গভীর সমুদ্রবন্দর
মহেশখালী-মাতারবাড়ি বাংলাদেশের পরবর্তী বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে: প্রেস উইং
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প (মিডা) সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত মিডা স্ট্র্যাটেজিক ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পটির মাধ্যমে লজিস্টিকস, শক্তি ও বিদ্যুৎ, উৎপাদন এবং মৎস্য শিল্পকে এক স্থানেই একীভূত করা হবে।এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা, এনার্জি টার্মিনাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করা, যাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালানী উৎস ও লজিস্টিকসের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
বেশ কিছু সুবিধার কারণে মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকাকে এই বহুমুখী প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সুবিধাগুলো হলো— সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, উৎপাদন ও ভারী শিল্প, মেরিন ও মৎস্য খাতের জন্য উপযুক্ত স্থলভাগ।
এই অর্থনৈতিক কেন্দ্রটির লক্ষ্য আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনের সরাসরি প্রবেশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
জাইকার একটি গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ আসবে, যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)।
সম্পূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মোট জিডিপিতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারের প্রভাব পড়বে, যার মধ্যে সরাসরি জিডিপি প্রভাব হবে প্রায় ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলার।
প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদে দেড় লাখ সরাসরি ও প্রায় ২৫ লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এই অঞ্চল কক্সবাজারের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পর্যটকদের সংখ্যা বর্তমানে থেকে দেড় গুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের চারটি প্রধান স্তম্ভ রয়েছে: বন্দর ও লজিস্টিকস, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও শক্তি, এবং মৎস্য খাত।
মিডা স্ট্র্যাটেজিক ভিশনের আলোকে ভৌগোলিক সুবিধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য এই স্তম্ভগুলো নিয়ে সংশোধন ও পরামর্শ চলছে।
চারটি স্তম্ভকে ধরে রাখার জন্য শারীরিক ও সামাজিক অবকাঠামোর পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি পর্যটন অঞ্চলও সমর্থন করা হবে।প্রতিটি স্তম্ভেরই সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল রয়েছে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাব, যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
এই উদ্যোগের প্রথম স্তম্ভ হলো গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এর সংযুক্ত লজিস্টিক্স সিস্টেম। প্রকল্পটির এই অংশটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেই সুবিধা বাংলাদেশের বাকি বন্দরগুলোতে নেই— বাল্ক কার্গো ও কনটেইনার উভয়ই পরিচালনা করবে।
পড়ুন: সমুদ্রই হবে বিশ্বের পথে আমাদের মহাসড়ক: প্রধান উপদেষ্টা
বন্দর ও লজিস্টিকস স্তম্ভের আওতায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হবে, যা বাংলাদেশে অন্যান্য বন্দরগুলোর চেয়ে বৃহত্তর এবং আধুনিক ধাঁচের। এই বন্দর প্রায় ১৮.৫ মিটার গভীর, যার ফলে বড় বড় জাহাজ সরাসরি বন্দরে নোঙর করতে সক্ষম হবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় বড় ধরণের সুবিধা।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে ছোট জাহাজের প্রয়োজন হয় এবং পণ্য বহন করতে কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়।কয়েকধাপের জটিলতা কমায় অর্থ সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সাশ্রয় অন্যান্য আবশ্যকীয় পণ্যের খরচেও প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ, শিপিং খরচ কমার ফলে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৫০ টাকা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সমুদ্রের প্রাকৃতিক গভীরতার সুবিধা নিয়ে মাতারবাড়ি বাংলাদেশের মোট বাল্ক কার্গোর ২৫ শতাংশ এবং কন্টেইনার কার্গোর ৪৫ শতাংশ বহন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামগ্রিক বন্দর সক্ষমতা আগামী ৩০ বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে।
এছাড়া, বৃহৎ আকারের পণ্যগুলোর জন্য আরও খুচরা কার্গো স্টেশন, চার লেন সড়ক, চকরিয়ায় ইন্টারমডাল কনটেইনার ইয়ার্ড থেকে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল-লাইন রেল সংযোগের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে বাল্ক ও কন্টেইনারাইজড পণ্যের ক্ষেত্রে খরচ প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় বড় পরিসরের জাহাজ নির্মাণ, পুনর্ব্যবহার এবং ইস্পাত উৎপাদনের সুযোগগুলোও বিবেচনায় আনা হচ্ছে। উৎপাদন কেন্দ্রের এ ধরনের সমন্বয় স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হবে।
মাতারবাড়ি বন্দরের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিল্পজাত পণ্য বাণিজ্য করা হবে, যা প্রস্তুতকারকের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে কাজ করবে।
তিন ধাপের যাচাই-বাছাই শেষে ইস্পাত, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্সসহ নয়টি উপযুক্ত শিল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া রপ্তানি বৈচিত্র্যের জন্য ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই, সিন্থেটিক ফাইবার এবং জাহাজ নির্মাণকেও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পেমেন্ট ব্যালেন্স সাশ্রয় অর্জন সম্ভব।
গভীর সমুদ্র লজিস্টিক্স এবং নিজস্ব ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ একটি প্যাকেজ ডিলের মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করে। এই কেন্দ্র আগামী ৩০ বছরে বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশের সরাসরি অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তৃতীয় স্তম্ভ তৈরির ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চাহিদার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৬.৭ শতাংশ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আমদানি নির্ভরশীলতা ও বিশ্ববাজারের মূল্য ওঠানামার প্রভাবিত হওয়া বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদে চাহিদার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়।
এই লক্ষ্য অনুসারে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রচলিত এবং নতুন শক্তির উৎসের সমন্বয়ে দ্রুত গড়ে তোলা হবে।
৯২ দিন আগে
