শ্রমিক অধিকার
উন্নয়নের পদযাত্রায় আজও আড়ালে উপেক্ষিত গৃহকর্মীরা
ঢাকার অসংখ্য বাড়ির উঁচু দেওয়ালের আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে এক অদৃশ্য পরিশ্রমী শ্রেণি; তারা নিরলসভাবে দিনরাত খেটে চলেছেন। তাদের শ্রম স্বীকৃত নয়, নিয়ন্ত্রিত নয় এবং সুরক্ষিতও নয়।
যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা গৃহকর্মী। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী, আবার কিশোরীও হয়ে উঠতে না পারা অনেক মেয়ে রয়েছে। তারা রান্না করেন, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন, শিশুদের দেখাশোনা করেন— মানুষের বাসার এমন অসংখ্য কাজের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তবে সমাজে তাদের এই অবদান উন্নয়ন কিংবা শ্রমিক অধিকারবিষয়ক বৃহত্তর আলোচনায় বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়।
এই তো গত ১৬ জুন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস পালিত হলো। অথচ দেশের এই শ্রমজীবী শ্রেণির অবস্থানে কোনো অর্থবহ স্বীকৃতি বা পরিবর্তন আসার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি।
বাড়ছে সংখ্যা ও ঝুঁকি
সরকারি জরিপ বলছে, এই খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সালে যেখানে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ছিল ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, তা ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ ছাড়া, ২০১১ সালে ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স রাইটস নেটওয়ার্কের (ডিআরডব্লিউএন) হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ গৃহকর্মী নিয়োজিত, যাদের অনেকেই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অল্পবয়সী মেয়ে।
আরও পড়ুন: কিশোরী গৃহকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু: ক্ষোভের জন্ম, ন্যায়বিচারের দাবি
বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যা আরও বিস্ময়কর। প্রকাশিত তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় ১০৫ লাখ মানুষ বেতনভুক্ত গৃহকর্মী—যা কানাডার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের সমান।
বাংলাদেশে এই শ্রমিকরা মাসে গড়ে মাত্র ১৫ ডলার (প্রায় ১৭৫৫ টাকা) আয় করেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস)।
২০২২ সালে অক্সফামের এক সমীক্ষা জানায়, ৯৩ শতাংশ নারী গৃহকর্মী তাদের কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার, ৬১ শতাংশ মৌখিক নির্যাতন এবং ২১ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার।
নেই চুক্তি, নেই সুরক্ষা
শহুরে পরিবারগুলোতে এই গৃহকর্মীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তাদের অধিকাংশই কোনো আনুষ্ঠানিক চাকরির কাঠামোর আওতায় নেই। বিআইএলএসের তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশের বেশি গৃহকর্মীর কোনো লিখিত চুক্তি নেই।
১২ বছর বয়স থেকেই ধানমণ্ডির এক বাড়িতে কাজ করা ১৬ বছর বয়সী রিনা বলেন, ‘কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নাই। ভোরে উঠি, কাজ শেষ হয় গভীর রাইতে। অসুস্থ হইলে বা সামান্য ভুল করলে গালাগালি বা মার খাই। অভিযোগ করারও কেউ নাই।’
বন্ধ দরজার আড়ালে নির্যাতন
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আবারও গৃহকর্মীদের প্রতি সহিংসতা ও অপমানের বিষয়টি সামনে এনেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো গৃহকর্মীদের ওপর নিয়মিত শারীরিক নিপীড়ন, মৌখিক অবমাননা, এমনকি যৌন সহিংসতার ঘটনাও নথিভুক্ত করছে। ভয়ে, কিংবা জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ঘটনাগুলো প্রকাশ পায় না।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বনশ্রীতে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার, সংঘর্ষ-গাড়িতে আগুন
