড়ে। মেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়েছি। পড়াশোনার পেছনে প্রতি সেমিস্টারে লাখ টাকা ঢালতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে ছেলেকে বলেছি, পাবলিকে চান্স না পেলে তাকে আর অনার্স করাব না; কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দেব। মাসের বেতন, জীবনের সঞ্চয় সব চলে যাচ্ছে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে।’
ইসরাত জাহানের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পড়ছেন প্রথম সারির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি দুজনই চাকরিজীবী। এরপরও প্রতি সেমিস্টারে মেয়েকে টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে বাড়তি খরচ কম না। সব মিলিয়ে দুইজন দুই লাখ টাকা আয় করলেও সন্তানকে পড়াশোনা করাতে কোনো কোনো সময়ে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয় ।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ
বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্লাসের পাশাপাশি টিউশনি করেন। অনেকে ব্যস্ত থাকেন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। টাকা জোগাড়ে কেউ কেউ নাইট শিফটে পার্ট টাইম চাকরি পর্যন্ত করেন।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘আমি ফার্মাসিতে পড়ি। পুরো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে আমার ১৫ লাখের মতো টাকা লাগবে। শুরুর দুই বছর বাবা টাকা দিতে পারলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন আর টাকা দিতে পারছেন না সেভাবে। এজন্যই নিজেই টাকা আয়ের চেষ্টা করছি। আপাতত ক্লাসের পরে তিনটি টিউশনি করছি। এতে করে যে টাকা আসে তা সেমিস্টার ফি বা ক্রেডিট ফির জন্য যথেষ্ট না হলেও কিছুটা সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা আর কি।’
আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সাদি বলেন, ‘একে তো ক্রেডিট খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে চাইলেই পার্ট টাইম কাজ করা যায় না। তাই আমিসহ আমার অনেক বন্ধু বাধ্য হয়ে রাতের বেলা কল সেন্টারে কাজ করি খরচ যোগাতে।’
শিক্ষার মান নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বেশিরভাগই পড়াশোনা করছেন কিছু শেখা বা দক্ষতা অর্জনের জন্য নয়, কেবল একটি সনদের আশায়। মূলত মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাজুয়েশনের সনদ কিনছেন— এমনটাই মনে করেন তারা।
পাবলিকে আসন নেই, প্রাইভেটে ব্যবসা
প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাস করে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৫৫ হাজারের মতো। এর সঙ্গে মেডিকেল, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন যোগ করলে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ সিটের মতো দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার। অর্থাৎ, যারা সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল করেছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে ভর্তি হতে হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অডিট ফার্ম দিয়ে প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করাতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউজিসি তালিকাভুক্ত ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা বছরের পর বছর কোনো বার্ষিক প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। এ ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সিন্ডিকেট সভা হলেও আর্থিক সভা হয় না বললেই চলে। এতে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকার টিউশন ফি কোথায় কোন খাতে খরচ হয়, তা নিয়ে আদৌ কোনো স্বচ্ছতা থাকে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা ৪-৫ লাখ টাকা করে পান। ছাত্রদের টাকায় বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা আয়েশি জীবনযাপন করছেন, দামি গাড়িতে চড়ছেন, কিনেছেন দামি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তের কোনো জোর নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি থেকে সাবধান করা হলেও ক্ষমতার জোরে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
কিসের ভিত্তিতে এমন আকাশচুম্বী টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আসে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কাছে জিম্মি। কোষাধক্ষ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ হয় ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশে। এই বোর্ড যতটা না শিক্ষাকেন্দ্রিক, তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসাকেন্দ্রিক।
করপোরেট শিক্ষা বাণিজ্য
দেশে নব্বইয়ের দশকে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা হয় এবং সে অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধরনের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার বড় একটি সংযোগ ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বিডিরেনের সেবা গ্রহণের আহ্বান ইউজিসির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, ‘যে সময় দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নিও লিবারেলিজমের ঢেউ চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করেছে। তখন থেকেই শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের পরিণত করার প্রয়াস হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রকমের আত্মপ্রকাশ।’
