ট্রাম্প
টিকটক কিনতে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
সামাজিকমাধ্যম টিকটকের মালিকানা পেতে চলতি সপ্তাহেই চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি চুক্তি অনেকটাই এগিয়েছে বলে দাবি তার।
শুক্রবার (৪ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘সোমবার বা মঙ্গলবার সম্ভবত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বা তার কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো। তবে, আমাদের চুক্তি অনেকটাই চূড়ান্ত।-খবর দ্য গার্ডিয়ানের
তিনি জানান, এ বিষয়ে আলোচনা করতে তিনি নিজে চীন সফর করতে পারেন কিংবা শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারেন। গত মাসে দুই নেতা পরস্পরকে নিজ নিজ দেশে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
গত মাসে, ট্রাম্প টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান চীনভিত্তিক বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদগুলো বিক্রির জন্য তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ চুক্তির জন্য চীনের সম্মতি নিতে হবে।
চুক্তি নিয়ে বেইজিংয়ের ওপর কতটা আস্থা রয়েছে—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নই, তবে মনে করি হবে। প্রেসিডেন্ট শি এবং আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। এ চুক্তি চীনের জন্যও ভালো, আমাদের জন্যও ভালো।’
গত জুনে ট্রাম্প তৃতীয় দফায় নির্বাহী আদেশ দিয়ে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় বাড়ান। এর ফলে বাইটড্যান্সের হাতে আরও ৯০ দিন সময় আছে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ বিক্রি করার জন্য, অন্যথায় টিকটক মার্কিন বাজারে নিষিদ্ধ হবে।
আরও পড়ুন: আটকের পর যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিকটকার
চলতি বসন্তে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র শাখাকে একটি নতুন মার্কিন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার আলোচনা চলছিল। সেখানে নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকার কথা ছিল। তবে, ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বেইজিং এ পরিকল্পনায় আপত্তি জানায় এবং আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিন পর সুপ্রিম কোর্ট টিকটক নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার রায় দিলে তিনি প্রথম নির্বাহী আদেশে সময়সীমা বাড়ান। দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশ আসে এপ্রিল মাসে। তখন বিক্রি বা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ছিল ১৯ জুন। এখন তা বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
১৫২ দিন আগে
সংঘাত থেকে কী পেল ইরান-ইসরায়েল?
গত ১২ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজার পর অবশেষে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল এগিয়েছে একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতির দিকে।
ইরানের পারমাণু কর্মসূচি বন্ধের নামে গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও শুরু করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরপর তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিশোধ নিতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান।
এরপর পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ না হয়, এজন্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিহিত ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ আপাতত বন্ধ হয় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সেই সংঘাত আপাতত শেষ হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের নেতারা সবাই এ যুদ্ধে নিজেদের জয়ী দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাছাড়া ট্রাম্পসহ সবার দাবি, যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তটি ঘটেছে তাদের নিজ নিজ শর্তে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইরান
এখন প্রশ্ন হলো— বাস্তবতা আসলে কী? ইসরায়েল কী অর্জন করল? ইরান কি তাদের কৌশলগত সম্পদ রক্ষা করতে পারল? আর এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে?
ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটল?
রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, তাদের হামলায় এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণভাবে’ ধ্বংস করা হয়েছে।
এর জবাবে, সোমবার (২৩ জুন) কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।
মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ও দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কা তখন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।’
তিনি এটিকে ১২ দিনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার চার ঘণ্টা পরই ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে তেলর আবিব।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল যে আজ সকালেই বেরিয়ে পড়েছে, তাতে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। দুটি দেশ যারা এতদিন ধরে লড়াই করেছে, তারা জানে না কী করছে!’
ইরান অবশ্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয় এবং ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন।
পরে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “ইসরায়েল আর ইরানে হামলা করবে না। সব বিমান ফিরে আসবে এবং ইরানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উড়ন্ত অভিবাদন’ জানাবে। কেউ আহত হবে না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে!”
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। তবে এর আগে কখনো ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়নি তেল আবিব।
১৩ জুন ইসরায়েল সেই সীমারেখা অতিক্রম করে নাতাঞ্জের ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ও ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে।
এর ফলে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও এবার আরও দূরবর্তী ও জটিল অভিযানে সফল হয়েছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইনি বৈধতা নিয়ে সমালোচনার মুখেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে তারা। ইসরায়েল দাবি ছিল, এই হামলা একটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।
যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সেটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব, তবে অনেকেই তা বিশ্বাস করেন না।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো— এই অভিযানে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসরায়েল চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন অভিযানেও জড়াতে পারে যেখানে তারাই প্রথম আঘাত হেনেছে।
১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উপকরণ সরবরাহ করেছিল; সরাসরি অংশ নেয়নি।
ট্রাম্পের এই ভূমিকার জন্য অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও কার্পণ্য করেনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
ইসরায়েল ইরানে পরিচালিত ওই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এমন এক সময় এই অপারেশেন চালানো হয়, যখন ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের আঞ্চলিক মিত্র—হুথি, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষা করতে পেরেছে?
ইসরায়েল দৃশ্যত ইরানের ভূ-উপরিভাগের স্থাপনাগুলোতে বড় ক্ষতি করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তারা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে।
উপগ্রহ চিত্রে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চিহ্ন দেখা গেলেও, সত্যিকারের ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। এর জন্য ওইসব স্থাপনা পরিদর্শনের প্রয়োজন হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কেউ, এমনকি আইএইএ-ও ফোরদোয় ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ মূল্যায়ন করতে পারেনি। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা ও সেন্ট্রিফিউজের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আরও একটি প্রশ্ন রয়ে গেল— ইরানের ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে?
আইএইএ বলেছে, এই মজুদের অবস্থান তারা জানে না।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি দাবি করেছেন, তাদের কর্মসূচিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং কারণ হামলার আগেই তাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইসরায়েল যে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলেছে, সেগুলোর উৎস নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কারণ ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় অস্বীকার করেছে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়— কে ছুঁড়ল সেগুলো? সেগুলো কি ভুলবশত ছোড়া হয়েছিল?
এখানে একটু মনে করিয়ে দেওয়া যায়, ২০২১ সালের একটি ঘটনা। ইরানের একটি ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ভেঙে পড়ে এবং ১৭৬ জন নিহত হন।
ইরানে আবার হামলার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইসরায়েল ও ইরান অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে, শান্তিচুক্তিতে নয়।
পরমাণু কর্মসূচির প্রশ্নে তাদের কাছে দুটি পথ খোলা বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মতো জাতিসংঘের নতুন পর্যবেক্ষণ ও একটি নতুন চুক্তি, অথবা আরেক দফা সংঘাত।
যুক্তরাষ্ট্র যদিও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল ২০১৮ সালে, তবে ইরান এখনও ওই চুক্তিতে রয়েছে। এই অবস্থায় ইউরোপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গত শুক্রবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা থেকে বিরত রাখার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ওই বৈঠক করেছিলেন তারা।
এ বিষয়ে গ্রিসের এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরাজনীতি বিষয়ক শিক্ষক ইয়োয়ানিস কোটুলাস আল জাজিরাকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ বাড়ানো ও নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে ইউরোপকে জড়াতে চায় ইরান।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে রাজি হতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যেই এমনটি বলেছেন। তাছাড়া ইরানে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্র করবে না বলেই মনে হচ্ছে।’
তবে ইসরায়েল এর আগেও পশ্চিমা দেশ ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি বানচাল করতে চেয়েছে এবং নতুন কোনো চুক্তিকেও স্বাগত জানাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন আসে— ইরান কতটা আপস করতে চাইবে?
যুক্তরাষ্ট্র আগেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, আবার নতুন আলোচনার সময় ইরানকে বোমা হামলার শিকার হতে হয়েছে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আলি আনসারি বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা ও কীভাবে আপসকে ব্যাখ্যা করা হয়; তার ওপর। তবে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবিও উঠেছে।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরান কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যেখানে আইএইএয়ের সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটি এখন প্লেনারি অধিবেশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প ফের ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে দেওয়া হবে না।’
এ পরিস্থিতিতে বলা চলে, মূল উত্তেজনা যদি বজায় থাকে, তবে নতুন করে পাল্টা-পাল্টি হামলা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৬২ দিন আগে
আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
৮৬ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সামনে এবার তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা—সংঘাত, নাকি শান্তির পথ বেছে নেবেন তিনি? তার এই সিদ্ধান্ত কেবল ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ৩৫ বছরের শাসনামলে বহুবার দেশটির অভ্যন্তরীণ হুমকি উৎরেছেন খামেনি। তবে এবারই তিনি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি।
চিরশত্রু ইসরায়েল এখন ইরানের আকাশপথে মুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সামরিক নেতাদের হত্যা এবং পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ‘খামেনির আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই’ বলেও হুমকি দিয়েছেন।
সামনে রয়েছে দুটি পথ
খামেনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। তিনি চাইলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়াতে পারেন, যা আরও ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। অথবা কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে পারেন তিনি, যাতে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে না জড়ায়। তবে এ পথে গেলে তাকে সারা জীবনের সাধনা—পরমাণু কর্মসূচি বিসর্জন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করে না।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘হস্তক্ষেপ করলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’
ইরানকে বদলে দিয়েছেন খামেনি
১৯৮৯ সালে ইরানের ক্ষমতার শীর্ষে আসেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এ সময়অনেকেই তার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত নিচু স্তরের ধর্মীয় নেতা। ঘন ফ্রেমের চশমা আর ধীরস্থির স্বভাবের মধ্যে পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মতো জ্বালাময়ী নেতৃত্বগুণও ছিল না তার।
তবে, সেসব পাশ কাটিয়ে পূর্বসূরির চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় ধরে শাসনভার নিজের কাঁধে রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটিকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন খামেনি।
তিনি শিয়াপন্থী মোল্লা শাসনব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে একটি অভিজাত বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন এই ধর্মীয় নেতা।
গার্ড বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালায়। পাশাপাশি কুদস ফোর্সের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে লেবানন পর্যন্ত ইরানের অনুগত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলেছে বাহিনীটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
এমনকি ইরানের অর্থনীতির বড় অংশও নিয়ন্ত্রণ করে অভিজাত এই বাহিনী। বিনিময়ে তারা খামেনির একনিষ্ঠ ডান হাতে পরিণত হয়েছে।
দেশীয় সংকট কঠোর হস্তে দমন
৯০-এর দশকে সংস্কারপন্থীদের উত্থানের সময়কালে খামেনিকে প্রথম বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পরপরই সংস্কারপন্থীরা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং প্রেসিডেন্ট পদ দখলে নেয়। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ছিল।
খামেনি ও তার অনুগত গোষ্ঠী এটিকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। তবে তিনি কঠোর হাতে সংস্কারপন্থীদের রুখে দেন।
পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২২ সালের গণআন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। সর্বশেষ মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরের আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত ও নির্যাতিত হন।
ইরানকে আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেছেন
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত ইরানকে খামেনি একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেন।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সাদ্দাম হোসেনের পতনের ফলে শিয়াপন্থী রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়ারা ইরাকের ক্ষমতায় আসে। এটি ইরানের প্রভাব বিস্তারে অন্যতম বড় নিয়ামক হয়ে ওঠে।
ইরাক হয়ে ওঠে ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষের মূল কেন্দ্র। এই অক্ষের বাকি সদস্য হলো সিরিয়ার আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ২০১৫ সালের মধ্যে এই জোট তার সর্বোচ্চ শক্তিতে পৌঁছায়, যার মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলের দরজায় কড়া নাড়ছিল।
সুদিন আর নেই
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নজিরবিহীন হামলার পাশাপাশি ইরানের এই অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ইসরায়েল। তারপর থেকে গাজায় ক্রমাগত হামলায় ব্যাপকভাবে দুর্বল পড়েছে হামাস।
অন্যদিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপরও বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এমনকি গত বছর দেশটিতে একযোগে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে তারা।
পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্রে বোমা স্থাপন করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সিরিয়া থেকে। সম্প্রতি, ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে সুন্নি বিদ্রোহীরা। এখন দামেস্কে একটি ইরানবিরোধী সরকার ক্ষমতায় বসেছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে ইরানের গড়া ‘প্রতিরোধ অক্ষরেখা’ সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। তার মাঝেই এবার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরান।
আরও পড়ুন: ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
সবশেষ খবর অনুযায়ী, এই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও। ফলে আদর্শ রক্ষার এই লড়াইয়ের বর্তমান বাস্তবতায় খামেনি শেষ পর্যন্ত ইরানের স্থিতিশীলতায় সায় দেবেন, না কি আদর্শে অটুট থাকবেন—তা-ই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
১৬৭ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজতে ইউরোপের তিন পরাশক্তি—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান। এই তিন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ই৩’ নামেও ডাকা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাসের উপস্থিতিতে শনিবার (২১ জুন) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বৈঠকের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা শনিবার জেনেভাতে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর পাশাপাশি ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইইউ প্রতিনিধি ছাড়াও ই৩, অর্থাৎ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে তারা আরাগচির সঙ্গে কথা বলেন এবং পরমাণু আলোচনায় ফেরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ইরানের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর উভয়পক্ষই সরাসরি বৈঠকে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।’ পরের দিন তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের’ সঙ্গে মিলে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, ‘এই বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আমরা তিন দেশই প্রস্তুত। আমরা চাই, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থায়ীভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হোক।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সরাসরি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
ইরানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।… কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় আছে।’
কায়া কাল্লাসও বলেছেন একই কথা। তার ভাষ্যে, ‘ইরান যাতে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো কূটনীতি।’
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইরান। তাদের পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ’ দাবি করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
কূটনৈতিক পথ বন্ধ নয়
গতকাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খুব শিগগির নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার পর ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করা হয়।
এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলা চলাকালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না। তবে কূটনৈতিক পথ যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, সে কথাও উল্লেখ করেছে তেহরান।
এ ছাড়া জেনেভা থেকে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক মিলেনা ভেসেলিনোভিচ জানান, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বকে যুদ্ধের দিকে গড়াতে না দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ট্রাম্পের অবস্থান
এদিকে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।’
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সুসংরক্ষিত ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না, তা-ই এখন বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
১৬৭ দিন আগে
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক
ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের চিফ অফ আর্মি স্টাফ (সিওএএস) ফিল্ড মার্শাল সাইয়েদ অসিম মুনির। এ সময়ে সন্ত্রাসীবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন এমন খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে জেনারেল মুনিরের বৈঠক হয়েছে।
ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো চিফ অফ আর্মি স্টাফের এটিই ছিল প্রথম কোনো মুখোমুখি বৈঠক। এছাড়া সামরিক শাসন কিংবা রাজনৈতিক কোনো পদ না থাকলেও মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে এর আগে কখনো এমন আমন্ত্রণ পায়নি কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে বৈঠক শেষে ক্যাবিনেট কক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন অসিম মুনির।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিফ উইটকফও অংশ নেন। এ সময়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিকও উপস্থিত ছিলেন।
দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাকিস্তানের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, দুই দেশের সন্ত্রাসবিরোধী জোরালো অভিযানেরও প্রশংসা করেন তিনি।
এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে দুই পক্ষ থেকে। এ সময়ে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনি ও খনিজসম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও নতুন নতুন প্রযুক্তির বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাকিস্তানের আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি সমন্বয়ের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাথে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য অংশীদারত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘আঞ্চলিক জটিল সময়ে আসিফ মুনিরের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারও প্রশংসা করেছেন তিনি। পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অসিম মুনির।’
পরবর্তীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ তার সঙ্গে বৈঠক করে আমি সম্মানিতবোধ করছি। তিনি আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন, যে কারণে আজ আমাদের এই বৈঠক হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়ানোয় আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম।’
‘আমি অবশ্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ দিতে চাই, যিনি কিছুদিন আগে এখানে এসেছিলেন,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
১৬৮ দিন আগে
ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইরানের আকামসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত পাঁচদিন ধরেই ইরানের সামরিক ও ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে জায়নবাদী ইসরায়েল।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের আকাশসীমার উপর ‘সম্পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ দাবি করেছেন। তবে পাল্টা দাবিও করেছে ইরান। বলেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত পাঁচদিনে ইরানের ১ হাজার ১০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ‘ইরানের আকাশসীমার উপর এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ ‘ইরানের কাছে ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম প্রচুর পরিমাণে ছিল। কিন্তু আমেরিকার তৈরি সরঞ্জামের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ব্যাপক অভিজ্ঞ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো আর কেউ এটি করতে পারে না।’
পড়ুন: ইরানের নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নিশ্চিত করার একদিন পর এই মন্তব্য করা হলো যে, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। এই পদক্ষেপটিকে তিনি ও ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘প্রতিরক্ষামূলক’ বলে দাবি করেছেন। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে আমেরিকান বাহিনী যোগ দিতে পারে বলে জল্পনা-কল্পনাও রয়েছে।
সোমবার (১৫ জুন) একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা আনাদোলুকে বলেন, হেগসেথ ‘আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রাখার এবং আমেরিকান কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার’ জন্য নেমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে সেন্টকম এলাকার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন।
শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েল বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। যার ফলে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়।
পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনী তা অস্বীকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি পেতে হবে।
সবশেষ বুধবার ইরানের পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েল।
১৬৯ দিন আগে
ট্রাম্পকে শান্তির বার্তা দিলেন রোনালদো
ইরানে ইসরায়েলের হামলার মধ্যে শান্তির বার্তা দিয়েছেন পর্তুগিজ তারকা ফুটবলার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
পর্তুগালের হয়ে ইউফা ন্যাশন্স লিগের জিতেছেন ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলধারী সিআর সেভেন। দেশের হয়ে ফাইনালে গোলও করেছে তিনি।
এ ম্যাচের নিজের স্বাক্ষর করা একটি জার্সি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপহার দিয়েছেন রোনালদো। কানাডার কানানাস্কিসে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে এ উপহারটি দেওয়া হয়েছে।
ওই জার্সিতে লেখা ছিল, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের প্রতি—শান্তির জন্য প্রার্থনা।’
রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টকে যখন জার্সিটি উপহার দেওয়া হয়, তখন তিনি সেটি ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন, যাতে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদোর বার্তাটি স্পষ্ট দেখা যায়।
রোনালদোর সই করা পর্তুগালের জার্সিটি তুলে দেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা। তিনি ট্রাম্পকে জানান, জার্সিতে একটি বিশেষ বার্তা রয়েছে।
বার্তাটি শুনে ট্রাম্প রোনালদোকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তিনিই সর্বকালের সেরা।’
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের এমন বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধ ও সহিংসতা থামিয়ে শান্তির আহ্বান জানানোর জন্য এটি রোনালদোর একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: স্পেনকে হারিয়ে ফের নেশন্স লিগ চ্যাম্পিয়ন রোনালদোর পর্তুগাল
১৭০ দিন আগে
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেন এত বিতর্কিত?
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছেন দেশটির শীর্ষ দুই সামরিক কর্মকর্তা ও ৬ পরমাণু বিজ্ঞানী। শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে চালানো এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রাইজিং লায়ন। নজিরবিহীন এই হামলার মূল কারণই ছিল পশ্চিমাদের ভাষায় ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি।
দীর্ঘদিন ধরে তেহরান দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরান সেটি বরাবরই অস্বীকার করেছে। অন্যদিকেজাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আএইএ) অনেকদিন ধরেই ইরানকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের দায় দিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) প্রায় দুই দশকে প্রথমবারের মতো আএইএ আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানকে এই শর্ত ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আএইএ-এর মতে, ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্ত একটি গোপন ও সমন্বিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়েছিল। তবে ইরান বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পরমাণু চুক্তি-২০১৫ অনুযায়ী, ইরানকে ইউরেনিয়াম সর্বোচ্চ ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময় দেশটি ৩০০ কেজি পর্যন্ত ইউরেনিয়াম মজুদ রাখতে পারত এবং শুধুমাত্র প্রাথমিক মানের আইআর-১ সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করতে পারত— যন্ত্রগুলো দ্রুতগতিতে ইউরেনিয়াম গ্যাস ঘুরিয়ে তা সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়: ট্রাম্প প্রশাসন
কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই ইরান ধীরে ধীরে চুক্তি লঙ্ঘন করে নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়াতে থাকে। তারা ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে শুরু করে। —যা অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ থেকে একটু দূরের পর্যায়।
এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত ইরানকে বিভিন্ন নিষেধাধাজ্ঞা দিয়ে আসছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে পুরোপুরি নিবৃত্ত করতে পারেনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের একজন প্রধান পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। কিন্তু, এতেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেমে যায়নি দেশটির।
ইরান স্পষ্ট করে বলেছে, ইউরেনিয়াম মজুদের ব্যাপারে তারা কোনো আলোচনা করবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আএইএ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এমন তিনটি স্থানে গোপনে পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত চলছে এবং যেখানে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর তথ্য আএইএ-কে জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলা
গত মে মাসের শেষ দিকে আএইএ জানায়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ বেড়ে ৪০৮ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এটিকে আরও সমৃদ্ধ করলে প্রায় নয়টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
১৭৪ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যা দুই দেশের প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লন্ডনে দেশ দুটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুই দিনের বৈঠকের পর নিজের মালিকাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি ও আমার অনুমোদন প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘চীন থেকে প্রয়োজনীয় দুর্লভ ধাতব পদার্থ ও চুম্বক যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে, চীনা শিক্ষার্থীরাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাবেন।’
আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ ধাতু রপ্তানির বিষয়টি লন্ডনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি মদদপুষ্ট ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা হামাসের
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্কারোপ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চীন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেইজিংও মার্কিন পণ্যে উচ্চ শুল্কারোপ করে। পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের হার এপ্রিলে এসে সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশে পৌঁছায়।
মে মাসে সুইজারল্যান্ডে হওয়া আলোচনায় সাময়িক সমঝোতায় পৌঁছায় দুই দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনে এবং চীনও তা ১০ শতাংশে কমিয়ে আনে। পাশাপাশি চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রপ্তানিতে বাধা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে উভয় পক্ষই পরে একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ আনে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীন দুর্লভ ধাতু রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নেয়নি। অপরদিকে, বেইজিং দাবি করে— যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করেছে, চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের তৈরি চিপ ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে এবং চিপ ডিজাইন সফটওয়্যারের রপ্তানি বন্ধ করেছে।
এই সপ্তাহের আলোচনার আগে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা কিছু দুষ্প্রাপ্য খনিজ উপাদান রপ্তানির লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে।