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (এএসকে) মামলার দায়িত্বে থাকা ফারজানা আখতার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযোগ পাই, বিশেষ করে অল্পবয়সী মেয়েদের কাছ থেকে যাদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই শহরে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অতি দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। কেউ কেউ পড়াশোনার আবার কেউ ভালো জীবনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসে। তবে আসার পর আটকে পড়ে শোষণ-নির্যাতনের ফাঁদে।’
গৃহকর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতা
এই অল্পবয়সী শ্রমিকদের অনেককেই শহরে আনা হয় দালালদের মাধ্যমে, অর্থাৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক ‘নিয়োগ এজেন্ট’ বা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে। এরা কোনো আইনি কাঠামোর আওতায় পড়েন না, বরং কমিশন খেয়ে মেয়েদের অনিরাপদ ও অপরিচিত ঘরে পাঠিয়ে দেন।
এমনই একজন সাবেক দালাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেন, ‘এটা এক ধরনের ছায়া বাজার। কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই, সরকারের নজরদারি নেই। চাহিদা আর যোগানের খেলা। কিছু মেয়েকে তো জিনিসের মতো হাতবদল করা হয়।’
সম্প্রতি ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় কয়েকটি প্রশিক্ষিত গৃহকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যারা তুলনামূলক ভালো পারিশ্রমিক দেয়। তবে এসব উদ্যোগ এখনও খুবই সীমিত।
কাগজে নীতি, বাস্তবে শূন্যতা
২০১৫ সালে সরকার ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ চালু করে। ওই নীতিতে ন্যূনতম মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম ও ছুটির ব্যবস্থা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ও আইনি অভিযোগের সুযোগের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হলেও, তার বাস্তবায়ন কার্যত শূন্য। গৃহকর্মীদের শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতাভুক্ত না করায় এই নীতি মেনে চলার জন্য নিয়োগকর্তার ওপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।
আরও পড়ুন: সিলেটে পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় মিলল গৃহকর্মীর লাশ
আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. নাজমা আক্তার বলেন, ‘কেবল আলাদা একটি নীতিই যথেষ্ট নয়। আইনগত বাধ্যবাধকতা ও প্রয়োগ ছাড়া কিছুই বদলাবে না।’
এ কারণে অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই গৃহকর্মকে শ্রম আইনের আওতায় আনতে দাবি জানিয়ে আসছেন।
বিপদের মুখে একটি প্রজন্ম
আইনি ও অর্থনৈতিক লড়াইয়ের বাইরেও এই অনিয়ন্ত্রিত খাত আরও গভীর প্রভাব ফেলে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
শিক্ষা ও সহায়তার সুযোগ না থাকায় হাজার হাজার শিশু অল্প বয়সেই শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে, যা দারিদ্র্যের চক্রকে আরও জটিল করে তোলে।
১৪ বছর বয়সী মুন্নি তৃতীয় শ্রেণি পড়ার পর স্কুল ছেড়েছে। সে বলে, ‘আমি শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি অন্যের সন্তান সামলাই, আর আমার নিজের বাচ্চা গ্রামে আমার মায়ের কাছে রয়েছে।’
সম্প্রতি ১৫ বছর বয়সী আরেক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয় তার কর্মস্থলের সামনে থেকে; এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।
তাছাড়া, বহু গৃহকর্মীর সন্তান বড় হয় তার মায়ের থেকে দূরে কোনো গ্রাম বা বস্তিতে। বিষয়টি আর্থিক কষ্টের পাশাপাশি গৃহকর্মীদের মানসিক চাপও বাড়ায়।
এমন প্রেক্ষাপটে দেশ যখন উন্নয়নের পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে, তখন প্রশ্ন থেকে যায়— কার উন্নয়ন?