মানস বলেন, ‘দেশের বাইরে হার্ভাড বা কলম্বিয়ার মতো নামকরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে টাকা আয় করে তাদের আয়ের ধরন মোটেও এমন নয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ব্যাপারটি অনেকটা গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও স্বরূপ বুঝতে কষ্ট হয় না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মানহীন প্রমাণ করে নিজেদের ব্যবসার কৌশল অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের সারিতে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘এটা মূলত ব্যবসায়িক কৌশল। আগে যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সুযোগ পেত না, তাদের শিক্ষার জন্য বড় মাধ্যম ছিল জেলাভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে পড়াকে নিজেদের স্ট্যাটাস রক্ষার অংশ হিসেবে দেখেন। শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের বড় কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পলিসি।’
অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষানুরাগী প্রমাণ দিয়ে ব্যবসায়িক নানা সুবিধা নিচ্ছে উল্লেখ করে মানস বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টারশিয়ারি শিক্ষা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছেন তারা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে পরোক্ষ সুবিধা নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসায়িক ভ্রমণ কিংবা অনুদানের সুবিধা নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক লাভ আদায় করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’
দায় আছে ইউজিসির
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন লাগামহীন খরচ এবং সর্বাত্মক ব্যবসায়ী মনোভাব রুখতে ইউজিসিকে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষক ও অধিকারকর্মীরা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যার সিংহভাগই রাজধানীতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে যা হয় তাকে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।’
তিনি বলেন, ‘দিন দিন এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক রকমের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী শেখাচ্ছে, তাদের কারিকুলাম কেমন, সেসব নিয়ে আলোচনা হয় না বললেই চলে। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে এদের সঠিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইউজিসির।’
বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসি বদ্ধ পরিকর জানিয়ে কমিশন সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করা ইউজিসির বড় লক্ষ্য। এর পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানেও ইউজিসি সোচ্চার বলে জানান তিনি।
১২০ দিন আগে
দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি
দেশের ২০ থেকে ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও তহবিল তছরুপের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি ভেঙে প্রশাসক বসানো হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনে প্রশাসক বসানো হবে। প্রশাসক বসানো ছাড়াও যদি আরও বেশি কিছু করা যায় বা সরকারের আরও বেটার বা ইনোভেটিভ আইডিয়া থাকে, প্রয়োজনে সেটিও করা হবে।’
তবে যায় করা হোক না কেন, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সাত কলেজ নিয়ে যৌক্তিক সমাধান আসবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিওটির বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ অর্থ পাচার। এছাড়া তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।’
বিওটির এসব অনিয়ম নিয়ে কীভাবে তথ্য পেলেন?—উত্তরে এই ইউজিসি সদস্য বলেন, ‘দুদক, আমাদের নিজস্ব তদন্ত, সংবাদপত্রসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্নভাবে তথ্য এসেছে আমাদের কাছে। এসব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে) একটি সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার বিষয়ে কাজ হচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে।’
কতগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০ থেকে ৩০টির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম তদন্তে কমিটিও করে দিয়েছি; সেটি সাধীন ভাবে কাজ করছে। কাজ শেষ করে রিপোর্ট দিলে সিদ্ধান্তের জন্য তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট চলেও এসেছে। যেমন: সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি; তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আমার সুপারিশ করে প্রতিবেদনটি সরকারকে পাঠিয়েছি, সরকার সিদ্ধান্ত দিলেই প্রশাসক বসানো হবে।’
তদন্ত কমিটিতে কারা কারা আছে, এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অধিকাংশ কমিটির কনভেনার (আহ্বায়ক) বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউজিসি থেকে সদস্য নেওয়া হয়েছে আবার বাইরে থেকেও নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি কমিটিতে আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখার ডিলিং অফিসারকে (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রাখা হয়েছে, যিনি সেই ভার্সিটির দায়িত্ব পালন করছেন।’
তদন্ত কমিটির কনভেনার হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক বিচারকদের রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ইউজিসি সুত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতি বছর শিক্ষার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের সঙ্গে দুর্নীতিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক নেই। আইনের তোয়াক্কা না করে নানা কৌশলে বিপুল অর্থ লুটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের (বিওটি) সদস্যরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিওটি গঠন করা হয়। তারা ব্যবসা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিক। তবে তারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণ কমিশনের সভায় অভিযোগ ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
