ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্যকে টিআইবিসহ তিন সংস্থার আহ্বান
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের পাচার করা অবৈধ অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা— ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় সংস্থাগুলো।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্ক, যাদের দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার বর্তমান সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রসংস্কারের চলমান উদ্যোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: টিআইবি
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে এমন জোরালো বার্তা দিতে হবে যে, চূড়ান্ত বিবেচনায় অর্থপাচারকারীদেরকে শুধু উৎস হিসেবে বাংলাদেশই নয়, গন্তব্য দেশ যুক্তরাজ্যেও কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে হয়।’
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, ‘সময়ের অপচয় না করে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ জব্দের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, ‘অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকার যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত (বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত) যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে যুক্তরাজ্য সরকারকে তা জব্দ করতে হবে।’
তার আহ্বান, ‘ইউকে সরকারের প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্যাত্রার প্রচেষ্টায় কার্যকরভাবে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে।’
উল্লেখ্য, দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিমধ্যে ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি পাউন্ড পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রতি বছর ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার)। বাংলাদেশ সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনুস এর আগে দুর্নীতি নির্মূল এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকারের শ্বেতপত্র কমিশনের অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার) করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের উদ্যোগকে সাধুবাদ, অন্য দেশেও পদক্ষেপ চায় টিআইবি
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ‘অর্থ পাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।
১৭৭ দিন আগে
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: টিআইবি
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এ সিদ্ধান্তকে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলছে সংস্থাটি।
সোমবার (২ জুন) বিকালে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কালো টাকা সাদা করার এই প্রস্তাব করেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র সংস্কার—বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে, দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।’
তিনি বলেন, করহার যাই হোক না কেন, এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে, অনুপার্জিত আয় অবৈধ হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ একইসঙ্গে বৈষম্যমূলক। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের অধিকতর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।’
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি এলে নতুন বাজেটে বিশেষ করহার
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘সবচেয়ে আশঙ্কা ও হতাশার ব্যাপার হলো, সরকারের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে উৎসাহ দেবে। এর মাধ্যমে সরকার বাস্তবে পুরো বছর জুড়ে অবৈধ ও অপ্রদর্শিত অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করছে এবং বছর শেষে কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়ার অঙ্গীকার করছে।’
বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘বৈধতা দেওয়ার অজুহাত হিসেবে যে খাতের তোষণ করা হচ্ছে, সেই আবাসন খাতই দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের একটি হিসেবে চিহ্নিত। অবিলম্বে কালো টাকা সাদা করার এই দুর্নীতিবান্ধব সুযোগ চিরতরে বাতিল করার জোর দাবি জানাই আমরা। যার সূচনা হওয়া উচিত সংশোধিত বাজেটে এ সুযোগ বাতিলের মাধ্যমে।’
পাশাপাশি কালো টাকার উৎস অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, করব্যবস্থায় সমতা ও ন্যায় নিশ্চিতের দাবিও জানান তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘টিআইবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সরকার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান বাস্তব ও কার্যকর বলে দাবি করতে চায়, তবে কালো টাকা বৈধ করার যাবতীয় পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায়, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম ও নীতিনির্ধারণী উদ্যোগগুলোকে জনগণ শুধুই লোকদেখানো মনে করবে। পরিণতিতে দুর্নীতির স্বাভাবিকতার সংস্কৃতি আরও গভীরতর হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র লোক দেখানো হিসেবেই থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের অন্যতম সুপারিশ হলো— কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়ার সকল পথ চিরতরে বন্ধ করা। সকল রাজনৈতিক দল এরইমধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। অথচ, অন্তর্বর্তী সরকার এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে স্ববিরোধীতা করছে, সরকার নিজেকে বিব্রত করছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ বাজেটে প্রত্যাশা ছিলো, দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতির একটি ধারণা দেওয়া। কিন্তু সে ব্যাপারে মাত্র একটি বাক্য ব্যবহার করেই দায় সেরেছেন অর্থ উপদেষ্টা।’
‘দেশ থেকে অর্থসম্পদ পাচার করে পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করা ব্যক্তিদের অর্থ-সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়ন করা হবে- তাও পরিস্কার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এছাড়া, রাজস্ব আদায় বাড়াতে এর ব্যবস্থাপনা থেকে নীতিকে আলাদা করার সঙ্গে এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের কৌশলগুলো কী হবে- সে উত্তরও পাওয়া যায়নি বাজেট বক্তৃতায়, যা সত্যিই হতাশার বলে মনে করে টিআইবি।
১৮৫ দিন আগে
হাসিনার স্বৈরতন্ত্রকে সহজতর করেছে বিচার বিভাগ: টিআইবির নির্বাহী পরিচালক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
এই ধরনের শাসনের উত্থানে সহায়তা করার জন্য গণমাধ্যমের একটি অংশেরও সমালোচনা করেন তিনি।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আইন বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়: টিআইবি
টিআইবি ও সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম (এসআরএফ) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি কার্যকর বিচার বিভাগের সুফল পেতে হলে রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। সাংবাদিকরা এই পরিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।’
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যমের একাংশ, যাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা ছিল, তারা বরং কর্তৃত্ববাদী চর্চাকে উৎসাহিত করতে জড়িত ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসুদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিকদের আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
কর্মশালার লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলে বিচার বিভাগের অনিয়ম উদঘাটন, আইনের গুরুত্বপূর্ণ ছেদ এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর গুরুত্বারোপ করা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টিআইবি ও টিআই-ইউএসের যৌথ চিঠি
৩৮৩ দিন আগে
মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে: টিআইবি
মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৫টি স্থানে একযোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে টিআইবি।
এতে বলা হয়, মানবাধিকারের গুরুতর ও ব্যাপক লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গুরুতর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বিচারে ক্ষমতার অপব্যবহার, সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব এবং ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ, জনস্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিবর্জিত এবং সীমাহীন দুর্নীতিতে জর্জরিত শাসন ব্যবস্থা এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।
এ প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।
অনতিবিলম্বে এসব দাবি মেনে নিতে হবে এবং কোনো বিলম্ব না করে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
দাবিগুলো হলো-
১. বহুমাত্রিক ও বহুপর্যায়ের নজিরবিহীন ও নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্ত নিশ্চিতে জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বাধীন কমিশন গঠন করার মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে আইন-প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনের শাসনের সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান তথা সার্বিক রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাবার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে হয়রানি ও নির্মম নিপীড়ন এখনই বন্ধ করতে হবে। আটক সব সমন্বয়ক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. বেআইনি, নির্বিচার ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত, অসামাঞ্জস্যপূর্ণ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে যারা নির্মম হতাহতের জন্য দায়ী এবং যাদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নকে পদদলিত করে নজিরবিহীন এই নির্মমতা সংগঠিত হয়েছে তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. জাতির ইতিহাসের নজিরবিহীন এই অধ্যায়ে নিহত-আহত সবার বয়স ও পেশা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
৬. আহত সবার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. হতাহত সবার পরিবারের জন্য সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুনর্র্বাসন প্রক্রিয়া প্রকাশ করতে হবে।
৮. অবাধ তথ্যপ্রবাহের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটালসহ সব গণমাধ্যমের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের হুমকি, নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার এবং বন্ধ করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ওপর সব নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৯. সহিংসতা দমন বা অন্য কোনো অজুহাতে, ভিন্নমত দমনের হঠকারি-প্রক্রিয়া থেকে এখনই সরে আসতে হবে। ভিন্নমত, বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থী নজরদারিভিত্তিক ভীতিকর পরিবেশ, তথা জনগণের জন্য নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে।
১০. এই মুহূর্ত থেকে সব অসত্য বয়ান ও মিথ্যাচার বন্ধ করে, দেশবাসীর মানবাধিকার, ন্যয়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
১১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ফাঁকাবুলির সংস্কৃতি পরিহার করে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিচারহীনতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪৮৭ দিন আগে
২০২৩ সালের দুর্নীতির সূচকে ২ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ
দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৩ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়ে ১৪৯তম স্থানে নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২৩, বাংলাদেশ ১০০ -এর মধ্যে ২৪তম স্কোর পেয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সিপিআই অনুযায়ী ২০২২ সালের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের স্কোর এক পয়েন্ট কমে ২৪- এ দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের সত্যতা ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির
ক্রমানুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যৌথভাবে ১০তম এবং আরোহণক্রমে ১৪৯তম।
জরিপের ফলাফলে ১০০ এর মধ্যে ৯০ স্কোর নিয়ে ডেনমার্ককে সর্বনিম্ন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে।
এছাড়া ৮৭ স্কোর নিয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় ও ৮৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড।
এদিকে সবচেয়ে কম ১১ স্কোর পেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া।
এদিকে ১৩ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলা।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক ও বিব্রতকর।’
এদিকে সরকার এই প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিহিত কর প্রত্যাখান করেছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য 'জনমতের প্রতিফলন': বিএনপি
টিআইবির গবেষণা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না: আরাফাত
৬৭৪ দিন আগে
টিআইবি বিএনপির ‘দালাল’: কাদের
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনকে একপেশে ও সরকারবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ সময় তিনি সংস্থাটিকে বিএনপির দালাল বলেও মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টিআইবি বিএনপির সুরে কথা বলে। ইতিহাস বলে- তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল, বিএনপির পক্ষে কথা বলে। তাদের গবেষণার নিরপেক্ষতা আমরা খুঁজে পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা ১০০ মারা গেলে ৫০০ বানিয়ে দেয়। টিআইবিও তাদের মতো। এই টিআইবি বলেছিল পদ্মা সেতু অসম্ভব। একই কথা সিপিডিও (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) বলেছিল।’
মন্ত্রী বলেন, মামলা করে সবকিছুর সমাধান হয় না। তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। কথা বা তর্কের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
বুধবার টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক’ হয়নি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হবে: ওবায়দুল কাদের
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে রণকৌশল থাকবেই। আমাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে, থাকবেই। সব দলেই থাকে। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যত সমস্যায় থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, সামনের উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে করার বিষয় আওয়ামী লীগের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, সংসদ চালু হলেই তা বোঝা যাবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এজন্য শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অন্য সব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো বাস্তবতার নিরীখে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: ওবায়দুল কাদের
সরকারের সামনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ: ওবায়দুল কাদের
৬৮৬ দিন আগে
এখন ব্যবস্থা না নেওয়া গেলেও নির্বাচনের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: কাদের
যাদের সম্পদ অস্বাভাবিক বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় অসঙ্গতির অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনা করায় এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া না গেলেও নির্বাচনের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে ধানমন্ডিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ মন্তব্য করেন।
টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে প্রকাশ করা প্রার্থীদের আয়, সম্পদ, ঋণ ও ঋণের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
টিআইবি একজন মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করেছে, যার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ভয়ভীতি সত্ত্বেও আসন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে: কাদের
টিআইবি জানিয়েছে, সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সেসব কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলটি জনসমর্থন হারিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যদি (বিএনপির আন্দোলনের প্রতি) জনসমর্থন থাকত, তাহলে কোনো দলকেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য লুকিয়ে হামলা চালাতে হতো না।’
বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা স্বাভাবিক। কোনো প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করবে না।
তিনি বলেন, প্রার্থীরা ভোটারদের বুঝিয়ে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে চান।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান কাদেরের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এটি: ওবায়দুল কাদের
৭০৭ দিন আগে
হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের সত্যতা ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রকাশ করা আয়, সম্পদ, ঋণ এবং ঋণের সত্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ কথা জানায়।
টিআইবি ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও ‘নো ইউর ক্যান্ডিডেট’ ড্যাশবোর্ড উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাজস্ব বিভাগ প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে স্বপ্রণোদিত হয়ে সেগুলো যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করবে- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম, সহসমন্বয়ক ও ড্যাশবোর্ড প্রস্তুতকারী রিফাত রহমান এবং কে. এম. রফিকুল আলম।
প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা এই আট ধরনের তথ্যকে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছে টিআইবি।
প্রতিবেদনের পাশাপাশি ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ডটিও তৈরি করা হয়েছে। ড্যাশবোর্ডের লিংক: https://www.ti-bangladesh.org/kyc এর মাধ্যমে সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর সার্বিক, আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র দেখা যাবে। ড্যাশবোর্ডটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
আরও পড়ুন: গণপরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ হয়: টিআইবি
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ভোটারগণ ঘরে বসেই নিজ এলাকার প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য ও তুলনামূলক চিত্র পাবেন, অন্যদিকে ইসি, দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব স্ব এখতিয়ার অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তথ্যের বহুমুখী বিশ্লেষণের সুযোগ নিতে পারবে।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, সর্বশেষ তিনটি ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দ্বাদশ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। কোনো দলই তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেয়নি, তবে শতভাগ আসনেই কমপক্ষে এক বা অনেক ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থী হয় ক্ষমতাসীন দলের সদস্য বা সমর্থনপুষ্ট।
প্রার্থীদের অর্ধেকের বেশিই প্রায় ৫৭ শতাংশই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রার্থী স্বশিক্ষিত।
সর্বশেষ তিনটি ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৫৭ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
গত ১৫ বছরে ব্যবসায়ী প্রার্থীদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে, বছরে ১ কোটি টাকা আয় করেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা এবার সর্বোচ্চ ১৬৪ জন। তবে কোটি টাকার কম আয় করে এমন প্রার্থীর হার ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এবার প্রায় ২৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। শতকোটিপতি প্রার্থী সংখ্যায় ১৮, সর্বোচ্চ কোটিপতির প্রদর্শিত সম্পদমূল্য ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বশেষ তিনটি ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোটিপতি প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
অর্থাৎ, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোটিপতি প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নবম নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন মাত্র ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। সেটি ১৫ বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশে। এদিকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা প্রার্থীদের প্রায় ৪৭ শতাংশই কোটিপতি।
আরও পড়ুন: আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পক্ষে, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়: টিআইবি
হলফনামায় আরও দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রার্থীর নামেই বড় আকারের (সর্বোচ্চ ৮১৩ একর) ভূমির মালিকানা রয়েছে। অথচ, দেশের আইন (ল্যান্ড রিফর্ম অ্যাক্ট-২০২৩) অনুযায়ী একজন ব্যক্তির ভূমির মালিকানা পাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা (কৃষি জমির ক্ষেত্রে ৬০ বিঘা এবং অ-কৃষি জমিসহ যা ১০০ বিঘা পর্যন্ত যেতে পারে)।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রায় ২৭ শতাংশেই ঋণ বা দায় আছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
হলফনামার তুলনামূলক হিসাবে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের কারো কারো আয় সর্বোচ্চ ২ হাজার শতাংশের বেশি বেড়েছে। ৫ বছরে এমপিদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার ২ হাজার ২৩৮ শতাংশ এবং ১৫ বছরে এই হার ৭ হাজার ১১৬ শতাংশ। একইভাবে, ৫ বছরে এমপিদের সর্বোচ্চ সম্পদ বৃদ্ধির হার ৫ হাজার ৪৭০ শতাংশ। ১৫ বছরে এই হার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ শতাংশ।
মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রীদের ৫ বছরে আয় সর্বোচ্চ বেড়েছে ২ হাজার ১৩৪ শতাংশ, একই সময়ে ৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ শতাংশ এবং ১৫ বছরে বেড়েছে ৬ হাজার ৩৫০ শতাংশ।
তবে হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য পর্যাপ্ত কিনা বা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়, টিআইবির প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই।
মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যে সকল কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই: টিআইবি
৭০৯ দিন আগে
আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পক্ষে, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়: টিআইবি
টিআইবি বিএনপির অঙ্গসংগঠন কি না- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যকে একদিকে বিব্রতকর ও অন্যদিকে সমালোচক মাত্রই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এমন মানসিকতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না- টিআইবির এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রাখেন ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে কী বোঝায়?’ টিআইবিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকার ওপর নির্ভর করে সব নির্বাচনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করেই কেবল অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব- বিজ্ঞ মন্ত্রীর তা বোঝার মতো বিচক্ষণতা রয়েছে বলেই টিআইবি মনে করে।’
আরও পড়ুন: উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় নির্বাচনকালীন সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন টিআইবি’র
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বিএনপির সঙ্গে টিআইবিকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া এ বক্তব্য অনভিপ্রেত উল্লেখ করে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘টিআইবি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করে না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী ও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির এমন বক্তব্য পুরোপুরি অমূলক ও হতাশাজনক।’
