শীত
উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা ফরিদপুরে হিম উৎসব, বাহারি পণ্যের সমাহার
শীত মানেই পিঠা-পুলির আয়োজন। আর এখন পিঠা-পুলি তৈরি বাড়ির রান্নাঘেরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবসায়িকভাবেও তৈরি করছে উদ্যোক্তারা। এরকম উদ্যোক্তাদের আয়োজনে পিঠা-পুলি নিয়ে ফরিদপুরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী হিম উৎসব।
ফরিদপুর জেলা শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে ‘ওয়ার্কহলিক ফরিদপুরিয়ান’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই হিম উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শীতকালীন উৎসব হলেও নির্বাচনের কারণে এবারের উৎসবটি দেরিতে আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
উৎসবে নিজেদের তৈরি পিঠা-পুলির পাশাপাশি আচার, পোশাক ও কুটির শিল্পের বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উদ্যোক্তারা। ৩৫টি স্টলে হাতে তৈরি বাহারি পণ্যের সম্ভার দেখা যায়।
জেলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একত্রিত করতে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। জেলার নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে উৎসব। প্রথম দিনেই বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয়বারের মতো তিন দিনব্যাপী হিম উৎসবের উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। যারা এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হয়েছেন তাদের ব্যবসা প্রসারে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব। এছাড়া নতুন কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেকেই সামান্য বেতনের জন্য চাকরির পেছনে ছুটে। তারা যদি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়, তাহলে তারা কিন্তু দ্রুতই একটা অবস্থানে যেতে পারে।
নারী উদ্যোক্তা উপমা দত্ত জানান, হিম উৎসবে জেলার নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তারা তাদের নিজ হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে মেলায় স্টল দিয়েছেন। সারা বছরই এই সব উদ্যোক্তারা অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এই উৎসবে সবাইকে একত্র করতেই এই উদ্যোগ।
এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, গান পরিবেশনসহ লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও রাখা হয়েছে এ উৎসবে।
আরও পড়ুন: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ডেলিভারি সার্ভিস নির্বাচনে ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
চুয়াডাঙ্গায় আবারও শীত বেড়েছে, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় আবারও শুরু হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে।
আরও পড়ুন: মাঘের শীতে কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ, তাপমাত্রা ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেনি শীতের দাপট।
শহরের মুরগি বিক্রেতা ইয়ারুল আলি বলেন, কয়েকদিন পর শুক্রবার সকালে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গ্রাম থেকে খুব সকালে শহরে মুরগি বিক্রি করতে হয়। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে লোকজনের দেখা মিলছে না।
দিনমজুরেরা বলেন, কনকনে শীত পড়ছে সঙ্গে বাতাসে আরও শীতের তিব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোরে কৃষি কাজের জন্য মাঠে এসেছি। ঠান্ডায় হাত চলছে না।
এদিকে, শীতজনিত কারণে রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া নিউমোনিয়ার রোগীও বাড়ছে।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস
সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন জানিয়েছেন, প্রতিদিন শীতজনিত কারণে ৭০০-৮০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান হক বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তিনি আরও জানান, এছাড়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাছে। শনিবারও একই রকম আবহাওয়া থাকতে পারে। এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা
তিনি জানান, আগামী ১৫-১৬ তারিখের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
তীব্র শীতে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
