রাজস্ব
জুলাই-আগস্টে রাজস্ব কমেছে ৪৮৭০ কোটি টাকা: এনবিআর
চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা কম রাজস্ব সংগ্রহ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্যে এই ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে।
এনবিআরের তথ্যমতে, জুলাই-আগস্ট মাসে ৫০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। ঘাটতি সত্ত্বেও, এই দুই মাসে রাজস্ব সংগ্রহ ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সর্বোচ্চ রাজস্ব এসেছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে। তবে ভ্যাট ও আয়কর খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ল: এনবিআর
জুলাই-আগস্টে ১৯ হাজার ৮৫ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
একই সময়ে জুলাই-আগস্টে আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায় কমেছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং সংগ্রহ হয়েছে ১২ হাজার ১০০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি সত্ত্বেও, কর আদায়ে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আরও পড়ুন: এনবিআর ২৩’ অর্থবছরে ভ্যাট থেকে সর্বোচ্চ ১.২৫ লাখ কোটি টাকা আয় করেছে
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সত্ত্বেও আমদানি-রপ্তানি থেকে শুল্ক আদায় তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে শুল্কের ১৬ হাজার ১৭৭ কোটি ৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরে আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ১৯২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং শুল্ক থেকে ১৪ কোটি ৫ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব এসেছে।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাস্টমসের ২৭০ কর্মকর্তাকে বদলি করেছে এনবিআর
৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে যে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে, যার ফলে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে।
এতে বলা হয়েছে, ‘সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে ৭৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা হয়েছে, এটি সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
সিপিডি ইঙ্গিত দিয়েছে যে সরকার দেশীয় উৎস (ব্যাংক) থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিমূলক ব্যবস্থা তৈরি হবে। বরং এটি পরামর্শ দেয় যে সরকারের উচিত বিদেশি অর্থায়নে বাজেটের সহায়তা জোগাড় করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
শনিবার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বাংলাদেশের অর্থনীতির থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন, এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় পর্যালোচনা।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিপিডি জানিয়েছে, বিপিসি’র গত সাত বছরে অর্থবছর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট মুনাফা ছিল প্রায় ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। আয়কর হিসাবে সাত হাজার ৭২৭ কোটি টাকা দেওয়ার পরে বিপিসির নিট মুনাফা ছিল ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
এতে বলা হয়েছে, একচেটিয়া ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশের নাগরিকদের জরিমানা করে ক্ষতিপূরণ লাভ করা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী বছরের বাজেটের আগে মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি ও ডলার সংকট অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি বলেছে যে ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি আরব থেকে দেশে প্রায় তিন দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স কমে তিন দশমিক ০৪ বিলিয়ন হয়েছে।
সিপিডি সন্দেহ করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের আকস্মিক বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিংয়ের বিভিন্ন আকারে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাঠানো চোরাচালানকৃত অর্থের পুনর্ব্যবহার হচ্ছে।
এটি দাম কমানোর জন্য সাময়িকভাবে স্বস্তি হিসাবে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংও প্রয়োজন।
সিপিডির দৃষ্টিতে দরিদ্রদের সরাসরি সহায়তার সুযোগ বাড়ানো দরকার। সঠিক মানুষ পাচ্ছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এটি উল্লেখ করেছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয় এবং লক্ষ্যমাত্রার কম হচ্ছে। মে ও জুন মাসে (চলতি অর্থবছরের শেষ দুই মাস) তা ৪১ শতাংশ বাড়াতে হবে, যা খুবই কঠিন।
বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
আরও পড়ুন: আসন্ন বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন: পিআরআই
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধুমাত্র শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মৌলিক সংস্কারই বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতকে উন্নত করতে পারে। রবিবার প্রাক-বাজেট প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধ, পেনশন সুবিধা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ব্যয় হয়েছে।
মনসুর বলেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান রাজস্ব ও কর নীতির ব্যর্থতার কারণে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান প্রতি অর্থবছরে বাড়ছে।
এই অর্থনীতিবিদ জানান, ব্যাংক, এনবিআর এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রকদের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া এই খাতে আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ৯ মাসে প্রায় ৩৩ শতাংশ আমদানি কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনিয়ম, প্রতিষ্ঠানের অক্ষমতা এবং কর ফাঁকির প্রবণতার কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরেও আয়কর দেন না।
সোমবার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিপিডি তাদের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করে।
গবেষণাটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘কর্পোরেট ট্যাক্স ট্রান্সপারেন্সি ইস্যুস অ্যান্ড কনসার্নস ইন বাংলাদেশ এর ইমপ্লিকেশনস অন ট্যাক্স লস অ্যান্ড সোশ্যাল স্পেন্ডিং।’
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মোয়াজ্জেম বলেন, করযোগ্য আয় করেও ৬৮ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন না। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য থাকা সত্ত্বেও কর দেন না। তাই কর জিডিপি অনুপাত না বাড়ার এটাই বড় কারণ।
অন্যদিকে, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে দুই লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি নিবন্ধিত হলেও রিটার্ন দাখিল করেছে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতের আয়তন জিডিপির ৩০ শতাংশ। ২০১০ সালে অনানুষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে বেড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
ছায়া অর্থনীতিতে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারায়, যাকে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিও বলা হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত হলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ হতে পারে। অর্থাৎ করনেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত।
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, একটি বড় অংশ করের বাইরে রয়ে গেছে, যার ফলে কর লস দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন: আগামী জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের বিশেষ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব সিপিডির
সিপিডি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে: কৃষিমন্ত্রী
রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ভ্যাটের পরিধি বাড়ান: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভ্যাট ও কর আদায়ের পরিধি আরও প্রসারিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের প্রথম দিনে 'জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বিষয়ে সমন্বয়ের কথা বলছি। এটাই সর্বোত্তম। আমরা চাই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আপনারা এটি করুন।’
আরও পড়ুন: রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
মুন্সি বলেন, ২০২৬ সালে শুল্কের চাপ থাকবে। আশা করা হচ্ছে, এলডিসি তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পর এনবিআর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। ভ্যাট ও আয়করের পরিধি দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এর পরিধি অবশ্যই প্রশস্ত করতে হবে।
‘এখন আপনারা যদি আয়কর সংগ্রহ করতে যান তবে আপনারা মানুষের কাছে অপছন্দের হয়ে উঠবেন। কেউ ট্যাক্স দিতে চায় না; সেখানেও আপনাকে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি স্মার্ট বাংলাদেশ দরকার। ডিজিটালের অবসান ঘটিয়ে স্মার্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে আপনাদের কাজগুলো স্মার্ট হতে হবে। তাই আমি বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে শুনেছি এবং বিভিন্ন ধরনের অটোমেশন আসছে। আমি খুব আশাবাদী; আপনাদের কাজ আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং রাজস্ব-বান্ধব মানসিকতা গড়ে তুলতে আগামী ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের আয়োজন করছে এনবিআর। একই সঙ্গে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে এনবিআর প্রাঙ্গণ উদ্বোধন করা হয়। রাজস্ব সম্মেলন ও নতুন ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক জ্ঞান আবশ্যক: বাণিজ্যমন্ত্রী
জনগণকে হয়রানি না করে কর দিতে উৎসাহিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
গত ১৪ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল উন্নতি হওয়ায় জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে তৃণমূলে প্রচারণা চালানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন।
‘আপনি যদি সেখানে (উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে) ভালোভাবে প্রচারণা চালান, তাহলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে (কর দিতে) এগিয়ে আসবে। তারা (করদাতারা) এখন সেবা পাচ্ছেন। সুতরাং, পরিষেবাগুলি পেতে কর দিতে হবে,’ তিনি বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজস্ব সম্মেলন ২০২৩ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই দিনব্যাপী প্রথম এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৪ বছরে তৃণমূলসহ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও এমন লোক আছে যাদের কর দেয়ার ক্ষমতা আছে।’
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এই প্রেক্ষাপটে, তিনি দেশের সমস্ত সক্ষম ব্যক্তিদের কর দিতে বলেন। কারণ সরকার তাদের জন্য পরিষেবা উন্নত করতে করের অর্থ ব্যয় করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে করের হার না বাড়িয়ে সরকার কর নেট বাড়াতে চায়। ‘আমাদের করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে,’ তিনি বলেছিলেন।
তিনি বলেন, দেশে আয়করদাতার সংখ্যা এখনও খুবই কম। প্রকৃতপক্ষে, এর কারণ হল মানুষ অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হয় এবং এখানে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
‘কোনো জবরদস্তি করা উচিত নয়। জনগণকে যেন কোনো ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা না হয়। জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে,’ প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন।
কর ফাঁকি বন্ধ করে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে কাজ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি করের নেট প্রসারিত করতে হবে এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে বৃহত্তর সংখ্যক মানুষ কর প্রদান করে।’
দুই দিনের রাজস্ব সম্মেলনে ভ্যাট, শুল্ক, আয়কর এবং অনলাইন পরিষেবা সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াতে চায়।
সম্মেলনের সাইডলাইনে ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর নিয়ে তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। কর সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য তথ্য বুথও থাকবে।
সম্মেলন পরিদর্শন করে জনগণ ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং এনবিআর সদস্য আব্দুল মান্নান শিকদার ও প্রদ্যুত কুমার সরকার বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: পাতাল মেট্রোরেল বাংলাদেশের অগ্রগতির আরেকটি মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
নবনির্মিত রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এছাড়াও রবিবার প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নবনির্মিত রাজস্ব ভবনের উদ্বোধন করেন, যেটি এনবিআরের প্রধান কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হবে।
তিনি ১২ তলা ভবনের নাম ফলক উন্মোচন করেন এবং সকালে রাজস্ব ভবন পরিদর্শন করেন।
৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
এ বছরের ১ মার্চ থেকে এনবিআর সম্পূর্ণভাবে নতুন ভবনে অফিস শুরু করবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও আপ্যায়ন খরচ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস
চার মাসে ৯০৯০১.৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এনবিআরের
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে ৯৭ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯০ হাজার ৯০১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা আদায় করেছে।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের (২২ অর্থবছর) তুলনায় অক্টোবরে এ পর্যন্ত রাজস্ব সংগ্রহ গড়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৯ হাজার ৬২২ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে এনবিআর
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা গেলেও, জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে সামগ্রিক রাজস্ব আদায় রাজস্ব বোর্ডের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একজন সদস্য।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব আদায় এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক হয়েছে।
বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে (জুলাই ২০২২-জুন ২০২৩) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
আয়কর আইনজীবীদের একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা দরকার: আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আয়কর আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই আয়কর আইনজীবীদের একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি বডি) থাকা দরকার। যাতে যে কেউ আয়কর আইনজীবী সমিতির সদস্য হতে না পারে। এসময় তিনি আয়কর আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড (মান) বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ আয়কর আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সৎ ও দক্ষ আয়কর আইনজীবীগণ দেশের রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আয়কর খাতে নিয়োজিত সকল আইনজীবী সৎ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে দেশের রাজস্ব আহরণ যেমন বাড়বে, তেমনি আইন পেশার মর্যাদা ও গুরুত্ব বাড়বে। এতে জনগণের মধ্যে আয়কর দেয়ার ভীতিও দূর হবে। এসময় তিনি পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ আয়কর আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরিতে উন্নতমানের বই-পুস্তক দেয়ার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ আইনমন্ত্রীর কাছে পেশাগত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করেন।
তারা আয়কর অধ্যাদেশে বাংলদেশ বার কাউন্সিলের আদলে ট্যাক্স কাউন্সিল গঠনের বিধান যুক্ত করার অনুরোধ জানান।
এছাড়া আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালে একজন বিচার বিভাগীয় সদস্য (জেলা জজ) ও একজন প্রাকটিশনার্স আয়কর আইনজীবীর নাম অন্তর্ভুক্তকরণ, চট্টগ্রামে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের ২টি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ স্থাপনে আইনমন্ত্রীর সহযোগিতা চান।
এসব বিষয়ে আইনমন্ত্রী এনবিআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলম সারওয়ার, বাংলাদেশ আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সোহবার উদ্দিন, মহাসচিব মো. খোরসেদ আলম, সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইকবাল মোস্তফা ও এ কে এম আজিজুর রহমান, ঢাকা আয়কর আইনজীবী এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু আমজাদ, সাবেক সভাপতি এ কে এম আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া খান ও সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদ অংশ নেন।
সেলিম খানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ
চাঁদপুরের মেঘনা তীরবর্তী ২১ মৌজা থেকে বালু উত্তোলন বাবদ আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছে সরকারের বিপুল অঙ্কের বকেয়া রাজস্ব নির্ধারণ পূর্বক তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেন। রায়টি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে রিট আবেদনকারী (সেলিম খান) সরকারকে কোনো ধরনের রয়্যালটি (রাজস্ব)না দিয়েই স্বেচ্ছাচারীভাবে ওই মৌজাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এতে সরকারের ইতিমধ্যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
হাইকোর্ট বিভাগ যেদিন (২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল) রায় দিয়েছিলেন, সেদিন থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগ যেদিন (চলতি বছরের ৪ এপ্রিল) আদেশ দিয়েছিলেন-এই সময় পর্যন্ত সেলিম খানের কাছ থেকে ওই রয়্যালটি আদায় করতে বলা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। অর্থাৎ বালু উত্তোলনের জন্য মো. সেলিম খানকে চার বছরের রয়্যালটি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে রুল
রায়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, হাইকোর্টে এ বিষয়ে জারি করা রুলের বিরোধীতা করে কোন এফিডেভিট দাখিল না করা এবং সে সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার ভূমিকা বেশ সন্দেহজনক। এছাড়া চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় এ বিষয়ে নিশ্চিুপ ছিলেন। আদালত রায়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দীর্ঘ সময় নিশ্চুপ থাকা এবং তখনকার আইন কর্মকর্তাদের ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে গত ২৯ মে রায় দেন আপিল বিভাগ যে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সাল থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সেলিম খান। সেই রায় বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা ২০১০ এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং আইনের লঙ্ঘন। এই বিবেচনায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিলের বিস্তারিত শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সে রায় আজ প্রকাশিত হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ডুবোচর থেকে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বালু তুলেছেন। ফলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, মেঘনা নদীর চাঁদপুর ও হাইমচর উপজেলায় অবস্থিত ২১টি মৌজায় নিজ খরচে সেলিম খান হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেন। নৌপথ সচল করার কথা বলে রিটটি করা হয়েছিল। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর রুল নিষ্পত্তি করে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির চিঠি উল্লেখ করে বলা হয়, এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওই মৌজাগুলোতে পর্যাপ্ত বালু-মাটি রয়েছে এবং তা তুলতে কোনো বাধা নেই। আপত্তি জানিয়ে বিবাদীদের (ভূমি সচিব, নৌ-পরিবহন সচিব, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের পরিচালক) পক্ষ থেকে কোনো জবাব (হলফনামা) দায়ের করা হয়নি, যাতে বিষয়টি (বালু থাকা) বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। রায়ে ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে ৮৬ দশমিক ৩০ কিউবিক মিটার (৩০ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট) বালু সেলিম খানকে উত্তোলনে অনুমতি দিতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব
হাইকোর্টের এই রায়ের চার বছর পর গত মার্চে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলে বলা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কোনো নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ প্রতিবেদনই যে একক ভিত্তি নয়, তা হাইকোর্ট উপলব্ধি করতে পারেননি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে, পরিবেশ, পাহাড়ধস, ভূমিধস অথবা নদী বা খালের পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন, সরকারি স্থাপনার (যথা ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ফেরিঘাট, হাটবাজার, চা বাগান, নদীর বাধ ইত্যাদি) এবং আবাসিক এলাকার কোনো ক্ষতি হবে কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক।
এছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন করার ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট বা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত ও জনস্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ওই বালুমহাল বিলুপ্তির প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন জেলা প্রশাসক। লিভ টু আপিলে আরও বলা হয়, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে ডুবোচরের বালু উত্তোলনের বিষয়ে কোনো ধরনের মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি রিটে উল্লিখিত মৌজাগুলো বিভাগীয় কমিশনার বালুমহাল হিসেবেও ঘোষণা করেননি। তাই হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীকে (সেলিম খান) বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাতিলযোগ্য। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে নদীর তলদেশে কোথায় কত দূরত্বে মাটি রয়েছে, তা আধুনিক পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা বা এর মানচিত্র তৈরি করা হয়। ডুবোচর কাটতে হলে প্রথমে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের এই লিভ টু আপিল গত ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে ওই রায় দেন।
বাজেট ২০২২-২৩: রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা
২০২২-২৩ অর্থবছরে কর ও কর বহির্ভূত রাজস্বসহ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করেন।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এনবিআর রাজস্ব হিসেবে সংগ্রহ করবে এবং বাকি ৬৩ হাজার কোটি টাকা অন্যান্য কর বহির্ভূত রাজস্ব থেকে সংগ্রহ করবে।
এনবিআর রাজস্বের মধ্যে আয়কর, মুনাফা এবং মূলধন থেকে প্রাপ্ত লাভ, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সম্পূরক কর (এসটি), আমদানি শুল্ক (আইডি), রপ্তানি শুল্ক, আবগারি শুল্ক (ইডি) এবং অন্যান্য কর অন্তর্ভুক্ত।
কর-বহির্ভূত রাজস্বের মধ্যে রয়েছে- লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক ফি, ভাড়া এবং ইজারা, টোল, অ-বাণিজ্যিক বিক্রয়, মূলধন রসিদ, মোটর গাড়ির কর, ভূমি উন্নয়ন কর, স্ট্যাম্প বিক্রয় (অ-বিচারিক)), সারচার্জ এবং মাদকদ্রব্য এবং মদের শুল্ক।
রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আরু পড়ুন: জাতীয় বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী
মন্ত্রিসভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন