ডোনাল্ড ট্রাম্প
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা এগোলেও ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা জটিলতাই প্রধান অন্তরায়
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি উদ্যোগ জোরালো হওয়ার মাঝেই কূটনীতিকরা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত প্রাথমিক শান্তি প্রস্তাবে দুটি মুখ্য বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে—ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া এবং কিয়েভের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। এবার রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে এ সপ্তাহেই ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা মস্কো সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মাসে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের পর তা রাশিয়ার স্বার্থের অনুকূলে বলে কিয়েভ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে গত সপ্তাহে জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের এক দফা আলোচনার পর পরিকল্পনায় সংশোধন আনা হয়।
এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ‘কার্যকর করার মতো’। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির ‘সম্ভাব্য ভিত্তি’ বলে উল্লেখ করেন। আর গেল রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তিতে পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে এখনও অনেক পথ বাকি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ ইউক্রেন নিজেদের ভূমি ছাড়বে কিনা এবং ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে—এমন মূখ্য কিছু বিষয় নিয়ে এখনও কোনো মীমাংসা হয়নি।
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এবার মস্কো
ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। ফ্লোরিডার হ্যাল্যারেন্ড বিচের শেল বে ক্লাবে স্থানীয় সময় রবিবার (৩০ নভেম্বর) ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই আলোচনা।
বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান রুস্তেম উমেরভ, সেনাপ্রধান অ্যান্ড্রি নাটভ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সান্দার বেভজসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
বৈঠকের পর রুবিও জানান, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে, তবে যুদ্ধের অবসানে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরও অনেক কাজ বাকি। অপরদিকে, উমেরভ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশংসা করলেও আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি।
এবার মস্কোর আলোচকদের সঙ্গে মার্কিন আলোচকরা বৈঠকে বসবেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে রাশিয়ায় পাঠাবেন। এব বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার নিশ্চিত করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন।
এমনকি, এই চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি হলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
দুই পক্ষের কার কী অবস্থান
ট্রাম্পকে খুশি করতে কিয়েভ ও মস্কো উভয় পক্ষ থেকেই শান্তি পরিকল্পনার বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করেনি রাশিয়া। ফলে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো যে এখনো অনেক দূরের বিষয়, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে পুতিন বলেন, তিনি তার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল দখল করেছে, ইউক্রেন যদি সেখান থেকে তাদের সেনাবাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়, কেবল তখনই তিনি হামলা বন্ধ করবেন।
যদিও ওই অঞ্চলগুলোতে এখনও পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রাশিয়া, তারপরও পুতিনের দাবি, ‘যদি তারা (ইউক্রেনীয় বাহিনী) না সরে, আমরা জোর করে তা আদায় করব, ব্যাস।’
এর মধ্যে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, এটি ‘ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি’ হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত করতে হলে এ বিষয়ে ‘গুরুতর আলোচনা’ প্রয়োজন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা না বলে কেবল ট্রাম্পকে তার (শান্তি স্থাপন) প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি চান, এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপের যুক্ত থাকুক, কারণ এতে ইউরোপের স্বার্থও সম্পৃক্ত। এ ছাড়া ইউক্রেনের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় রাশিয়ার কয়েকটি মূল দাবি মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, ইউক্রেন যেগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে খারিজ করে দেয়। দাবিগুলো ছিল, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া এখনও পুরোপুরি দখল করেনি, সেগুলোও রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে ইত্যাদি।
জেলেনস্কি বারবার বলেছেন যে ভূখণ্ড ত্যাগ করা কোনো বিকল্প হতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ইয়েরমাকও দ্য আটলান্টিককে বলেন, জেলেনস্কি ভূখণ্ড ছাড়ার শর্তে কোনো চুক্তিতে সই করবেন না।
জেলেনস্কির মতে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে সহজ পথ হলো দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশও গত বছর বলেছিল যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভূক্তির বিকল্প নেই। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না।
ওদিকে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পশ্চিমা শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে না দেওয়াই ছিল চলমান এই হামলা শুরুর মূল উদ্দেশ্য।
সময় পুতিনের পক্ষে
এদিকে, নিজ দেশেই সম্প্রতি রাজনৈতিক চাপে পড়েছেন জেলেনস্কি। ইয়েরমাকের পদত্যাগ জেলেনস্কির জন্য বড় ধাক্কা, যদিও দুজনের কারো বিরুদ্ধেই কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া চায় ইউক্রেন ভুল করুক। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমাদের কাজ চলমান, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। একে শেষ পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়ার অধিকার আমাদের নেই।
ইয়েরমাকের পদত্যাগে সাময়িক চাপে পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ইউক্রেনের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন দেশটির বেসরকারি দুর্নীতি দমন কেন্দ্রের অ্যাক্টিভিস্ট ভ্যালেরিয়া রাডচেঙ্কো। তার মতে, এর ফলে সরকারের মধ্যে একটি ‘সংস্কারের সুযোগ’ তৈরি হবে।
