গণতান্ত্রিক অধিকার
গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ
ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে গণতন্ত্র সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষ আজও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যদিও অধিকাংশ দেশ গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়, তবে বাস্তবতা তার ঠিক উল্টো—আজ বিশ্বের মাত্র ৪০টি দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার সত্যিকার অর্থেই সম্মানিত হয়, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
জার্মান দাতব্য সংস্থা ব্রট ফুর ডি ভেল্ট-এর ‘আটলাস অব সিভিল সোসাইটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকের তুলনায় এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রণয়নে ‘সিভিকাস’ নামের বৈশ্বিক সিভিল সোসাইটি নেটওয়ার্কের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ২৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ‘মুক্ত’ দেশে বসবাস করেন, যেখানে ব্যক্তি সীমাহীন নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা পান। এই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা এবং স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের দেশগুলো।
ব্রট ফুর ডি ভেল্ট বলছে, যে দেশগুলোতে আইনি বা অন্যান্য বাধা ছাড়াই সংগঠন গঠন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং তা প্রচার করার স্বাধীনতা থাকে, সেগুলোই ‘মুক্ত’ দেশের মর্যাদা পায়।
আরও পড়ুন: ইউরোপে টিকে থাকার লড়াইয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংকটে বহুত্ববাদ
অন্যদিকে, ৪২টি দেশে নাগরিক অধিকারকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব দেশে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বাস করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে জার্মানি, স্লোভাকিয়া, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ।
এসব দেশে মতপ্রকাশ ও সভা-সমাবেশের অধিকার কিছুটা সম্মান পেলেও অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া, বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে তাদের অধিকার নিয়ন্ত্রণ ও দমনের চেষ্টা করা হয়। এসব দেশে বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষ বসবাস করে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
অ্যাটলাস অব সিভিল সোসাইটির তথ্য অনুসারে, এই দেশগুলোর সরকার নাগরিক স্বাধীনতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারের সমালোচনা করলে এসব দেশে জনগণকে হয়রানি, গ্রেপ্তার, এমনকি হত্যার শিকারও হতে হয়।
১৯৭টি দেশের মধ্যে ১১৫টি দেশেই এই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজমান। ‘নিয়ন্ত্রিত’ (Restricted) এসব দেশের তালিকায় গ্রিস, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেনসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারও মুক্তগণমাধ্যম চর্চায় বাধা সৃষ্টি করছে; গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে তুলছে।
এ বিষয়ে ইউরোপের মানবাধিকার সংস্থা সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (লিবার্টিজ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালিকানায় স্বচ্ছতার অভাব, সরকারের সৃষ্ট চাপ ও সাংবাদিকের প্রতি নানারকম হুমকির কারণে প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনতা হারাচ্ছে। এসব কারণে ইইউভুক্ত দেশগুলোর গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার হুমকির মুখে: আইটিইউসি
তবে তালিকা এখনও শেষ হয়নি। মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়া দেশগুলোকে ‘দমনকৃত’ (Suppressed) শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এমন দেশ রয়েছে ৫১টি, যার মধ্যে আলজেরিয়া, মেক্সিকো ও তুরস্ক অন্যতম।
এসব দেশে সমালোচকদের ওপর নজরদারি চালানো হয়, তাদের কারাবন্দি বা হত্যা করা হয়, এমনকি নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে রাশিয়াসহ ২৮টি দেশ, যেগুলোকে প্রতিবেদনে ‘অবরুদ্ধ’ (Closed) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব দেশে নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পরিবেশ বিরাজ করছে। শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা করলে সেখানে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
তবে জ্যামাইকা, জাপান, স্লোভেনিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, বতসোয়ানা, ফিজি, লাইবেরিয়া, পোল্যান্ড ও বাংলাদেশ—এই নয়টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে।
অপরদিকে, জর্জিয়া, বুরকিনা ফাসো, কেনিয়া, পেরু, ইথিওপিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, মঙ্গোলিয়া ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব দেশে আইনের শাসন, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারিতা থেকে সুরক্ষা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন ব্রট ফুর ডি ভেল্টের সভাপতি ডাগমার প্রুইন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২৪ সালের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ এক বছরে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে দেশে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। চাকরির পরীক্ষায় কোটা সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তখন কঠোর দমনপীড়ন চালায়। তবে আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন।
এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। তার আমলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন শুল্ক হ্রাসে বাজারে স্বস্তি এলেও কাটছে না অনিশ্চয়তা
এ সময় ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে’ উত্তরণের সফলতা এবং বাংলাদেশকে সমমনা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অংশীদার হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, ভোটারদের একাংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা বা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো পদক্ষেপ পরিহার করা উচিত।
১৮৪ দিন আগে
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কেননা তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সকলের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ তাদের সব ধরনের অধিকার ভোগ করবে। তাদের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এটি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এবং আমরা এটির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রেখে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চায়।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার দল গঠনের পর থেকেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে।
সাম্প্রতিক কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। আমি মনে করি এটি নির্বাচনী ইতিহাসে একটি উদাহরণ।
এখন প্রযুক্তির যুগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নির্বাচনে প্রযুক্তি ও ইলেক্টোরাল ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকার ভোগ করতে পারে এবং অধিকার নিশ্চিত করতে পারে; সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় উন্নয়নে দেশীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১২৪৮ দিন আগে
আধুনিক বাংলাদেশের ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতেই রচিত হয়েছে: অর্থমন্ত্রী
আধুনিক বাংলাদেশের ভিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই রচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
১৭২৩ দিন আগে
পটিয়া-দোহাজারি রেলপথের নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হলো: মন্ত্রী
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন শনিবার বলেছেন, পটিয়া-দোহাজারি রেলপথের নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
১৭৬২ দিন আগে
নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করব: প্রধানমন্ত্রী
মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৯২ দিন আগে