তবে টিআইবি এতে মোটেই অবাক বা বিচলিত নয় বলে মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, ‘দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার উপযুক্ত রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে কর্মরত টিআইবির ওপর এ ধরনের অপবাদ দেওয়ার চর্চা নতুন কিছু নয়। কোনো গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন বা পরামর্শ অপছন্দ হলেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই টিআইবির প্রতি বিষোদগারে লিপ্ত হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় সরকারের সময় টিআইবিকে বন্ধ করে দেওয়া, সারা দেশের ৬৪ জেলায় মামলা করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। এমনকি, চলতি বছরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে টিআইবি ও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হয়।’
ড. জামান আরও বলেন, ‘টিআইবির কোনো মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। টিআইবির অবস্থান গণতন্ত্র ও সুশাসনের পক্ষে, অগণতান্ত্রিক ও সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন শক্তির বিপক্ষে। তবে একইসঙ্গে লক্ষ্যণীয়, টিআইবিকে নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও পরিস্থিতিভেদে এমন বিষোদগার টিআইবির নিরপেক্ষতাকেই প্রমাণ করে।’
আরও পড়ুন: নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণে উদ্বেগ প্রকাশ টিআইবির
সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রত্যাখ্যান করেছে টিআইবি
৭১৮ দিন আগে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই: টিআইবি
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সংবাদ প্রতিষ্ঠানটি বলে, এ ধরনের নির্বাচনে জনগণের আস্থা নিশ্চিত করা অসম্ভব।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ৭৬টি সুপারিশ করেছে টিআইবি।
গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বিষয়ে সুপারিশমালা উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম এবং গবেষণা ও নীতিমালা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশটি উপস্থাপনা করেন টিআইবির গবেষণা সহযোগী কাওসার আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরবর্তী সময় পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমাদের ধারণা হয়েছে- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে আমরা যা বুঝি, তা এবারও পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। ভোটের অধিকারভিত্তিক নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা এবং এই নির্বাচনের ওপর জনআস্থা নিশ্চিত করাও অসম্ভব বলে আমরা মনে করি।’
টিআইবির সুপারিশামালায়ও বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ড. জামান বলেন, ‘অর্ধশতাব্দী ধরে আমরা আসনভিত্তিক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করছি। এখন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করার সময় এসেছে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে প্রয়োজন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার এবং অন্যান্য সব অংশীজন বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ভূমিকা প্রয়োজন, যা নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার জরুরি।’
আরও পড়ুন: উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় নির্বাচনকালীন সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন টিআইবি’র
তিনি বলেন, স্বাধীন, শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে অন্তর্ভুক্ত যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক গণশুনানি; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) ২০২৩-এর ৯১ (এ) সংশোধনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা রহিত করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সংকুচিত করার এই ধারা পরিবর্তন, প্রতিযোগিতার সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেইং ফিল্ড) নিশ্চিতে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনকেন্দ্রিক আচরণ বিধি সুস্পষ্ট করা এবং সব দল ও প্রার্থীর প্রচারণার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে ‘না’ ভোটের পুনঃপ্রচলনের সুপারিশ করেছে টিআইবি।
রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চা রাজনৈতিক দলের সব প্রকার গৃহীত অনুদান, আয়-ব্যয়, বিশেষ কার্যক্রমভিত্তিক সংগৃহীত অর্থ ও ব্যয়, প্রচারণাসহ নির্বাচনী ব্যয়, মনোনয়ন কেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার; রাজনৈতিক দলসমূহের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেওয়া ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; রাজনৈতিক দলসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দলের কেন্দ্রীয়/নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সম্পদের হিসাব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা; সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে টিআইবি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে জেন্ডার, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য মাপকাঠিতে প্রান্তিকতার শিকার নাগরিকদের যথাযথ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণে উদ্বেগ প্রকাশ টিআইবির
টিআইবির সুপারিশমালায় বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন, অধস্তন আদালতের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্তাবধান এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
টিআইবি প্রণীত সুপারিমালায় নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার, তথ্য ও উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া, আর্থিক খাত ও সরকারি ব্যয়ে সুশাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গণমাধ্যম, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এদের পরিপন্থী আইন সংস্কার এবং নজরদারিমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সরকারকে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে টিআইবির পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রত্যাখ্যান করেছে টিআইবি
৭৩৫ দিন আগে