তীব্র শীত গৃহপালিত পশুপাখির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পশুপাখিরাও পড়তে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে। যারা পশুপাখি পালনে আগ্রহী তাদের শীতকালে নিজের পাশাপাশি তাদের পোষা প্রাণীটির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চলুন, জেনে নেই, কীভাবে শীতকালীন অসুস্থতা থেকে পোষা প্রাণীদের মুক্ত রাখবেন।
পোষা প্রাণীর শীতকালীন সুরক্ষার উপায়
পোষা প্রাণীকে ঘরের ভেতরে রাখা
ঠান্ডা থেকে পোষা প্রাণীদের নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সারারাত ঘরের ভেতরে রাখা। কুকুর বা বিড়ালের রাতে বাইরে বের হবার প্রবণতা থাকে। তারা প্রায় সময়ই রাস্তার বেওয়ারিশ পশুগুলোর সংস্পর্শে যেয়ে নানা ধরনের জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে খুব বেশি সংবেদনশীল বিড়াল এবং কুকুরের ক্ষেত্রে হাইপোথার্মিয়ার ভয় থাকে।
তাই পোষা পশুপাখিদের রাতের পুরোটা সময় ঘরের ভেতরে রেখে দিনের কিছুটা সময় সঙ্গে নিয়ে বের হওয়া যেতে পারে শারীরিক অনুশীলনের জন্য। কেননা শীতের সময় দৌড়ঝাপ, খেলাধুলা, বা কিছু সময় হেঁটে বেড়ানো এদের শরীর গরম রাখতে পারে।
আরো পড়ুন: শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন
থাকার জায়গাগুলোকে উষ্ণ রাখা
ঘরে উপযুক্ত উষ্ণতা না পেলে পোষা প্রাণীরা স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ভেতর থাকতে চাইবে না। এছাড়া অনেক গৃহপালিত পশুপাখি আছে যারা বাড়ির বাইরেই রাখতে হয়। এদের থাকার জায়গাটিকে শুষ্ক রাখতে হবে এবং এমনভাবে মজবুত ঘেরযুক্ত করে দিতে হবে যাতে এরা ভালোভাবে বসতে এবং শুতে পারে।
তাদের শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্য ঘরটি যথেষ্ট ছোট হতে হবে। ঘরে মেঝে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচু হবে এবং ছাদ খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ঘরটি এমন স্থানে হতে হবে যেখানে বাতাসের ঝাপটা কম এবং সহজেই খাবার ও পানীয় পেতে পারে।
বাড়ির ঠান্ডা মেঝে থেকে পোষা প্রাণীদের বাঁচানোর জন্য গরম মাদুর বিছিয়ে দেওয়া ভালো উপায়। আর ঘুমানোর জায়গাটিতে দেওয়া যেতে পারে ছোট গরম বিছানা ও পশুদের জন্য নির্ধারিত কম্বল।
তবে খুব অল্প বয়স্ক অথবা অধিক বয়স্ক পশুগুলোর অতিরিক্ত গরম অনুভূত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। এদের জন্য হিটিং প্যাড বেশ কাজে দিতে পারে। এগুলো মূলত প্রাণীদের জয়েন্টের ব্যথা হওয়া থেকে দূরে রাখে।
আরো পড়ুন: মাঙ্কিপক্স: পোষা প্রাণী থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান
পোষা প্রাণীর শীতের পরিধেয়
পশুপাখিদের অধিকাংশেরই প্রকৃতি প্রদত্ত লোমের আবরণ থাকলেও এটি কখনই মনে করা ঠিক নয় যে, তাদের ঠান্ডাতে কোনো সমস্যাই হবে না। পাতলা লোমযুক্ত পূর্ণ বয়স্ক পশু এমনকি অধিক লোমশ পশুগুলোর মধ্যে যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা সঠিক সুরক্ষা ছাড়া বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে রাখা সুন্দর একটি সোয়েটার দিতে পারে এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোমশ ছোট আকৃতির পশুগুলোর বেলায় এই পরিধেয়ের দরকার পড়ে না।
ঠান্ডার মধ্যে শীত থেকে আপনার আদরের পোষ্যটির পা বাঁচাতে এক জোড়া বুটি হতে পারে দারুণ একটি উপায়। বুটিগুলো পশুর থাবাগুলোতে ময়লা জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখা
বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি পোষ্য প্রাণীটিকেও পরিষ্কার করা জরুরি।
ঠান্ডার সময় বাইরে ধূলো-ময়লা পায়ের আঙুলগুলোর মাঝে ঢুকে জ্বালা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো জিহ্বা দিয়ে চাটতে দেখা যায়। এখানে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক উপাদান থাকলে তা তাদের মুখে জ্বালা হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই ঘরে ঢুকেই প্রথমে একটি আর্দ্র তোয়ালে দিয়ে পোষা প্রাণীটির পা মুছতে হবে। এছাড়া কুয়াশায় পশম ভিজে দীর্ঘক্ষণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রেখে দিলে শুষ্ক ত্বকসহ পোষা প্রাণীটির অন্যান্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মৃদু শুকিয়ে পোষ্যটির শরীর মুছে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে বুটি আর সোয়েটার থাকলে ব্যবহার করা। তাহলে পোষা প্রাণীদের কান, নাক, পা ও লেজ কুয়াশায় ভিজে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আরো পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
শীতে পোষা প্রাণীর ত্বকের যত্ন
ঠান্ডার তীব্রতা থেকে পোষা প্রাণীদের ত্বক বাঁচাতে ঘন ঘন গোসল করানো যাবে না। অতিরিক্ত আর্দ্রতা প্রদানের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে খাদ্যে নারিকেল তেল ব্যবহার করা। শুধুমাত্র পোষ্য পশু-পাখিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিছু নিরাময় মলম আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো প্রয়োগ করতে হয় নাক ও পায়ের আঙুলের আশেপাশে লাল দাগযুক্ত জায়গাতে।
ত্বকের যত্নে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শীতের সময় পশুগুলোর পশম বাড়তে দেওয়া। এটি প্রাকৃতিকভাবেই তাদের শরীরে উষ্ণতার একটি অতিরিক্ত স্তরের সংযোজন করে। তবে নষ্ট বা মরা পশম ঝরাতে প্রাণীদের শরীরে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
হাড় কাঁপানো শীতে সীমাহীন ভোগান্তিতে নওগাঁবাসী
কুয়াশার দাপট কম থাকলেও সোমবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ও কনকনে শীতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নওগাঁর বাসিন্দাদের।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এটাই এই মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে রবিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই কুয়াশা কম থাকলেও আকাশ মেঘলা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে রাজশাহীর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিন থেকে দুপুরের পর একটু সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও উত্তাপ ছড়াতে না পারায় বিকাল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হতে শুরু করে। আর দিনভর থাকছে হিমেল বাতাস। সন্ধ্যার পর থেকে শীতের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। রাত বাড়তে থাকলে শীতও বাড়ে সমানতালে।
এদিকে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। জীবিকার তাগিদে সকাল হলেই এসব মানুষ মোটা গরম কাপড় পরে কেউ সাইকেল নিয়ে আবার কেউ হেঁটে কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন।
শহরের ডিগ্রি কলেজ মোড় এলাকার রিকশাচালক সোলায়মান বলেন, যে শীত পড়েছে এতে করে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। রিকশা না চালালে সংসার চলবে না।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বগুড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার আরেক রিকশাচালক জব্বার বলেন, সোমবার সকাল থেকে কুয়াশা কম। তবে আকাশ পরিষ্কার নয় আবার বাতাসও অনেক। এই কারণে শীত বেশি লাগে। এত শীত হলে আমাদের মতো গরিব মানুষের সংসার চালানো সমস্যা হয়ে যাবে।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, সোমবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কয়েকদিন ধরেই শীত বেশি পড়ছে। এ রকম তাপমাত্রা আরও দুই থেকে একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে তীব্র শীতে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
শীতের সকালে আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে চরম বিপাকে চুয়াডাঙ্গাবাসী
জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যে ভোর থেকে টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। যা দিনব্যাপী গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতে রূপ নেবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এদিকে, জেলায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর ৫টা থেকে থেকেই মেঘের গর্জন শোনা যায়। উষ্ণতার চাদর মুড়িয়ে মানুষ যখন ঘুমে মগ্ন, ঠিক ভোর পৌনে ছয়টায় শুরু হয় বৃষ্টি। যা পরে ভারী বৃষ্টিতে রূপ নেয়। বৃষ্টি চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন এ্যানি বলেন, আজ সকাল ৬ ও ৯টায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে সকাল ৮টা ১০মিনিটে থেমেছে। এই ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চলমান মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে ঢাকায় কবে বৃষ্টি হবে?
