পুতিন
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা এগোলেও ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা জটিলতাই প্রধান অন্তরায়
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি উদ্যোগ জোরালো হওয়ার মাঝেই কূটনীতিকরা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত প্রাথমিক শান্তি প্রস্তাবে দুটি মুখ্য বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে—ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া এবং কিয়েভের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। এবার রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে এ সপ্তাহেই ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা মস্কো সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মাসে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের পর তা রাশিয়ার স্বার্থের অনুকূলে বলে কিয়েভ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে গত সপ্তাহে জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের এক দফা আলোচনার পর পরিকল্পনায় সংশোধন আনা হয়।
এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ‘কার্যকর করার মতো’। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির ‘সম্ভাব্য ভিত্তি’ বলে উল্লেখ করেন। আর গেল রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তিতে পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে এখনও অনেক পথ বাকি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ ইউক্রেন নিজেদের ভূমি ছাড়বে কিনা এবং ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে—এমন মূখ্য কিছু বিষয় নিয়ে এখনও কোনো মীমাংসা হয়নি।
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এবার মস্কো
ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। ফ্লোরিডার হ্যাল্যারেন্ড বিচের শেল বে ক্লাবে স্থানীয় সময় রবিবার (৩০ নভেম্বর) ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই আলোচনা।
বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান রুস্তেম উমেরভ, সেনাপ্রধান অ্যান্ড্রি নাটভ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সান্দার বেভজসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
বৈঠকের পর রুবিও জানান, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে, তবে যুদ্ধের অবসানে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরও অনেক কাজ বাকি। অপরদিকে, উমেরভ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশংসা করলেও আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি।
এবার মস্কোর আলোচকদের সঙ্গে মার্কিন আলোচকরা বৈঠকে বসবেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে রাশিয়ায় পাঠাবেন। এব বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার নিশ্চিত করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন।
এমনকি, এই চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি হলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
দুই পক্ষের কার কী অবস্থান
ট্রাম্পকে খুশি করতে কিয়েভ ও মস্কো উভয় পক্ষ থেকেই শান্তি পরিকল্পনার বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করেনি রাশিয়া। ফলে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো যে এখনো অনেক দূরের বিষয়, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে পুতিন বলেন, তিনি তার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল দখল করেছে, ইউক্রেন যদি সেখান থেকে তাদের সেনাবাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়, কেবল তখনই তিনি হামলা বন্ধ করবেন।
যদিও ওই অঞ্চলগুলোতে এখনও পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রাশিয়া, তারপরও পুতিনের দাবি, ‘যদি তারা (ইউক্রেনীয় বাহিনী) না সরে, আমরা জোর করে তা আদায় করব, ব্যাস।’
এর মধ্যে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, এটি ‘ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি’ হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত করতে হলে এ বিষয়ে ‘গুরুতর আলোচনা’ প্রয়োজন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা না বলে কেবল ট্রাম্পকে তার (শান্তি স্থাপন) প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি চান, এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপের যুক্ত থাকুক, কারণ এতে ইউরোপের স্বার্থও সম্পৃক্ত। এ ছাড়া ইউক্রেনের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় রাশিয়ার কয়েকটি মূল দাবি মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, ইউক্রেন যেগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে খারিজ করে দেয়। দাবিগুলো ছিল, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া এখনও পুরোপুরি দখল করেনি, সেগুলোও রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে ইত্যাদি।
জেলেনস্কি বারবার বলেছেন যে ভূখণ্ড ত্যাগ করা কোনো বিকল্প হতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ইয়েরমাকও দ্য আটলান্টিককে বলেন, জেলেনস্কি ভূখণ্ড ছাড়ার শর্তে কোনো চুক্তিতে সই করবেন না।
জেলেনস্কির মতে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে সহজ পথ হলো দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশও গত বছর বলেছিল যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভূক্তির বিকল্প নেই। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না।
ওদিকে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পশ্চিমা শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে না দেওয়াই ছিল চলমান এই হামলা শুরুর মূল উদ্দেশ্য।
সময় পুতিনের পক্ষে
এদিকে, নিজ দেশেই সম্প্রতি রাজনৈতিক চাপে পড়েছেন জেলেনস্কি। ইয়েরমাকের পদত্যাগ জেলেনস্কির জন্য বড় ধাক্কা, যদিও দুজনের কারো বিরুদ্ধেই কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া চায় ইউক্রেন ভুল করুক। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমাদের কাজ চলমান, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। একে শেষ পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়ার অধিকার আমাদের নেই।
ইয়েরমাকের পদত্যাগে সাময়িক চাপে পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ইউক্রেনের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন দেশটির বেসরকারি দুর্নীতি দমন কেন্দ্রের অ্যাক্টিভিস্ট ভ্যালেরিয়া রাডচেঙ্কো। তার মতে, এর ফলে সরকারের মধ্যে একটি ‘সংস্কারের সুযোগ’ তৈরি হবে।
তবে, এর মধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তা নিয়ে গর্ব করছেন পুতিন। এ বিষয়ে কার্নেগি রাশিয়া ও ইউরেশিয়া সেন্টারের তাতিয়ানা স্তানোভায়া এক্স-এ লিখেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তিনি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই তিনি (পুতিন) কিয়েভের পরাজয় মেনে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
স্তানোভায়া বলেছেন, ‘আমেরিকা যদি সমস্যা সমাধানের এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করে, তাহলে ভালো। আর যদি না করে, সেক্ষেত্রে তিনি (পুতিন) জানেন কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এটিই হচ্ছে ক্রেমলিনের বর্তমান যুক্তি।’
ধাঁধায় ইউরোপ
ইউক্রেন ইস্যুতে এ সপ্তাহে বেশ কিছু বৈঠক করছে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সোমবার প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে, ব্রাসেলসে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেনিস শ্মিহালের সঙ্গে বৈঠক করছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। একইসঙ্গে সামরিক সহায়তা ও নিজেদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ ইউক্রেনের আলোচনা করছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আবারও ব্রাসেলসে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন।
ইইউয়ের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বেলজিয়ামে জব্দ করা রুশ সম্পদের কী হবে? ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় অবশ্য এগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন এসব তহবিল ইউক্রেনকে সাহায্য করতে ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপরও চাপ বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু খোদ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী জব্দ করা এই সম্পদ ইউক্রেনের জন্য ব্যবহারের পক্ষে নন। এর আইনি বৈধতা, ইইউয়ের ওপর প্রভাব এবং রাশিয়ার প্রতিশোধের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ফলে যে নতুন কূটনীতি শুরু হয়েছে, তা ইউরোপের দুর্বলতাকে ‘নিদারুণভাবে’ উন্মোচিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করে গোল্ড-ডেভিস বলেন, (ইউক্রেন) যুদ্ধ কূটনীতিতে প্রায় উপেক্ষিত। খসড়া প্রস্তাবে কিছু সংশোধন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি তারা।’
২ দিন আগে
শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই শীর্ষ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের নেতারা বৈঠকে বসেন, যেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর উপায়।
নিরাপত্তা নিয়ে কী ধরনের নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হবে। প্রায় ৩০টি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, যাদের বলা হচ্ছে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু সহায়তা করবে, তবে কীভাবে সেটি করবে তা পরিষ্কার নয়।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার জেলেনস্কি বলেন, এই সহায়তা নানা রূপে আসতে পারে, যা হতে পারে সরাসরি সৈন্য পাঠানো, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ, আকাশসীমা ও কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা দেওয়া, এমনকি শুধু আর্থিক সহায়তাও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ইউরোপের কোন কোন দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত?
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আশ্বাস রক্ষার অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠাতে রাজি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ‘আমাদের ইউক্রেনকে স্থলে সহযোগিতা করতে হবে।’ তবে জার্মানি এ বিষয়ে আরও সন্দিহান।
বিষয়টি নিয়ে এখনো অনেক কিছু নির্ধারণ করা বাকি। তার মধ্যে পশ্চিমা সেনারা কি যুদ্ধবিরতি লাইনে অবস্থান করবে? নাকি শুধু কিয়েভ ও লভিভের মতো বড় শহরে প্রশিক্ষণ দেবে? কিংবা রুশ হামলার মুখে পড়লে তাদের কার্যপদ্ধতি কী হবে? ইত্যাদি অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইউরোপের নেতৃত্বাধীন একটি শান্তিরক্ষা অভিযান সমন্বয় করবেন।
সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির পাশে বসে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক সহায়তা আসবে।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মূল দায়িত্ব ইউরোপের দেশগুলোকেই নিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারাই সামনের সারির নিরাপত্তা রক্ষক, কারণ তারা সেখানেই রয়েছে। তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে চায় ইউক্রেন। কিয়েভ মনে করে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হতে পারে এই চুক্তি। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের সম্ভাবনাকে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন তিনি, অথচ এটিই ইউক্রেনে ভবিষ্যত রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ হতে পারত বলে মনে করে কিয়েভ।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
আবার ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা অভিযানে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সেনা পাঠাবে— এমন সম্ভাবনাও নেই। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বাস্তবসম্মত একটি বিকল্প হতে পারে, পেন্টাগন প্রস্তাবিত আকাশ প্রতিরক্ষা বা ‘স্কাই শিল্ড’ উদ্যোগে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেন, বিশেষ করে কিয়েভ শহরের ওপর আকাশ প্রতিরক্ষা জোন থাকবে, যা ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
রাশিয়া কী বলছে?
