ইতিহাস
বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস দূর হয়ে গেছে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে; বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস দূর হয়ে গেছে। এটি দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেকের জন্য এটা মনোকষ্টের কারণ হয়েছে।
শুক্রবার(২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ডিআরইউতে রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির, ঢাকার বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশ যাতে স্বাধীন না হয় সেজন্য অনেকেই বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে তাকিয়ে ছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে অনেকেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদের ইঙ্গিতে, ইশারায় চলছে। দেশকে ওই জায়গায় নেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:নদী রক্ষায় ডিসিদের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন: নৌ প্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, চিলমারী নদী বন্দরের উন্নয়ন করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে রেল ও সড়কপথের উন্নয়ন করা হচ্ছে।
সংগঠনের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য উন্মে কুলসুম স্মৃতি, সংগঠনের সিনিয়র সদস্য শামসুল হক দুররানী, সংগঠনের সিনিয়র সদস্য আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান, সদস্য মশিউর রহমান, সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক ও নর্থ বেঙ্গল ফোরামের সভাপতি নজমুল হক সরকার এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়সার ইমন।
আরও পড়ুন: আগামী দিনে নৌবাণিজ্যে মোংলা বন্দর নেতৃত্ব দিবে:নৌ প্রতিমন্ত্রী
বাঙালির ইতিহাস লিখতে গেলে আ. লীগের নাম লিখতে হবে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ ৭৪ বছরের পথ চলায় বাঙালি জাতির সকল অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, যার সবচেয়ে বড় অর্জন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ে, খাদ্যে ঘাটতি থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় উন্নীত হয়েছে, বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই কারণে বাঙালির ইতিহাস লিখতে গেলে আওয়ামী লীগের নাম লিখতে হবে।
শুক্রবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলীয়ভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মাঠে মারা গেছে: তথ্যমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে ছয়দফা দাবির মধ্য দিয়ে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন সূচনা করেন।
তিনি বলেন, সেই পথ ধরে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার মূল লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান স্মরণ করিয়ে দেন, মুক্তিযুদ্ধকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরগুলো গঠিত হয়েছিল, সেক্টর কমান্ডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা যেন সেই হারানো স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্যই, যাদের নেতৃত্বে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছি।
সে কারণে এই দিনটি বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: আমরা চাই বিএনপি পূর্ণশক্তিতে নির্বাচনে অংশ নিক: তথ্যমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ জাতির পিতা, মহান শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাবে, ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হাছান মাহমুদ।
এ দিন সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সূচনালগ্ন বর্ণনা করে মন্ত্রী হাছান বলেন, ১৯৪৯ সালের এই দিনে ঢাকার রোজ গার্ডেনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল।
তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আরও শাণিত করার লক্ষ্যে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম আওয়ামী লীগ হয়।
১৯৫০ সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতাপূর্বকালেও আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির জন্য অনেক অর্জন বয়ে এনেছে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই মূলত: ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন শুরু হয়।
কারণ ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পাকিস্তানি সরকার মেনে নিলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তা প্রতিষ্ঠা করেনি, সেটি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
আরও পড়ুন: হায়েনার কামড়ে হাত বিচ্ছিন্ন শিশুকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন তথ্যমন্ত্রী
৪ লাখ গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, চার লাখ গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অসহায়দের মাঝে সমাজসেবার সহায়তার চেক, কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ এবং ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রকেল্পর আওতায় সুফলভোগী জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব সহজভাবে বলেছিলেন-আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই। একজন দু:খী মানুষ কখন হাসে, যখন তার পেটে ভাত, পরনে কাপড় এবং মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে। যখন তার ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ব্যবস্থা থাকে, যখন আয় রোজগার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে।
আরও পড়ুন: ১২ বছরে কারিগরি শিক্ষা ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এরপর যারা সামরিক-আধাসামরিক নানান চেহারায় স্বৈরশাসন এসেছে, জিয়াউর রহমান অবৈধ ক্ষমতা দখল করে তার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য দল গঠন করলেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে যে দল গঠন হয়, সে দলতো আর গণতান্ত্রিক দল হয় না। সে দল সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য কাজ করে না। তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য কাজ করে, আর তা হয়েছেও ঠিকই।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৬ সালে মানুষের ভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন। তখন থেকে এই যে বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তাদের ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, অর্থাৎ দু:খী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আশ্রয়ণ প্রকল্প করে, গুচ্ছগ্রাম, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘরে করে দেয়া। মাত্র কয়েকদিন আগে ৪০ হাজার মানুষকে ঘর করে দিলেন।
তিনি আরও বলেন, এই পর্যন্ত চার লাখ মানুষকে ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। যাদের ঘর ছিল না, জায়গা ছিল না। আজকে তাদের ঘর আছে এবং কর্মসংস্থানের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা বিরল।
দীপু মনি বলেন, আজকে কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির আমলে সার চাওয়া হয়েছে, তখন ১৮ জন কৃষককে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চাইছে, পানি চাইছে, গুলি করে মানুষ হত্যা করতে হবে কেন? শেখ হাসিনা বলেছেন, সারের পেছনে কৃষককে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের কাছে পৌঁছে যাবে। শেখ হাসিনা সব কথা রাখেন। তিনি বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ করবেন, তা করেছেন। এখন আপনাদের সকলের হাতে হাতে মোবাইল। আজকে মানুষ না খেয়ে থাকে না, সকলের পরনে কাপড় আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে ৩০ প্রকারের ওষুধ পাওয়া যায়। এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে তৈরি করছেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, হাইমচর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বেপারী, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন প্রধানিয়া, হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশীদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক কারণে শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষার অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যমকে পাশে চান শিক্ষামন্ত্রী
পায়রা বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এপ্রিলে
অবশেষে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পায়রা বন্দরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে। এছাড়া মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পায়রা বন্দরের ‘প্রথম টার্মিনাল’ উদ্বোধন করা হবে।
১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসবে। এ সপ্তাহের মধ্যে সাতটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পায়রা বন্দরে কন্টেইনার ইর্য়াড নির্মাণের উদ্যোগ
এছাড়া পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ ২৬ মার্চ সম্পন্ন হবে।
তখন পোর্টটি আরও বেশি ভায়েবল হবে। বড় বড় জাহাজ আসবে। ইনার ও আউটারবারে মার্কিং, বয়া বাতি বসানো হয়েছে। ইনারবারে ১৫টি জাহাজ রাখা যাবে।
সেখানে লোডিং আনলোডিং কার্যক্রম চলবে।
পায়রা বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ৪২ হাজার পরিবারকে ২৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
এছাড়া ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে এক হাজার একর জমি ভরাট করা হয়েছে।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাসমূহের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের এডিপিভূক্ত জিওবি ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সময়ের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েলসহ সংস্থা প্রধানরা সরাসরি ও অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে নেপাল: প্রধানমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পায়রা বন্দর পরিদর্শন
সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন মিশেল ইয়েহ, অস্কারে ইতিহাস গড়লেন
সেরা অভিনেত্রীর জন্য অস্কার একাডেমি পুরস্কার জিতে ইতিহাস রচনা করেছেন মিশেল ইয়েহ।
মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এই অভিনেত্রী প্রথম এশীয় নারী হিসেবে বহুমুখী অভিনয়ের জন্য রবিবার সেরা অভিনেত্রীর একাডেমি পুরস্কার জিতেছেন। তিনি বহুমুখী ‘এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ানস’ এ অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে এটি আমার মা এবং বিশ্বের সমস্ত মাকে উৎসর্গ করতে হবে। কারণ, তারা সত্যিই সুপারহিরো এবং তাদের ছাড়া আজ রাতে আমরা কেউ এখানে থাকব না।’ ‘আজ রাতে আমাকে যেসব ছোট ছেলে এবং মেয়েরা দেখছেন তাদের জন্য এটি একটি আশা এবং সম্ভাবনার বাতিঘর। এটা তারেই প্রমাণ যে বড় স্বপ্ন দেখে, তার স্বপ্ন সত্যি হয়। নারীরা, আপনারা কখনও কাউকে বলতে দিবেন না যে আপনার অতীতই সুন্দর ছিল।’
শ্বেতাঙ্গ অভিনেতা লুইস রেইনার ‘দ্য গুড আর্থ’-এ একজন চীনা গ্রামবাসীর চরিত্রে ‘ইয়েলোফেস’ -এ অভিনয়ের জন্য একই বিভাগে জয়ী হওয়ার প্রায় ৯০ বছর পর ইয়েহের বিজয় আসে৷
মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে ইয়েহ এই বিভাগে প্রথম এশিয়ান৷ এর আগে ১৯৩৫ সালে মেরলে ওবেরন ‘দ্য ডার্ক অ্যাঞ্জেল’ এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু পুরস্কার জিততে পারেননি। জন্মের তথ্যানুসারে তার দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্য গোপন রেখেছিলেন।
ইয়েহ অতীতের অস্কার বিজয়ী কেট ব্ল্যানচেট (‘টার’), সেইসঙ্গে মিশেল উইলিয়ামস (‘দ্য ফ্যাবেলম্যানস’), আনা ডি আরমাস (‘স্বর্ণকেশী’) এবং আন্দ্রেয়া রাইজবরো (‘লেসলির কাছে’) পরাজিত করেছেন৷
আরও পড়ুন: অস্কার ২০২৩: কোথায় ও কখন দেখবেন এবারের আয়োজন
এই বিভাগে যারা মনোনীত হয়নি তাদের জন্যও নোটিশ দিয়েছে: ভায়োলা ডেভিস (‘দ্য ওম্যান কিং’) এবং ড্যানিয়েল ডেডউইলার (‘টিল’) এর মতো কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের এক বছরে তাদের বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে কেউ কেউ রাইজবোরোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এ-লিস্টারদের তৃণমূল প্রচারণার সমালোচনা করেছেন।
গোল্ডেন গ্লোব এবং স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডসহ সর্বত্র আপাতদৃষ্টিতে প্রতিটি পুরস্কার জেতার পর ইয়েহ একটি তালাবদ্ধ হয়েছিলেন, ইভলিনের তার সূক্ষ্ম চিত্রায়নের জন্য, একজন অভিবাসী চীনা স্ত্রী, মা এবং লন্ড্রোম্যাট অপারেটর কর অডিটের জন্য প্রস্তুত।
ছবির জেমি লি কার্টিস এবং কে হুয়ে কোয়ান সেরা সহ অভিনেতা অস্কার জিতেছেন। ড্যানিয়েল কোয়ান এবং ড্যানিয়েল শেইনার্ট ‘এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ানস’-এর জন্য সেরা পরিচালক এবং মূল চিত্রনাট্য জিতেছেন এবং এটি দেশেও সেরা ছবির স্থান পেয়েছে।
ইয়েহ কুংফু সিনেমা জগতে তার সূচনা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে ‘সুপারকপ’-এ জ্যাকি চ্যানের সহ-অভিনেতা হিসাবে তারকা হয়ে ওঠেন৷ আমেরিকান শ্রোতারা পরের দশকে ‘টুমরো নেভার ডাইস’ এবং অ্যাং লি'স-এর মতো হিটগুলোর মাধ্যমে তাকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছিল৷ ‘ক্রুচিং টাইগার লুকানো ড্রাগন।’
যখন তিনি প্রথম ‘এভরিথিং এভরিহোয়ার’ এর স্ক্রিপ্টটি পড়েছিলেন, তখন ইয়েহ ভেবেছিলেন এটি ‘স্টেরয়েডের ওপর একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র’। তিনি পরিণামে অভিবাসী মা এবং দাদীর যারা অলক্ষিত যান তাদের কণ্ঠস্বর দেয়ার সুযোগ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। মাল্টিভার্স মুভিটিও ছিল বিভিন্ন ধারার একটি প্রদর্শনী— নাটক, কমেডি, সাই-ফাই এবং কল্পনা।
৬০ বছর বয়সে, ইয়েহ ‘ক্রেজি রিচ এশিয়ানস’-এ নিয়ন্ত্রক মাতৃতান্ত্রিক হিসাবে তার স্ট্যান্ডআউট হওয়ার পর থেকে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেখান থেকে, তিনি একটি
‘স্টার ট্রেক’ স্পিনঅফ থেকে মার্ভেলের ‘শাং-চি অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড অব দ্য টেন রিংস’ পর্যন্ত সবকিছুই করেছেন।
ইয়েহকে এই বছরের শেষের দিকে ডিজনি+ সিরিজ ‘আমেরিকান বর্ন চাইনিজ’-এ দেখা যাবে৷ তিনি ‘ক্রেজি রিচ এশিয়ানস’ পরিচালক জন এম চু-এর সঙ্গে মিউজিক্যাল ‘উইকড’-এর স্ক্রিন অ্যাডাপ্টেশনের জন্য পুনরায় একত্রিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷
আরও পড়ুন: অস্কারের মনোনয়ন ঘোষণা মঙ্গলবার
পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল: এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে ফের তলব
মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের (৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত) পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও ইতিহাস বিকৃতি থাকায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) চেয়ারম্যান ও এক সদস্য (কারিকুলাম)কে আগামী ২৯ নভেম্বর স্বশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আলী মুস্তফা খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান।
পরে অ্যাডভোকেট আলী মুস্তফা খান বলেন, গত বছর তারা হাজির হয়ে আদালতকে জানান, ২০২২ সালের শিক্ষাবর্ষের বইতে আর এমন ভুল থাকবে না। সংশোধন করে দেবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই ভুল এখনও রয়েছে। এ কারণে ফের তাদেরকে তলব করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার তাদেরকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ ২৮ নভেম্বর
জানা যায়, গত বছর পাঠ্যবইতে ভুল ও বিকৃতি তুলে ধরে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা মো. আলমগীর আলম। রিট আবেদনে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ে অন্তত পাঁচশ ভুল ও ইতিহাস বিকৃতি তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, ভুলে ভরা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই। একই সঙ্গে করা হয়েছে ইতিহাস বিকৃতিও। এছাড়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক-এমন অনেক বিষয় পাঠ্য বইগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের পাঁচ শতাধিক ভুল ও বিকৃতির তথ্য সামনে এসেছে। মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘মুজিব নগর সরকারের রাষ্ট্রপতি’ বলা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি’। আবার জাতীয় সংগীতও লেখা হয়েছে ভুল। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে বঙ্গভবনকে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভবন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল পাঁচ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সংবিধানের কোথাও আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের কথা উল্লেখ নেই।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পাঠ্যপুস্তকে থাকা এসব ভুল ও ইতিহাস বিকৃতির ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান এবং বোর্ডের একজন সদস্য (কারিকুলাম)কে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে নিয়ে বিকৃতি ও ভুলে ভরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ের দায়সারা ও দায়িত্বহীন প্রকাশনা কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে এবং ওইসব ভুল ও বিকৃতি সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। শিক্ষা সচিব, ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য (কারিকুলাম), সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: ১৮ মিলিয়নের শিক্ষা উদ্যোগ চালু করল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে ফটকে তালা লাগিয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের জন্য বিচারপতি খায়রুলকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের জন্য 'অনৈতিকভাবে' (রাজনীতির) মাঠ তৈরি করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার জন্য ইতিহাস কখনই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে ক্ষমা করবে না।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর: মির্জা ফখরুল
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সচেতন নাগরিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং তাদের অস্তিত্ব সাধারণ নির্বাচন পরিচালনায় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘সংসদ আইন পাস করেছে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে), কিন্তু বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এর জন্য ভিত্তি তৈরি করেছেন। এর জন্য ইতিহাস তাকে কখনো ক্ষমা করবে না। তিনি প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন এবং পরে অবসর গ্রহণের ১৬ মাস পর বেসামরিক হিসেবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি পরিবর্তন করে অনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ রায় দিয়েছিলেন।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি নিয়ে আসে এবং ১৭৩ দিন হরতাল (সাধারণ ধর্মঘট) জারি করে। সে সময় তাদের দাবি ছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
পরে ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীনের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ বিকাশ না হওয়ায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার এবং বিরাজনীতিকরণের চক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ এটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিল করে দেয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে তারা শ্মশান করে দিয়েছে: চট্টগ্রামে মির্জা ফখরুল
দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ যুবক উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদের সংগঠিত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যারা বলপ্রয়োগ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় থেকেছে অতীতের সব ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানি নিয়ম এবং এইচ এম এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনকে ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন। ‘আওয়ামী লীগ সরকার তার দুঃশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ করা উচিত:
‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প সরকারের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, অপরিকল্পিত এই প্রকল্পের কারণে যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি বিআরটি প্রকল্পের রাস্তার মাঝখানে দোকান এবং টিকিট কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে… আমি বুঝতে পারছি না তারা ঠিক কী নির্মাণ করছে। ওবায়দুল কাদের আজ (রবিবার) বলেছেন যে এটি (বিআরটি) গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা নির্লজ্জ মন্তব্য। তারা নিজেরাই এই প্রকল্প নিয়েছে, তাই এই মন্তব্য করার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার গাজীপুর থেকে বিআরটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকা নগরবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা সরকারের অপকর্ম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন না। ‘এই সরকার কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে আমরা এখন তাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করতে ও স্বাধীনভাবে লিখতে ভয় পাচ্ছি। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি আমরা কখনো কল্পনাও করিনি।’
বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণ থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তরুণ আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
আরও পড়ুন: পুলিশ ‘অবৈধভাবে’ বিরোধীদের তথ্য সংগ্রহ করছে: মির্জা ফখরুল
ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ঘটনা ১৫ আগস্ট: সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম
১৫ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন মেজর জেনারেল সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম (অব.)।
তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের শুরুটা হয়েছে শেখ কামালের জন্মদিন দিয়ে। তারপর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন। তারপর ঘটে গেল সেই ১৫ আগস্ট। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ঘটনা। সপরিবারে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।’
শনিবার (২৭ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা অডিটরিয়ামে সৈয়দ সাফায়েত ও সৈয়দ মাহবুবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ১৫ আগস্টের পর ১৭ আগস্ট সিরিয়াল বোমা। একসঙ্গে ৫০০ বোমা মেরে সন্ত্রাসীদল আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তারপর একদম শেষে ২১ আগস্ট। আমাদের একমাত্র আশার আলো, আমাদের একমাত্র প্রদীপ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ২১ আগস্ট। সেই পরিকল্পনা সফল হলে আমরা হয়তো এতোদিন ক্ষমতায় থাকতে পারতাম না।
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াত সরকার দায়ী: প্রধানমন্ত্রী
শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন প্রতিজ্ঞা করি, এই শোক যেন শক্তিতে পরিণত হয়।’
কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী দিনে কবির দুই লাইন আবৃত্তি করে সহযোদ্ধাদের সতর্ক করেন মেজর জেনারেল (অব.) সাফায়েতুল ইসলাম, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে! লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।’
এই হত্যাকাণ্ডকে প্রচণ্ড ঘৃণার চোখে দেখার আহ্বান জানিয়ে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবা বলেন, এখানেই শেষ নয়। তারা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। যে হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন।
রিফাত উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আফজাল, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও সাবেক পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডা. দ্বীন মোহাম্মদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:হলমার্কের জেসমিনের জামিন প্রশ্নে শুনানি শেষ, সিদ্ধান্ত ২৮ আগস্ট
ঘাতকরা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর চেষ্টা করছে: শিক্ষামন্ত্রী
ইতিহাসে জিয়া খুনি ও বিশ্বাসঘাতক: তথ্যমন্ত্রী
জিয়াউর রহমান ইতিহাসের পাতায় একজন খুনি এবং বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছিল জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতি, লুটপাটের অর্থনীতি চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। আর জিয়াউর রহমান ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কুশীলব। শুধু তাই নয় জিয়াউর রহমান নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার এবং জওয়ানকে হত্যা করেছে। তাই জিয়াউর রহমান ইতিহাসের পাতায় একজন খুনী এবং বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই থাকবে।’
মঙ্গলবার (৩১ মে) রাজধানী শিল্পকলা একাডেমীতে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্টস এসোসিয়েশন ও শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও রূপসী বাংলা আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সম্মাননা ২০২২’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ উসকানি দেয়নি, দিয়েছে ছাত্রদল: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে সেজন্যই বিএনপি জিয়া হত্যার বিচার করেনি।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল, কিন্তু লক্ষ্য করবেন বিএনপি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার করেনি। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, এর পরে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেও দুই দফা ক্ষমতায় ছিল কিন্তু জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার করে নাই।’
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ড. হাছান বলেন, একটি ছবি হাজারো শব্দের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। ফটোসাংবাদিকরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন, অনেকে একটি ছবির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন। আমি আশা করবো, আজকে যে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে গেছে, করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে, আকাশ থেকেও কুঁড়ে ঘর দেখা যায় না, খালি পায়ে মানুষ নেই। মানুষকে সত্য জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের এই চিত্রগুলোও আপনাদের আলোকচিত্রে উঠে আসা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু হওয়ার পর ড. ইউনুসদের মুখে কথা নেই: তথ্যমন্ত্রী
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে একাডেমির পরিচালক (চারুকলা) মিনি করিম, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মঈন উদ্দীন আহমদ বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের একশ’ ছবি এবং দেশের প্রকৃতির একশ’ ছবি নিয়ে সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা, শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার তিন নম্বর গ্যালারিতে সকলের জন্য উন্মুক্ত।
আরও পড়ুন: বিএনপির মুখে অর্থ পাচার নিয়ে কথা মানায় না: তথ্যমন্ত্রী
স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সুফল যা একটি কঠিন বাস্তবতা। এদেশের আপামর জনতার পরোক্ষ প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, মা বোনের ইজ্জত, মানবিক বিপর্যয়, ত্যাগ তিতিক্ষার কথা ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। অসমাপ্ত রয়ে গেছে ইতিহাসের অনেক উপাদান। গবেষকরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের বাইরে থেকেও যারা যুদ্ধে সমর্থন জুগিয়েছিল তাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই দেশের মাটিতে পা না দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আছেন এবং ভাতা গ্রহণ করছেন। এমনকি বিজয়ের মুহূর্তে কোন অবদান না রেখেও শুধু মাত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে নিহত হয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্বোধিত হচ্ছেন। কিন্তু উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বাঙালিরা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানে মানসিক চাপ, নির্যাতন, জেল ও অনেক কষ্ট করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তাদের ইতিহাস অনুচ্চারিত রয়ে গেছে।
সামরিক বেসামরিক সকল শ্রেণিই নিজের মাতৃভূমিতে ফেরত এসে বাঙালী মূল স্রোতের সঙ্গে একাত্ম হতে চেয়েছিলেন। তাদের এই ত্যাগ তিতিক্ষা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়? সে উদ্যোগ কেউ নিয়েছেন কি না জানা নেই।
জানামতে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে । আফগানিস্তান হয়ে কপর্দকশূন্য অবস্থায় অনেকে দেশে ফিরেছেন। দুর্গম পর্বত অতিক্রম করতে গিয়ে নিজের কোলের সন্তান শত ফুট নিচে গড়িয়ে পড়েছে। পরিবার ছাড়া বসবাসকারী অনেকেই পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। এসব কি ইতিহাসের উপাদান নয়?
এবার আসি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রসঙ্গে।
২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ বাঙালিদের ওপর হামলা চালায় তখন যুদ্ধের সূচনা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে ও পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে সসস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেয়। সেদিন থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালী সদস্যরা গাদ্দার নামে অভিহিত হয়। তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও গণ যোদ্ধাদের সম্মিলিত শক্তির মুখোমুখি পাকিস্তানী বাহিনী। অপর দিকে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালী সামরিক সদস্যরা ( তাদের ভাষায় গাদ্দার) কড়া নজরদারির আওতায় এলেন।
এসব ভুক্তভোগী অফিসারদের থেকে অনেক কিছু জানা যায়। যুদ্ধের প্রথম দিকে হালকা নজরদারি। এর মধ্যে সুযোগ বুঝে দু একজন যখন পালিয়ে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় তখন আরও কড়া নজরদারি আরোপিত হয়। অনেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে জেল খাটেন, সুবিধা বঞ্চিত হন।
পাকিস্তান মিলিটারি সদর দপ্তর ধরে নিয়েছিল ডান্ডা মেরে বাঙালিকে দু একমাসের মধ্যে ঠান্ডা করে দেয়া যাবে। কিছুদিন পরেই বোঝা গেলো এ ধারণা ভুল। সামগ্রিক অবস্থা পাকিস্তানের অনুকূলে নয়। এর পর থেকে বাঙালীদেরকে যথাসম্ভব দায়িত্বপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে একত্রিত করে কঠিন প্রহরায় রাখা হলো। অদম্য বাঙালিরা এখান থেকেও পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে গেলো।
৭১ সালের যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে পাকিস্তানের পরাজয়ে ( পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তে) বাঙালিরা আরও রোষানলে পড়ে। এবার শুরু হয় সকল বাঙ্গালীদের একত্র করে দুটি গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দী করা। একটি গ্রুপ অবিবাহিত ও সিঙ্গেল অফিসারদের, আরেকটি গ্রুপ পরিবারসহ বসবাসকারীদের। সৈনিকদের বেলায় ও একই অবস্থা। কড়া পাহারার মাঝে কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ, দেখা সাক্ষাৎ কিছুই সম্ভব নয়। দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও নেই। কবে ছাড়া পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে। পুনর্গঠনের কাজ চলছে। পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালীদের ফেরত নেয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখে বন্দী শিবিরে অবস্থানরত ব্যক্তিরা আরো হতাশ হলেন।
আটকে পড়া বাঙ্গালীদের নিয়ে পাকিস্তানীরা নুতন ষড়যন্ত্র শুরু করে। যুদ্ধে বিপর্যস্ত ও পরাজিত পাকিস্তানীদের মনোবল শূন্যের কোঠায়। ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী কিভাবে কখন ফেরত আসবে। এর মাঝে অনেকের পুত্র, জামাই, নিকটাত্মীয় রয়েছে। এ ৯৩ হাজারের বিপরীতে পাকিস্তানীদের হাতে কোনো ভারতীয় যুদ্ধবন্দী নেই। তাই ওরা চেষ্টা চালালো আটকে পড়া বাঙালিদের যুদ্ধবন্দী বানিয়ে দর কষাকষির ক্ষেত্র তৈরি করার।
বন্দী শিবিরগুলোতে কঠোর নিয়ম কানুন চালু হলো । লয়ালপুর জেল, সাগাই দুর্গ, খাজুরি ক্যাম্পের বিভীষিকার কথা অনেক শুনেছি। বাইরে যোগাযোগ নেই, অর্থকষ্টে অনেকেই বিপদে ছিলো। বেসামরিক ঠিকাদারের সরবরাহকৃত খাবার ক্রয় করে খেতে হতো। কয়েকদিন পরপর বিছানাপত্র ব্যাক্তিগত বাক্স পেটরা তল্লাশি, রেডিও, টেপ রেকর্ডার ক্যামেরা ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হতো। সন্দেহ এতই প্রবল যে প্রায়ই দল বদল, রুম বদল, ক্যাম্প বদল ইত্যাদি রুটিন হয়ে দাঁড়ালো। ক্যাম্পের পাহারায় ছিলো উপজাতীয় মিলিশিয়ারা। ওরা ওদের ভাষা ছাড়া আর কারো ভাষা বুঝতো না। ক্যাম্প ইনচার্জ কারো সাথে যোগাযোগের কোনো সুত্রই রাখেননি।
জুনিয়র অফিসারগণ বন্দীত্ব ঘুচাতে সদা তৎপর। ওরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে গেলো। এতো নজরদারির ভেতরেও গোপনে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা করলো। সুড়ঙ্গ খননের যন্ত্রপাতি যোগাড় করা, গোপনীয়তা বজায় রেখে খনন কাজ চালানো কঠিন ব্যাপার ছিল । খননের আওয়াজ লুকানোর জন্য হারমোনিয়াম বাজিয়ে উচ্চস্বরে গান করা হতো। খননের বাড়তি মাটি লুকানোর জন্য নিজের সুটকেস খালি করে মাটি ভরা হলো। তাদের চেষ্টা, বুদ্ধিমত্তা ও স্পৃহা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। এতো চেষ্টার পর ও তীরে এসে তরী ডুবলো। সুড়ঙ্গ তৈরি হলো কিন্তু তার শেষ প্রান্ত গিয়ে ঠেকলো কর্তব্যরত এক সেন্ট্রির পায়ের কাছে। উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। নেমে এলো সবার উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন। রূপকথার কাহিনীকেও এসব বাস্তব গল্প হার মানায়। কিন্তু কোথাও উল্লেখ না থাকায় বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জানবে না এ কাহিনী।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
গণতন্ত্রের মোহমুক্তি