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলের ৩ বিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে
মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশসহ আশেপাশের অঞ্চলের প্রায় তিন বিলিয়ন জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। পুরোপুরি চালু হলে মাতারবাড়ী বন্দর দেশের জিডিপিতে শতকরা দুই থেকে তিন ভাগ অবদান রাখবে।
এছাড়া, গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হলে বাণিজ্যিকভাবে আঞ্চলিক হাব বন্দর হবে এটি। তখন এই বন্দরটি পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিভিন্ন বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের পর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।
ইউএনবিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছন।
আরও পড়ুন: এসেনসিয়াল ড্রাগসে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে এটি বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফলাইন। এটি চালু হলে এরপর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।’
তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। যেভাবে কাজ চলমান আছে, এভাবে কাজ চললে ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এই বন্দরে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায় বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে এক হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার ২০০ টিইইউএস ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। ফলে পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালে। কিন্তু এর মধ্যে গত দুই বছরে এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছে ১১২টি। এই ১১২টি জাহাজ থেকে মোট ছয় কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যতসব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম বড় বড় জাহাজে করে এসেছে তা সব মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল দিয়ে এসেছে। এই চ্যানেলের গভীরতা বেশি হওয়ায় বিশ্বের যেকোনো বাণিজ্যিক বড় জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করতে পারবে এবং লোড-আনলোড করার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন: ‘স্থানীয় ও পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। জাহাজে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। সড়কপথে এর দূরত্ব প্রায় ১১২ কিলোমিটার। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী ধলঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও বন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্থানে পাথর ও মাটি ভরাট করা হচ্ছে।
এছাড়া এ বন্দরের অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি। বন্দরের জন্য যে চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেটি ২৫০ মিটার চওড়া, ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার গভীর এবং ১৪ দশমিক তিন মিটার দীর্ঘ। সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় চ্যানেলের পানি পুরো নীল।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বন্দরের নিরাপত্তায় উত্তর ও দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের ঢেউ প্রতিরোধ বাঁধ। প্রকল্পের বিশদ নকশা তৈরি কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া জেটি নির্মাণ, জাহাজ হ্যান্ডেলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও টাগ বোট ক্রয়সহ তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকল প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান ইউএনবিকে বলেন, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে অন্যান্য বন্দর থেকে এর দূরত্ব বেশি হবে না। চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রা বন্দর থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলাবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে। পুরোদমে মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান বলছে গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে দুই থেকে তিন শতাংশ অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন: নতুন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ চ্যালেঞ্জের রিট শুনতে বিব্রত হাইকোর্ট
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯ দশমিক পাঁচ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে। তবে সম্প্রতি ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব জাহাজ ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে। একটি মাদার ভেসেলের ধারণক্ষমতার আট হাজার থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ড্রইং ডিজাইনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে দুই হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ সকল বন্দর সুবিধাদি নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, তিন প্যাকেজে মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সড়কটি নির্মাণের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে বন্দর পণ্য সড়কপথে দেশের যে কোনো স্থানে পরিবহন করা যাবে।
সড়ক নির্মাণের তিনটি প্যাকেজ মধ্যে বন্দরের উত্তর-দক্ষিণে সংযোগের জন্য এক দশমিক ১৫ কিলোমিটার চারলেনের সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে সিডাব্লিউ-৩ এ প্যাকেজে। এই প্যাকেজের আওয়ায় আরও প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।
আরও পড়ুন: সৌদিতে ২০২৪ সাল থেকে ওষুধ উৎপাদন করবে বেক্সিমকো
এছাড়া ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চারটি সেতু, দুইটি গোলচত্বর ও একটি রেলওভারপাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩বি’র আওতায় ছয় দশমিক ৪০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, চারটি সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩সি’র আওতায় ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, ছয় সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে।
৯৯৯ দিন আগে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পায়রা বন্দর পরিদর্শন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন নিজ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখতে এবং বিশ্বব্যাপী এর সম্ভাবনা তুলে ধরতে গভীর সমুদ্রবন্দরটি পরিদর্শন করেছেন।
১৭৫৪ দিন আগে
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য প্রস্তুত হতে পারে ২০২৩ সালে
সরকারি নথি অনুযায়ী, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ গত জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) লক্ষ্য রয়েছে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পটি শেষ করার।
১৯১৭ দিন আগে