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, আলাস্কার বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন সম্মত হয়েছেন যে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, বিষয়টি ন্যাটোর আওতার বাইরে থাকলেও তা কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর সমতুল্য হবে, যেখানে একটি দেশের ওপর আক্রমণকে সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে ধরা হবে।
তবে উইটকফের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে রাশিয়ার বক্তব্য মেলে না। ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা সৈন্যদের ইউক্রেনে উপস্থিতির ঘোর বিরোধী রাশিয়া। যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে (ইউক্রেনে) শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, রাশিয়ার অস্তিত্বগত নিরাপত্তা সংকটের দোহাই দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পুরোটাই দাবি করছেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও ইউক্রেনের কাঙ্ক্ষিত যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, সেগুলোরও দখল চান রুশ পেসিডেন্ট।
এর পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ ও নাৎসিকরণ’ প্রক্রিয়ার স্থগিত চান। অর্থাৎ, পুতিন চান, জেলেনস্কিকে অপসারণ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার কঠোরভাবে সীমিত করা হোক।
আপাতদৃষ্টিতে ইউক্রেনে শান্তি পুনর্স্থাপনে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় অগ্রগতি দেখা গেলেও মৌলিক অবস্থান থেকে সরেনি রাশিয়া। পুতিন এখনও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন না, এমনকি যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিতও দেননি তিনি। এত কিছুর মধ্যেও রুশ বোমাবর্ষণ থামেনি, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইতিহাস কী বলে?
এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ছেড়ে দিয়েছিল। বুদাপেস্ট স্মারকলিপির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ইউক্রেনের ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা’ ও ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ রক্ষা করবে এবং ‘বল প্রয়োগ ও হুমকি’ থেকে বিরত থাকবে।
সেই সময় অনেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিক মনে করেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়লে দেশটি রুশ হামলার ঝুঁকিতে পড়বে, কিন্তু ক্লিনটন প্রশাসনের এ বিষয়ে জোরাজুরিতে তা বাস্তবায়িত হয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের মে মাসে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা এক বন্ধুত্ব চুক্তি সই করেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী সীমান্তের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। চুক্তির অংশ হিসেবে কিয়েভ তার নৌবাহিনীর বেশিরভাগ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং ২০ বছরের জন্য সেভাস্তোপোল নৌঘাঁটি মস্কোকে ইজারা দেয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এত কিছুর পরও রুশ আগ্রাসন থামানো যায়নি। ২০১৪ সালে সেনা মোতায়েন করে ক্রিমিয়া দখল ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় ক্রেমলিন। এখন পুতিন বলছেন, পুরো ইউক্রেনই ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ।
তাই অতীতের ভঙ্গ প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন এবার আরও স্পষ্ট নিশ্চয়তা চাইবে, তা বলাই বাহুল্য।
১০৬ দিন আগে
পুতিনের সঙ্গে বসতে রাশিয়া যাচ্ছেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন তথ্য জানিয়েছেন।
আব্বাস আরাগচি বলেন, রবিবার (২২ জুন) দিন শেষে তিনি মস্কোর উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। আমাদের মধ্যকার কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে। আমাদের অবস্থান নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা হয় এবং আমাদের অবস্থান নিয়ে সমন্বয় করি।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো চূড়ান্ত সীমা নেই, যেটা যুক্তরাষ্ট্র লঙ্ঘন করেনি। সর্বশেষ তারা যেটা করেছে, সেটা খুবই বিপজ্জনক। আমাদের পরমাণু স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে তারা আরেকটি বড় চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।’
আরও পড়ুন: ওভালকাণ্ড: পুতিনের পৌষমাস, জেলেনস্কির সর্বনাশ!
এদিকে ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বাহিনীর বড় ধরনের হামলা চালানোর পর ইসরায়েলে প্রায় ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিব, হাইফাসহ ইসরায়েলের অন্তত ১০টি এলাকায় আঘাত হেনেছে। আর এতে ৮৬ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, রবিবার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে ইরান থেকে ছোড়া প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, এ সময় ইসরায়েলজুড়ে ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
১৬৫ দিন আগে
যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য তুরস্কে জেলেনস্কি, যাননি পুতিন
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অবসানে কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করতে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাওয়ার পর—তা পুনরায় শুরুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলেনস্কি এই সফর করছেন।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত।
বুধবার(১৪ মে) জেলেনস্কি বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়া থেকে কে আসবেন—তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেব—ইউক্রেনের কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের বরাতে তাদের কাছ থেকে পাওয়া ইঙ্গিতগুলো বিশ্বসযোগ্য নয়।’
তবে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছে, বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন না। তবে, রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্টের সহকারী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
আনাতোলিয়ায় ন্যাটোর অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনা আশা করি আমাদের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
এরআগে ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকে উভয়পক্ষ যুদ্ধ বন্ধে একমত হতে পারেননি।
এবারের শান্তি আলোচনায় পুতিনের যোগ না দেওয়াতে পশ্চিমারা তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। ক্রেমলিন সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান প্রচেষ্টায় আগ্রহী নয় বলেও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
২০৩ দিন আগে
পুতিন কি রাজি হবেন এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে?
যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেন সম্মতি দেওয়ার পর এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাশিয়া। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী যুদ্ধবিরতিতে সায় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সুযোগটি কাজে লাগাবেন, নাকি প্রত্যাখ্যান করবেন?
সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এক মাসের একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। এরপরে রাশিয়াকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে জানিয়েছেন, শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেনকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এরইমধ্যে ইউক্রেন এ প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে উল্লেখ করে রুবিও বলেন, যদি রাশিয়াও শান্তির হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এতদিনের চলমান যুদ্ধ বন্ধ হতে খুব বেশি দেরি নেই। কিন্তু রাশিয়া যদি এ প্রস্তাব মেনে না নেয়, তাহলে শান্তি আলোচনায় অনিশ্চয়তা দেখা দেবে বলে মত দেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বিরতিতে রাশিয়ার রাজি হওয়া না-হওয়া বহুমুখী হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করছে।
চলতি বছর জানুয়ারি অবধি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাফ জানিয়ে এসেছেন, কোনো ধরনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগ্রহ তার নেই। যদি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতেই হয়, সেটি হতে হবে স্থায়ী সমাধান।
বর্তমানে যুদ্ধে অনেকটাই কোণঠাসা ইউক্রেন, রাশিয়ার সেনারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া পুতিন বারংবার বলেছেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন। এই পরিস্তিতিতে পুতিন কি ট্রাম্পের মন রাখবেন, নাকি যুদ্ধ চালিয়ে ইউক্রেনে জয়ের পথেই হাঁটবেন তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
মূলত, জানুয়ারির ২০ তারিখ ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারি পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একান্ত ফোনালাপ এবং এরপর একের পর এক রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিনিদের বৈঠকই চলমান যুদ্ধের আশু সুরাহার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন কূটনীতিবিদরা।
তবে রাশিয়ার পদক্ষেপ এখনও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা। সৌদিতে বৈঠকের পর বেশ কৌশলের সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত না জেনে কোনো মন্তব্য জানানো হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না বলেই রাশিয়া এমন কৌশলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন, চলছে প্রস্তুতি
রুশ-মার্কিনিদের সাপে-নেউলের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ট্রাম্প-পুতিন সখ্য কিন্তু বিশ্ব পাড়ায় মোটেই অজানা নয়। তবে এই সখ্যই সব নয়: এর বাইরে আছে ইউক্রেনের খনিজের প্রতি ট্রাম্পের চোখ আর কিয়েভের ভূমির ওপর পুতিনের লোভ।
শেষ কদিনের যুদ্ধে ভালোই এগিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর কুরুস্কের বেশিরভাগ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে। দর কষাকষিতে কুরুস্ককে নিজেদের হাতে রাখতে চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে দিনদিন তা কঠিন হয়ে উঠছে তার সৈন্যবাহিনীর জন্য।
আবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্স এবং খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডা এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করার অভিযোগ নিয়ে আমেরিকা ত্যাগের মতো ঘটনা এতদিন জেলেনস্কিকে ভালোই ভুগিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, শান্তি চুক্তির প্রতি যতদিন না আগ্রহ দেখাবে ইউক্রেন, ততদিন বন্ধ থাকবে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিতে হচ্ছে জেলেনস্কির।
কিন্তু পুতিন কেন আপস করবে? বাইডেন প্রশাসনের সময়ে হাজারখানেক নিষেধাজ্ঞার ভারেও নতজানু না হওয়া পুতিন কেন এত সহজে রাজি হবে যুদ্ধবিরতিতে?
এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেশকভের সাক্ষাৎকারে। পেশকভ জানিয়েছেন, জেদ্দার আলোচনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করছে মস্কো। এখনি হলফ করে কিছু বলা না গেলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আরেক দফা ফোনালাপের পর রাশিয়া নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে।
প্রথমবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে রাশিয়ার ইতোমধ্যে দখলকৃত ইউক্রেনের ভূমি নিয়ে ফয়সালা, কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান করতে না দেওয়ার ওয়াদা এবং পূর্ব-মধ্য ইউরোপে ন্যাটোর হম্বিতম্বি কমিয়ে আনার ব্যাপারে পুতিন জোরালো দাবি তুলেছেন বলে জানা যায়।
চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আবারও পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন তিনি। বার্তাসংস্থা এপির নিশ্চিত করা এই তথ্য থেকেই চূড়ান্ত দর কষাকষির আভাস পাচ্ছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার তার বক্তব্যে আভাস দিয়েছেন, এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। এতদিন ইউক্রেন ছাড় দিতে রাজি না থাকলেও এবার বাধ্য হয়েই আপসের পথে হাঁটতে হতে পারে দেশটি।
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিয়া গ্রাশ্চিনেকভ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাদা চোখে এই চুক্তিতে কারও বিজয় হয়নি মনে হলেও রাশিয়া কৌশলগত বিজয় নিশ্চিত করেই চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দেবে।’
রাশিয়া কৌশলগত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা উঠে এসেছে মস্কোর সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও। বলা হয়েছে, রুশ প্রতিনিধিরা জেদ্দায় না থাকলেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান জন র্যাটক্লিফ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রুশ প্রশাসনের সঙ্গে।
উপরন্তু ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ গত মাসেও রাশিয়ায় পুতিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন এবং আগামীতেও তার রাশিয়া সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো তা হলো, এই পুরো আলোচনায় ইউরোপকে তোয়াক্কাই করছে না ট্রাম্প প্রশাসন।
ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ঘটনায় ইতোমধ্যে দুই ভূখণ্ডের সম্পর্ক অনেকটাই শীতল। ন্যাটো নিয়েও ট্রাম্প খুশি না; শপথ নিয়েই দাবি জানিয়েছেন ন্যাটোর বাজেট বাড়ানোর। আবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও তার উপদেষ্টা ইলন মাস্কও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ওভালকাণ্ড: পুতিনের পৌষমাস, জেলেনস্কির সর্বনাশ!