তবে, এর মধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তা নিয়ে গর্ব করছেন পুতিন। এ বিষয়ে কার্নেগি রাশিয়া ও ইউরেশিয়া সেন্টারের তাতিয়ানা স্তানোভায়া এক্স-এ লিখেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তিনি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই তিনি (পুতিন) কিয়েভের পরাজয় মেনে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
স্তানোভায়া বলেছেন, ‘আমেরিকা যদি সমস্যা সমাধানের এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করে, তাহলে ভালো। আর যদি না করে, সেক্ষেত্রে তিনি (পুতিন) জানেন কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এটিই হচ্ছে ক্রেমলিনের বর্তমান যুক্তি।’
ধাঁধায় ইউরোপ
ইউক্রেন ইস্যুতে এ সপ্তাহে বেশ কিছু বৈঠক করছে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সোমবার প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে, ব্রাসেলসে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেনিস শ্মিহালের সঙ্গে বৈঠক করছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। একইসঙ্গে সামরিক সহায়তা ও নিজেদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ ইউক্রেনের আলোচনা করছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আবারও ব্রাসেলসে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন।
ইইউয়ের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বেলজিয়ামে জব্দ করা রুশ সম্পদের কী হবে? ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় অবশ্য এগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন এসব তহবিল ইউক্রেনকে সাহায্য করতে ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপরও চাপ বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু খোদ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী জব্দ করা এই সম্পদ ইউক্রেনের জন্য ব্যবহারের পক্ষে নন। এর আইনি বৈধতা, ইইউয়ের ওপর প্রভাব এবং রাশিয়ার প্রতিশোধের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ফলে যে নতুন কূটনীতি শুরু হয়েছে, তা ইউরোপের দুর্বলতাকে ‘নিদারুণভাবে’ উন্মোচিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করে গোল্ড-ডেভিস বলেন, (ইউক্রেন) যুদ্ধ কূটনীতিতে প্রায় উপেক্ষিত। খসড়া প্রস্তাবে কিছু সংশোধন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি তারা।’
২ দিন আগে
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে কিয়েভ প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুবিও, উইটকফের বৈঠক
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইউক্রেনের আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এ লক্ষ্যে মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও চলতি সপ্তাহে পৃথক আলোচনার কথা রয়েছে তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এই বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বসে প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা।
ফ্লোরিডায় বৈঠকের আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইয়েরমাক।
ইয়েরমাকের বাসায় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানোর পর এই পদত্যাগের ঘোষণা আসে। জেলেনস্কি সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালানি খাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ১০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর ফলে নিজ দেশেই চাপের মধ্যে রয়েছে জেলেনস্কির সরকার।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইয়েরমাক রুবিওর সঙ্গে জেনেভায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তারা উভয়েই জানিয়েছিলেন, সংশোধিত শান্তি পরিকল্পনা ফলপ্রসু হয়েছে। তবে ইয়েরমাকের পদত্যাগের ঘোষণার পর সেনাপ্রধান অ্যান্ড্রি নাটভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ও সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ ফ্লোরিডায় নতুন বৈঠকে ইউক্রেনের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
কিয়েভের কুটনীতিকরা বর্তমানে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সমঝোতার উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফা পরিকল্পনা পুনঃনিরীক্ষা করেছেন। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত প্রাথমিক ওই পরিকল্পনায় রাশিয়ার স্বার্থকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন তারা। ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনের ডনবাসের পূর্বাঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের ২৮ দফায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিতকরণ, ন্যাটোতে যোগদানে বিধিনিষেধ ও ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার শর্ত ছিল। তবে আলোচকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ওই প্রস্তাবনা-কাঠামোটির সংশোধন করা হয়েছে। তবে কীভাবে তা পরিবর্তন করা হয়েছে, তা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
পুতিনের সঙ্গে এই পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহেই উইটকফ, এমনকি কুশনারকেও পাঠানো হতে পারে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। উইটকফ ও কুশনার উভয়েই ট্রাম্পের মতো রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তবে তারা কূটনীতির চেয়ে চুক্তি তৈরির ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। গাজায় যুদ্ধবিরতিতে ২০ দফা প্রস্তাবেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা।
এক্স-এ জেলেনস্কি লিখেছেন, যুদ্ধ শেষ করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল তা নির্ধারণ করবে।
শনিবার রাতে নৈমিত্তিক ভাষণ দেওয়ার সময় জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন পক্ষ একটি ‘গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রদর্শন করছে। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই যুদ্ধকে মর্যাদাপূর্ণভাবে শেষ করার পথ নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট করা সম্ভব।’
এদিকে, শনিবার কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। রাতভর চলা নতুন এই হামলায় কিয়েভ অঞ্চলের ভিশহোরোদ শহরে নয়তলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ড্রোন আঘাত হানলে একজন নিহত এবং চার শিশুসহ ১৯ জন আহত হয় বলে জানান তারা।
পরে আজ (রবিবার) টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের ওপর ১২২টি স্ট্রাইক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের হামলা প্রতিদিনই ঘটে। শুধু এই সপ্তাহেই রুশরা প্রায় ১ হাজার ৪০০ স্ট্রাইক ড্রোন, ১ হাজার ১০০ গাইডেড আকাশবোমা এবং ৬৬টি ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। তাই প্রতিদিন ইউক্রেনের স্থিতিশীলতা আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, আর শান্তির জন্য আমাদের অংশীদারদের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এমন কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য সমাধান প্রয়োজন যা যুদ্ধের অবসানে সহায়তা করবে।’