কুড়িগ্রামে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা, কমেনি শীতের দাপট
টানা শীত ও কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। এর প্রভাব পড়েছে জেলার কৃষি ক্ষেত্রেও।
তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও কমেনি শীতের দাপট। কনকনে ঠান্ডায় যবুথবু হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুর্যের দেখা মিলছে না। দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে মেঘাচ্ছন্ন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছে শীত কাতর মানুষগুলো। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখিরাও।
শীত ও কনকনে ঠান্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ।
সরেজমিনে এসব চিত্র দেখতে পান ইউএনবির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
গত ১ সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৪৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০ জন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা ও ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
শীতে দরিদ্রদের দুর্ভোগ কমাতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান বিজিএমইএ সভাপতির
শীতে দরিদ্রদের দুর্ভোগ কমাতে এবং অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঠাকুরগাঁওয়ের দেবীপুরে সফিউদ্দিন আহমেদ ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের গরম কাপড় বিতরণকালে ফারুক হাসান এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: দেশ-অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ বিজিএমইএ সভাপতির
তিনি বলেন, যদিও আমরা অনেকেই সৌভাগ্যবান যে আমরা শীতের দিনগুলোতে গরম পোশাক পরিধান করে শীতকালের সৌন্দর্য উপভোগ করি, এমন অনেকেই আছেন, যারা প্রচণ্ড ঠান্ডায় পর্যাপ্ত পোশাকের অভাবে তীব্র কষ্টে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এসব হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষেরা যাতে করে এই তীব্র ঠান্ডায় কষ্ট না পান, তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: তৈরি পোশাক শিল্পে মূল্য সংযোজনের ওপর জোর দিতে হবে: বিজিএমইএ সভাপতি
তিনি সমাজের সামর্থ্যবান, বিত্তশালী, ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা তাদের স্বল্প ব্যবহৃত বা নতুন গরম কাপড় সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্রদের দান করে আর্তমানবতার সেবায় অবদান রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ‘প্রত্যাশিত’ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তৈরি পোশাক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়তে পারে: বিজিএমইএ পরিচালক
খুলনায় শীত উপেক্ষা করে ঝিনুক কুড়িয়ে বাড়তি আয়ে খুশি এলাকাবাসী
খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া খালে হঠাৎ যেন টাকার খনি পাওয়া গেছে! এলাকার শিশু, কিশোর, নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী এমনকি বয়স্করাও যেন কিছু একটা খুঁজছেন।
কেউ পানিতে ডুব দিয়ে তুলছেন, আবার কেউ তীরে খুঁজে চলেছেন। মাঝে মধ্যে শীতে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তার ওপর উঠে রোদে গাঁ শুকিয়ে আবারও নামছেন পানিতে।
খালের পাশ দিয়ে হেটে যেতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সেখানে। পাশে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, ঝিনুক খুঁজছেন তারা। খালে প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যাচ্ছে। তা কুঁড়িয়েই ভালো আয় হচ্ছে তাদের।
তবে খালে কাঁচের টুকরা কিংবা ঝিনুকের খোলসে হাত-পা কেটে আহতও হওয়ার কথাও জানান তারা।
এদিকে, উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শামুক-ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এরা যেসব জলাশয়ে থাকে সেখান থেকে ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পানি দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এজন্য এদেরকে প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়।
হোসেন গাজী নামে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ বলেন, কয়েকদিন ধরে ঝিনুক কুঁড়িয়ে বেশ আয় হচ্ছে। প্রতিদিন ৭০/৮০ কেজি ঝিনুক পাচ্ছি।
শীত লাগছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘গরীবের আবার শীত! সৎভাবে কিছু আয় হচ্ছে এটাই বড় কথা। বসে নেই এলাকার নারীরাও। তারাও দরিদ্র সংসারে আয়ের খবরে খুশি মনে খাল থেকে ঝিনুক তুলছেন।’
তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে অনেকেই লজ্জায় কথা বলেননি।
দেয়াড়া গ্রামের শাহিনুর রহমান, স্বপরিবারে ঝিনুক কুঁড়াচ্ছেন। আবার এলাকার লোকদের কাছ থেকে কিনে ২০ কিলোমিটার দূরের পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী বাজারে বিক্রিও করছেন তার ছেলে আজমল।
আজমল বলেন, ‘আমাদের কুঁড়ানো ৩-৪ মণের সঙ্গে এলাকা থেকে ১০-১২ মণ কিনে নিজ ভ্যানে চাঁদখালী বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি। ভালো আয় হচ্ছে।’
তামিম নামের এক কিশোর বলেন, ‘৪ দিন আগে জানতে পারি। প্রতিদিন দেড়-দুই মণ ঝিনুক পাচ্ছেন তিনি। প্রথম দিন ৪ টাকা কেজি বিক্রি করেন। তবে আজ বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা কেজি।’
শিমলার আইট গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ভাটায় খালে পানি কমে যায়। তখন তুলতে সুবিধা হয়। প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে অনেকে ৬-৭ শত টাকাও আয় করছেন। যে যেমন তুলতে পারছেন তার আয় তেমন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বিপর্যস্ত খুলনাঞ্চলের জনজীবন
হুদুবনের হাফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকা থেকে কিনে পাইকগাছায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ বিক্রি করছি। এ খাল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ ব্যক্তি ৮-৯ শত মণ ঝিনুক তুলছেন।
তিনি আরও বলেন, আগে কখনও এগুলো বিক্রি হতে দেখিনি। মাঝে মধ্যে কাউকে কাউকে কুঁড়াতে দেখা গেছে। তবে তারা বিক্রির কথা স্বীকার করতেন না। হঠাৎ ১০-১৫ দিন ধরে এ এলাকায় বিক্রি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। আর তখন থেকে খালে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে শামুক ও ঝিনুক ক্রয় করে আসছেন। মূলত বর্ষার মৌসুমে বেশি পাওয়া যায়। সুন্দরবন থেকে শামুক-ঝিনুক কুঁড়িয়ে সেখানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে উপকূলের বহু পরিবার।
চাঁদখালী বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তারা ৩৫০ টাকা মণ কিনছেন। এটা দিয়ে চুন তৈরি করে বিক্রি করছেন তারা। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. কাইয়ুম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি প্রথমে স্বীকার করেন চাঁদখালী বাজারের বেশ কিছু ব্যক্তি ঝিনুকের ব্যবসা করেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
কয়রা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘শামুক-ঝিনুক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এগুলোকে প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়। তবে কিছু ক্ষুদ্র শামুক রয়েছে সেটা মাছ চাষের জন্য ক্ষতিকর।’
তিনি আরও বলেন, বণ্যপ্রাণী নিধন আইনে প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধভাবে এ ব্যবসা করলে কিংবা প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ করলে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, সমুদ্রের শামুক-ঝিনুক আহরণ ও ব্যবসা করা আইনত অপরাধ। চাঁদখালী বাজারে কেনাবেচার বিষয়ে তার জানা নেই। খোঁজ নিবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া, খুলনায় মিলছে না খেজুরের রস
শীতে সীমাহীন কষ্টে লালমনিরহাটের মানুষ, দেখা নেই সূর্যের
লালমনিরহাটে কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় দেখা মিলছে না সূর্যের।
কনকনে ঠান্ডা আর সঙ্গে হিমেল বাতাসের দাপটে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম।
নিদারুণ কষ্টে রয়েছেন তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী, চরাঞ্চল ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। উত্তরের এ জেলা হিমালয় পর্বতের কাছে হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বিপর্যস্ত খুলনাঞ্চলের জনজীবন
সন্ধ্যায় পর থেকেই বৃষ্টি মতো টপ টপ করে কুয়াশা পড়ছে। দুপুর হলেও বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্রদের সীমাহীন কষ্টে দিন কাটছে।
এদিকে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি, কাশি ও হাঁপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। শ্রমজীবীরা কাজে যোগ না দিতে পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে কনকনে শৈত্যপ্রবাহ, একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে উত্তর জনপদ।
আরও পড়ুন: ঠান্ডা-শীতে কাবু চাঁদপুর, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোকে দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। হিমেল হাওয়া, তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন একরকম অচল হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটের তিস্তার চর কাশিয়াবাড়ী এলাকার জামাল উদ্দিন জানান, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, প্রতিদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে। এর আগে কয়েকদিন ঠান্ডা একটু কম ছিল আমরা কাজে যেতে পেরেছি। তবে গত মঙ্গলবার থেকে প্রচুর বাতাস আর কুয়াশা পড়ছে। তাই আমরা কাজে যোগ দিতে পারছি না।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে জেঁকে বসছে শীত, দুর্ভোগে পদ্মা পাড়ের মানুষ
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, শুক্রবার সকাল ৮টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় জানান, ঘন কুয়াশা তীব্র শীতের কারণে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগী সংখ্যা বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে জেকে বসেছে শীত, বিক্রি বেড়েছে হকার্স মার্কেটে
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করব।
বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
বরিশালে হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শনিবার বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
তীব্র শীতে বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।
আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা কমে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এদিকে বরিশালে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গত কয়েক দিন ধরে ধারণ ক্ষমতার ৭ থেকে ১০ গুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাও। শয্যা সংকট থাকায় তাদের মেঝেতে শুইয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
এমন বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন শ্রমজীবীসহ ছিন্নমূলরা। বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দেখা না পাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হয়নি। ফলে অন্যান্য দিনের তুলনায় দোকানপাট কম খুলেছে।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রি
স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণের উপস্থিতিও ছিল সীমিত। এদিকে শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে শেবাচিম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার ধারণ ক্ষমতার সাত গুণ বেশি শিশু চিকিৎসাধীন ছিল। এরপর শুক্র ও শনিবারও বেড়েছে শিশু ওয়ার্ডের রোগীর সংখ্যা। এর বাইরে বহির্বিভাগেও প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন দুই থেকে তিন শতাধিক শিশু।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার নদী তীরের বাসিন্দা রিপন বলেন, নদী তীর এলাকায় কুয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে ঘরের মধ্যে টিকে থাকা দায় হয়ে গিয়েছে। আগুন বা রুম হিটার ছাড়া নদী তীরের ঘরে থাকা যায় না। আমরা এ শীতে খুবই বিপদে রয়েছি।
পথশিশু ইয়াসিন জানায়, দিনরাত তীব্র শীতের মধ্যে টার্মিনালেই থাকতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে খুবই শীত পড়ছে। এ শীতের মধ্যে কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
নগরীর লঞ্চটার্মিনালের শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, তীব্র শীত আর বাতাসে টিকে থাকাই দায়। সংসার চালানোর তাগিদে বাইরে বের হয়েছি। তা না হলে ঘর থেকেই বের হতাম না।
রিকশাচালক লোকমান মিয়া বলেন, ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। শীতের কারণে রাস্তায় লোকজন কম থাকায় আয়ও অনেক কমেছে।
গৌরনদীর মাজেদা বেগম বলেন, জ্বর-সর্দিতে আমার ছেলে আক্রান্ত হওয়ায় শেবাচিমে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখানে এসেও সেবা পাইনি।
আরও পড়ুন: ২ দিন পর তাপমাত্রা বাড়তে পারে: আবহাওয়া অফিস
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থান সংকটের কারণে শয্যা কম। তাই বাধ্য হয়ে শিশুদের মেঝেতে বিছানা দিয়ে সেবা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার অধিক রোগী থাকার পাশাপাশি রোগীর স্বজনরাও প্রতিনিয়ত মেঝে নোংরা করে। তারপরও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি আমরা।
এসময় শিশুদের সুস্থ রাখতে গরম কাপড়ে শিশুদের আবৃত রাখাসহ অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, একই সঙ্গে সকালে ২ নটিক্যাল মাইল বেগে বাতাস বয়ে গেছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ অনুভব হয়।
তিনি আরও জানান, এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে না গেলেও শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। এমন শীত আগামী তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বরিশালে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট জারি