২১৪ দিন আগে
ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি ঢাকা। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দূষণে শহরটি অনেক আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার ওপর গড়ে উঠেছে যত্রতত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এতে করে ভুগতে থাকা এই শহরটির ওপর নতুন করে চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মত, শিক্ষাকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি হয়েছে, যা সুষ্ঠু নগর-পরিকল্পনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতীতের সরকারগুলো মালিকপক্ষকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখের বেশি। আর ঢাকাকে বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী শহরের একটি বলছে ইআইইউ গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্সের ২০২৪ সালের সমীক্ষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যটতা বসবাসের অনুপযুক্ত, ঢাকার অবস্থান তারও নিচে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কোনো তথ্য যুক্ত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে বাকৃবি-মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা
২০২২ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৭টি, আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬৯টি। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মোট ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ৮৬টি। দেশের ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার ৫১৩ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৮৩ জন। অন্যদিকে, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৭১ জন।
২০২২ সালের পর গত তিন বছরে আর কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইউজিসি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। সীমিত আসন সংখ্যা এবং জাতীয় শিক্ষা বাজেটে উচ্চশিক্ষাখাতে বরাদ্দ ঘাটতি থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায়, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের আদলে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার।
ঢাকায় কেন এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণেই ঢাকায় এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এ জেলায় বর্তমানে ৫৭টি প্রাইভেট ও ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
ঢাকায় এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কিনা—জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘কথা হচ্ছে, প্রয়োজন থাকলেও যেখানে-সেখানে যেমন-তেমন লেখাপড়া করানো আর সার্টিফিকেট দেওয়া—এটা তো সার্টিফিকেট বাণিজ্য! এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এজন্য কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করাও দরকার বলে মনে করেন এই শিক্ষা অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘এটির দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের। তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৬ এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, পাঠদানের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকতে হবে।
৩ উপধারায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যূন ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে।
ঢাকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশই কিন্তু এই শর্ত পূরণ করছে না—প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘ইউজিসি কয়দিন পরপর বলে যে ক্যাম্পাস করতে হবে, কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া হয় না। কী পড়ানো হচ্ছে এবং কী প্রয়োজনে এগুলো হচ্ছে—সেটি আগে দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি করা হয়েছে। ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণ তো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাইভেট খাতের বিকাশ ঘটলে সমস্যা নেই, কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে তো তাদের আসতে হবে! কয়দিন পরপর বলেন—প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে হবে। অথচ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের একটি উপায়। এ ব্যাপারে তাই আইন কঠোর করতে হবে।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে স্বীকার করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠান বড় বড় ক্যাম্পাস করে চলে গেছে, বেশিরভাগই গেছে; কিন্তু বাকিরা গরজ করছে না, আইনের তোয়াক্কাই করছে না। এই তোয়াক্কা করানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে বেমানান
ঢাকা শহরের এত এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটা একেবারেই বেখাপ্পা। যেখানে আমরা বিক্রেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছি, সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে আরও কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।’
‘এমনকি যখন বিকেন্দ্রীকরণের কথা ওঠে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে বলা হলো, তখনও আশুলিয়াসহ ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে তারা ক্যাম্পাস স্থাপন করল। অথচ ঢাকার বাইরে এতগুলো বিভাগীয় শহর আছে, জেলা শহর আছে; সেখানে যদি এসব বিশ্ববিদ্যালয় যেত, তাহলে ঠিক হতো।’
উদহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন রংপুর থেকে একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকায় এসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেখানে হতো, তাহলে তারা সেখানে বসেই লেখাপড়া করতে পারতেন।’
আগের সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এই অধ্যাপক।
তার ভাষ্যে, ‘বিগত সময়ে যারা মন্ত্রী ও আমলা ছিলেন, তারা তাদের মতো করে পরিচিত লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের ছিল না।’
ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ইচ্ছামাফিক এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ তারা ঢাকা ছেড়ে যেতে চাননি। এর ফলে এটি নগরীতে অনেক বেশি চাপ তৈরি করেছে। এতগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শহরের জন্য কখনোই ভালো কিছু নয়। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তগুলো নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।’
ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীত
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকারগুলো তাদের মতামতের বিপরীতে গিয়ে ঢাকাকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গ তুলে নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ায় যাওয়া মানে সেটি ঢাকার বাইরে নয়। পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ঢাকার (জেলার) মধ্যেই কোথাও জমি ভরাট করে তৈরি হয়, তাহলে সেটিকে ঢাকার বাইরে যাওয়া বলে না। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে নতুন জেলা কিংবা বিভাগীয় শহর হতে হবে। সেটাকে বলে বিকেন্দ্রীকরণ।’
তার অভিযোগ, ‘ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে সরে গিয়ে যদি আশুলিয়া কিংবা বিরুলিয়ায় ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়, তাহলে সেটিকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে না। আর এ কারণে ঢাকার আয়তন বাড়ছে, গ্রেটার ঢাকা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে ঢাকা জেলা পার হতে হবে, কিন্তু তারা বলছেন ঢাকা শহর ছাড়লেই হবে। সরকার আসলে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য না করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমনটি হয়েছে।’
তার সঙ্গে একই মত পোষণ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এগুলোকে বিকেন্দ্রিকরণ করা উচিত।’
ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ শিক্ষক। বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। ঢাকার বাইরের মানুষও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারেন, সেরকম কার্যক্রম প্রণয়ন করা উচিত।’
ঢাকার সবকিছুই অপরিকল্পিত
কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ঢাকায় কোনোকিছুই পরিকল্পনামফিক করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোকে কোয়ালিটি এডুকেশনের (মানসম্পন্ন শিক্ষা) দিকে নিয়ে যেতে চাই।’
ড. আনোয়ার বলেন, ‘এই চিন্তা মাথায় রেখে মানের ঘাটতি থাকলে নতুন করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করতে আমরা সর্বাত্মক নিরুৎসাহিত করব। পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে দেশে এখন ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এত ছোট দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়! একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে দুইশ থেকে পাঁচশ বিঘা পর্যন্ত জমি লাগে এবং আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ খুবই কম।’
‘অধিকাংশ জমি জলাভূমি ও কৃষিজমি। এসব ভরাট করে আমাদের উন্নয়নের অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, হোক সেটা পাওয়ার প্ল্যান্ট কিংবা ইন্ডাস্ট্রি। এসবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যায় একটা কমপোনেন্ট, যেটা আসলে খুব অল্প জায়গা নিচ্ছে। তবে খুব সচেতনভাবে এ বিষয়টির পরিচালনা করা দরকার।’
নগর-পরিকল্পনাবিদরা তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারি পর্যায় থেকে যদি আসে, পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটাকে উৎসাহিত করব। শিক্ষার সঙ্গে সোসাইটিকে কমিউনিকেট করার জন্য যে ধরনের পলিসি ও কাঠামোগত সাপোর্ট দরকার, সেটা ডেভলপড করা অত্যন্ত জরুরি।’
পরিকল্পিত শহর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিক থেকে নগরের সিভিক ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে কোন কোন কম্পোনেন্টগুলো থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটা কতটা থাকবে, কতটা থাকলে ওভারক্রাউডেড হবে না, নগরীর বাসিন্দাদের জন্য ক্ষতিকর হবে না—সেই জিনিসগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
ধীরে ধীরে ঢাকা থেকে বেরোচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তার কথায়, ‘এখন সবগুলোই আস্তে আস্তে শহরের বাইরে যাচ্ছে। আমাদের তিন বিঘা জমি যেটা দরকার, এক একর জমি দরকার—সেটা করতে গিয়েই সবাই ঢাকার বাইরে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় তো ঢাকার বাইরেই ছিল, কিন্তু ওটা এখন শহর হয়ে গেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও ঢাকার প্রান্তে চলে গেছে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য তিন বিঘা জমির যে রিকোয়ারমেন্ট আছে, সেটা তারা কোথায় পাবে? এগুলো ঢাকার বাইরে শিফট করতে একটু সময় নিচ্ছে, তবে শিফট করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। আর শিফট না করলে তো (আমরা) সার্টিফাই করছি না!’
