পুরান ঢাকা
পুরান ঢাকায় সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত দাবি ফখরুলের
পুরান ঢাকার এক ভাঙারি ব্যবসায়ীসহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারকে স্পষ্টভাবে এই ঘটনাগুলোর দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১৪২ জন শহীদের পরিবারের সঙ্গে শনিবার (১২ জুলাই) এক মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা সতর্ক করে বলেন, যদি তা না করা হয়—তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন জাতি সরকারকে ক্ষমা করবে না। এই সমস্যা সৃষ্টির জন্য সরকারকেই দায়ী করবে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের তাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি আমি ধৈর্য ধরে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি। আমাদের মধ্যে কেউ যেন কোনো অন্যায় কাজ না করে—তা নিশ্চিত করুন। বিএনপি কখনও অন্যায়কে সমর্থন করেনি, করবেও না। বিএনপি সর্বদা আইনের শাসনের পক্ষে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী এবং ছাত্রদলের বীর শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পড়ুন: মিটফোর্ড হত্যায় ভিডিও থাকার পরেও হামলাকারীদের ধরা হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তারেকের
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও কাঠামোর পরিবর্তন চাই। তারপরে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই এবং এর প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন।’
বিএনপি নেতা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির জন্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিকে দায়ী করে বলেন, অপরাধীরা নির্বাচিত সরকার না থাকার সুযোগ নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার অবশ্যই আরও শক্তিশালী এবং জবাবদিহিতামূলক হবে। আমি আশা করি ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’
ফখরুল ছাত্রদলকে তার শহীদ সদস্যদের আত্মত্যাগের লিপিবদ্ধ করে একটি বই তৈরি করার পরামর্শ দেন।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র শহীদদের যথাযথ সম্মান দেবে এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এমন আশ্বাসও দেনে বিএনপির এই নেতা।
ফখরুল জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহতদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের যথাযথ পুনর্বাসন নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
পড়ুন: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: এক আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর, আরেকজনের দায় স্বীকার
১৪৫ দিন আগে
মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী হত্যা: ছাত্রদল নেতা রবিনের দায় স্বীকার
রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন আদলাতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে সেচ্ছায় এ জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জানা গেছে, আসামি তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক।
এর আগে শুক্রবার (১১ জুলাই) রবিনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে সেচ্ছায় জবানবন্দি দেন আসামি রবিন।
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড খুবই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলা অপরটি অস্ত্র মামলা। এরমধ্যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ৫ দিন এবং তারেক রহমান রবিনকে অস্ত্র মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. সোহাগ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে আটক করে। পরে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: তিন আসামিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন যুবদলের
এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন।
১৪৫ দিন আগে
মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড খুবই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুতই হবে: আইন উপদেষ্টা
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
১৪৬ দিন আগে
মিটফোর্ডে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুতই হবে: আইন উপদেষ্টা
রাজধানীর মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যবস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ধারা ১০ এর অধীনে এ বিচার করা হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দিয়ে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পাশবিক এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও লেখেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ধারা ১০ এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন: মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ
গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) সামনে নিজ দোকান থেকে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) টেনেহিঁচড়ে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলাকারীরা তাকে ইট, রড, কংক্রিট ও পাথর দিয়ে উপুর্যুপরি আঘাত করে এবং শরীরের ওপর লাফিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারও করেছে।
১৪৬ দিন আগে
মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং সারা দেশে অব্যাহত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রায় একই সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিলটি শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে রায় সাহেব বাজার, তাঁতিবাজার, নয়াবাজার ও মিডফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে ক্যাম্পাসের ভাষা শহিদ রফিক ভবনের নিচে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন’, ‘বিএনপির অনেক গুণ, দশ মাসে দেড়শ’ খুন’, ‘যুবদলের চাঁদাবাজরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘বিএনপি, ভুয়া ভুয়া’, ‘আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে’, ‘জিয়ার সৈনিক, চাঁদা তোলে দৈনিক’, ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ ইত্যাদি এসব স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সমাবেশে চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে নৃসংসভাবে হত্যাসহ সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম সাম্যের ও শান্তিপূর্ণ একটি বাংলাদেশ, চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু হাসিনা যাওয়ার দিন বিকাল থেকেই একটা দল চাঁদাবাজি শুরু করেছে। শহিদ আবু সাঈদ, শহিদ ওয়াসিম, শহিদ সাজিদের ভাইয়েরা মারা যায়নি। প্রয়োজনে আবার জুলাই হবে।’
আরও পড়ুন: ঢাকায় ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় যুবদলের ২ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শশিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী বলেন, ‘এই পাথরটা আমার ভাইয়ের ওপরে নয়, মনে হয় আমার বুকের ওপর পড়ে। এই ক্যাম্পাসে যেমন ছাত্রলীগ বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে, ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মিলফোর্ডে ঘটেছে। ১০ মাস না যেতেই আপনারা আপনাদের দলের লোকদেরই হত্যা করছেন। হাসিনার দায়িত্ব আপনাদের ওপর দিয়ে যায়নি। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টকে যেভাবে প্রতিহত করেছি, তাদেরও প্রতিহত করতে বাধ্য হব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরও পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে চাঁদা না দেওয়ায় জনসম্মুখে পাথর দিয়ে মানুষ খুন করার মতো ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তারা জুলাইকে ধারণ করতে পারে না। যদি বিএনপি এই ঘটনার বিচার না করে, তবে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলব। আর ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার জনগণের ম্যানডেট নিয়ে বসেছে, কোনো দলের ম্যানডেট নয়। আমরা এর বিচার চাই।’
১৪৬ দিন আগে
ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে ঈদ উদযাপন হতো, সময়ের ব্যবধানে সেসব এখন সুদূর অতীত। ষাটের দশকের জেন-এক্স প্রজন্মের কাছে বর্তমান সময়ের জেন-জি প্রজন্মের ঈদ উদযাপন একেবারেই অচেনা। এর মাঝে পড়ে ঈদ নিয়ে বড় রকমের স্মৃতি কাতরতায় ভোগে নব্বইয়ের দশকের মিলেনিয়ালস প্রজন্ম।
পাকিস্তান আমলের আগে রাজধানী ঢাকার ঈদ উদযাপনের রূপ দেখতে চাইলে ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হবে। তবে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পর সত্তরের দশকের ঢাকার ঈদ উদযাপনের সঙ্গে বর্তমান ঈদের তেমন কোনো মিল নেই—বলছে জেন-এক্স প্রজন্ম।
বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া জেন-জি প্রজন্মের সঙ্গে ১৯৬৫ সালের দিকে জন্ম নেওয়া মানুষের ঈদ উদযাপনের স্মৃতির তেমন কোনো মিল নেই বললেই চলে। যদিও জেন এক্স প্রজন্মের মানুষদের দাবি, তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যারা ১৯৬৫ সালের আগে জন্ম নিয়েছেন, অর্থাৎ যাদের খাতা-কলমে ‘বেবি বুমার জেনারেশন’ বলা হয়, তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বেশ মিল ছিল জেন এক্সদের।
স্মৃতির পাতায় পুরান ঢাকার ঈদ
পুরান ঢাকায় প্রায় চল্লিশ বছর ধরে যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন শাহ আলি মিয়া (৬২)। শৈশবের স্মৃতিচারণা করে রাজধানীর ঈদ উদযাপন নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
স্মৃতির পাতা খুলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা তখনও এতটা বিস্তৃত হয়নি, অভিজাত হয়ে উঠেনি গুলশান-বনানী এলাকা। ঈদের আসল আনন্দ মানেই ছিল পুরান ঢাকার ঈদ উদযাপন।’
‘চাঁদ রাতের সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল ইফতার শেষ করেই চাঁদ দেখতে সদরঘাট-সোয়ারিঘাটে বুড়িগঙ্গার পারে চলে যাওয়া। নদীর পাড়ে বসে স্বচ্ছ জলে চাঁদ দেখার যে চেষ্টা সেটি আজও ভোলার মতো না।’
‘আমাদের বাপ-দাদাদের থেকে শুনেছি সে সময়ের অভিজাতরা আগে থেকেই নৌকা ভাড়া করে রাখতেন। ইফতারের পর নৌকায় করে মাঝ নদীতে যেতেন বন্দুক হাতে চাঁদ দেখতে। নদীর স্বচ্ছ জলে চাঁদ দেখা গেলে বন্দুকে ফাঁকা আওয়াজ করে সবাইকে জানানো হতো আগামীকাল ঈদ। একবার ফাঁকা গুলি ছোড়া শুরু হলে বিভিন্ন নৌকা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলতো এই উদযাপন।’
ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলে চলেন শাহ আলি।
‘ঈদের দিন সকালে প্রথম যে মিষ্টান্ন খেয়ে সবাই নামাজে যেতাম, সেটির নাম ছিল শির খুরমা। সুপারি কাটার সর্তা দিয়ে পাতলা করে কাটা খেজুর আগের রাতে ঘন করে জ্বাল দেওয়া গরুর দুধে ভিজিয়ে রাখা হতো। সকালে এই পানীয় খেয়েই নামাজে রওনা হতাম আমরা।’
শৈশবে শির খুরমা পেয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়সী সফিউল রহমানও। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়েস আর সেমাই সেই জায়গাটি দখল করে নেয় নেয় বলে জানান এই করপোরেট চাকুরে।
বেচারাম দেউড়ি এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘বাপ-দাদাদের সময়েও যে সেমাইয়ের প্রচলন ছিল না, তা নয়। কিন্তু প্যাকেটজাত সেমাইয়ের কদর না থাকায় সে সময়ে চুটকি নামের এক মেশিনে আগের রাতে সেমাই প্রস্তুত করা হতো। নামাজ শেষে ঘরে ফিরলে সেমাই পরিবেশিত হতো।’
‘আশির দশক থেকেই প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ায় আমাদের ঘর থেকে চুটকি বিদায় নিল। আর শির খুরমার জায়গায় লাচ্ছা সেমাইয়ের সঙ্গে মিষ্টি বাকরখানি হয়ে উঠল ঈদের জনপ্রিয় খাবার।’
বর্তমান সময়ে এসেও মিলেনিয়ালস ও জেন-এক্সরা ঈদের দিন সেমাই কিংবা পায়েস খেতেই চান। তবে প্রজন্মের পরিবর্তনে জেন-জির রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। তাদের মধ্যে পুডিং, ফালুদা, ফ্রুট কাস্টার্ডের মতো খাবারের কদর বেশি।
কলেজছাত্র সাইমুন (১৯) তো শির খুরমার নাম পর্যন্ত শোনেননি। ঈদের দিন সকালের ভোজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে বাসার সবাই পায়েস খায়। পায়েস ফ্রিজে রাখলে ভালো লাগে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ডিম, ডাব কিংবা ভ্যানিলা পুডিং। সাত সকালে সেমাই-পায়েস খেতে ইচ্ছা করে না, তাই আম্মু আগের রাতেই পুডিং বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়।’
চাঁদ রাতের ক্বাসিদার জায়গা নিয়েছে নেটফ্লিক্স
পুরান ঢাকায় প্রায় তিন দশক ধরে ছিলেন হোসেন সরদার (৬৭)। পরবর্তীতে বাড্ডায় বাড়ি করে বাস করছেন আরও দুই দশকের বেশি সময় ধরে।
চাঁদ রাত ও ঈদের রাতের আনন্দ নিয়ে হোসেন সরদার বলেন, ‘কৈশোরে সেহরির সময়ে ক্বাসিদা গাইতাম আমরা। এর জন্য আমাদের আলাদা একটি দলই ছিল। এক দলের সঙ্গে আরেক দলের ক্বাসিদা গাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো।’
‘চাঁদ রাতের দিন পুরান ঢাকার গলিতে গলিতে প্যান্ডেল টাঙিয়ে ঈদের দিনের কাওয়ালির প্রস্তুতি নিতো ক্বাসিদার দলগুলো। ঈদের রাতে চলত কাওয়ালি গানের আসর। গভীর রাত অবধি এসব আসরে ছেলেবুড়ো সবাই অংশ নিত।’
তবে বর্তমান সময়ে ঢাকার ঈদ আনন্দে কাওয়ালির স্থান একেবারেই নেই।
ঈদে নব্বইয়ের দশকের প্রজন্মের বিনোদনের বড় খোরাক ছিল ভিসিআরে সিনেমা দেখা। সেইসব দিনের স্মৃতিচারণ করেন ইয়াসমিন জাহান রুমকি (৩৮)।
তিনি বলেন, ‘পুরো ঢাকা শহরজুড়ে সিডির দোকানগুলোতে সিডি ও ভিসিআর ভাড়া দেওয়া হতো। ঈদের রাতে যাদের বাসায় টিভি আছে, তারা ভিসিআর ভাড়া আনত। আশপাশের সবাই জড়ো হতো সেসব বাসায়। রাতভর চলতো সিনেমা দেখা। অনেকে ঈদের দিন হলে গিয়ে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখত। ঈদে সিনেমা দেখা ছিল ঈদ আনন্দের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ।’
জেন-জি প্রজন্ম সিনেমা দেখলেও সেটি এখন আর হলকেন্দ্রিক নেই, হয়ে গেছে সিনেপ্লেক্স-কেন্দ্রিক।
পুরান ঢাকার অলি-গলিতে সাউন্ড বক্সে হিন্দি গান ছেড়ে অনেকে এখন ঈদ উদযাপন করে। একবিংশ শতাব্দীতে যারা জন্ম নিয়েছেন তাদের অনেকেরই পছন্দ, ঈদের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নেটফ্লিক্সে মুভি দেখা কিংবা গেমিং জোনে গেম খেলা।
স্কুলছাত্রী রুশনা (১৬) ঈদ উদযাপন নিয়ে বলে, ‘ঈদের রাতে বাসায় সব ভাইবোন মিলে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা কিংবা কার্ড খেলা একরকমের ট্রেডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুদের অনেকে আবার প্লে-স্টেশনে সবাই মিলে টুর্নামেন্ট খেলে। এদিন পড়ালেখার চাপ থাকে না। তাই ঈদ উদযাপনও যে যার মতো করে করে।’
ঘোড়দৌড়ের মাঠ থেকে ঈদ আনন্দ ঢুকেছে রেস্তোরাঁয়
মুঘল আমলে সম্রাট-সুবেদাররা ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন হাতির পিঠে চড়ে। জেন-এক্স হাতির বহর না দেখলেও ঘোড়ার স্মৃতি তাদের মানসপটে আজও অমলিন।
সিরাজুল হক (৬৯) বলেন, ‘আগে ঈদের দিন তৎকালীন রেসকোর্সে ঘোড়দৌড় ছিল এক রকমের ঐতিহ্য। স্বাধীনতার পর রেসকোর্স থেকে ঘোড়দৌড় তুলে দেওয়া হলেও ঢাকার প্রায় প্রতিটি মাঠে স্বল্পপরিসরে ঘোড়দৌড়ের ব্যবস্থা থাকত। ঘোড়দৌড়কে কেন্দ্র করে মাঠে এবং এর আশপাশে মেলা বসত। শিশুকালে এই মেলার রঙ-বেরঙয়ের হাতেগড়া খেলনাই ছিল আমাদের ঈদ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।’
নব্বইয়ের দশকেও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ঘোড়দৌড় ও নৌকাবাইচ ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতো। এছাড়া ঘোড়দৌড় কমে গেলেও ঈদ মেলা ছিল বহুকাল ধরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ব্যাংক কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম (৩২) বলেন, ‘আমি একেবারে যখন ছোট, বয়স পাঁচ-সাত হবে, তখন বাজারে এক ধরনের খেলনা আসল; নাম কাটিস পিস্তল। স্টিলের এই পিস্তলে বারুদের পাতা ভরে চাপ দিলেও ঠাস করে শব্দ হতো। ১৫ টাকা দামের সেই পিস্তল কেনার জন্য ছেলেরা বাবার কাছে বায়না ধরত। মেয়েদের আগ্রহ থাকত নানান রঙের বেলুন, পুতুল, বাঁশি আর হরেক রকমের লিপস্টিকের দিকে।’
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ঈদ মেলা তার জৌলুশ হারিয়েছে। জেন-জি প্রজন্মের বড় অংশের পছন্দ ঈদের দিন দুপুরে কিংবা দুপুরের পড়ে বন্ধুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় আড্ডা দেওয়া। অনেকে আবার ঢাকার আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে যাওয়াও পছন্দ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাফওয়ান (২৩) বলেন, ‘বেশিরভাগ ঈদে গ্রামে যাওয়া পড়ে। কিন্তু ঢাকায় ঈদ করা মানেই দুপুরে কিংবা বিকালে সবাই মিলে রাজধানীর ভালো রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দেওয়া, খাওয়া দাওয়া করা। ঈদের দিন ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকে বলে অনেক সময়ে বাইকে করে ঢাকার নানা জায়গা ঘুরে বেড়ানোও হয়।’
ঢাকায় রেস্তোরাঁর আধিক্য প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক শোয়েব-উর-রহমান বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের কাছে রাজধানীর ঈদ অনেকটাই রেস্টুরেন্ট-কেন্দ্রিক। সিঙ্গাপুরের শহরেও এত রেস্টুরেন্ট দেখা যায় না। পরিকল্পিত নগরায়নের ধার না ধেরে তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে হাজারের মতো রেস্টুরেন্ট। আর এসব রেস্টুরেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানীতে উদযাপিত ঈদ আনন্দ।’
ঈদ সালামির রূপান্তর
