হত্যাকাণ্ড
জুলাই অভ্যুত্থানে ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে: ট্রাইব্যুনালে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫৪তম সাক্ষীর জবানবন্দিতে এ তথ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর (পিপিএম)।
আজ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেওয়া জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। এছাড়া ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সাক্ষীর জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, আমি তদন্তকালে পেয়েছি যে ২০২৪ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার যত গুম, খুন, জখম, অপহরণ ও নির্যাতন করেছে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকা। এছাড়া গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দল, মত ও প্রতিপক্ষের ওপর হত্যা, জঙ্গি নাটক, জোরপূর্বক অপহরণ, গুমসহ পাতানো নির্বাচনের মতো সবকিছুর মূলে ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যত রকমের ব্যবস্থা আছে তার সবই গ্রহণ করেছে। এর ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের আন্দোলনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
এ দিকে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দির অংশবিশেষ ও জব্দ করা ভিডিও বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেই জুলাই আন্দোলনে নৃশংসতা নিয়ে বিবিসি ও আল জাজিরায় প্রচারিত ভিডিওচিত্রও জব্দ তালিকার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। ঐতিহাসিক এই মামলায় এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা অনেক পরিবার। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন। অপর প্রসিকিউটররাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে রাজসাক্ষী হয়ে তিনি সাক্ষ্য দেন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার চলছে।
৬৫ দিন আগে
মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড খুবই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুতই হবে: আইন উপদেষ্টা
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
১৪৫ দিন আগে
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এই মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—মূল হত্যাকারী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে পুলিশের দুই পক্ষ।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাবি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও যে ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হন, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর সহপাঠীসহ অন্যান্য ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
রহস্য উদঘাটন করেই পুরস্কৃত পুলিশ
এদিকে, দ্রুততম সময়ে সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শাহবাগ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিমকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ থানার তদন্ত টিমের দ্রুত তৎপরতার কারণে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরুপ ও সামনে আরও ভালো কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্যই এ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।’
পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই (শুক্রবার) সাম্য হত্যায় জড়িত মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—সাম্য হত্যার যিনি মূলহোতা, অর্থাৎ যিনি ছুরিকাঘাত করেছেন, সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা সেই ব্যক্তি ও তার সব সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ অভিযোগ তুলে রবিবার (১৮ মে) আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। পরে খাওয়া শেষে একটি শিশুর হাতে থাকা ‘টিজার গান’ কাড়তে গিয়ে অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, ‘সেদিন আমাদের ইনস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে উদ্যানের গেটের দোকানগুলোতে যাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই এই বিপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালনোর চেষ্টা করে।’
‘এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। তাদের দিকে আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ তাদের একটি বাইকের সঙ্গে আমাদের (বাইকের) ধাক্কা লাগে। এরপরই ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’
আরও পড়ুন: ঢাবির সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৬ দিনের রিমান্ডে তিনজন
ওই ঘটনায় আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে কথা কাটাকাটি হয়, পরে তারা প্রভাব দেখাতে চাইলে আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে।’
‘১-২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার আকস্মিকতা সামলে দেখি, সাম্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তারপর চোখ যায় তার পায়ের দিকে। দেখি, তার ডান পা রক্তাক্ত। তার পরপরই ধুপ করে পড়ে যায় সে।’কথা বলতে গিয়ে এ সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে বায়েজিদের।
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য চাই, কিন্তু কেউ সে সময় এগিয়ে আসেনি। পরে একটি ছোট বাচ্চার সাহায্য নিয়ে ওকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
মূলত তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বড় ছুরি জাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর পায়ে আঘাত করেন। এর পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে করে তাদের ১০-১২ জনের একটি দল দ্রুত পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের আঘাতে সাম্যর ডান পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত হয়। কাটা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই মারা যায় সে।’
পরে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘উরুর পেছনে শরীরের একটি অন্যতম প্রধান রক্তনালী থাকে, যাকে বলা হয় ফিমোরাল আর্টারি। এটিকে বলতে পারেন দেহের প্রধান রক্তনালীর একটি শাখা রক্তনালী, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নিজের ধারণার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন (বুধবার) সকালে রাজধানীর পৃথক তিনটি স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদারকে (২৮) আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাদের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিদের তিনজনই। তারা আদালতকে বলেন, হয়রানি করার জন্য আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারদের অপরাধের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বায়েজিদের দাবি, তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন আমাদের আক্রমণ করে মারধর করেছেন। তবে মূল হত্যাকারীকে ধরা হয়নি, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইইআর-এর আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম রাফি হত্যাকারীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্ত তারা মূল হত্যাকারী নন। সাদা জামা কিংবা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাম্যকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই ব্যাক্তির গায়ের রঙ ফর্সা; তাকে দেখতে মোটেও উদ্বাস্তুর মতো নয়।’
একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘হত্যার দিন রাতে আমাদের ইনিস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা সাম্য ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
তার দাবি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাত এবং সোয়া ১২টার দিকে সাম্যকে মৃত ঘোষণা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থল অরক্ষিত ছিল। ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থলটি রক্ষা করে প্রমাণাদি বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিকে ধরতে পারল না, অথচ শাহবাগ থানার তদন্ত টিমকে পুরস্কৃত করা হলো। পুলিশের এই ধরনের প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’
পুলিশ কী বলছে
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের ধরতে আমরা শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তল্লাশি অভিযান শুরু করি। পরে শমরিতা হাসপাতাল থেকে একজন ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তৃতীয়জনকে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব!