যতদিন না প্রতিদিন লাখ লাখ পরিবারকে সচল রাখা গৃহকর্মীদের আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক মর্যাদার আওতায় আনা হবে, ততদিন এই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থেকে যাবে অসম্পূর্ণ ও কষ্টদায়ক।
১৬৩ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার হুমকির মুখে: আইটিইউসি
বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স–২০২৫ অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর সব মহাদেশেই শ্রমিক অধিকার চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী রাজনীতিবিদ ও তাদের ধনকুবের মিত্ররা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করছেন। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক এবং আর্জেন্টিনায় হাভিয়ের মিলেই ও এদুয়ার্দো ইউরনেকিয়ানের মতো ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণে লিপ্ত।
প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের সম্মিলিত অধিকার ধ্বংসে ট্রাম্প প্রশাসন বুলডোজার চালাচ্ছে এবং শ্রমবিরোধী ধনকুবেরদের সরকার পরিচালনায় প্রভাবশালী অবস্থানে বসিয়েছে।
সূচক অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন শ্রমিক অধিকারের পরিপন্থী বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের ৪৭ হাজার কর্মীর ইউনিয়ন সুরক্ষা বাতিল, ফেডারেল কর্মীদের একটি বড় অংশের নাগরিক সেবা সুরক্ষা প্রত্যাহারের চেষ্টা এবং জাতীয় শ্রমিক সম্পর্ক বোর্ডের একজন সদস্যকে বরখাস্ত করা, যাতে বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সদস্য না থাকে।
আইটিইউসির মহাসচিব লুস ট্রায়াঙ্গেল বলেন, প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। তার মতে, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল মধ্যস্থতা ও সমঝোতা সেবা সংস্থার কর্মীসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে এবং ফেডারেল লেবার রিলেশনস অথরিটির একজন সদস্যকেও বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অধিকাংশ ফেডারেল কর্মীর সম্মিলিত দর-কষাকষির অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ট্রায়াঙ্গেল বলেন, ‘অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতারা ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ করছেন। তাদের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার দমন। কারণ শ্রমিকরাই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক শক্তি এবং এ কারণে আমরাই তাদের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা।’
তিন মহাদেশে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনটি মহাদেশে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের পরিস্থিতি ২০১৪ সালে সূচক চালুর পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
১৫১টি দেশের মধ্যে মাত্র ৭টি দেশ শ্রমিক অধিকার সূচকে শীর্ষ রেটিং পেয়েছে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৮টি।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ৭২ শতাংশ দেশে শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ সীমিত, যা সূচক চালুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ রেকর্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৭ শতাংশ দেশে ধর্মঘটের অধিকার এবং ৮০ শতাংশ দেশে সম্মিলিত দর-কষাকষির অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
শ্রমিক অধিকারের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে—বাংলাদেশ, বেলারুশ, ইকুয়েডর, মিসর, সোয়াজিল্যান্ড, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, তিউনিসিয়া ও তুরস্ক।
শুধু অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ও ওমান—এই তিনটি দেশে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক অধিকার সূচকে উন্নতি হয়েছে।
লুস ট্রায়াঙ্গেল সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই রাজনীতিবিদদের পেছনে থাকা ধনকুবেররা এখন আর ছায়ায় নেই, তারা সামনে এসে বিশ্বের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নিচ্ছে। শ্রমিক অধিকার ধ্বংসের এটিই মূল চালিকাশক্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৪–৫ বছরে কোভিড-১৯ ও মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়েই চরমপন্থী দলগুলো ভোট টানছে, যদিও তারা শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো বাস্তব সমাধান দিচ্ছে না।’
ট্রায়াঙ্গেল বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনকুবেরের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে, অথচ এই সময়েই বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লাখ কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে অস্ত্রের পেছনে; অথচ অধিকাংশ দেশেই একটি ন্যায্য করব্যবস্থা নেই।’
তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে শ্রমজীবী মানুষদের আরও বেশি মজুরি, ভালো চাকরি, অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: মে দিবসের ১৩৫ বছর পরও আট শ্রমঘণ্টা কতটা যৌক্তিক?
১৮৫ দিন আগে
মে দিবসের ১৩৫ বছর পরও আট শ্রমঘণ্টা কতটা যৌক্তিক?
শ্রমঘণ্টা কমানোর দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হাজারো শ্রমিক রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাদের ‘আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম ও আট ঘণ্টা নিজের জন্য’—দাবিতে করা রক্তক্ষয়ী আন্দোলন পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়েই ১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শুধু তা-ই নয়, বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের সময়ের মর্যাদা দিতে আট কর্মঘণ্টাকেই আদর্শ হিসেবে ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে তাবৎ কর্মযজ্ঞ। তবে অতীতের তুলনায় প্রযুক্তি, উৎপাদনশীলতা ও কাজের ধরনে অভাবনীয় পরিবর্তন এলেও আজও বহু দেশে এই আট কর্মঘণ্টা সময়-কাঠামো অপরিবর্তিত থেকে গেছে। বর্তমান বিশ্বে যেখানে দূরবর্তী কাজ (রিমোট ওয়ার্ক), হাইব্রিড ওয়ার্ড মডেল, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির প্রভাব ক্রমবর্ধমান, সেখানে প্রশ্ন ওঠে— আট ঘণ্টার শ্রমঘণ্টা এখন কতটা যৌক্তিক?