এদিকে ডেনমার্কের থেকে গ্রিনল্যান্ড আদায় চেষ্টার ইস্যুতেও ইউরোপের সঙ্গে কয়েক দফা মন কষাকষি হয়েছে ট্রাম্পের। সব মিলিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ভেঙে রাশিয়ামুখী হওয়াকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কংগ্রেস সদস্য ভালো চোখে না দেখলেও, এটাই এখন বাস্তব।
এই বাস্তবতার ভিতকে পুঁজি করেই রুশ কূটনৈতিক বিশ্লেষক স্যামুয়েল শ্যারাপ বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে বর্তমানে মস্কোর সম্পর্ক যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যকার উষ্ণতার বিচার-বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে তা মস্কো মেনে নিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
শুরুতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের পথ রচিত হলেও পরবর্তীতে হয়তো এই এক মাসের যুদ্ধবিরতিই স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের সূচনা করবে এবং তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাতের অবসান হবে বলে মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
২৬৬ দিন আগে
ওভালকাণ্ড: পুতিনের পৌষমাস, জেলেনস্কির সর্বনাশ!
কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ—বাংলা ভাষার অতি প্রচলিত এই প্রবাদটির অর্থ এই ভাষাভাষী মোটামুটি সবাই জানে, যার অর্থ— এক পক্ষ সমস্যায় পড়লে অন্য পক্ষের সুবিধা হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির অপদস্ত হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের স্বার্থ ব্যাখ্যায় এই প্রবাদটিই হয়ে উঠেছে অতি প্রাসঙ্গিক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। ওই ঘটনার পর রুশ মিডিয়াগুলোকে নানাভাবে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
অবশ্য দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেন নিয়ে নিজের যে অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প, তাতে এরকম কিছু যে ঘটতে চলেছে—তা অনেকটাই ছিল অনুমেয়।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের এই বিবাদ রাশিয়ার জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। একদিকে, এতদিন ধরে যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে ও সামরিক সহায়তায় ইউক্রেন দেশটির আক্রমণ প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা করে আসছিল, ইউক্রেনের মাথা ওপর থেকে সহায়তার সেই হাত সরে গিয়েছে। অন্যদিকে, খনিজ চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বাগিয়ে নিতে কিয়েভের যে আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে হলেও জ্বলছিল, তাও নিভে গেছে দপ করে।
আরও পড়ুন: মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন, চলছে প্রস্তুতি
তাই রাশিয়া এবং দেশটির গণমাধ্যগুলো ট্রাম্পের প্রশংসায় হয়ে উঠেছে পঞ্চমুখ, ট্রাম্পের মাধ্যমে তারাই যেন এক হাত নিয়েছে জেলেনস্কিকে!
ট্রাম্প–জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই উন্মাদের (জেলেনস্কি) মুখের ওপর একদম সত্যি কথা বলেছেন যে, কিয়েভের শাসনকাঠামো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে খেলছে।’
ট্রাম্পের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) ঠিক কাজই করেছেন। তবে এটিই যথেষ্ট নয়, কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়াও বন্ধ করতে হবে।’
ইউক্রেনের মিত্র দেশ পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করায় বেশ খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল মস্কো।
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প ইউক্রেনে ইউরোপের শান্তিরক্ষীদের সহায়তা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন; এতে চিন্তা বাড়ছিল মস্কোতে। তবে শুক্রবারের ওভাল অফিসে যে কাণ্ড হলো, তাতে নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ক্রেমলিন।
ওভাল অফিসের ঘটনার পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘ট্রাম্প ও ভ্যান্স যেভাবে এই জঘন্য ব্যক্তিকে (জেলেনস্কি) আঘাত করা থেকে নিজেদের বিরত রাখলেন, সেটি সংযম প্রদর্শনের এক অলৌকিক ঘটনা।’
এ ঘটনায় ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে কিছু না বললেও রুশ প্রেসিডেন্ট যে খুশি হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছে, ‘নিঃসন্দেহে প্রেসিডেন্ট এই তামাশা উপভোগ করেছেন। তিনি এখন ইউক্রেন থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন।’
এছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিন ফোনালাপ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওই সূত্র। ফোনালাপে (ইউক্রেনের ক্ষমতায়) জেলেনস্কির বিকল্প নিয়ে কথা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: শূন্যহাতে ফিরলেও প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
সম্প্রতি জেলেনস্কির ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকার বৈধতা নিয়ে একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে।
মূলত জেলেনস্কিকে সরিয়ে রুশ-সমর্থিত কাউকে ইউক্রেনের মসনদে বসানোর বাসনা পুতিনের নতুন নয়। বেশ আগে থেকেই তিনি এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে এসেছেন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রই এই ধারণার অন্যতম প্রধান বিরোধী হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও আশ্চর্যজনকভাবে এবার পুতিনের সুরে সুর মেলাতে দেখা গেছে ট্রাম্পকে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে শিগগিরই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।
সে সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তি নিশ্চিত করতে হয় তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, অথবা তার দেশকে হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে ট্রাম্প আগেই যেহেতু প্রশ্ন তুলেছেন, তাই শুক্রবারের ঘটনা পুতিনকে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে অব্যশই সুবিধা দেবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য অ্যালেক্সি পুশকভ এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, হোয়াইট হাউসও এখন জেলেনস্কিকে সরিয়ে ইউক্রেনের ক্ষমতায় নতুন কাউকে বসানো নিয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করবে বলে তার বিশ্বাস।
তবে ট্রাম্প-জেলেনস্কি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়কেই চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে না দেখে রাশিয়াকে কৌশলের সঙ্গে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ফিওদর লুকানভ। ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত স্বভাবের কারণে তিনি এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভর্ৎসনার শিকার হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার হাত সরিয়ে নিলেও ইউক্রেনকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার।
এর আগে, জেলেনস্কির প্রশংসা করে এক এক্স পোস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন লিখেছিলেন, ‘আপনার এই ব্যক্তিত্ব ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মানিত করেছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা ও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন জেলেনস্কি
জেলেনস্কিকে সাহসী ও নির্ভীক থাকতে অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি একা নন, আমরা রয়েছি আপনার পাশে।’
তবে শুধু আশ্বাস নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় এখন ইউরোপ কিয়েভকে ঠিক কতটা সহায়তা দেবে কিংবা ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি না—এর ওপর নির্ভর করছে ইউক্রেনের ভাগ্য।
অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের হাত ধরে ইউক্রেন জয় পাবে না কি যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেন জয় করবে রাশিয়া—তা-ই এখন দেখার অপেক্ষা।
২৭৭ দিন আগে
যুদ্ধ বন্ধে এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প-পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সখ্যতা বিশ্ব রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। এই সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে এক দিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব—নির্বাচনী প্রচারণায় এমন কথাও বলেছিলেন ট্রাম্প। শপথের পরপরই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া।
এদিকেও ট্রাম্পও বলেন, পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের আয়োজন চলছে।
তবে কখন এই বৈঠক হবে, সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। ফ্লোরিডায় মার-আ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি (পুতিন) বসতে চেয়েছেন, আমরা আয়োজন করছি।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা দেশগুলো ঠেকাতে পারবে না: পুতিন
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং আগ্রহীও বটে পুতিন। আলোচনার টেবিলে বসতে কোনো ধরণের শর্ত আরোপ করা হবে না। এটি হবে নিঃশর্ত এবং পরিচ্ছন্ন আলোচনা।’
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০ জানুয়ারি শপথের পর পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ট্রাম্প। সেখানে মস্কো-কিয়েভ সংঘাত নিরসনে কার্যকরী আলোচনা করা হবে।
সমস্যা সমাধানে পুতিন আগ্রহী জানিয়ে পেশকভ বলেন, দুপক্ষের সদিচ্ছাই এ আলোচনা হবে। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলমান সমস্যা নিরসনের পথ বের হয়ে আসবে।
এর আগে চলতি সপ্তাহে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, শপথের ৬ মাসের মধ্যে মস্কো ও কিয়েভকে শান্তি চুক্তিতে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিরসনে ট্রাম্পের বিশেষ সহকারী যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কিলোগ বলেন, ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনামাফিক এগোতে পারলে যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হবে।
যদিও কোন প্রক্রিয়ায় যুদ্ধ বন্ধ হবে—তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা জানাননি ট্রাম্প। এদিকে পুতিনের ভাষ্য, রাশিয়ার দখল করা ভূমি থেকে ইউক্রেন নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নিলে ও ন্যাটো যুদ্ধে প্রভাব খাটানো বন্ধ করলে ত্বরিৎ গতিতে সমাধান সম্ভব।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ‘প্রস্তুত’ পুতিন
৩২৭ দিন আগে
ক্রেমলিনের শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু পশ্চিমা ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে, তবে পুতিনকে থামানো যায়নি
ক্রেমলিনের প্রধান শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা ক্ষোভের প্রতি কান দিচ্ছেন না। কারণ তিনি আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার ২৪ বছরের শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং রাশিয়াজুড়ে পুলিশ যেকোনো প্রতিবাদ প্রচেষ্টা দমন করছে।
নাভালনির মৃত্যু ও ইউক্রেনে ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা কংগ্রেসে আটকে রয়েছে এবং ইউরোপে ন্যাটো মিত্ররা শূন্যস্থান পূরণের জন্য লড়াই করছে। তাই অনেকে ভাবছেন যে পশ্চিমারা ক্রেমলিনের নির্মম নেতাকে থামাতে আসলে কী করতে পারবে? কারণ এর আগে একাধিক বার তাকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
লন্ডনভিত্তিক মায়াক ইন্টেলিজেন্স কনসালটেন্সি ফার্মের প্রধান মার্ক গালিওটি ইউটিউব মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো বড় মূল্য নেই।’ কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোর একটি দেশ হলো রাশিয়া।
গালিওত্তি বলেন, এর পরিবর্তে পশ্চিমাদের উচিত নাভালনির মিত্রদের সঙ্গে কাজ করা এবং ক্রেমলিনের প্রচারণা মোকাবিলায় সাধারণ রুশদের তথ্য চ্যানেলে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করা।
নাভালনির মৃত্যুকে পুতিনের 'হাইব্রিড কর্তৃত্ববাদ' থেকে 'নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক স্বৈরতন্ত্র'তে রূপান্তরের আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গালিওত্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোরদার করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী চার মাসের ভয়াবহ লড়াইয়ের পরে ইউক্রেনীয় সেনাদের মূল পূর্বাঞ্চলীয় শক্ত ঘাঁটি আভদিভকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। মিত্ররা রাশিয়ার কাছে যুদ্ধের ব্যয় বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে যাতে পুতিনকে পিছু হটতে বাধ্য করা যায়।
তবে ৭১ বছর বয়সী নেতা তার কোনো অর্জন ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গত সপ্তাহে ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক টাকার কার্লসনের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পশ্চিমারা তার শর্তে 'আজ হোক বা কাল হোক' কোনো না কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হবে।
বেলারুশে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু পুতিনের 'সম্পূর্ণ নির্মমতা ও অবজ্ঞা... পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক উভয় পরিপ্রেক্ষিতে।’
শুক্রবার মিউনিখে এক নিরাপত্তা সম্মেলনে পশ্চিমা নেতারা জড়ো হওয়ার পর নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, পুতিন ‘পশ্চিমাদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আমরা যখন (ইউক্রেন) যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আছি, তিনি আবারও পশ্চিমা সংকল্পের পরীক্ষা নিচ্ছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিরোধিতা করা মার্কিন রিপাবলিকানদের জন্য "জেগে ওঠার আহ্বান" হিসেবে কাজ করা উচিত। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ন্যাটো মিত্রদের ইউক্রেনকে তাদের সহায়তা জোরদার করতে উৎসাহিত করা উচিত।
তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে পশ্চিমারা কী শিক্ষা নেয় তার ওপর।’
কিন্তু নাভালনির মৃত্যু শুক্রবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিতে উদ্বুদ্ধ করেনি, যা ইউক্রেনের বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্ট্যালিনের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রুশ নেতা পুতিন ক্রেমলিনবান্ধব দলগুলোর মনোনীত তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় আসছেন তিনি। উদারপন্থী রাজনীতিবিদ বরিস নাদেজদিন, যিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে তার প্রধান নির্বাচনি স্লোগান বানিয়েছিলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তারা তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন।
‘নির্বাচনে পুতিনের জয় নিয়ে সংশয় না থাকলেও নাভালনির মৃত্যু প্রমাণ করে 'তিনি নাভালনিকে কতটা হুমকি হিসেবে দেখছেন', বলেন গোল্ড-ডেভিস।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছে তাতে বোঝা যায় যে তারা আত্মবিশ্বাসী নয়। এমনকি কারাগার থেকেও নাভালনি তার কণ্ঠস্বর বের করতে সক্ষম হয়েছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ১৫-১৭ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নাভালনির মৃত্যু সম্ভবত ভোটের আগে 'রাশিয়ার বিরোধীদের যেকোনো চিহ্নকে মুছে ফেলা ও চূর্ণ করার চূড়ান্ত কাজ' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, আগামী মাসে নিশ্চিত বিজয় সত্ত্বেও পুতিন এখনও নির্বাচনে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছেন এবং নাভালনিকে 'জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার জন্য পশ্চিমাদের দ্বারা চালিত প্রতিপক্ষ' হিসেবে দেখেন।
একটি মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন যে পশ্চিমারা স্থিতিশীলতা হ্রাস করতে এবং তার প্রচারের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে এই মুহূর্তটি ব্যবহার করবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এটি তাকে যেকোনো প্রতিকূল প্রকাশের বিরুদ্ধে আরও কঠোর, আরও দমনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে বাধ্য করবে, যা তিনি এসব হস্তক্ষেপের বহিরাগত প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এটি বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে।’
৪৭ বছর বয়সি নাভালনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুতিনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২০১১-২০১২ সালে মস্কোতে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সরকারের দুর্নীতি উন্মোচন করার জন্য সফল প্রচার চালিয়েছিলেন।
গালেওত্তি বলেন, অনেক রুশ নাগরিকের কাছে নাভালনি ছিলেন আশার প্রতীক। এমনকি প্রত্যন্ত আর্কটিক কারাগার থেকেও “ভবিষ্যতের সুন্দর রাশিয়ার” একটি দর্শন পৌঁছে দিয়েছিলেন। রাশিয়ানদের প্রতি ক্রেমলিনের বার্তা "কেবল বেঁচে থাকুন, কেবল আপনার মাথা নিচু রাখুন” অগ্রাহ্য করে এটি একটি স্লোগান ছিল।
২০২০ সালে নাভালনি সাইবেরিয়ায় নার্ভ এজেন্টের বিষক্রিয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন, যার জন্য তিনি ক্রেমলিনকে দায়ী করেছিলেন। তিনি জার্মানিতে সুস্থ হয়ে উঠলেও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন, চরমপন্থার অভিযোগে তিনবার দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওেয়া হয় তাকে।
নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে পুতিন কোনো মন্তব্য করেননি এবং ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ক্রেমলিনকে দায়ী করে পশ্চিমা নেতাদের বিবৃতিকে 'জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কিন্তু পশ্চিমা নেতারা ক্রেমলিনের এ ধরনের যেকোনো মন্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। যেমন সন্দেহের চোখে দেখছেন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সৈন্যদের সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের দুই মাস পর ভাড়াটে সেনাপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার বিষয়টি। গত আগস্টের এই দুর্ঘটনাকে ব্যাপকভাবে বিদ্রোহের জন্য ক্রেমলিনের প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হয়েছিল। ২০০০ সালে তার প্রথম নির্বাচনের পর থেকে পুতিনের শাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এটি।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যুর মতোই নাভালনির মৃত্যুও প্রমাণ করে পুতিন কত নির্মম।’
৬৫৫ দিন আগে
ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিতে প্রস্তুত, পুতিনের জন্য ধাক্কা
ফিনল্যান্ড ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে। যা ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের ফলে মহাদেশের ঐতিহাসিক পুনর্বিন্যাস নিয়ে রাশিয়াকে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে।
মঙ্গলবার নথি হস্তান্তরের মাধ্যমে নর্ডিক জাতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম নিরাপত্তা জোটে প্রবেশ করেছে।এতে রাশিয়ার সঙ্গে তার সীমান্ত দ্বিগুণ হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ ইউরোপের নিরাপত্তা ভৌগলিক একটি বড় পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েতদের কাছে পরাজয়ের পর দেশটি নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনে আগ্রাসন মস্কোর প্রতিবেশীদের মধ্যে ভয়ের কাঁপুনি ওঠার কয়েক মাস পর দেশটির নেতারা জোটে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে যতদিন দরকার ততদিন সাহায্য করবে ন্যাটো
এই পদক্ষেপটি পুতিনের জন্য একটি কৌশলগত এবং রাজনৈতিক আঘাত। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। এবং আংশিকভাবে এটিকে আক্রমণের ন্যায্যতা হিসাবে ব্যবহার করেছেন। জোট বলেছে যে তারা মস্কোর জন্য কোনো হুমকি নয়।
রাশিয়া সতর্ক করেছে যে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় এটিকে ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ নিতে বাধ্য করা হবে। এটি সতর্ক করেছে যে এটি ফিনল্যান্ডের কাছে বাহিনীকে শক্তিশালী করবে যদি ন্যাটো তার ৩১তম সদস্য দেশটিতে অতিরিক্ত সেনা বা সরঞ্জাম পাঠায়।
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক জোট এড়িয়ে যাওয়া প্রতিবেশী দেশ সুইডেনও আবেদন করেছে। কিন্তু ন্যাটো সদস্য তুরস্ক ও হাঙ্গেরির আপত্তির কারণে প্রক্রিয়াটি আটকে আছে।
ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠে যখন এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে তার যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নথি হস্তান্তর করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট হলো সদস্যপদ সংক্রান্ত ন্যাটো পাঠ্যের ভান্ডার।
আরও পড়ুন: পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন আন্তর্জাতিক আদালত
৯৭৫ দিন আগে
বিতর্ক এড়াতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না পুতিন
আগামী সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ায় গ্রুপ অব ২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে তার যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে সম্ভাব্য মুখোমুখি অবস্থা এড়াতে তার এই সিদ্ধান্ত।
বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার একজন সরকারি কর্মকর্তা এ কথা বলেন।
জানা গেছে, আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে বালিতে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও অন্যান্য বিশ্ব নেতারা। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর এই প্রথম বাইডেন ও পুতিন কোনও সমাবেশে একসঙ্গে মিলিত হবেন।
আরও পড়ুন: জি-২০ সম্মেলন: পুতিন ও এমবিএসের সঙ্গে সাক্ষাত হতে পারে বাইডেনের
জি-২০ আয়োজনের প্রধান লুহুত বিনসার পান্দজাইতান ইন্দোনেশিয়ার ডেনপাসারে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
পান্ডজাইতান বলেন, ‘ইন্দোনেশীয় সরকার রাশিয়ান সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেই এর আগে প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোকে একটি খুব বন্ধুত্বপূর্ণ টেলিফোন কথোপকথনে ব্যাখ্যা করেছিলেন।’
বাইডেন পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, তিনি যদি এই সম্মেলনে যোগ দিতেন, তাহলে তিনি রুশ নেতার সঙ্গে একমাত্র আলোচনা করতে পারতেন, তা হবে রাশিয়ায় কারাবন্দী আমেরিকানদের মুক্ত করার চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, পুতিন যদি ব্যক্তিগতভাবে বা ভার্চুয়ালি অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তারা বৈশ্বিক সমকক্ষদের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। তারা বয়কট বা অন্যান্য নিন্দা প্রদর্শন নিয়েও আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অনুশোচনা নেই পুতিনের
ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণ: ইউক্রেনকে দায়ী করলেন পুতিন
১১২০ দিন আগে