এদিকে, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে জানালেও রমনা কালী মন্দির ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ নাকি তাদের কাছে আছে। অথচ শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমাকে পার্সোনালি (ব্যক্তিগতভাবে) ডেকে বলেছেন, পুলিশ মন্দিরের গেট ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি।’
আক্ষেপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমনা কালী মন্দির একটি ধর্মীয় সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ না পাওয়া ও বাংলা একাডেমির ফুটেজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি আছে।’
বায়েজিদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি কী পাওয়া যায়নি, সেটা এখন বলা যাবে না। আর এটি তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। আমি তো এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বায়েজিদ) সঙ্গে কথা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর দু-তিন দিন চলে গেছে। আমরা বসেছিলাম না, কাজ করেছি। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা করছি।’
পরে এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট হওয়ার যে দাবি, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আমরা অন্তত ১১টি আলামত জব্দ করেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যার বিচার
সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শনিবার (১৭ মে) ঢাবি প্রশাসন ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে উপাচার্যও সংহতি প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধীদের আগামীকাল (রবিবার) থেকে রিমান্ড শুরু হবে। দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে।’
উদ্যানের বর্তমান হালচাল
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটি স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তর করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাম্য হত্যার এক সপ্তাহও এখনও পেরোয়নি, অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণচাঞ্চল্য কমেনি একটুও। আঁধার নামলেও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অনেককে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ একান্তে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
এসবের মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চোখে পড়ে। টহলদল দেখলেই লোকজনকে সরে যেতে দেখা যায়, কিন্তু তারা চলে গেলে আবারও উদ্যানে ঢুকছিল মানুষ।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর টিএসসি-সংলগ্ন গেটে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন গেট গলে উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায় অনেককে। অনেককে আবার ছবির হাটের গেট এবং টিএসসি-সংলগ্ন গেটের দেওয়াল টপকেও উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত এক আনসার সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় রাতের শিফটে আমরা মাত্র ৬ জন। এই ছয়জনের পক্ষে এতো বড় উদ্যানে টহল দিয়ে এসব বিষয়ের সমাধান করা কষ্টসাধ্য।’
২০০ দিন আগে
রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর সুমন হত্যাকাণ্ডের হোতাসহ গ্রেপ্তার ২
রাজধানীর গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের হোতাসহ এই অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদ (৫৯) ও বেলাল (৪২)। এর মধ্যে বড় সাঈদকে পটুয়াখালীর চৌরাস্তা এলাকা থেকে এবং বেলালকে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-বনানী এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমনকে প্রকাশ্যে গুলি করে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী কয়েকজন সন্ত্রাসী। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
আরও পড়ুন: অ্যাডভোকেট আলিফ হত্যাকাণ্ড: চট্টগ্রামের ৬৩ আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর
মামলার পর হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব-১, সিপিসি-১-এর একটি আভিযানিক দল। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বড় সাঈদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেইসঙ্গে রাত পৌনে ৯টার দিকে গ্রেপ্তার হন তাদের দলের অপর সদস্য বেলাল।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে র্যাব জানিয়েছে, বড় সাঈদের মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে গত কয়েক বছর ধরে গুলশান-বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন মেহেদী নামের এক ব্যক্তি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে যান। তবে পলাতক অবস্থায়ও বড় সাঈদের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করতেন তিনি।
মেহেদী পালিয়ে গেলে অন্য একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের (রবিন গ্রুপ) হয়ে সুমন গুলশান-বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করেন। গুলশান এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে চাঁদাবাজি নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে সুমনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের কারণে গ্রুপের নেতা মেহেদীর নির্দেশে সাঈদ সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়।
ঘটনার ৮/১০ দিন আগে সুমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেলাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪/৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে একটি কিলার গ্রুপ গঠন করেন বড় সাঈদ। সে সময় থেকে সুমনের ওপর নজর রেখে আসছিল ওই গ্রুপটি।
ঘটনার দিন গুলশান এলাকায় গিয়ে সুমনকে গোপনে খুঁজতে থাকে তারা। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে পুলিশ প্লাজার সামনে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের সামনে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে গুলি করে তারা। গুলি খেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সুমনকে প্রতিপক্ষ আরও কয়েকবার গুলি করে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় তারা।
আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে হবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার
এই ঘটনার পর গা ঢাকা দেন বড় সাঈদ। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটার দিকে র্যাব-১ এর দলটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঝালকাঠি সদর থানার বাসিন্দা সাঈদকে পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন বেলাল।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
২৫৩ দিন আগে
হাবিবউল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইফুর খুন
রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন পুরানপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন হাবিবউল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া।
সোমবার (১০ মার্চ) ভোরের দিকে কোনো এক সময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উত্তরখানা থানার ডিউটি অফিসার হুমায়ুন কবির ইউএনবিকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে উত্তরখানা থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘তিনি ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন। গতকাল ভোর রাতে আনুমানিক পাঁচটায় কয়েকজন লোক এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এরপর তাকে উদ্ধার করে উত্তরা স্থানীয় লিংক ইউ হাসপাতাল ভর্তি করা হলে সেখানেই তিনি মারা যান।
সাইফুর রহমান ভুঁইয়ার লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ কমিশনার আহাম্মদ আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে ছুরিকাঘাত করে বাসার বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরে তিনি কোনোরকমে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের হয়ে এসে চীৎকার করতে থাকেন।’
‘ভোরে তেমন লোক ছিল না রাস্তায়। এরপরও একজন শুনতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন,’ বলেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা আহাম্মদ আলী বলেন, ওই বাসায় সাইফুর রহমান একাই থাকতেন। দুদিন আগে তার বাসায় একজন নারী ও একজন পুরুষ এসে উঠেছিলেন। পুলিশ তাদের খোঁজ করছে।আরও পড়ুন: উত্তরায় দম্পতিকে রামদা দিয়ে কোপানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ জানা গেছে, সাইফুর রহমান ভূঁইয়া পরিবার নিয়ে শান্তিনগর এলাকায় থাকতেন। তবে উত্তরার উত্তরখান থানা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় মাঝে মাঝে থাকতেন। সেই বাসায় একাই ছিলেন বলেও জানা গেছে।ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী রেজাউল রায়হান বলেন, সাইফুর রহমান স্যারকে কে বা কারা গতকাল ভোর রাতে (সেহেরির সময়) দেশী অস্ত্র দিয়ে হামলা করে হত্যা করেছে। তার গলায় ও মাথায় রামদার কোপের দাগ রয়েছে। হাসপাতালে শিক্ষকরা থাকলেও কেউ থানার সহযোগীতা নেয়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার পরিবর্তেনের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সবাইকে পদত্যাগ করিয়ে নতুন করে শিক্ষকদের পদন্নতি দেওয়া হয়। সেখানে সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে উপাধ্যক্ষ করা হয়েছিলো। তিনি (সাইফুর) একসময় বিএনপির মতদর্শী থাকলেও আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন সেমিনারে যাওয়ার কিছু ছবি ভাইরাল হয়। সেই ছবি দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। এ নিয়ে ওই কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দল ছিলো বলে জানা গেছে।
২৬৯ দিন আগে
হত্যাকাণ্ডের সুবিচার হতে হবে, অবিচার যেন না হয়: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে।
তিনি বলেন, ‘বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়।’
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাইয়ে শহীদ পরিবার ও আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাতটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামবো না।’
আরও পড়ুন: সম্পত্তিতে হামলা চালালে ফ্যাসিবাদীরা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের সুযোগ পাবে: প্রধান উপদেষ্টা
তিনি আরও বলেন, যারা অপরাধী তাদের আমরা পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসকল মানুষ অপরাধী নয়, তাদের মানুষ বানাবো। তাদের বলব, ‘ভাই, এ দেশটি আমরা একসঙ্গে গড়ি, এই দেশ আমরা একসঙ্গে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সে স্বপ্ন দেখ। এদেশ আমার একার না, তোমারও এ দেশ। তুমি এদেশের সন্তান। আমিও এ দেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছে। আমি তোমারে কষ্ট দেব না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একযোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাবো। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয়, তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’
২৯৭ দিন আগে
ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আ.লীগকে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হবে না: প্রেস সচিব
গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার (জানুয়ারি) সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা লেখেন।
সরকারে থাকাকালে আওয়ামী লীগের অপকর্মের বিবরণ দিয়ে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়।’
আরও পড়ুন: দেশের মানুষের কল্যাণেই ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও স্বাস্থ্যকর জায়াগায় নিতে হবে: প্রেস সচিব
‘যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে এবং যতক্ষণ না তাদের অন্যায়কারী নেতাকর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে এবং যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল?’
আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আজ সকালে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।’
আমাদের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত?—প্রশ্ন রেখে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ হয়েছেন কয়েকশ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।’
তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল কয়েকজন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের বরাতে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনামলে সরাসরি হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে: প্রেস সচিব
‘তিনি (হাসিনা) একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে তার ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।’
পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে?—প্রশ্ন রেখে তিনি আরও লিখেছেন, ‘কোনো দেশই জবাবদিহিতা ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশের জনগণ এই খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে।’
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস করে তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।’
৩০৯ দিন আগে
মেহেরপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার
মেহেরপুরে গাংনী পৌর যুবদলের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আলমগীর হোসেনকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই যুবদল নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) গাংনী পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেন।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- গাংনী পৌর যুবদলের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বিপ্লব ও ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি মফিকুল ইসলাম।
বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, আলমগীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌর যুবদলের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রবিউল ইসলাম বিপ্লবকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের পদসহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এর আগে, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবিউল ইসলাম বিপ্লব, ১ নম্বর ওয়ার্ড (বাঁশবাড়িয়া) যুবদলের সাবেক সভাপতি মফিকুল ইসলাম ও কোদাইলকাটি গ্রামের আলমগীর হোসেনকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২) সিপিসি-৩, মেহেরপুর ক্যাম্পের একটি দল গ্রেপ্তার করে। গতকাল (শুক্রবার) আদালতে নিলে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার মঈন উদ্দীনের ছেলে আলমগীর হোসেনকে গলাকেটে হত্যা করে সহড়াবাড়িয়া ইছাখালি মাঠের একটি গাছের নিচে ফেলে রাখা হয়।
আরও পড়ুন: শেরপুরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ২
নিহত আলমগীর হোসেনের কাছে একই গ্রামের মো. মফিকুল ইসলামের ২ লাখ টাকা পাওনা ছিল। প্রায় ৪ বছর আগে আলমগীর ঘাতক মফিকুলের কাছ থেকে এই টাকা ধার নেন। এরপর দেড় বছর আগে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) চলে যান। প্রায় ২ মাস আগে আলমগীর দেশে ফেরত এলে পাওনা টাকার প্রতিশোধ নিতেই মফিকুল তার বন্ধু যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম বিপ্লব ও কোদাইলকাটি গ্রামের আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন মিলে তাকে টাকা ধার দেওয়ার নাম করে সহড়বাড়িয়া-কামারখালী মাঠে নিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা মইন উদ্দীন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
৩৩৪ দিন আগে
‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আজকের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি’
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমাদের সর্বপ্রথম দাবি হলো, আজকের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করবেন না। কোনো অপরাধী ছাড় পাবেন না। আমরা তাদের এ আশ্বাসের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব এ কথা জানান।
মামুনুল হক বলেন, আমরা একেবারে স্পষ্ট যে এটি কোনো সংঘর্ষ ছিল না, বরং এটি ছিল এক পক্ষীয় হামলা। সাদপন্থিরা এখানে হামলা চালিয়ে নিরীহ লোকদের হতাহত, খুন ও অসংখ্য মানুষকে জখম করেছে।
আরও পড়ুন: যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের
তিনি আরও বলেন, আমরা এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জোরদারভাবে জানিয়েছি— এই হামলার আগে থেকে কারা কারা জড়িত সেই প্রমাণ ইতোমধ্যে জনসমক্ষে চলে এসেছে। কারা সেখানে গেট, বাউন্ডারি ও সীমানা প্রাচীর ভেঙে ঢুকছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিতেও সেগুলো রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিয়ে প্রথমে বেলা ১১টায় বৈঠকে বসেন। পরে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের সঙ্গে বসেন উপদেষ্টাদেরা।
৩৫১ দিন আগে
ইজতেমায় খুনিদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে দুইজন নিহতের ঘটনায় জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। খুনিদের কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশর পৌঁছেছেন ড. ইউনূস
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের পর মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিয়ে প্রথমে বেলা ১১টায় বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। পরে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আজকের মধ্যেই মামলা করবেন। প্রকৃত দোষীকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
বিশ্ব ইজতেমার তারিখ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। সবাইকে একত্রিত করতে হবে। আপনারাও চাচ্ছেন সবাই এক হতে। তারা যদি আবার আলোচনা করে একটা সমাধানে আসতে পারে। তারা আলোচনা করার পর আমরা একটা সিদ্ধান্ত দেব।
আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হলেও সরকার নেবে বলে জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছেন: রিজভী
৩৫১ দিন আগে