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
১৮ শ’ শতকের শেষের দিকে শিল্প বিপ্লবের যুগে নতুন সৃষ্টিশীলতায় মেতে ওঠেন উৎপাদকরা। তাদের চিন্তা-চেতনায় তখন শুধু কাজ আর কাজ। ফলে দিনরাত এক করে পণ্য উৎপাদন ও হিসাবের খাতায় অঙ্কের সংখ্যা বাড়ানোয় বিভোর হয়ে যান শিল্পপতিরা। আলোস্বরূপ লাভের সবটুকু তারা পকেটে পুরে নিজেদের জীবন প্রাচুর্যে ভরিয়ে তুললেও পাদপ্রদীপের অন্ধকারের মতোই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে শিল্প-কারখানাগুলোর চালিকাশক্তি—শ্রমিকদের জীবন।
সেই সময় শ্রমিকদের জীবনের মূ্ল্যায়ন হতো না বললেই চলে। অনেক সময় দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টাও কাজ করতে হতো তাদের। ফলে একপর্যায়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমঘণ্টা সীমিত করার দাবি ওঠে।
ব্রিটেনে ১৮১৭ সালে সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েন প্রথম ‘আট ঘণ্টা শ্রম, আট ঘণ্টা বিনোদন ও আট ঘণ্টা বিশ্রাম’ স্লোগানটি দেন। তার দীর্ঘ সময় পর ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটের ঘটনার মধ্য দিয়ে এই দাবিটি সর্বজনীন রূপ নেয়।
এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস নামে সমাজতান্ত্রিক ও শ্রমিক সংগঠনের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে হে মার্কেট কাণ্ডে নিহতদের স্মরণে এবং আট ঘণ্টার কর্মদিবসের দাবিকে এগিয়ে নিতে প্রতি বছরের ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৮৯০ সালের ১ মে প্রথমবার ইউরোপ, আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিকরা এই দিনটি পালন করেন। এরপর থেকে মে দিবস শ্রমিকদের ঐক্য, সংগ্রাম ও অধিকারের প্রতীক হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের প্রথম কনভেনশনেই আট ঘণ্টা কর্মদিবসের পক্ষে সিলমোহর দেয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি
আইএলওর মতে, ৮ ঘণ্টার কর্মদিবস মানে একজন শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং কাজ ও জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য (ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স) বজায় রাখা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্থাটি স্বীকার করেছে যে, প্রযুক্তির প্রভাবে কাজের ধরনে পরিবর্তন এসেছে এবং সেই অনুযায়ী কাজের সময় নিয়েও পুনর্বিবেচনার জায়গা তৈরি হয়েছে।
সংস্থাটি ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভবিষ্যতের কর্মপরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে একটি রূপরেখা তুলে ধরে। ওয়ার্ক ফর অ্যা ব্রাইট ফিউচার শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে যে কর্মপরিকল্পনা দেখানো হয়, তাতে তিনটি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যত কর্মের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জনসংখ্যা, প্রযুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কাজের ধরন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে কর্মক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনাকে আরও নমনীয় করতে হবে।
সংস্থাটি তাই কর্মঘণ্টার পুনর্বিন্যাস, সপ্তাহে আরও কম দিন কাজের সুবিধা ও রিমোট ওয়ার্কের মতো নমনীয় কর্মব্যবস্থার পরামর্শ দেয়। উদাহরণ হিসেবে তারা নমনীয় কর্মঘণ্টা (ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং আওয়ারস), সঙ্কুচিত কর্মসপ্তাহ (কম্প্রেসড ওয়ার্কউইক) ও দূরবর্তী কর্মপদ্ধতির (টেলিওয়ার্ক) মতো কার্যকর মডেলের কথা তুলে ধরে, যা কাজ ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
কর্মঘণ্টা নিয়ে গবেষণা ও কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা
কর্মঘণ্টা কমানো হলে উৎপাদশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে এসব গবেষণা চমকপ্রদভাবে কর্মীবান্ধব ফল উপস্থাপন করেছে।
একাধিক গবেষণায় আইএলও দেখিয়েছে যে, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কর্মীর শুধু শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিই করে না, বরং এটি অর্থনৈতিকভাবেও খুব বেশি কার্যকর মডেল নয়।
সংস্থাটির ২০২২ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মঘণ্টা কমালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। সেইসঙ্গে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ফলে এটি তাদের ব্যক্তিজীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে।
২০২৩ সালে কর্মঘণ্টা ও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স নিয়ে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএলও। তাতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী বাস্তবতায় ‘ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক’ কর্মীদের মানসিক সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, যা সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক ফল বয়ে আনে।