আরও পড়ুন: ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণিসম্পদ ডিজিকে বাকৃবির সংবর্ধনা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করার নিয়ম রয়েছে, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমরা মনিটর করছি। যারা ঢাকার মধ্যে আছে, সেগুলোকে আমরা সনদের জন্য এন্টারটেইন (বিবেচনা) করছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, তারা কনভোকেশন করতে পারছে না, কিছুই করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগোতে চাই। খবরদারি কিংবা জুলুমে আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের একটা মেকানিজম আছে, সেটা পূর্ণ না করলে তারা কনভোকেশন কিংবা অন্যকিছু করতে পারে না। ফলে ওরা নিজেদের স্বার্থেই ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে।’
৩০১ দিন আগে
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
নিহত জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ (১৮) চন্দনাইশস্থ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি আমিরাবাদ ইউনিয়নের জনকল্যাণ এলাকার জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছেলে।
আরও পড়ুন: উলিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার সময় অতিবৃষ্টির কারণে নিজ বাড়ি থেকে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবার সময় আমিরাবাদ ইউনিয়নের জনকল্যাণ এলাকায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মঙ্গলবার তার লাশ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে নিখোঁজ এক যুবকের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফুলবাড়ীতে আম পাড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু
৮৫০ দিন আগে
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের বুটক্যাম্প
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের বুটক্যাম্প আয়োজন করেছে আইটেসারেক্ট টেকনোলজিস।
আগামী ২০ জুন থেকে অফিসিয়াল রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। আবেদনের সুযোগ থাকছে জুলাই পর্যন্ত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সারা দেশে আয়োজন করা হচ্ছে ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডটি আয়োজন করেছে আইটেসারেক্ট টেকনোলজিস।
অলিম্পিয়াডে মোট তিনটি রাউন্ডে আটটি ভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ঢাকায় নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের যাত্রা শুরু
অলিম্পিয়াডের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মাদ আবদুল হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দক্ষতাসমূহের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সব শিক্ষার্থীকে সচেতন ও দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিত করাই এ অলিম্পিয়াডের মূল লক্ষ্য।
অলিম্পিয়াডে প্রতিটি বিভাগের বিজয়ীদের জন্য প্রথম পুরস্কার হিসেবে থাকবে ২ লাখ টাকা, প্রথম রানার্সআপ ও দ্বিতীয় রানার্সআপের জন্য যথাক্রমে ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা।
মোট ছয়টি স্তরের শিক্ষার্থীরা এ ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারবে। স্তরগুলো হচ্ছে প্রথম-পঞ্চম শ্রেণি, ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি, কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ও মাদরাসা শিক্ষার্থী।
এ আয়োজন নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বুটক্যাম্প করা হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবির ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আইটেসারেক্ট টেকনোলজিস আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনলাইনে (www.nationalsteamolympiad.com) নিবন্ধন করতে হবে।
স্টিম অলিম্পিয়াডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রধান উপদেষ্টা ও আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইটেসারেক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মাদ আবদুল হামিদ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের ও সমন্বয়ক সাকাওয়াত হোসেন।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার শিক্ষা: মন্ত্রী
৯০৫ দিন আগে
শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা দিন: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পরিকল্পনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ ও পছন্দ অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারে না।’
রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: ইসিকে সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।’
আরও পড়ুন: পিএসসিকে সরকারি নিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যেন কোনোভাবেই সনদ ভিত্তিক না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়তে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু আসন টিউশন ফি-মুক্ত রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে তাদের পাঠদান নিয়ে কী করা হচ্ছে তা জানতে গবেষকদের যথেষ্ট আগ্রহ ও উদ্দীপনা থাকতে হবে।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
১৩৫৬ দিন আগে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চায় ইউজিসি
পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনের জন্য দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
১৭৮৯ দিন আগে
বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে পারছে না ঢাবি
শিক্ষার মানের জন্য একদা ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে অভিহিত করা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা দিন দিন কমছে।
১৮৭৬ দিন আগে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসির অনলাইন পাঠদান নির্দেশনা প্রকাশ
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পাঠদান, পরীক্ষা নেয়া, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে নির্দেশনা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
২০৩৮ দিন আগে