ট্রাম্প শুক্রবার (৬ জুন) জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট শি বাণিজ্য পুনরায় শুরুর বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৭৬ দিন আগে
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: আলোচনায় কূটনীতি, উপেক্ষিত মানবাধিকার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর গতানুগতিক বিষয়টিই যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখন কী বলবেন, কীভাবে বলবেন কিংবা তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে—সেসব অনুমান করা অনেক বিশ্লেষকের কাছে রীতিমত ‘অসম্ভব’।
নিজের মধ্যপ্রাচ্য সফরেও তিনি এ ধারা বজায় রেখেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটিই তার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় সফর। নিজের স্বভাব অনুযায়ী এ সফরকালেও তিনি আলোচনার বিষয়ে ভিন্ন পথেই হেঁটেছেন।
এর আগে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যপ্রাচ্য সফরে মানবাধিকারের মতো বিষয় গুরুত্ব পেলেও কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প; আর মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতেও মানবাধিকারের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে গেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে সময় আরব উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোতে অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘এখন আর সেই দিন নেই যে আমেরিকান কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে এসে আপনাদের শেখাবে—কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে, কীভাবে দেশ চালাতে হবে।’
অনেক বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে ভালো সময় পার করছে রিয়াদ।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে: ইসরায়েলি হামলায় ২২ শিশুসহ ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
তবে সৌদির সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, ব্যবসায়ী, লেখকসহ দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়া আরও অনেকেই তার কথা শুনেছেন। তাদের মত অবশ্য ভিন্ন।
ট্রাম্পের এই ভূমিকাকে একপ্রকার অশনি সংকেত বলে মনে করছেন তারা। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অনিয়মিত বা অসম্পূর্ণ হলেও শক্তিশালী ভূমিকা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত বহন করে।
এ বিষয়ে যুবরাজ সালমানের শাসনামলের প্রথম দিকে জেলে থাকা এক আলেমের ছেলে আবদুল্লাহ আলআউধ বলেন, ‘তার (ট্রাম্প) এই ভূমিকা দেখা সত্যি বেদনাদায়ক ছিল।’
বিশ্বের নানা দেশের সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একপ্রকার একঘরে হয়ে পড়ার পর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করতে রাজপরিবারের শত শত সদস্য, নাগরিক সমাজের কর্মী, অধিকারকর্মীসহ অনেক বন্দিকে মুক্তি দেয় সৌদি প্রশাসন। তবে আবদুল্লাহর বাবা সালমান আলআউধ এখনও কারাবন্দি রয়েছেন।
হতাশ কণ্ঠে আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুবরাজের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছেন, যিনি কিনা আমার বাবাকে নির্যাতন করেছেন, আমাদের পরিবারকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’
আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে সৌদি আরবে আটক ও বন্দি ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে থাকেন। এসব বিষয়ে সৌদি প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প।’ তবে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে মানবাধিকার বিষয়ে ট্রাম্প কোনো আলোচনা করেছেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র টমি পিগট বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনা ছিল ব্যক্তিগত।’
মানবাধিকার ইস্যুতে কম গুরুত্ব
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফরে মানবাধিকার বিষয়ে যতটা গুরত্বের সঙ্গে আলোচনা হওয়া উচিৎ, ট্রাম্পের সফরকালে বিষয়টি সেভাবে মনোযোগ পায়নি।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, এসব দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেলেও জোরালো কণ্ঠে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
এমনকি ট্রাম্পের এবারের বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত নির্বাসিত সৌদি নাগরিকদেরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগের মতো সরব হতে দেখা যায়নি। তাছাড়া ট্রাম্প সৌদিতে বন্দি মার্কিন নাগরিক বা অধিকারকর্মীদের মুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছেন কিনা, এ নিয়েও তেমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়নি তার প্রশাসন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্যে, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার কারণে এমন নীরবতা দেখা যেতে পারে।
অনেকে আবার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের মানবাধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের এই নীরবতা।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প
ইব্রাহিম আলমাদি নামে ফ্লোরিডার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাবা সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক টুইটের জন্য কারাবন্দি হয়েছিলেন। তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাবাকে ফেরানোর জন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বা অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প আর যুবরাজ ভালোবাসার সম্পর্কে রয়েছেন। কেউ যদি একবার ট্রাম্পের কানে বাবার বিষয়টা দিতেন আর তিনি যুবরাজকে বলতেন, আমি নিশ্চিতভাবে বাবাকে ফিরে পেতাম।’
২০১ দিন আগে