সারা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত এই সংস্থাটি এমন একটি কর্মপরিবেশ চায়, যেখানে কাজ ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং কর্মীর স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও দক্ষতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আইএলওর এই দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডির বেটার লাইফ ইনডেক্স ও জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনেও প্রতিফলিত হয়।
ওইসিডির সূচকে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড, যেখানে কম কর্মঘণ্টা, পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া ও জীবনের সন্তুষ্টির মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়। অপরদিকে, ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচকে কেবল আয় নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমানের সঙ্গে কাজের পরিবেশকেও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফলে শ্রমঘণ্টা ও কাজের ধরন নিয়ে নতুন ভাবনার প্রয়োজনীয়তা এই উন্নয়ন সূচকগুলোতেও স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
আইএলও ২০২২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে যে নীতিমালা প্রকাশ করে, তাতেও এসব গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রতিফলিত হয়। এতে নেতিবাচক কর্মসংস্কৃতি, অতিরিক্ত সময় কাজ করা এবং কাজের চাপে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দিকগুলো তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সহায়তামূলক নীতি প্রণয়ন করা জরুরি বলেও সুপারিশ করা হয়।
আট ঘণ্টার কর্মদিবসের যৌক্তিকতা
বিশ্ব অর্থনীতির জটিলসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা একবিংশ শতকের দুই যুগ অতিক্রান্ত করে বর্তমান সময়ে উপনীত হয়েছে। ফলে দিনে আট ঘণ্টা কাজ করা একসময় প্রগতিশীল ধারণা থাকলেও এখন প্রগতি পেয়েছে নতুন ধারণা। নতুন অর্থনীতির এই প্রেক্ষাপটে এখন কর্মীদের মূল্যায়ন হয় কাজের মান, দক্ষতা ও ফলাফলের ভিত্তিতে। তাই কর্মঘণ্টার সংজ্ঞাকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজনীয়তা এসেছে।
২০২২ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বোস্টন কলেজ চার দিনের কর্মসপ্তাহের ওপর বিশ্বের বৃহত্তম গবেষণা পরিচালনা করে। ওই যৌথ গবেষণায় ৬১টি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২ হাজার ৯০০ কর্মী অংশ নেন। তাতে দেখা যায়, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা মানেই বেশি আউটপুট—এই ধারণা একেবারেই বুজরুকি।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, এতে অংশ নেওয়া কর্মীরা সপ্তাহে ৩২ থেকে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করেও সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা দেখিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে ৩২-৩৫ ঘণ্টাই শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল থাকেন বলে গবেষণায় উঠে আসে।
চলুন, গবেষণার ফলাফলের সংক্ষিপ্তসারের ওপর চোখ বোলানো যাক:
মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা: ৭১ শতাংশ কর্মীর বার্নআউটের মাত্রা কমেছে এবং ৩৯ শতাংশ কর্মী কম চাপ অনুভব করেছেন। সামগ্রিকভাবে, তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।
ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স: ৬০ শতাংশ কর্মীর জন্য পারিবারিক কাজের সমন্বয় সহজ হয়েছে এবং কর্মীদের ৬২ শতাংশ সামাজিক জীবনের সঙ্গে কাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছেন।
উৎপাদনশীলতা ও আয়: প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় গড়ে ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের আয়ে আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে দেখা যায়।
কর্মী ধরে রাখা: কর্মীদের প্রতিষ্ঠান ছাড়ার হার ৫৭ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিতির হারও কমেছে ৬৫ শতাংশ।
কর্মসংস্কৃতির পরিবর্তন: প্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘ ও অপ্রয়োজনীয় মিটিং কমানো সত্ত্বেও কর্মীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপায় খুঁজে নিয়েছেন।
গবেষণার শেষে, ৯২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান চার দিনের কর্মসপ্তাহের মডেলটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠান এটিকে স্থায়ী নীতি হিসেবে গ্রহণ করে।
বিশ্বজুড়ে কর্মঘণ্টা কমানোর উদাহরণ ও ফলাফল
গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরীক্ষামূলকভাবে কর্মঘণ্টা কমিয়েছে এবং তাতে নানা ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে:
আইসল্যান্ড: ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি বৃহৎ পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালায় আইসল্যান্ড, যেখানে প্রায় আড়াই হাজার সরকারি কর্মচারী সপ্তাহে চার দিন কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা তো কমে না-ই, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং ওয়ার্ক-লাইফ ভারসাম্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই প্রকল্পের সফলতার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশটির প্রায় ৮৬ শতাংশ কর্মক্ষেত্রেই সংক্ষিপ্ত কর্মঘণ্টা চালু হয়েছে।
জাপান: ২০১৯ সালে জাপানে কর্মীদের ওপর একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চালায় মাইক্রোসফট। এই কর্মসূচির আওতায় কর্মীদের সপ্তাহে চার দিন কাজ করতে দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, তাদের কর্মক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
স্পেন: স্পেন ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সপ্তাহে চার দিন কাজের প্রকল্প চালু করে, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে দৈনিক কর্মঘণ্টা কমানো হয়। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, কর্মীদের মধ্যে চাপ কমে, স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়া: অতিরিক্ত ওভারটাইম ও কর্মজীবনের ভারসাম্যহীনতার মতো সংকট মোকাবিলায় ২০১৮ সালে প্রথমবার কর্মঘণ্টা সীমিত করার পদক্ষেপ নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ৪০ ঘণ্টা নিয়মিত কাজ এবং অতিরিক্ত ১২ ঘণ্টা ওভারটাইমের সুযোগ রেখে সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৬৮ থেকে কমিয়ে ৫২ ঘণ্টা করে দেশটি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগটি দেশটির জনশক্তির কাছে সমাদৃত হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে তা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ৬৯ ঘণ্টা করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও ব্যাপক সমালোচনা ও গণআন্দোলনের মুখে প্রস্তাবটি স্থগিত করতে বাধ্য হয় সরকার।
এআইয়ের যুগে শ্রমঘণ্টা নিয়ে নতুন ভাবনা
প্রযুক্তি ও অটোমেশনের এই যুগে কাজের ধরনও অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই রূপান্তরকে আরও নাটকীয় গতি দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এখন অনেক পুনরাবৃত্তিমূলক, সময়সাপেক্ষ ও নিয়মিত কাজ নিমেষেই করে ফেলা যাচ্ছে, আগে যা ছিল শ্রম ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। শ্রমিকের কর্মপন্থায়ও তাই এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। কায়িক শ্রমের বদলে সৃজনশীল চিন্তা, জটিল সমস্যার সমাধান ও মানসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়ই হয়ে উঠছে কর্মীর মূল দায়িত্ব।
এমন বাস্তবতায় ‘ঘণ্টাভিত্তিক কাজ’ নয় বরং ‘ফলাফলভিত্তিক কাজ’ই আরও বেশি যৌক্তিক হয়ে উঠছে। আগে যেখানে নির্দিষ্ট সময় অফিসে উপস্থিত থাকাটা জরুরি ছিল, এখন সেখানে ক্লাউড প্রযুক্তি, রিমোট টুলস ও এআইয়ের সহযোগিতায় কর্মীরা যেকোনো স্থান থেকেই অপেক্ষাকৃত কম সময়ে অধিকতর কার্যকর ফল দিতে পারছেন।
এই প্রেক্ষাপটে ‘ফিক্সড টাইম’ ধারণার পরিবর্তে ‘ফ্লেক্সিবল টাইম’ ও ‘আউটপুট-ভিত্তিক মূল্যায়ন’ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর পাশাপাশি কর্মীদের মানসিক প্রশান্তি ও সৃজনশীলতা নিশ্চিত করার মতো নীতিমালা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে।
গবেষণা বলছে, প্রযুক্তি ব্যবহারে শ্রমঘণ্টা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেও উৎপাদনশীলতা একই রাখা অথবা বাড়ানো সম্ভব।
২০২২ সালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থা ডেলয়েটের ‘গ্লোবাল হিউম্যান ক্যাপিটাল ট্রেন্ডস’ শীর্ষক প্রতিবদেন বলা হয়, ‘ফ্লেক্সিবিলিটি ইজ দ্য নিউ ইনসেনটিভ’, অর্থাৎ সময়ের স্বাধীনতা কর্মীদের কাছে বেতন বা এ ধরনের সুবিধার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ
ওয়াশিংটন কনভেনশনে আইএলও দৈনিক সর্বোচ্চ কাজের সময় ৮ ঘণ্টা এবং সাপ্তাহিক ৪৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এই কনভেনশনে সই করলেও দেশের বহু খাতে এখনও এই নিয়ম মানা হয় না।
দেশের সরকারি চাকরিতে দৈনিক সর্বোচ্চ আট কর্মঘণ্টা এবং সপ্তাহে দুদিন ছুটির ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারিখাতের বেশিরভাগ জায়গায় এই নিয়ম যেন সোনার হরিণ।
এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক, নির্মাণ ও পরিবহন খাতের শ্রমিকদের দৈনিক কর্মঘণ্টার পরিসর আরও বেশি। বিশেষ করে বেতন, বোনাস, ওভারটাইমের দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তুলে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে পোশাকশ্রমিকদের অবরোধ-বিক্ষোভ প্রদর্শন এ দেশে নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইএলএস) ২০১৭ সালে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে অনেক কারখানাই আইএলও নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মান মেনে চলে না। দেশের শ্রমিকরা প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন, যেখানে পরিবহন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকেই ১৯ শতকের মতো দিনে ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করে থাকেন।
২০২৩ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ পোশাককর্মী দিনে গড়ে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করেন।
এ দেশে এখনও সপ্তাহে ৫ দিন কর্মদিবস পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি খাতে এই ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি খাতের অনেক ক্ষেত্রেই সপ্তাহে ৬ দিন কাজ চলে। ফলে, বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টা হ্রাসের যে ধারা তা থেকে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।
অবশ্য প্রযুক্তি খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি ‘ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক আওয়ার’-এর মতো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে, যা দেশের কর্ম পরিমণ্ডলে আশার সঞ্চার করেছে।
তবে দেশের শিল্পকারখানাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপনের অপ্রতুলতা, প্রযুক্তি পরিচালনায় দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাবের মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা বিজ্ঞানের এই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে শ্রমঘণ্টা কমিয়ে আনার পথে বড় বাধা।
করণীয় ও সুপারিশ
বৈশ্বিক শ্রম-অঙ্গন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেশের শ্রমবাজারের ইতিবাচক সংস্কারের জন্য কয়েকটি সুপারিশ দেওয়া যেতে পারে:
নীতি ও আইনগত সংস্কার: শ্রম আইনে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর ক্ষেত্রে কর্মীদের সম্মতি ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পরিশোধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ফলাফল-ভিত্তিক মূল্যায়ন: সময়ের বদলে কাজের গুণমান ও ফলাফলের ভিত্তিতে কর্মীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা সময়ের দাবি। বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর ও সৃজনশীল পেশাগুলোতে যেকোনো মুহূর্তেই এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
নমনীয় কর্মপরিবেশ: কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও কাজের প্রতি আগ্রহ বজায় রাখতে ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং আওয়ার, হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেল ও রিমোট ওয়ার্কের মতো সুযোগের সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
কর্মদিবস পুনর্বিন্যাস: সপ্তাহে পাঁচদিন অফিস চালু করতে সকল বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে কর্মদিবস কমিয়ে দৈনিক কর্মঘণ্টা পুনর্বিন্যাস করে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া যায়।
প্রযুক্তি ব্যবহার ও দক্ষতা উন্নয়ন: এআই ও অটোমেশনের যুগে শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও একাধিক বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে করে তারা পরিবর্তিত কর্মপরিবেশে টিকে থাকার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক কাজগুলোও এগিয়ে নিতে পারবেন।
নারী কর্মীদের জন্য সহায়ক নীতি: নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, ডে-কেয়ার সুবিধা, নমনীয় কর্মঘণ্টা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশগ্রহণ বাড়বে।
গবেষণায় জোর: জাতীয় পর্যায়ে কর্মঘণ্টা, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা হওয়া জরুরি। এর ফলে সামগ্রিকভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, সমস্যার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানও করা যাবে। এতে কর্মীর ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে, যা মোটের ওপর দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।
বহু বছর আগে শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সাফল্য ছিল আট ঘণ্টার কর্মদিবস। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এই সময়-কাঠামো নতুন করে বিন্যাসের বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে। এটি শুধু সময় কমানোর প্রশ্ন নয়, বরং কাজের মান, কর্মীর সুস্থতা ও জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্ন। আর নীতিনির্ধারক, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সম্মিলিত উদ্যোগেই এর যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব।
২১৮ দিন আগে
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের জরিমানার অংক বাড়ানো হয়েছে: আইনমন্ত্রী
মালিকপক্ষ শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন করলেই সাজা হিসেবে জরিমানা ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইএলও’র প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মালিকদের জরিমানা বাড়াতে আইএলওর পরামর্শ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, মালিকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, তাদের বিচার হচ্ছে, এখানে মালিকদের সাজা বাড়ানোর কথা ঠিক না।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দল অস্তিত্ব সংকটে থাকলে আবোল-তাবোল বলে: আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, বিষয়টা হচ্ছে, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন করলে তাদের সাজা বাড়ানোর বিষয়ে আইনে একটা ধারা আছে সেখানে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিলো। সেটা এখন ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। হয়তোবা সেটা ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে, তবে সেটা সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ করে, মালিক, শ্রমিক এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করেই করা হবে।
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে দর কষাকষির প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো দর কষাকষির মধ্যে নেই। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) হচ্ছে সারা বিশ্বের একটি সংগঠন। এখানে সব সময় শ্রমিকদের অধিকার যাতে রক্ষা হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সে বিষয়ে সব সময় তাদের বক্তব্য থাকে। তাদের সঙ্গে আমরা আজকে বসেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন আমরা এখন শ্রম আইন সংশোধন করছি। এটা সংশোধিত হয়েছিল গত সংসদে। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে যায়, সেখানে পৌঁছানোর পরে দেখা যায় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল, যে জন্য এটা আবার ফেরত আনা হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, শ্রম আইন যখন প্রণয়ন করা হয়, তখন বিশ্বের প্রাকটিসগুলো আমরা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। সেখানে আইএলওর একটি অংশগ্রহণ থাকে। আপনারা এও জানেন যে, আইএলওয়ের যে গর্ভনিং বডিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কিছু দেশ নালিশ করেছিল ২০১৯ সালে।
তারপর আমরা বহুবার আইএলওয়ের গর্ভনিং বডির মিটিংয়ে বলেছি, আমাদের শ্রমিকদের শুধু অধিকার রক্ষাই হয়নি, শ্রমিকদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রম আইনটাকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণভাবে সংশোধন না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা স্টেকহোল্ডার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে শোনাব।
তিনি বলেন, আজকের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৭ মে আইএলওর পরামর্শ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটিতে উপস্থাপন করবে। ১২ মের সভায় শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে আইএলওয়ের বক্তব্য বিষয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য রাখব।
আইএলওয়ের পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে ৩০ হাজারের অধিক শ্রম আছে যেসব কারখানায় সেখানে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বা সংগঠন করতে হলে ২০ শতাংশ সমর্থনের প্রয়োজন হতো। এখন সেটা কমিয়ে সব কারখানার জন্য ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমরা তাদের মেনে নিয়েছি। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানে সংঘ কিছু সার্বিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে সেটা করা হবে।
আইএলও তো ১০ শতাংশ থ্রেসোলের কথা বলেছিল সেটার কী হলো এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সেটা নিয়ে আজকে কোনো কথা হয়নি। তারা ১৫ শতাংশেই রাজি হয়েছেন। কারণ আমি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে বলেছি এখন ১৫ শতাংশ হবে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য ১০ শতাংশে যাওয়া।
আরও পড়ুন: আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয় অধিকার: আইনমন্ত্রী
যে কোনো কারখানায়ই শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করা যাবে: আইনমন্ত্রী
৫৮৩ দিন আগে
মহামারি-পরবর্তী বিশ্ব: বন্ধ হবে কি শ্রম অধিকার লঙ্ঘন?
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রম অধিকারগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বেছে নিয়েছিল কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ।
১৭৫২ দিন আগে