রংপুর
উত্তরে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ১১ মাসে সড়কে ঝরেছে ২৪৩ প্রাণ
চলতি বছর উত্তরের ৮ জেলায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রতিনিয়তই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছে আরও শত শত মানুষ।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গত ১১ মাসে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় আশঙ্কাজনকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এই সময়ে ৪১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৩ জন নিহত এবং ৪৮৭ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাজনিত এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯৪টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক আইন অমান্য করায় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার ৭৫৮টি মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ, যা থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জিত হয়েছে।
রংপুর হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিজিয়নের আওতায় তেঁতুলিয়া, বোদা, সাতমাইল, তারাগঞ্জ, বড়দরগা, গোবিন্দগঞ্জ ও হাতীবান্ধা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের থানা রয়েছে। এসব থানার আওতায় রয়েছে ৩৭৩ কিলোমিটার মহাসড়ক এবং ১৩৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন এসব সড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে যাত্রীপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাপ, সড়কের কিছু অংশের নাজুক অবস্থা এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোসহ অসতর্কতা-অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
দুই মাস আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শিকার হন নাট্যকার ও ভাওয়াইয়া গবেষক আশরাফুজ্জামান বাবু। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে শহরের দিকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। তার মুখে ও ঠোঁটে বেশ কয়েকটি সেলাই পড়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা যুবক রাশেদ এখন হুইলচেয়ারে বন্দি। একসময় যে মানুষটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল, আজ সে বোঝা হয়ে গেছে নিজের কাছেই।
রংপুর নগরীর নজিরেরহাট এলাকার আব্দুর রহিম অনিক গত ২৪ সেপ্টেম্বর বদরগঞ্জ রোডে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও সন্তানসহ গুরুতর আহত হন। চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল অনিকের পরিবার ধারদেনা করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এখন একদিকে ঋণ পরিশোধের চিন্তা অন্যদিকে চিকিৎসার ব্যয়।
বাবু-রাশেদ-অনিকের মতো এমন অনেকই আছেন আড়ালে, যাদের দুর্ঘটনার খবর থাকে অজানা। অথচ ভোরের আলো ফোটার আগেই রংপুরের মহাসড়কগুলো জেগে ওঠে। কেউ যায় জীবিকার খোঁজে, কেউ ফেরে আপন নীড়ে। কিন্তু এই পথই অনেকের জন্য হয়ে উঠছে শেষ গন্তব্য। প্রতিদিনের যাত্রার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনিশ্চিত মৃত্যু, অশ্রু আর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার গল্প।
এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ও দুর্ঘটনা রোধে সড়কগুলোতে নিয়মিত টহল, যানবাহন তল্লাশি ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করছে হাইওয়ে পুলিশ। পাশাপাশি চালক ও যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণসহ প্রচারণামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তারা। সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের সড়ক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে হাইওয়ে পুলিশ।
সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়কে নিয়মিত নজরদারি থাকলেও চালকদের একাংশ আইন মানতে অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ চালকের অভাব, বিশ্রাম ছাড়া দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো এবং যান্ত্রিক ত্রুটিও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে।
তারা মনে করেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, চালকদের মানবিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করাও জরুরি। বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক দিয়ে যানবাহন পরিচালনা এবং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোর প্রবণতা বন্ধ না হলে এই মৃত্যু মিছিল থামবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং অদক্ষ চালকই অধিকাংশ দুর্ঘটনার মূল কারণ। রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন ৩৭৩ কিলোমিটার মহাসড়ক ও ১৩৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কে নিয়মিত টহল এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ভবিষ্যতে নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। দুর্ঘটনা কমাতে গতি নিয়ন্ত্রণ, ফিটনেসহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনাও পরিকল্পনাও রয়েছে।
এদিকে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত নভেম্বর মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩১৭ জন। আগের মাস অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ১৪ দশমিক ২২ জন। নভেম্বর মাসে নিহত হয়েছেন ১৬ দশমিক ১ জন। সেই হিসেবে নভেম্বর মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৭১টি শহরের সড়কে এবং ৫টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ১২২টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৫৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্ম ঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজিকে।
নিরাপদ সড়ক চাই রংপুরের সহ-সভাপতি চঞ্চল মাহমুদ বলেন, অদক্ষ চালক আর অপ্রশস্ত সড়কের কারণেই প্রতিনিয়তই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা । এ ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব কাঠামো কে আরো সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে।
১৮ ঘণ্টা আগে
জাপায় ফিরেছেন রাঙ্গা ও নূর মোহাম্মদ, স্থানীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য
উত্তরে জাতীয় পার্টির ‘ঘাঁটি’ খ্যাত রংপুরে নড়েচড়ে বসেছে দলটি। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে দলের হেভিওয়েট নেতাদের। ক্ষমা চেয়ে আবার জাতীয় পার্টিতে (জাপা) ফিরেছেন দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। একই সঙ্গে রংপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডলও ফিরেছেন দলে। তাদের ফিরে আসা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
সবাই একসঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাপার ‘দুর্গ’ উদ্ধারে নামবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এই দুই নেতা দলে ফেরায় নেতা-কর্মীদের মাঝেও প্রাণ ফিরেছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে দলের কো-চেয়ারম্যান রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. আজমল হোসেন লেবুর হাতে ফুল তুলে দিয়ে জাপায় ফেরেন নুর মোহাম্মদ।
অবশ্য ওই রাতেই ফেসবুক লাইভে এসে নূর মোহাম্মদ মন্ডল দাবি করেন, তিনি এমনিতেই সাবেক মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তবে জাপায় যোগ দেননি।
কিন্তু তার নিবার্চনি এলাকা পীরগঞ্জে উঠেছে আলোচনার ঝড়। জাপা নেতারা বলছেন, নুর মোহাম্মদ মন্ডলের সিগন্যাল পেয়ে ইতোমধ্যেই তারা মাঠে নেমেছেন।
অন্যদিকে, সোমবার রংপুর-১ আসন থেকে জাপার তিনবারের সাবেক এমপি, দলের সাবেক মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা করে আবারও জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন।
সেদিন ফেসবুক লাইভে এসে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার কথা জানান তিনি। এ ঘটনায় রাঙ্গার নিজ উপজেলা গংগাচড়ায়ও নড়েচড়ে বসেছে ঝিমিয়ে থাকা জাপা নেতা-কর্মীরা।
এ ব্যাপারে জানতে বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করা হয় মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান আমাকে ক্ষমা করেছেন। আমি জাতীয় পার্টিতে ফিরে এসেছি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসন থেকে অবারও দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। আর যদি মনোনয়ন না পাই, তারপরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’
দলের কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমরা তাকে (রাঙ্গা) দলে আবারও সাদরে গ্রহণ করেছি। দলে তার অবদান ভোলার মতো নয়। আমরা আশা করি, শক্তিশালী জাপা মাঠে ভোটারদের মন জয় করবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমানকে ব্যাপক ভোটে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান। মসিউর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন।
২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য হন মসিউর রহমান। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফের এই আসনে ক্ষমতায় আসে জাপা। সেবার সংসদ সদস্য হন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মসিউর রহমান আবারও এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আরও একবার জয়ী হয়ে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হন।
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন মসিউর রহমান। তবে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়ায় দলের সব পদ-পদবি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অপরদিকে, তিন বড় রাজনৈতিক দলের ছায়ায় রাজনৈতিক অভিযাত্রা, দুর্নীতি মামলা ও জেল জীবনের মধ্য দিয়ে যাওয়া রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডল আবারও ফিরেছেন তার রাজনৈতিক প্রথম ঠিকানা জাতীয় পার্টিতে।
স্থানীয় পর্যায়ে ‘দল পরিবর্তনে সেরা’ হিসেবে পরিচিত মন্ডলের এই দল পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
নূর মোহাম্মদ মন্ডলের রাজনৈতিক জীবন জাতীয় পার্টির হাত ধরেই শুরু হয়। এই দল থেকেই ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
নব্বইয়ের দশকের গণঅভ্যুত্থানের পর হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের পতন হলে ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলটির টিকিটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন।
