বন্যা পরিস্থিতি
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
শুধু দুধকুমার নদের পানি বাদে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ সবক'টি নদীর পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
৪/৫ দিন ধরে বন্যায় পানিবন্দী মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য ও তীব্র জ্বালানি সংকট। বন্যার কারণে স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে এখন মানুষের প্রয়োজন শুকনো খাবারের।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানিয়েছে, চলতি বন্যায় জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২ হাজার ৮৮০ জন মানুষ। এছাড়াও ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা ও ২ হাজার শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আশ্রয়ের জন্য ৩৬১টি অস্থায়ী এবং ১৮টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা কবলিতদের উদ্ধারের জন্য ৪টি উদ্ধার নৌকাসহ ২৭৫টি শ্যা ইঞ্জিনযুক্ত নৌকা প্রস্তুত রয়েছে।
সাইদুল আরীফ বলেন, ‘আমরা যে কোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় হবিগঞ্জে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহতদের সবাই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৮৫ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬০ জন, ময়মনসিংহে ৪০ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পড়ুন: বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
সিরাজগঞ্জে চলতি বন্যায় কৃষকের ১৪০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহজাদপুর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ৬৫ হাজার কৃষকের ১২ হাজার ৫৯৯ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে সাত হাজার ৭৪১ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, তিল, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আখ, ভুট্টা, গ্রীষ্মকালীন মরিচ, রোপা আমন বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে । এসব ফসলের বর্তমান বাজার মূল্য ১৪০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
তবে চরাঞ্চলের কৃষক আব্দুর রহিম, আনোয়ারসহ অনেকেই বলছেন, এবার বন্যায় পাট আখ তিল মরিচ রোপা আমন, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব ফসল পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব ফসলের সম্পূর্নই ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সহযোগীতায় কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার দাবী জানানো হয়।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রস্তুম আলী ও কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, বন্যায় চরাঞ্চলের দুটি উপজেলার ৩৭ হাজার ৭৮৪ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতির বিবরণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তরা জানান, জেলার চলনবিল এলাকার উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বন্যায় ওই পাঁচটি উপজেলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা নানা চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ শুরু করছে। এর মধ্যে অনুমোদন পেলে আগামী রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রনোদনা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার বলেন, বন্যায় ওই পাঁচটি উপজেলার কৃষকের উল্লেখিত টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দেয়া হবে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘতর হচ্ছে। নদ-নদীর পানি কখনো কমে, কখনো বাড়ে, আবার কখনো অপরিবর্তিত থাকে। দিনভর প্রখর রোদ থাকলে বিকালে বা রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে নদ ও নদী পানির পরিমাণ প্রায় একই থাকছে।
মঙ্গলবারও সিলেটের দুই প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পাঁচ পয়েন্টের পানি বিদসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়। এতে বন্যা আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অনিশ্চয়তা, শঙ্কা আর ভয়ে দিন পার করছে ভুক্তভোগীরা।
ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি। অথচ সিলেটের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আনন্দঘন এই সময়ে পানির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। কাজ নেই, কর্ম নেই, সব জায়গায়ই হাহাকার বিরাজ করছে। উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া প্রায় সব শ্রেণির মানুষের এখন ভরসা বেসরকারি ত্রাণ কিংবা সরকারি সহায়তায়।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
স্থানীয়দের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শহরকেন্দ্রিক গ্রাম কিংবা এলাকাগুলোতে মানুষ ত্রাণ সহায়তার নাগাল পাচ্ছে ঠিক। কিন্তু একেবারে অজপাড়া গ্রামের অসহায় মানুষগুলো পর্যাপ্ত সহায়তার দেখাই পাচ্ছে না। ফলে খেয়ে না খেয়ে এক একেকটা দিন পার করছেন এসব মানুষগুলো। বন্যায় এদের ঘরের সবকিছু ভেসে গেছে। বানভাসি লাখ লাখ মানুষের নেই কোনো ঈদ ভাবনা।
মঙ্গলবার সিলেটের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ঘর ধসে পড়েছে, আবার কোথাও ঘরের বেড়া নেই। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এছাড়া তাদের শত শত গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
এদিকে, সিলেটে ১৩ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। বিশেষ করে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ এলাকার অর্ধেকের বেশি গ্রাম এখনো পানির নিচে। এখনো ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেটে এখনো দুই নদীর পাঁচ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় সিলেটে ৪০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেট থেকে পানি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর হয়ে নামে। তবে সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় ধীরগতিতে নামছে।
এদিকে, সোমবার রাতে, মঙ্গলবার এবং বুধবার সকালে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তবে গত তিন দিনের মতো মঙ্গলবারও রৌদ্রজ্জ্বল দিন ছিল। এতে করে প্রচণ্ড গরমের মাঝেও স্বস্তির হাওয়া বয়ে যায়।
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কুশিয়ারা ছাড়া অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমেছে।
তবে কুশিয়ারার পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগও। বিশেষ করে এ নদী তীরবর্তী এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা মানুষের দিন কাটছে চরম উৎকন্ঠায়। কবে ঘরে ফেরা সম্ভব হবে, সে অপেক্ষায় আছেন তারা।
কানাইঘাট পয়েন্টে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমার পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার একই সময়ে তা ছিল ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি কমেছে প্রায় ৮ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
সিলেট পয়েন্টে সুরমা রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। সোমবার একই সমযে তা ছিল ৩৫ সেন্টিমিটারের নিচে। এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৭ সেন্টিমিটার।
এদিকে কুশিয়ারার পানি কমছেই না। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৮ সেন্টিমিটার।
রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শেওলায় কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত বইছিল ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ সময়ে পানি বেড়েছে প্রায় ১২ সেন্টিমিটার।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদীগুলোর পানি সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং সেখানে পানির উচ্চতা এখনো অনেক বেশি থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
বন্যা: সিলেটে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বন্যায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৫
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জে বন্যায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুসারে, মৃতদের মধ্যে দুজন পানিতে ডুবে এবং একজন বজ্রপাতে মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে
মৃত ৯৫ জনের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৬৮ জন, বজ্রপাতে ১৫, সাপের কামড়ে দুই, ডায়রিয়ায় এক এবং অন্যান্য কারণে ৯ জন মারা গেছেন।
১৭ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব বড় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
তবে ব্রহ্মপুত্র নদ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, অন্যদিকে যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে পাউবোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সিলেটে বন্যার পানি কমছে
গত দুদিন বাড়ার পর শুক্রবার থেকে আবার সিলেটে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমটার কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীর অবস্থায় আছে।
এদিকে, শুক্রবারও সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই বৃষ্টিতে পানি বাড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা।
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি গত মঙ্গলবার থেকে বাড়ছিল। বন্যার শঙ্কাও ফের দেখা দিয়েছিল। তবে শুক্রবার সকাল থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল থেকেও কিছুটা পানি নেমেছে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেটের সদর উপজেলার মোগলগাও এলাকার টুনু মিয়া বলেন, ‘পানি আজ সকাল থেকে অনেকটা কমেছে। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আছে। কয়েকদিন আগে যে ভয়াবহ বন্যা দেখেছি তা আর দেখতে চাই না। ঘরের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এসবের মধ্যে আবার পানি আসা দেখে ভয় পেয়েছিলাম। আজকে কিছুটা স্বস্তি লাগছে।’
গোয়াইনঘাটের ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি কমায় পানি কমছে। বৃহস্পতিবার রাতে তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। আবার বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে। এই জুন-জুলাই মাসটা আসলে আমরা ভয়ে থাকি। প্রতি বছর এখানে এই সময়টা পানি আসে।’
দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন কবির লিটন জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ পর তার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।
গত বুধবার রাত থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আরও তিন দিন বৃষ্টি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ দেখা গেছে। নগরের মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, যতরপুর, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি জমতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়কে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, শুক্রবার বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এর ফলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যে এমনটি জানা গেছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টির অবস্থা উন্নতি হবে। বন্যা হওয়ার পূর্বাভাস নেই।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
তিনি বলেন, বর্তমানে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়, সামনে শ্রাবণ মাস। এই সময়ের মধ্যে আরও দুই একটি বন্যা দেখা দেয়। এ জন্য পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে জুলাইয়ের শেষের দিকে একটি বন্যা হতেও পারে। এরপরও ১০ দিন আগে আবহাওয়া পূর্বাভাস জানা যাবে। বর্তমানে ভারতের দিকে বৃষ্টি হলেও আগের তুলনায় কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি গতকালের তুলনায় কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল সাত দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা সাত দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ১৮৫ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন: সিলেটে ফের বৃষ্টি, বন্যার অবনতির আশঙ্কা
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।
এদিকে জেলায় বানভাসি অনেকেই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে তাঁবু টাঙিয়ে শত শত পরিবার দিন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই বাড়িঘর হারিয়েছেন। অন্যদের ঘর থেকে পানি নামছে না। বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ায় চারটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, বিলপাড়া, নবীনগর, পশ্চিম নতুনপাড়া এলাকার যেসব স্থানে বৃহস্পতিবার নতুন করে পানি উঠেছিল, রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব স্থান থেকে পানি নেমে গেচে।
সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
সিলেট বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এক হাজার ৫২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী বন্যার কবলে পড়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে বই-খাতা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে রয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) ও শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়-ক্ষতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি। খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে।
সিলেট বিভাগের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর গত ২২ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ই-ভ্যালুয়েশন উইং থেকে সব আঞ্চলিক পরিচালক ও উপপরিচালকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। সম্প্রতি আঞ্চলিক অফিসগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঠদান সম্ভব। আংশিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব প্রায় একশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় সাড়ে ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
জেলাভিত্তিক তথ্যে জানানো হয়, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার ৩৪২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ আট হাজার ১৯৩। বন্যাকবলিত এলাকার ৫৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঠদান কার্যক্রম সম্ভব। আংশিকভাবে ৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সম্ভব। আর ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান এখনও কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। ১৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ২৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬২ জন। বন্যাকবলিত ২৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনওটিতেই এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। ১৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মৌলভীবাজারে পাঁচ উপজেলার ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৫৯। এখানকার ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনওটিতেই এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। এছাড়া ২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার ছয় উপজেলার ৩৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৬১ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলার ৭৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
এদিকে সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও পর্যাপ্ত বই নেই। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।
রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। তারও সব বই-খাতা বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আব্দুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য টাকা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।
সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’
শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’
স্কুল খোলার আগে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে আড়াই কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ, হটলাইন চালু
শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’
জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’
পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি
যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
সোমবার সকালে রেকর্ড অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও কাজীপুর পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, যমুনার পানি খুব দ্রুত কমে বন্যাকবলিত এলাকার অনেক বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে গেছে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যেই বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল থেকেও পানি নেমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে যমুনার পানি কমে যাওয়ায় জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও দ্রুত কমতে শুরু করেছে।
তিনি জানান, যমুনা তীরবর্তী সদর, চৌহালি, বেলকুচি, শাহজাদপুর, কাজীপুর এই পাঁচ উপজেলার ৩৮ ইউনিয়নের অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বাড়ি-ঘর থেকে দ্রুত পানি নেমে গিয়ে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অনেক স্থানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
এদিকে, যমুনায় পানি কমতে থাকায় যমুনা তীরবর্তী পাঁচ উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙনরোধে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ এবং বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড নজর রাখছে।
ত্রাণ নিয়ে জেলার বানভাসিদের দাবি, সরকারের অপ্রতুল ত্রাণ সামগ্রি বেসরকারি এনজিও সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোরও তেমন তৎপরতা না থাকাও বানভাসিদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া জেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের ৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বন্যার্তদের জন্য ১৮৪ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাছাড়া ২৩টি মেডিকেল টিম গঠন করে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বন্যায় জেলায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, তিল, মরিচ, বাদাম, রোপা আমন, শাক-সবজি, বীজতলাসহ উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। এবারের বন্যায় জেলার কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
কৃষকদের ক্ষতির কথা স্বীকারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষকের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে।