রোহিঙ্গা সংকট
টেকসই সমাধানে রোহিঙ্গাদের ক্ষমতায়িত কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের শক্তিশালী এবং প্রতিনিধিত্বশীল কণ্ঠস্বর থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর পাশাপাশি এ বিষয়ে নেওয়া উদ্যোগগুলোকে সমর্থন জানায় বলে জানিয়েছে ইইউ দূতাবাস।
এক বিবৃতিতে দূতাবাস বলেছে, রাজনৈতিকভাবে, মানবিক অর্থায়ন সহায়তার মাধ্যমে, উন্নয়ন সহযোগিতায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়বদ্ধতায় এবং কার্যকর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আমরা পাশে আছি। কিন্তু এই সংকট এমন এক পরিস্থিতি যা যৌথ পদক্ষেপের জন্য জোর দাবি করছে।
আরও পড়ুন: এনসিসির কাজ শেষ পর্যায়ে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারকে সমর্থন করে ইইউ
সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগ’-এ অংশ নেন বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পূর্তিতে ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজুর মাধ্যমে এক ব্রিফিং সেশনের আয়োজন করে ইইউ।
ঢাকার ইইউ দূতাবাস তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার এক বার্তায় এ অনুষ্ঠানকে ‘উদ্বেগজনক হলেও অনুপ্রেরণামূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
১০০ দিন আগে
গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়: খলিলুর রহমান
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরে রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি না বলি, তাহলে কোনো সমাধান হবে না। আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের এই কাজ করতে হবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
সোমবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম, সরকার, সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সঙ্গে কথা বাংলাদেশ সরকার যোগাযোগ করেছে কিনা— এই প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের এক সাংবাদিককে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে এক সাংবাদিক বন্ধুকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনারা আসতে থাকুন, আরও নিয়ে আসুন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাইরে রেখে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটিই বাস্তবতা। আলোচনা মানেই সেটি যেকোনো সমাধানের জন্য, আর সেই সমাধান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
‘যদি কোনো পক্ষকে বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোনো চুক্তি বাস্তবায়িত হবে না বা খুব দ্রুত ভেঙে পড়বে। তাই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে, ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর গুরুতর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যা সক্রিয় আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে অবশ্যই মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ১৯৭৮ সালে কুতুপালং ক্যাম্পের প্রথম ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলাম এবং আমার রোহিঙ্গা বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করেছি। সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং তা তাদের উদ্যোগেই সমাধান করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ফুয়াদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আখতার হোসেনসহ অনেকে এই সেশনে বক্তব্য রাখেন।
রাশেদ খান বলেন, আমরা চাই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিক। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই মিলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার জানান, তার দল রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক সহায়তা, ন্যায়বিচার ও টেকসই সমাধানের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১০১ দিন আগে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসইভাবে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরিতে যৌথ প্রচেষ্টার লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন তিনি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে এই সংলাপে যোগ দিতে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। এদিন বেলা ১১টার দিকে তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। এতে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও। সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ভাবা এবং তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সবার যৌথ দায়িত্ব।
যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরে যেতে না পারেন ততদিন পর্যন্ত তাদের বিষয়টি ও এর টেকসই সমাধানকে বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখার জন্য জোর দেন অধ্যাপক ইউনূস।
গত মার্চ মাসে পবিত্র রমজানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং তিনি নিজে কক্সবাজারে এক লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন বলে সেই স্মৃতিচারণও করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে শুনেছি, রোহিঙ্গারা যত দ্রুত সম্ভব নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যেতে চান। অনুষ্ঠানে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংলাপে যোগ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
এ সময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে তাদের নিজ আবাসভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য দৃশ্যমান আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা যা করছি, তা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজুও বক্তব্য রাখেন।
প্রফেসর ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব
প্রথমত, রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করতে হবে। কথার জালে আর বন্দি থাকা যাবে না।দ্বিতীয়ত, ২০২৫-২৬ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অর্থ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী ও মানবিক অংশীদারদের অব্যাহত সহায়তা জরুরি।
তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এজন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ভেতরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ ঘরে ফিরতে দিতে হবে।
চতুর্থত, মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস ও সংঘাত নিরসনে সংলাপ প্ল্যাটফর্ম জরুরি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে হবে যাতে পুনর্মিলন, অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।
পঞ্চমত, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। মানবপাচার, মাদকপাচার, ছোট অস্ত্রের চোরাচালানসহ সীমান্তবর্তী অপরাধ মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ষষ্ঠত, জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। মিয়ানমার, আরাকান আর্মি ও অন্যান্য সংঘাতপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংকট নিরসনের স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সপ্তমত, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় চলমান জবাবদিহি প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে হবে। আইসিজের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ কার্যকর করতে হবে এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমারে, তাই সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। দেরি না করে সব পক্ষকে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে সংলাপে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার তিন দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এ বছর উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি। কক্সবাজারের এই সংলাপ নিউইয়র্কে সম্মেলনে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরিতে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ টেকসই সমাধানের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করছে। ২০১৭ সালে মাত্র কয়েক সপ্তাহে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার বিষয়টি উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখনও নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এই পরিস্থিতিতে ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়ানোই নৈতিক দায়িত্ব বলে মত দেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্য সত্ত্বেও মানবিক বিবেচনায় তাদের জীবন রক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি প্রমাণ করে যে মানবজাতির সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে আমরা তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি দেখিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মুখে আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা অনেক বেশি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।এ সময় দাতা, অংশীদার, জাতিসংঘ সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিশ্বব্যাপী বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অব্যাহত সহায়তা, সহযোগিতা ও সংহতির প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন যা কক্সবাজারকে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিবছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমারে এখনো পাঁচ লাখেরও কম রোহিঙ্গা রয়েছে। এই চিত্র স্পষ্ট করে যে অব্যাহত নিপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে যাচ্ছেন। গত আট বছরে বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিশাল ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সম্পদ, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, সমাজ ও শাসনব্যবস্থার ওপর এর বিরাট প্রভাব পড়েছে।
এর আগে, রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১০২ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুস্পষ্ট পথ দেখাবে জাতিসংঘ সম্মেলন, আশা অধ্যাপক ইউনূসের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আশা প্রকাশ করেছেন যে আসন্ন জাতিসংঘ সম্মেলন দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একটি সুস্পষ্ট সমাধানের পথ তৈরি করবে।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ মৌলিক সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ সময় মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুজকে পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার টম অ্যান্ড্রুজ অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনার কেন্দ্রে নিতে প্রচেষ্টা জোরদার সরকারের
অ্যান্ড্রুজ স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগেই জাতিসংঘ সদরদফতরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি বিশ্ব কৃতজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি সংকট সমাধানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন। তবে হতাশা প্রকাশ করে এই প্রতিবেদক বলেন, রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগটি দুরভিসন্ধিমূলক প্রচারণার কারণে ব্যর্থ হয়েছে।
তবুও অ্যান্ড্রুজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টা দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূমিকা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য অংশীজন সংলাপে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফর করছেন অ্যান্ড্রুজ। ওই সংলাপের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
১০৫ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রদূত তারেক
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে স্বেচ্ছা, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সব পক্ষের সাথে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
শুক্রবার (৪ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশনে ওআইসির উত্থাপিত ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য দ্রুত একটি অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব।
রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার চলমান সংঘাত মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন এই রাষ্ট্রদূত।
শনিবার (৫ জুলাই) জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, রাখাইনের সংঘাতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে বাংলাদেশের বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে চলমান হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন এবং সহিংসতা এড়াতে শুধু ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ আঠারো হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
এ ছাড়াও, আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা নিয়ে অনুষ্ঠেয় উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাস্তবমুখী এবং সময়াবদ্ধ সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ এশিয়ায় জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: ড. ইউনূসকে জাইকা শীর্ষ কর্মকর্তা
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমহ্রাসমান মানবিক সহায়তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকতর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে জোর দেয়া হয়।
এ ছাড়াও, এতে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে রাখাইনে নিরবিচ্ছিন্ন এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবটিতে রাখাইনে বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবসানের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়। এর পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সব স্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের অংশগ্রহণ এবং অর্থপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন কাঠামো স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়।
গত ১৬ জুন শুরু হওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশন আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে।
১৫৩ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন-ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত আট বছরের বেশি সময় ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই সংকট এখন আর শুধু মানবিক বিষয় নয়; এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও ক্রমবর্ধমানভাবে নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজ দেশ মিয়ানমারে নির্মম নির্যাতনের কারণে বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও অধিকারের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: তহবিল সংকটে শিক্ষার ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সোয়া ২ লাখ শিশু: ইউনিসেফ
এ সময় তারুণ্যের গৌরব প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণরা বারবার পরিবর্তনের অগ্রভাগে থেকেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লবসহ সব আন্দোলনে অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ছিল বাংলাদেশের তরুণ সমাজ।
তিনি বলেন, তরুণরা যদি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তারা সহজেই চরমপন্থার শিকার হতে পারে। এ ছাড়া দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়ন-ঘাটতি যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে, তাহলে একপর্যায়ে তা সহিংসতা ও অস্থিরতায় রূপ নিতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের তিন শূন্য নীতির কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে থাকবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে উন্নয়ন ও শান্তি স্থাপন প্রচেষ্টাকে এক সূত্রে যুক্ত করতে হবে।
পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং সম্প্রতি গঠিত পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের দাবি তারেক রহমানের
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ‘সামাজিক ব্যবসায়’ ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত এই মডেল দারিদ্র্য বিমোচন ও সংঘাত প্রতিরোধে একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।
বক্তৃতাকালে একটি সমৃদ্ধ, ন্যয়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও সুইডেন, উরুগুয়ে ও পূর্ব তিমুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জার্মানির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
১৬৭ দিন আগে
আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে: খলিলুর রহমান
রোহিঙ্গা সংকটকে গাজা উপত্যকার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে। সেটি নিয়ে কারও মিছিল-মিটিং নেই।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিথ ছিলেন।
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নামে বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলা চালিয়েছে একদল তরুণ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড (ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া) করারই একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটার একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গাজাতে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্ব বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া হবে খুবই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে—রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারও মিটিং-মিছিল নেই, আলাপ-আলোচনা নেই। আছে, হচ্ছে,...এগুলো নিয়ে রাস্তায় নামা, লুটপাট করা। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।’
‘পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে বাংলাদেশ মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়, এই দায় আমাদের সবসময় মেটাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
খলিলুর রহমানের ভাষ্য, “কিন্তু আমার ঘাড়ের ওপর একটা সমস্যা বসে আছে। নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? আর অন্যরা একটু বেশি মুসলমান। আমরা কিন্তু খুব লজ্জা লাগে, যখন বাইরের দেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ‘আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তো কোনো কথাবার্তা নেই? তোমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলো’।”
‘আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের বুঝতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করবো, দেখুন, বাইরের কথা...আলাপ আপনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঘরের সমস্যা, এটা নিয়ে প্রথম দাঁড়িয়ে যাবেন। তানাহলে আমরা দেশের স্বার্থ রাখতে পারবো না,’ বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হলেন ড. খলিলুর রহমান
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এতে আরও বলা হয়, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গত রাতে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। পরবর্তীতে গাজা যুদ্ধে আইডিএফের নির্বিচার হামলায় অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
২৪০ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সহায়তার আশ্বাস
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সদস্য হবে পূর্ব তিমুর। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশটি আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে বলে প্রেসিডেন্ট রোমেস আশ্বস্ত করেছেন।’
এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে জোসে রামোস হোর্তা বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শতাধিক ডিগ্রি রয়েছে যা বিস্ময়কর। পৃথিবীতে সম্ভবত তিনি একমাত্র নেতা, যিনি এত সম্মানিত এবং এমন শক্তিশালী অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: সংশোধিত ড্যাপ বাতিলের দাবি আবাসন ব্যবসায়ীদের, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে মনে করছেন পরিকল্পনাবিদরা
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কে সূচনা হয়েছে। সামনের দিনে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহী।’
এরপর পূর্ব তিমুর ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুদেশের ডিপ্লোম্যাটিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
এদিন সকালে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে একাধিক সভা ও অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে জোসে রামোস হোর্তার।
আরও পড়ুন: ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন চান আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা
৩৫৪ দিন আগে
‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই’
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত ও চীন কেন প্রত্যাশিত উপায়ে এগিয়ে আসছে না তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও একটি সম্ভাব্য হুমকি রয়েছে।
তিনি বলেন,'আলোচনার প্রক্রিয়ার শেষে কোনো ফলাফল নেই এবং আমি মনে করি না যে এটি (রোহিঙ্গা ইস্যু) খুব দ্রুত এবং সহজে সমাধান হতে যাচ্ছে।'
তিনি বলেন, প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশ বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন চান অধ্যাপক ইউনূস
ভারত ও চীনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হোসেন বলেন, তিনি কাউকে দোষ দিচ্ছেন না, কারণ সবাই নিজের স্বার্থ দেখে।
উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু এতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ এবং যার কারণে বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং প্রক্রিয়ার শেষে কোনো ফলাফল নেই বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান না হলে এটি বাকি বিশ্বের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ তার প্রধান প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সমর্থন পায়নি।
তিনি বলেন, 'গত আট বছরে আমরা প্রতিবেশী ও বড় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ সহায়তা আশা করেছিলাম তা পাইনি।’
হোসেন বলেন, প্রশ্ন আসে, চীন কেন এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে এগিয়ে আসছে না?
কারণ, বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রবেশাধিকারের জন্য মিয়ানমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপদেষ্টা বলেন, একইভাবে ভারত মনে করে কালাদান প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রকল্পের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকা পড়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বেইজিংয়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা চায় ঢাকা
রোহিঙ্গা তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রসঙ্গে হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্ম, যাদের ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই, তারা অলস বসে বসে অন্যরা কী করছে তা দেখার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, 'একটা সময় আসবে যখন এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আমাদের প্রতিবেশী ও দূরের মানুষের জন্যও মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।’
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও বঙ্গোপসাগরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশে এবং এর সম্পদের জন্য সুবিধা দেয়।
বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) ২০২৪-এর তৃতীয় সংস্করণ আয়োজন করেছে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান ও সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
জিল্লুর বলেন, বঙ্গোপসাগর সম্মেলনের তৃতীয় সংস্করণটি সিজিএস আয়োজিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন 'এ ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড' বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা ২০০ জন বক্তা, ৩০০ প্রতিনিধি এবং ৮০০ অংশগ্রহণকারী শ্রোতাকে একত্রিত করেছে।
আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা নয়, রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক সমাধান চান ড. ইউনূস
৩৮৩ দিন আগে
অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা নয়, রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক সমাধান চান ড. ইউনূস
যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও আন্তর্জাতিক সমাধানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে, বাংলাদেশের একার হাতে নয়।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি উত্থাপন অব্যাহত রাখব। মালয়েশিয়া আমাদের এ কাজে সহযোগিতা করবে। আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করতে হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন কারণ এটি মালয়েশিয়ার জন্যও একটি সমস্যা, সেখানেও স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আমরা আসিয়ান, মালয়েশিয়ার সরকার এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করি।’
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের পরবর্তী সভাপতি হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের দুটি দিক তুলে ধরেন- গত ৭ বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে এবং এর সংঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতি বছর গড়ে জন্ম নেওয়া ৩২ হাজার নতুন শিশু।
আরও পড়ুন: ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী; স্বাগত জানালেন অধ্যাপক ইউনূস
তিনি বলেন, জন্মহার নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয়, তাদের জীবনে কী ঘটছে সেটাই আসল ব্যাপার। তিনি বলেন, 'তরুণদের একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। এটা ক্ষুব্ধ তরুণদের একটি প্রজন্ম। তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পুরো বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো এটি একটি টিকিং টাইম-বোম্ব যা যেকোনো উপায়ে বিস্ফোরিত হতে পারে।
তিনি বলেন, অবিচ্ছিন্ন প্রবাহের সঙ্গে প্রতিদিন নতুন প্রবেশও ঘটছে। ‘এই উদ্বেগ আমি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি পুরোপুরি সমর্থন করেন এবং আমাদের অবস্থান বোঝেন।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়া এই সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধানের জন্য আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।
সাত বছর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
২০২৪ সালে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশপাশের সম্প্রদায়ে বাংলাদেশিসহ ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে সহায়তার জন্য ৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের আবেদন করে। ইউএনএইচসিআর-এর মতে, এই আবেদনটির প্রেক্ষিতে অর্থায়ন অপর্যাপ্তই রয়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ১৮ হাজার শ্রমিক প্রবেশের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর
৪২৬ দিন আগে