জানা গেছে, নূর মোহাম্মদ মন্ডল শুধু দল পরিবর্তনের জন্যই নন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যও আলোচিত। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় গত ১৯ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত তার বিরুদ্ধে পীরগঞ্জে বন বিভাগের ৩ হাজার ১৩০ একরেরও বেশি জমি দখল করে নির্মিত ‘আনন্দনগর’ নামের একটি পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র, আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ৯ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।
তবে এরই মধ্যে জাতীয় পার্টিতে ফিরে সংসদ সদস্য পদে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইউএনবিকে নুর মোহাম্মদ মন্ডল বলেন, ‘জাপা থেকে মনোনয়ন পেলে ভোট করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’ মাঠে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে বলে দাবি করেন এই নেতা।
৩ দিন আগে
রংপুর বিভাগীয় ইজতেমায় ২ মুসল্লির মৃত্যু, অসুস্থ আরও ৯
রংপুর বিভাগীয় ইজতেমার প্রথম দিন বার্ধক্য ও ঠান্ডাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ৯ জন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমার মাঠের ৬ নম্বর হালকার জিম্মাদার আবুল হোসেন।
মারা যাওয়া মুসল্লিরা হলেন— রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার সাঈদুর রহমান এবং টাঙ্গাইল জেলার তারা মিয়া। তারা মিয়া ৪০ দিনের চিল্লায় রংপুর এসে ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। ইজতেমা ময়দানেই বাদ জোহর মরহুমদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ দুপুরে আবুল হোসেন বলেন, ইজতেমার মাঠে বার্ধক্য ও ঠান্ডাজনিত কারণে আজ দুপুর পর্যন্ত দুইজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বাদ জোহর ময়দানেই জানাজা শেষে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার মাঠে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে দুজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাদের দুজনের মৃত্যুই স্বাভাবিক। এখন পর্যন্ত মাঠে আরও ৯ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমাশু কুকরুল এলাকায় কয়েক লাখ মুসল্লি নিয়ে শুরু হয়েছে রংপুর বিভাগীয় ইজতেমা।
১০ দিন আগে
রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে ‘গলাকেটে হত্যা’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় এক মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃদ্ধ এই দম্পতিকে কেন এমন নৃশংসভাবে খুন করা হলো, তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মুক্তিযোদ্ধা হলেন যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬০)। যোগেশ চন্দ্র রায় ওই এলাকার রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যোগেশ দম্পতির দুই ছেলে, তারা বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত। ফলে বাড়িতে একাই থাকতেন ওই দম্পতি। প্রতিদিনের মতো গতরাতেও তারা ঘুমাতে যান। এরপর আজ (রবিবার) সকালে দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও তাদের কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশী দীপক নামের এক ব্যক্তি বাড়ির গেটের সামনে মই লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি সুবর্ণা রায়কে রান্নাঘরে এবং যোগেশ চন্দ্র রায়কে খাবার ঘরে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বিষয়টি স্থানীয়দের জানান।
ঘটনাটি এলাকায় শোক ও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু সাইয়ুম তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিনের সদস্যরা রয়েছেন। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্তে নেমেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
১৪ দিন আগে
আসন্ন নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অ্যাসিড টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রংপুর জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সবকিছুর ভিত্তি আইনশৃঙ্খলা। শুরুতে সমস্যা থাকলেও এখন অবস্থা ভালো। পুলিশ গুছিয়ে উঠে নিজেরা সংহত হতে পেরেছে। সামনে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট (পরীক্ষা)। কেননা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সামনের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান সুসংগঠিত করেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমরা চাই, ভালো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে।’
তৌহিদ হোসেনের মতে, ‘দুটো সেক্টরে (খাতে) বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। বাইরের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি। ডাক্তার, নার্সের সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে (অন্তর্বর্তী সরকারের) এই স্বল্প সময়ে সাড়ে ৩ হাজার নার্স ও ৩ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছর তা দেখা যাবে। আমরা কিছু প্রকল্প শুরু করেছি। আশা করছি, পরের সরকার তা ধরে রাখবে।’
প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক শিক্ষার খুব ভয়ঙ্কর বাজে অবস্থা। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রাইমারি শিক্ষকদের অনেক বেশি বেতন দিই, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো কর্মস্পৃহা দেখতে পাই না।’
১৫ দিন আগে
বন্যার পলিতে উর্বর উত্তরের চরাঞ্চল, চাষাবাদের ধুম
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের নদ-নদীগুলোর তীর এখন ধুঁ ধুঁ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বালুময় জমিগুলোর ওপর বন্যার রেখে যাওয়া পলি জমে বেলে-দোআঁশে পরিণত হওয়ায় চাষাবাদের ধুম পড়েছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে।
কৃষি বিভাগ বলছে, উত্তরের এসব নদীতে প্রায় ৭৮৬ টি চর রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব চরে এবার ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার টন।
কৃষি বিভাগ মনে করে, চরের ফসলে ঘুরে দাঁড়াবে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক ফসলেই তাদের সারা বছর চলে যায়, বলেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর চরে কৃষিজমিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শিম, ধনেপাতা, গাজর, কপি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, সরিষা, ভুট্টার আবাদ হয়েছে। সব ফসলেরই ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা।
রংপুরের গঙ্গাচরার ইচলির চরের হোসেন মিয়া বলেন, তিস্তার চরে ৩ বিঘা জমিতে আলু, তিন বিঘায় বেগুন ও ২০ শতক জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে এ মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
শুধু হোসেন নন ওই এলাকার কৃষক হাবিবুর, রহিম ও খায়রুল বলেন প্রায় একই কথা। তাদের দাবি, যেটুকু জমিতে আবাদ করেছি, ফলন ভালো হলে ৬০-৭০ হাজার টাকা করে লাভ হবে তো হবেই।
লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষি জোনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করছেন। চরের কৃষকের একটাই দুঃখ; উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারে সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তাতে অন্তত ২-৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ গংগাচড়ায় আছে মাত্র একটি হিমাগার। তাছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল থেকে কৃষক উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারেন না।
কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমায় তা অনেক উর্বর। রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, তিল, তিশিসহ শাকসবজি চাষ বেশি হচ্ছে।
চর নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বন্যা চলে যাওয়ার পর চরের জমিতে যে পলি থাকে, তা অত্যন্ত উর্বর। এ কারণে প্রতি বছরই বন্যার পর কৃষিতে বাম্পার ফলনের দেখা পান চরের কৃষকরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পান না চাষিরা।
তিনি মনে করেন, তিস্তাসহ অন্যান্য নদী যদি খনন করা হয়, তাহলে চরের জমিগুলো জেগে উঠবে এবং উত্তরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরের ৮ জেলার ৭৮৬টির বেশি চরে যে ফসল উৎপাদন হবে, তাতে ২০০ কোটি টাকা আয় হওয়া সম্ভব।
ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। বন্যায় চরের যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ইতোমধ্যেই সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রংপুর অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
১৯ দিন আগে
জ্বালানি তেল না থাকায় ফাঁকা রংপুরের ডিপো
চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের তিনটি ডিপোতে নিয়মিত তেল সরবরাহ না হওয়ায় রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানি তেলের সংকট। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটই এর প্রধান কারণ।
রংপুরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপো থেকে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। গত আগস্ট মাসে মাসিক চাহিদা আড়াই কোটি লিটার থাকলেও সরবরাহ হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ লিটার। গত ছয় মাস ধরেই চলছে এমন পরিস্থিতি। ফলে তিন ডিপোর অধীনে থাকা পেট্রলপাম্প মালিক ও এজেন্টদের চাহিদামতো তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, রেলওয়ের পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী ওয়াগন সময়মতো ছাড়তে পারছে না। এ কারণে রংপুর ডিপোগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে।
রংপুর জেলা পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আজিজুর ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে রংপুরের ডিপোতে চাহিদার তুলনায় অনেক কম তেল আসছে। রংপুর থেকে আমরা তেল পাচ্ছি না। আমরা চাই, আগের মতো নিয়মিত এখানে তেল সরবরাহ হোক। এভাবে তেল আসা বন্ধ থাকলে কৃষি, কলকারখানা থেকে শুরু করে সব খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।’
রংপুর নগরীর ফিলিং স্টেশনের মালিক মঞ্জুর আজাদ বলেন, রংপুর ডিপোতে তেল না থাকায় পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ী থেকে তেল আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে এবং সিরিয়াল মেনে তেল সংগ্রহ করতে দু–তিন দিন সময় লাগছে। এতে শুধু ব্যবসায়ী নয়; কৃষি ও পরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নগরীর চারতলা মোড় এলাকার মিজান ফিলিং স্টেশনের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘রংপুরের ডিপো থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেনের ওয়াগনে করে তেল না আসায় তেলের সংকট রয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম, পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তেল নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এতে করে আমাদের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর ডিপো থেকে তেল পেলে খরচ অনেক কম হতো।’
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের যথাযথ স্থানান্তরের আহ্বান জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের
এদিকে, জ্বালানি তেল পর্যাপ্ত না আসায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই খাতের শ্রমিকেরা। এ প্রসঙ্গে রংপুর ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউল মিয়া লাল্লু বলেন, ‘ডিপোতে তেল না থাকায় ছয় শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবন এখন সংকটে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। দ্রুত নিয়মিত সরবরাহ না হলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
রংপুরে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলার পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এবং রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এতেও কোনো কাজ হয়নি।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপোর ইনচার্জ জাকির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। সেখান থেকে তেল পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে, লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের কারণে তেল পাঠাতে পারছে না। আমাদের মাসে ২৫ লাখ লিটার চাহিদা থাকলেও আমরা পাচ্ছি ৫ লাখ লিটার। এ সংকট নিরসনের জন্য হেড অফিস থেকে ডিজিএম, জিএম স্যাররা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রেল থেকে ইঞ্জিন সংকটের কথাই বলা হচ্ছে।’
পদ্মার পেট্রোলিয়াম ডিপোর ইনচার্জ আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি ইঞ্জিন ছিল। আগে মাসে ৮ থেকে ১০ বার তেল আসত। দুটি থেকে একটি করল, তাতেও ৪ থেকে ৫ বার তেল আসত। কিন্তু সেই ইঞ্জিনও কেটে নিয়ে গেছে; যার কারণে এই গ্যাপ হয়েছে। রংপুরে তিন ডিপো মিলে প্রায় আড়াই কোটি লিটার তেলের চাহিদা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ৩০ লাখ লিটারের মতো।’
জ্বালানি তেল সংকটের কথা স্বীকার করে রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে তেল সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
১০৪ দিন আগে
আগস্টে উত্তরের জেলাগুলোতে কম বৃষ্টিপাত, প্রকৃতি ও জনজীবনে প্রভাব
উত্তরের আট জেলা— রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষকে। আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষি সহ সব জায়গাতেই। ধীরে ধীরে রুক্ষ হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের আবহাওয়া। তীব্র গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে।
উত্তরের জেলাগুলোতে এ বছর আগস্ট মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাসজুড়ে ২৫ দিন বৃষ্টি হলেও প্রকৃতিতে ছিল খরতাপ ও রুক্ষভাব। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর বিভাগীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা প্রায় ১ হাজার ৩৫০ মিলিমিটার। সেখানে গত মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৭১৭ মিলিমিটার। মাসের প্রথম দিনে ১১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টির মাধ্যমে শুরু হয় বর্ষণ। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ৮ আগস্ট, ৭৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এরপর ১৪ আগস্টে ৫৬ মিলিমিটার, ৯ আগস্টে ২৭ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং ১৯ আগস্টে ২১ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
আরও পড়ুন: তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সিলেট, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
এপ্রিল ও মে মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছিল, যদিও জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আগস্টে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় পুরো বিভাগের কৃষিখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগস্টে উত্তরের জেলাগুলোতে কম বৃষ্টিপাত, প্রকৃতি ও জনজীবনে প্রভাব যাওয়া ও গরম-ঠান্ডার মিশ্র আবহাওয়ার কারণে রোগবালাইও বেড়েছে। এ সময় ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি, হিটস্ট্রোক, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
১০৭ দিন আগে
বোরকা পরে পালানোর চেষ্টা করেও ধরা পড়লেন ভুয়া চিকিৎসক
রংপুরে দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সিভিল সার্জনের অভিযানে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকায় ইউনাইটেড নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘটেছে এমনই এক চ্যাঞ্চল্যকর ঘটনা।
সরেজমিনে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। ঠিক সেই সময়ে হাসপাতালে হাজির হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা মিলল এক যুবকের। রোগীকে সেলাই দিতে ব্যস্ত ওই যুবক প্রথমে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জানা গেল, তিনি ডাক্তার তো দূরে থাক, অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র।
অভিযানে যাওয়া সিভিল সার্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা পাননি প্রশান্ত নামের ওই ভুয়া চিকিৎসক।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ভুয়া চিকিৎসকের জরিমানা, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটির পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন নেই। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। তবুও ওই হাসপাতালে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা চলছে সমান তালে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল (বুধবার) রাতে সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের সময় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে অষ্টম শ্রেণি পাস প্রশান্তকে হাতেনাতে ধরেন রংপুর সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা। এ সময় নানা অজুহাত দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন ওই যুবক। পরে দুই ঘণ্টা টয়লেটে বোরকা পরে লুকিয়ে থাকার পর পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা পাননি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিক সামসুদ তিবরীজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান মিশু। তাৎক্ষণিক হাসপাতাল মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করে জেল খাটার হাত থেকে রক্ষা পান।
জানা গেছে, গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের ময়না বেগমের (২৬) সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার বিকেলে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর রাতে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
এদিকে, অভিযান প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, ‘অভিযানে ওই বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে এক প্রসূতি নারীকে পাওয়া যায়। তখন সিজার করে তার সন্তান বের করা হয়েছিল; সেলাই দিচ্ছিলেন এক যুবক।’
‘তিনি প্রথমে নিজেকে ডাক্তার দাবি করেন। পরে বলেন, আমি ডাক্তার নই, এইট পাস করেছি মাত্র। এরপর তিনি বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটির মালিক দাবি করছিলেন, ওই নারীর সিজার করিয়েছেন রংপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির চিকিৎসক রিফাত আরা। তবে রিফাতকে ওই সময়ে পাওয়া যায়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ওই বেসরকারি হাসপাতালের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। লাইসেন্সের মেয়াদও পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। নবায়নের জন্য আর আবেদনও করেনি। এ ধরনের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুরে প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ক্লিনিকে চালানো হচ্ছে অপারেশন। আর এজন্যই সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে , যা অব্যাহত থাকবে।
১০৮ দিন আগে
রংপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত দুই শতাধিক মানুষ, দেখা দিয়েছে আতঙ্ক
রংপুরের পীরগাছায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তবে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্য বিভাগকে পাশে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই উপজেলার হাজারো মানুষ। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে।
এমন অবস্থায় সির্ভিল সার্জন ডা: শাহিন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ডা: শাহিন সুলতানা বলেন, যদি এমন কিছু ঘটে থাকে তাহলে প্রাণী সম্পদ বিভাগ ব্যবস্থা নিবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মীরা প্রতিবেদন দিলে মেডিকেল টিম গঠন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার পীরগাছায় গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে বিরল প্রজাতির মারাত্মক এক রোগ। শরীরে প্রথমে ফুসকুড়ি হয়, পরে তা ঘা-তে পরিণত হয়, এরপর তা থেকে তৈরি হয় গভীর ক্ষত।
এমন উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে। তবে এখনো প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পীরগাছার সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারী ইউনিয়নসহ প্রায় পুরো উপজেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সদর, ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়ন।
পীরগাছা উপজেলা সদরের অনন্তরাম বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাবিনা আক্তার জানান, গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল লালনপালন করতেন তিনি। সপ্তাহ দেড়েক আগে হঠাৎ তীব্র জ্বরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় একের পর এক পশু। অসুস্থ গবাদি পশুর সেবা করতে গিয়ে তিনিও আক্রান্ত হন অজানা রোগে।
তিনি বলেন, তিনদিনের মধ্যে তিনটি গরু ও চারটি ছাগল মারা যায়। পরে হঠাৎ দেখি আমার হাতে ফুসকুড়ির মতো কী যেন উঠতেছে। দুই দিন যেতেই সেই ফুসকুড়ি বড় ঘায়ে পরিণত হয়। এখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা করে, চুলকায়। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা চলছে।’
সাবিনার মতো পুরো পীরগাছায় এ অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। যাদের সবাই অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে ছিলেন অথবা অসুস্থ পশু জবাই করার পর মাংস স্পর্শ করেছেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে লাম্পি স্কিন রোগে ৭২ গরুর মৃত্যু
স্থানীয়রা জানান, গত দেড় মাস ধরেই এমন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এমনকি অসুস্থ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে আক্রান্ত গবাদি পশুও।
বিরল রোগে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব জাহেদা বেগম বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে হঠাৎ ডান হাতের একটি আঙ্গুলে চুলকানি শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ফুসকুড়ি ঘা-তে পরিণত হয়েছে। এরপর ওই জায়গার মাংস পচে গিয়ে কালো হয়ে গেছে। ভিতরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করে। নতুন করে আরও একটি আঙ্গুলে একইভাবে চুলকানি শুরু হয়েছে।’
ছাওলা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে তার পরিচর্যা করতে হয়। বেশি অসুস্থ হলে অনেকে জবাই করে বিক্রি করেন। সেই মাংস কিনে খাওয়ায় অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাওয়ার দু-চার দিন পর শরীরে বড় বড় ঘা হয়।’
পীরগাছা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে একটি ছাগলের প্রচণ্ড জ্বর আসে। অনেক চেষ্টার পরেও বাঁচার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় ছাগলটাকে জবাই করি। ওই মাংস কাটাকাটি করার পরের দিন থেকে হাতে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠা শুরু হয়। পরে তা বড় ঘায়ে পরিণত হয়ে শেষের দিকে পচে যায়। অনেক ওষুধ খাওয়ার পর এখন একটু সুস্থ। স্থানীয় চিকিৎসক বলেছেন এটা নাকি অ্যানথ্রাক্স রোগ।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আঁখি সরকার বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগে আক্রান্ত ৫ থেকে ৭ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেক সময় একই পরিবারের সব সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা না হলেও অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ দিকে পুরো উপজেলায় এই রোগে সাধারণ মানুষ আক্রান্তের পাশাপাশি কয়েকশ’ গবাদি পশু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও নির্বিকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
স্থানীয়রা জানান, খামারিদের কাছে যাওয়া তো দূরের কথা এমন সমস্যা নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গেলে বেশিরভাগ সময়ই কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। ফলে সঠিক চিকিৎসা না মেলায় মারা যাচ্ছে আক্রান্ত পশুগুলো।
অন্যদিকে আক্রান্ত হলেই তড়িঘড়ি করে ওই পশুকে কম দামে হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। এতে খামারিরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ বলেন, “এটা একটা ‘জেনেটিক ডিজিজ’। এখানে মূল সমস্যা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একজন মেডিকেল অফিসার অথবা প্যারামেডিক জানে এটা কি হতে পারে। এই রোগ নিয়ে যখন সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে গেছে সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তাহলে শুরু থেকেই এই সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সুবিধা হত। এখন সবার আগে আমাদের কাজ হলো এই রোগ শনাক্ত করা।”
এ দিকে এই রোগ শনাক্তের পাশাপাশি প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না গেলে মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: ফরিদগঞ্জে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর
জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘এমন উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণীসম্পদ দফতর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই যা ধারণা করা হচ্ছে, দ্রুত শনাক্তের মাধ্যমে যদি তা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে এই সমস্যা সমাধান দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করে পুরো দেশে ছড়িয়ে পারবে।’
বিষয়টি নিয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রবিউল ফয়সালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওই এলাকা থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে। আমি স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কথা বলেন দ্রুত ব্যবস্থা নিব। আপাতত উপজেলা নিবার্হী অফিসার কে বিষয়টি তদারকি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
১১৩ দিন আগে