৪ দিন আগে
এক ফ্রেমে পুতিন-শি-কিম, ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ পাচ্ছেন ট্রাম্প
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে এই আয়োজনে সবচেয়ে বেশি যে দৃশ্যটি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে তা হলো, লাল গালিচায় একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে শি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের আলাপ ও করমর্দন।
বিরল এই দৃশ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই শুল্ক যুদ্ধকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে মিত্র ও প্রতিপক্ষদের প্রতি তার পরিবর্তিত নীতির কারণে অনেক দেশই প্রভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশের নেতা আজ একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন।
কুচকাওয়াজে সামরিক শক্তি ও সৈন্যদের ব্যাপক প্রদর্শনী করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। আর এ সময় তার পাশে ছিলেন দুই শক্তিধর নেতা পুতিন ও কিম। বিষয়টিকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ তিন নেতার এই মেলবন্ধনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন ট্রাম্প।
এ বিষয়ে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের চমৎকার জনগণকে মহান ও দীর্ঘস্থায়ী উদযাপনের শুভেচ্ছা। আপনারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তখন দয়া করে পুতিন ও কিমকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাবেন।’
শি বলেছেন, ‘মানবজাতি এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যখন শান্তি বা যুদ্ধ, সংলাপ অথবা মুখোমুখি সংঘর্ষ, পারস্পরিক কল্যাণ কিংবা সবার অকল্যাণ— এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।’ তবে চীনের জনগণ ইতিহাসের সঠিক পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, কিছু দেশ ‘বুলিং আচরণ’ করছে। তবে চীনকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওয়েন-তি সাং বলেন, ‘চীনের এই আয়োজন আরও একটি বার্তা দিচ্ছে। সেটি হলো, পশ্চিমারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চালিয়ে গেলেও বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে ভয় পায় না চীন।’
কুচকাওয়াজে আরও উপস্থিত ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রধান মিন অং হ্লাইং। কিমের সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে কিম জু। তবে কোনো বড় পশ্চিমা নেতা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনে আগ্রহী— এমন কিছু দেশের কাছে এই কুচকাওয়াজ ছিল শিয়ের প্রভাব প্রদর্শনের একটি কৌশল।
এর আগে, তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশনের (এসসিও) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ২০ জনের বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা। সেখানেও পুতিন উপস্থিত ছিলেন। তবে এসসিও সম্মেলনে যোগ দেননি কিম। তবে ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন সম্প্রতি শুল্কারোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এই মুহুর্তে বিশ্লেষকদের নজর এখন শি, পুতিন ও কিমের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় কি না, সেদিকে আটকে রয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনে এসসিও সম্মেলন ও সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন কারা
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অন এশিয়ার গবেষক লিম চুয়ান-তিয়ং বলেন, যদি এই তিনজনের ত্রিপক্ষীয় কোনো বৈঠক হয়, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এমনকি সেটি বিশ্বকে আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
লিমের ভাষ্যে, যদি এমন কোনো বৈঠক না হয়, তাহলে বুঝতে হবে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে খুব বেশি উসকানি দিতে চায় না। তাছাড়া ত্রিপক্ষীয় কৌশলগত অস্পষ্টতাও বজায় রাখতে চান শি।
কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত সামরিক সরঞ্জামও পর্যবেক্ষণ করেছেন বিশ্লেষকরা। সেখানে ছিল— ট্যাংক, ড্রোন, দূরপাল্লার ও পারমাণবিক হামলায় সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও স্টেলথ বিমান। আবার কয়েকটি নতুন উন্নত অস্ত্রও উন্মোচন করা হয়।
এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ড্রু থম্পসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ চীনের যেসব প্রতিবেশি দেশ তাদের মৌলিক জাতীয় স্বার্থ চ্যালেঞ্জ করার কথা চিন্তা করে, এই প্রদর্শনী তাদের প্রতি এক ধরনের সতর্কবার্তা।
তিনি বলেন, মৌলিক জাতীয় স্বার্থের মধ্যে সরাসরি নাম উচ্চারণ না করা হলেও যা সবকিছুতে উপস্থিত থেকেছে, তা হলো তাইওয়ান। শি নিজের বক্তব্যে বারবার ‘চীনা জাতির পুনর্জাগরণের’ কথা বলেছেন। এটি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ এবং এর মূল ভিত্তি তাইওয়ানকে চীনের ভূখণ্ড হিসেবে সংযুক্ত করা।
তাইওয়ানকে বরাবরই চীনের একটি প্রদেশ হিসেবে দাবি করে আসছেন শি ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। তবে চীনের এই দাবি মানতে নারাজ তাইওয়ানের সরকার ও সেখানকার জনগণ।
৯২ দিন আগে
কমলা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) হোয়াইট হাউজের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানা যায়।
নিয়মানুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টরা আজীবন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টরা দায়িত্ব ছাড়ার ৬ মাস সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেই হিসাবে গত ২১ জুলাই কমলার নিরাপত্তা পাওয়ার সময় শেষ হয়েছে। তবে সবশেষ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দিতা করায় কমলার নিরাপত্তা পাওয়ার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বাইডেনের সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’কে একটি চিঠি পাঠান ট্রাম্প। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আর সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা পাবেন না কমলা।
ট্রাম্প একজন রিপাবলিকান, আর বাইডেন ও হ্যারিস ডেমোক্র্যাট। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হ্যারিসকে পরাজিত করেছিলেন ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) ট্রাম্প প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কাছে একটি নির্বাহী স্মারকলিপি জারি করা হয়। এর মাধ্যমে হ্যারিসের নিরাপত্তা বাহিনী ও নিরাপত্তা পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে।
পড়ুন: ইউক্রেনে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
এই সেবা ২০২৬ সালের জুলাই মাসেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবারই (২ সেপ্টেম্বর) শেষ হবে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ওই সময়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি হত্যাচেষ্টা সংঘটিত হয় এবং ওই সময়ে সিক্রেট সার্ভিস বর্তমান প্রেসিডেন্টকে (ট্রাম্প) রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সান ফ্রান্সিসকো জেলা অ্যাটর্নি। তিনি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে আগামী বছর তিনি গভর্নরের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
৯৭ দিন আগে
ইউক্রেনে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় ইতোমধ্যে ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই চুক্তির আওতায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বিষয়টি কংগ্রেসকে অবহিত করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ইউক্রেনকে ৩ হাজার ৩৫০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সমপরিমাণ জিপিএস ইউনিট, যন্ত্রাংশ, খুচরা সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। আর এসব অস্ত্রসস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সামরিক সহায়তার (ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং) পাশাপাশি ন্যাটোর মিত্রদেশ ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ে থেকে পাওয়া তহবিল ব্যবহার করবে ইউক্রেন।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে এগিয়ে নেবে। সেইসঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তা জোরদার করবে।
এ ছাড়া, ইউক্রেনকে ইউরোপের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি শক্তি হিসেবেও অভিহিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
সম্প্রতি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলাস্কায় বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে বৈঠকের পরও ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া, এরই মধ্যে এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র।
গত জুলাইয়ে ইউক্রেনকে আরও দুটি অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ৩২২ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাবের আওতায় ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাঁজোয়া যুদ্ধযান সরবরাহ করার কথা ছিল। আরেকটি প্রস্তাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বচালিত কামানভিত্তিক যানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
৯৮ দিন আগে
ভারতে বানান, ভারত থেকেই কিনুন: মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে মোদির আহ্বান
আজ থেকে ভারতের ওপর কার্যকর হচ্ছে নতুন মার্কিন শুল্ক। ভারত থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করবে, সেসব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কশাস্তি। দিল্লির ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এই চোখ রাঙানির বিপরীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ভারতে বানান, ভারত থেকেই কিনুন’। অর্থাৎ মার্কিন শুল্ক মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরেই পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি করে রপ্তানি নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বিশাল কর ছাড়ের’ ঘোষণা দেন মোদি।
দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় দিল্লির লাল কেল্লা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকদের সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সে সময় ছোট দোকান মালিক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দোকানের বাইরে ‘স্বদেশি’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বোর্ড লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেছিলেন, ‘হতাশা থেকে নয়, বরং গর্ব থেকে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের অসুবিধাগুলো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, অবশ্যই সামনে এগোতে হবে। কেউ যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’
আরও পড়ুন: ভারতকে ট্রাম্পের শাস্তি, শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ
এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন মোদি।
মোদির এই অবস্থানকে অনেকেই ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবেই দেখছেন। মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ আমেরিকান গ্রাহকদের পোশাক থেকে শুরু করে হীরা ও চিংড়ি পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহ করে ভারত।
তবে মোদির বার্তাও স্পষ্ট, দেশে পণ্য বানিয়ে দেশেই বিক্রি করতে হবে।
ভারতে বানিয়ে ভারতেই বিক্রি কতটুকু সম্ভব
মোদি নির্দেশ দিলেও এই বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। যদি উৎপাদনের কথা আলোচনা করা হয়, সেক্ষেত্রে ভারতের ব্যর্থতার ছাপ ইতোমধ্যে স্পষ্ট। কারণ ভারতে বছরের পর বছর সরকারি ভর্তুকি এবং উৎপাদন প্রণোদনা চালু করার পরও দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৫ শতাংশের আশপাশেই স্থবির হয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী কর সংস্কারকে উৎসাহিত করে এবং অবিলম্বে জনগণের হাতে আরও বেশি অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে।
এ কারণে চলতি বছরের শুরুতে বাজেটে ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড়ের ঘোষণার পর এখন পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) হ্রাস এবং সরলীকরণের মাধ্যমে ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করছে মোদি সরকার।
মূলত কর ছাড়ের ফলে ভোক্তানির্ভর খাতগুলোর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুটার, ছোট গাড়ি, পোশাক এবং সিমেন্টের মতো পণ্য।
সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, কম জিএসটির কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে, তা বাড়তি শুল্ক আদায় এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজেটের তুলনায় বেশি লভ্যাংশের মাধ্যমে পূরণ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গান স্ট্যানলির মতে, মোদির এই রাজস্ব প্রণোদনা বা কর ছাড় ভোগব্যয়ের পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এতে দেশটির জিডিপি বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমবে।
সুইস বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস বিবিসিকে বলেছে, জিএসটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত মোদির আগের নেওয়া করপোরেট ও আয়কর কমানোর তুলনায় বড় প্রভাব ফেলবে, কারণ এগুলো ক্রয়ের সময় সরাসরি ভোগব্যয়কে প্রভাবিত করবে।
আরও পড়ুন: ভারতকে কি চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?
মোদির এই করছাড়ের ঘোষণা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। গত কয়েক মাসে এই হার এক শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। তাছাড়া ঋণ দেওয়াকেও উৎসাহিত করা হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
এর ফলে আগামী বছরের শুরুতে প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে সহায়ক বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের শেয়ার বাজারগুলো এই ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। তাছাড়া, বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে সৃষ্ট আতঙ্ক থাকা সত্ত্বেও, এই মাসের শুরুতে আঠারো বছর পর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল থেকে একটি বিরল সার্বভৌম রেটিং আপগ্রেড পেয়েছে ভারত।
কোনো সরকারকে ঋণ দেওয়া বা কোন দেশে বিনিয়োগ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ— তা পরিমাপ করে এই সার্বভৌম রেটিং। এতে সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচ কমতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে।
অবশ্য অনেকদিন ধরে আটকে থাকা সংস্কারগুলো নিয়ে তাড়াহুড়া করলেও ভারতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কয়েক বছর আগে দেখা ৮ শতাংশ স্তর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এমনকি এ সংশ্লিষ্ট বহিরাগত সংকট কমার কোনো লক্ষণও নেই।
এদিকে, রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন বাকযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর জেরে এই সপ্তাহের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য আলোচনাও বাতিল করা হয়েছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনাও করা যেত না বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
৯৯ দিন আগে
কেন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ পুতিন?
সম্প্রতি আলাস্কা সম্মেলনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।
তবে এ বিষয়ে ত্রেমলিনের জবাবের প্রতীক্ষায় ছিল সবাই। এরপর সোমবারের (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে মস্কো এবং তা ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে মিলছে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি পর্যায় উন্নতকরণের সুযোগের ধারণাটি আলোচনায় এসেছে। তবে কোন নেতা বা প্রতিনিধিকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে— এমন কোনো নাম তিনি উল্লেখ করেননি এবং সুস্পষ্ট করেও কিছু বলেননি।
এরপর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আরেকটু সমঝোতার সুরে বলেন, দ্বিপক্ষীয় কিংবা ত্রিপক্ষীয় কোনো কাজই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না। তবে যেকোনো আলোচনায় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পুতিনের আপত্তির কারণ কী হতে পারে?
এসব বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছায়নি ক্রেমলিন।
অবশ্য এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। কারণ এই যুদ্ধ একতরফাভাবে পুতিনই শুরু করেছিলেন। পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেশটিতে হামলা শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
পুতিন এ-ও মনে করেন, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মিক জায়গা থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ইউক্রেনকে আলাদা করা ছিল ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, যদি এই বৈঠক হয়, তাহলে পুতিনকে এই ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে যে তিনি এমন এক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন, যাকে তিনি হাসির পাত্র বলে পরিহাস করেন এবং যে দেশের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না।
তাছাড়া রাশিয়ার মানুষদেরও বোঝানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। ওরিসিয়া বলেন, দিনের পর দিন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে রুশ নাগরিকদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে যে, জেলেনস্কি একজন নাৎসি, ইউক্রেন হলো পশ্চিমাদের হাতের পুতুল রাষ্ট্র… জেলেনস্কির সরকার অবৈধ। তাহলে হঠাৎ তিনি কেন তার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন? ক্রেমলিন এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে— বৈঠক হলে সেটিই হয়ে উঠবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মস্কো যে শুধু জেলেনস্কি সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে চলেছে, তা-ই নয়। তারা দেশটির নির্বাচনের স্থগিতাবস্থা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সামরিক আইনের আওতায়ই ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
সর্বশেষ শান্তি আলোচনার প্রস্তাবে যেকোনো চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনে নির্বাচনের দাবি করেছে মস্কো। এমনকি তারা জেলেনস্কির নামও মুখে নেন না, বলে কিয়েভ প্রশাসন।
একটু পেছনে ঘুরে তাকালে দেখা যাবে, এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রথম সরাসরি আলোচনায় জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে এক ইতিহাসের বই লেখকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন পুতিন।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং রাশিয়া বিষয়ক খবর ও বিশ্লেষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্তানোভায়ার ভাষ্যে, আসলে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না পুতিন। তার কাছে এই যুদ্ধ মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, বরং পশ্চিমাদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। তবে পুতিন যদি মনে করেন যে বৈঠক সফল হতে পারে, তাহলে আবার এতে রাজি হতেও পারেন।
তাতিয়ানা আরও মনে করেন, বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অবশ্যই মূল বিষয়গুলো আলোচনার জন্য থাকতে হবে। এর মধ্যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার মতো বিষয় রয়েছে। কিন্তু জেলেনস্কি শুরু থেকেই মস্কোর এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। আর এক্ষেত্রে ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারেন বলে ধারণা পুতিনের।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
তিনি বলেন, রাশিয়া যা চাইছে তা অর্জনে ট্রাম্প সহায়ক হতে পারে বলে মনে করে মস্কো। এ কারণে রুশ দাবিগুলো নিয়ে কিয়েভকে আরও নমনীয় ও খোলামেলা হতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তাতিয়ানা।
তার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে এবার হয়তো উশাকভের প্রস্তাব অনুযায়ী ইস্তানবুলে বৈঠকে বসতে রাজি হতে পারেন পুতিন। সেখানে প্রতিনিধি দলে উশাকভ ও ল্যাভরভকেও পাঠাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে এমন কোনো বৈঠকে বসবে না ত্রেমলিন, যেখানে তাদের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এদিকে, সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে এক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ওই পোস্ট দিয়ে তিনি ঘুমাতে গেলেন, আর উঠে বুঝতে পারলেন যে বিষয়টি এখনো চূড়ান্তই হয়নি। পরে সুর বদলে ফক্স নিউজে বলেন, আমি একভাবে পুতিন আর জেলেনস্কির মধ্যে সেট-আপটা করেছিলাম। তবে জানেনই তো, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তো তাদের! আমরা তো ৭ হাজার মাইল দূরে।’
কিন্তু কোনো ছাড় না দিয়েই পুতিন যখন আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সম্মানিত হয়েছেন, তখন বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এই বৈঠকে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি আগস্টের শুরুর দিকে ইউক্রেনে ড্রোন হামলার মাত্রা সামান্য কমালেও সোমবার রাত থেকে আবার তা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে সোমবার রাতভর মোট ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মস্কো।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্পের চাপে যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না পায় রাশিয়া, তাহলে তাদের সামরিক শক্তি তো আছেই।
তবে যে প্রশ্নের উত্তর আসলে কেউই জানে না, সেটি হলো— এই আলোচনা ব্যর্থ হলে এর দায় কার ঘাড়ে চাপাবেন ট্রাম্প?
১০৬ দিন আগে
শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই শীর্ষ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের নেতারা বৈঠকে বসেন, যেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর উপায়।
নিরাপত্তা নিয়ে কী ধরনের নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হবে। প্রায় ৩০টি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, যাদের বলা হচ্ছে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু সহায়তা করবে, তবে কীভাবে সেটি করবে তা পরিষ্কার নয়।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার জেলেনস্কি বলেন, এই সহায়তা নানা রূপে আসতে পারে, যা হতে পারে সরাসরি সৈন্য পাঠানো, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ, আকাশসীমা ও কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা দেওয়া, এমনকি শুধু আর্থিক সহায়তাও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ইউরোপের কোন কোন দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত?
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আশ্বাস রক্ষার অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠাতে রাজি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ‘আমাদের ইউক্রেনকে স্থলে সহযোগিতা করতে হবে।’ তবে জার্মানি এ বিষয়ে আরও সন্দিহান।
বিষয়টি নিয়ে এখনো অনেক কিছু নির্ধারণ করা বাকি। তার মধ্যে পশ্চিমা সেনারা কি যুদ্ধবিরতি লাইনে অবস্থান করবে? নাকি শুধু কিয়েভ ও লভিভের মতো বড় শহরে প্রশিক্ষণ দেবে? কিংবা রুশ হামলার মুখে পড়লে তাদের কার্যপদ্ধতি কী হবে? ইত্যাদি অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইউরোপের নেতৃত্বাধীন একটি শান্তিরক্ষা অভিযান সমন্বয় করবেন।
সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির পাশে বসে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক সহায়তা আসবে।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মূল দায়িত্ব ইউরোপের দেশগুলোকেই নিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারাই সামনের সারির নিরাপত্তা রক্ষক, কারণ তারা সেখানেই রয়েছে। তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে চায় ইউক্রেন। কিয়েভ মনে করে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হতে পারে এই চুক্তি। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের সম্ভাবনাকে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন তিনি, অথচ এটিই ইউক্রেনে ভবিষ্যত রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ হতে পারত বলে মনে করে কিয়েভ।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
আবার ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা অভিযানে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সেনা পাঠাবে— এমন সম্ভাবনাও নেই। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বাস্তবসম্মত একটি বিকল্প হতে পারে, পেন্টাগন প্রস্তাবিত আকাশ প্রতিরক্ষা বা ‘স্কাই শিল্ড’ উদ্যোগে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেন, বিশেষ করে কিয়েভ শহরের ওপর আকাশ প্রতিরক্ষা জোন থাকবে, যা ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
রাশিয়া কী বলছে?
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, আলাস্কার বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন সম্মত হয়েছেন যে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, বিষয়টি ন্যাটোর আওতার বাইরে থাকলেও তা কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর সমতুল্য হবে, যেখানে একটি দেশের ওপর আক্রমণকে সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে ধরা হবে।
তবে উইটকফের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে রাশিয়ার বক্তব্য মেলে না। ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা সৈন্যদের ইউক্রেনে উপস্থিতির ঘোর বিরোধী রাশিয়া। যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে (ইউক্রেনে) শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, রাশিয়ার অস্তিত্বগত নিরাপত্তা সংকটের দোহাই দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পুরোটাই দাবি করছেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও ইউক্রেনের কাঙ্ক্ষিত যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, সেগুলোরও দখল চান রুশ পেসিডেন্ট।
এর পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ ও নাৎসিকরণ’ প্রক্রিয়ার স্থগিত চান। অর্থাৎ, পুতিন চান, জেলেনস্কিকে অপসারণ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার কঠোরভাবে সীমিত করা হোক।
আপাতদৃষ্টিতে ইউক্রেনে শান্তি পুনর্স্থাপনে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় অগ্রগতি দেখা গেলেও মৌলিক অবস্থান থেকে সরেনি রাশিয়া। পুতিন এখনও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন না, এমনকি যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিতও দেননি তিনি। এত কিছুর মধ্যেও রুশ বোমাবর্ষণ থামেনি, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইতিহাস কী বলে?
এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ছেড়ে দিয়েছিল। বুদাপেস্ট স্মারকলিপির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ইউক্রেনের ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা’ ও ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ রক্ষা করবে এবং ‘বল প্রয়োগ ও হুমকি’ থেকে বিরত থাকবে।
সেই সময় অনেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিক মনে করেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়লে দেশটি রুশ হামলার ঝুঁকিতে পড়বে, কিন্তু ক্লিনটন প্রশাসনের এ বিষয়ে জোরাজুরিতে তা বাস্তবায়িত হয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের মে মাসে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা এক বন্ধুত্ব চুক্তি সই করেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী সীমান্তের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। চুক্তির অংশ হিসেবে কিয়েভ তার নৌবাহিনীর বেশিরভাগ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং ২০ বছরের জন্য সেভাস্তোপোল নৌঘাঁটি মস্কোকে ইজারা দেয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এত কিছুর পরও রুশ আগ্রাসন থামানো যায়নি। ২০১৪ সালে সেনা মোতায়েন করে ক্রিমিয়া দখল ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় ক্রেমলিন। এখন পুতিন বলছেন, পুরো ইউক্রেনই ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ।
তাই অতীতের ভঙ্গ প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন এবার আরও স্পষ্ট নিশ্চয়তা চাইবে, তা বলাই বাহুল্য।
১০৬ দিন আগে
জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন। তবে এজন্য ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ার আশা ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রবিবার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “ওবামার আমলে হারানো ক্রিমিয়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না, আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়াও সম্ভব নয়। কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না!”
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠক করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। তার আগেই জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
ট্রাম্প জানান, মস্কোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দেওয়া হবে না এবং রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়া পুনর্দখলের সুযোগও দেওয়া হবে না।
এই পোস্ট দেওয়ার এক মিনিট পরই ট্রাম্প আবার লেখেন, একসঙ্গে এতজন ইউরোপীয় নেতাকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো তার জন্য ‘অনেক সম্মানের’।
এদিকে, দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ট্রাম্পের এ পোস্ট ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডার মতো পরিস্থিতি ফের তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
তবে জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্মিলিত শক্তি রাশিয়াকে শান্তির পথে আনতে বাধ্য করবে। বৈঠকে যোগ দিতে তিনি ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন পৌঁছেছেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলাস্কায় বৈঠক করেন ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে পুতিন দনবাসের পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল দাবি করেছেন বলে দ্য গার্ডিয়ানের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এরপর ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কি যদি দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেন, তাহলে একটি শান্তিচুক্তি সম্ভব হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি একটি চুক্তি করা উচিত। কারণ, রাশিয়া একটি বড় শক্তি, ইউক্রেন তা নয়।”
অনেক গণমাধ্যম আলাস্কা সম্মেলনকে পুতিনের বিজয় এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য অপমান হিসেবে উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তবে তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় ‘বড় অগ্রগতি’ অর্জন করেছেন, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
দ্য গার্ডিয়ান আরও জানায়, সোমবারের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন এবং ভূখণ্ড বিনিময় পরিকল্পনার বিরোধিতা করবেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যে কোনো সমঝোতায় ওয়াশিংটন কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে তা জানতে চাইবেন তারা।
রাশিয়াও কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে বলে জানিয়েছেন ভিয়েনাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থায় নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ। তিনি বলেন, কিয়েভের পাশাপাশি মস্কোরও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে।
আরও পড়ুন: ‘শূন্য হাতে’ পুতিনকে নিয়ে আলাস্কা ছাড়লেন ট্রাম্প
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সিএনএনকে বলেন, ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে রাজি হয়েছেন পুতিন।
ন্যাটোতে সরাসরি যোগ দিতে না পারলেও ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অনুচ্ছেদ–৫–এর মতো ভাষা ব্যবহার করতে পারবে বলে জানান তিনি।
এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জোটের কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
১০৯ দিন আগে
‘শূন্য হাতে’ পুতিনকে নিয়ে আলাস্কা ছাড়লেন ট্রাম্প
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে কোনো চুক্তি নিশ্চিত করতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিনের জন্য আলাস্কায় লাল গালিচা বিছিয়েও নির্বাচনী প্রচারে ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে’ নিজের অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এক প্রকার ‘শূন্য হাতেই’ পুতিনকে সঙ্গে নিয়ে আলস্কা ছাড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেন নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে বলে রুশ প্রেসিডেন্টের দাবির পর ট্রাম্প বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত একটি চূড়ান্ত চুক্তি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো চুক্তিই কার্যকর না।’
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়া উচিত বলেও জানান তিনি। দুপক্ষের মধ্যে যে অগ্রগতি তৈরি হচ্ছে, ইউরোপ যাতে তাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেই হুশিয়ারিও দিয়েছেন পুতিন।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করে এ বিষয়ে জানাবেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। দীর্ঘমেয়াদী, মাঝারি বা স্বল্প মেয়াদি ইউক্রেনে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি ছাড়াই আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটি ছেড়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই নেতা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করলেও কেউই সাংবাদিকদের প্রশ্ন নেননি। ট্রাম্প বলছেন, তার ও পুতিনের মধ্যে কিছু বিষয়ে ‘ব্যাপক অগ্রগতি’ হয়েছে, তবে সেটা কী তার কোনো ইঙ্গিতই দেননি, স্বভাবসুলভভাবে বিশ্বকে এক ধরনের ধন্দে রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা (সমঝোতায়) পৌঁছাতে পারিনি।’ কিন্তু যে লোক নিজেকে ‘পিসমেকার’, ‘ডিলমেকার’ বলতে ভালোবাসেন, তাকে যে ঝুলিতে শান্তি বা চুক্তি, দুটির কোনোটি নেওয়া ছাড়াই আলাস্কা ছাড়তে হল!
পুতিন হালকা স্বরে ‘পরেরবার মস্কোতে’ বললেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী একটি শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছেই, এমন আভাসও শুক্রবার পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ভারতকে কি চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?
অবশ্য আলাস্কার এ বৈঠক থেকে রাশিয়া বা ইউক্রেনের তুলনায় ট্রাম্পের প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা এমনিতেই ছিল কম। আগেই তিনি বলেছিলেন, বৈঠকটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২৫ শতাংশ।
সে বিচারে শেষ পর্যন্ত এটি তার সুনামে চিড় ধরাল বলে মনে করছেন বিবিসির উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি অ্যান্থনি জার্চার। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনের শুরুটাও ছিল ‘অন্যরকম’। সংবাদ সম্মেলন শুরুই করেন পুতিন, বেশ খানিকক্ষণ কথা বলেন তিনি; এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পাশে নীরবে দাঁড়াতে হয়েছে।
ওভাল অফিসে ট্রাম্পের আগের বৈঠকগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়নি। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেখা যেত কথা দিয়ে অপর নেতাকে ‘ঠেসে ধরতে’, যার ধাক্কায় বিদেশি সেই রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকে নিরুত্তর চেয়ে থাকতে হতো।
জার্চার বলছেন, আলাস্কা যদিও মার্কিন ভূখণ্ডের অধীনে, তারপরও পুতিন এতটাই স্বচ্ছন্দ ছিলেন যে তাকে মনে হয়েছে—ঘরেরই ছেলে। গত শতকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার আগে এটি যে ‘রাশিয়ান আমেরিকা’ ছিল, তা বলতে এখনও ভালোবাসেন অনেক রুশ কর্মকর্তা।
বিবিসির উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি বলেন, এটা হয়তো সামনের দিনগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ভেতরে ভেতরে পোড়াবে, এমনকি সংবাদ সম্মেলনও, যা শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যর্থ হিসেবেই হাজির করেছে।
তার মতে, এখন সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা হাজির হবে, শুক্রবার আলাস্কায় যে প্রশ্নটি করতে পারেননি সাংবাদিকরা, সেটি হল— যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় সাজা হিসেবে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে হুমকি ট্রাম্প গত কয়েকদিন ধরে দিয়ে গেছেন, তা কি তিনি বাস্তবায়ন করবেন?
‘আলাস্কা ছেড়ে যাওয়ার আগে ফক্স নিউজের সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথনে ট্রাম্প এর আংশিক উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপের (নিষেধাজ্ঞা) বিষয়টি তিনি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ভাববেন।
‘কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রুতি ছিল ‘গুরুতর পরিণতির’, এখন এ ধরনের অস্পষ্ট উত্তর হয়তো আরও বেশি প্রশ্নের জন্ম দেবে,’ বলেছেন জার্চার।
‘সংবাদ সম্মেলন’ কখন সংবাদ সম্মেলন হয় না? যখন কোনো প্রশ্ন হয় না। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ট্রাম্প যখন কেবল নিজের নিজের কথা বলে, কোনো প্রশ্ন না নিয়েই মঞ্চ ছেড়ে যান, তখন হলরুমের প্রায় সবাই অবাক হয়ে পড়ে বলে জানান বিবিসির রাশিয়া এডিটর স্টিভ রোজেনবার্গ।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
রুশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও দ্রুতগতিতে কক্ষ ত্যাগ করেন, তাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই।
ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে যে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে, এগুলোকে তার স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেখছেন রোজেনবার্গ। তিনি বলেন, রাশিয়ার কাছে যুদ্ধবিরতি চাইলেন ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন দিলেন না।
অথচ দিনের শুরুতে পরিস্থিতি ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। অ্যাঙ্করেজের বিমানঘাঁটিতে পুতিনকে লাল গালিচায় স্বাগত জানানো হয়, ট্রাম্প তার অতিথিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে আকাশে উড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান।
১১০ দিন আগে