ঈদ আনন্দের আরেকটি বড় অংশ সালামি দেওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের আদলে বর্তমানে অনেকে এটিকে ঈদি বললেও সালামির বুৎপত্তিগত প্রচলনে আসেনি বড় কোনো পার্থক্য, শুধু বদলে গেছে সালামি দেওয়ার মাধ্যম।
ষাটোর্ধ্ব হুসনে আরা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমাদের সময়ে ধারণা ছিল, বাচ্চাদের হাতে টাকা দিলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই একেবারে বাচ্চাদের টাকা না দিয়ে খেলনা বা খাবার জাতীয় উপহার দেওয়া হতো সালামি হিসেবে। যাদের বয়স ১২ পেরিয়ে গেছে—এমন বাচ্চাদের নতুন নোটে সালামি দেওয়া হতো।’
হুসনে আরার কথায় সায় দিয়ে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া রাওয়াতুন নবীও (২৯), ‘এখনও নতুন নোটে সালামি পেতে খুব ভালো লাগে। সালামির পাশপাশি আরেকটি সুন্দর উপহার ছিল ঈদ কার্ড। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত ছিল ঈদ কার্ডের দাম। অতি যত্নে নতুন টাকার নোট আর ঈদ কার্ড জমিয়ে রাখতাম আমরা।’
তবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) আর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের হাত ধরে বড় পরিবর্তন এসেছে চিরেচনা সালামি আর ঈদ শুভেচ্ছায়।
একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে শিক্ষানবিশ আদিবা আফরোজ লিলি (২৩) বলেন, ‘অনেক সময়ই সালামি দেওয়ার মতো নতুন নোট থাকে না হাতে। অনেক সময় যার কাছে সালামি চাচ্ছি সে আবার কাছে নেই। ডিজিটাল মাধ্যমে সালামি দিলে এসব কোনো ঝামেলাই না। ঈদ কার্ডের জনপ্রিয়তা এখনও আছে। তবে শুধু হাতে দেওয়া ঈদ কার্ডের বদলে এখন মোবাইলে মোবাইলে ডিজিটাল কার্ড পাঠানো হয়।’
উদযাপনেও হাতুড়ির ঘা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ঢাকার মূল নগরী পুরান ঢাকায় ১ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। সেখানকার বেশিরভাগ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জনের নিচে।
এমনিতেই জেন-জি প্রজন্মকে বলা হয় আত্মকেন্দ্রিক। তার মধ্যে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের জয়জয়কারে ঈদের মতো এমন আনন্দ উৎসবও দিন দিন সীমিত হয়ে উঠছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার ঈদ এখন সীমিত ও সংকীর্ণ। যেসব মাঠে মেলা বসতো, পাড়া-মহল্লার ছেলেরা একসঙ্গে খেলাধুলা করে বন্ধু হয়ে উঠতো, উৎসবে-আনন্দে এক হয়ে উদযাপন করতো, সেসব মাঠই এখন বিলীন হয়ে গেছে। পরিবার ও সমাজের যৌথ কর্মকাণ্ড ভেঙে যাওয়ায় ঈদ আনন্দও ছকে বাধা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকার ঈদকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলে সবার আগে নগরের এই গুমোট অবস্থায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধন মজবুত হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের দূরত্ব ঘুচবে এবং উৎসবের আনন্দও ছড়িয়ে যাবে মানুষে মানুষে—এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
২৪৮ দিন আগে
ইসলামবাগের আগুন নিয়ন্ত্রণে
রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামবাগের কামালবাগ এলাকার একটি বাড়িতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টা ১৭ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট।
বিকাল ৪টা ২৭ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান।
তিনি জানান, ভবনটির নিচতলায় প্লাস্টিক দ্রব্যের কারখানা এবং উপরে বাসা ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের তৎপরতার কারণেই আশপাশের ভবনগুলো আগুনে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে ও কীভাবে হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী নজমুজ্জামান বলেন, ‘সঠিক তথ্যের অভাবে আমরা এখনও আগুন লাগার সঠিক কারণ জানতে পারিনি। তবে (আগুন) পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলার পর তদন্তের মাধ্যমে এর কারণ জানতে পারব।’
আরও পড়ুন: রাজধানীর ইসলামবাগে ভবনে আগুন, আশপাশে ছড়িয়েছে আতঙ্ক
তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন তিনি।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কতগুলো ঘর পুড়েছে, তাও এখনও নিশ্চিত নয়। তবে কাউকে এ পর্যন্ত নিহত বা আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়নি। ফলে হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে না।
এর আগে, আজ বিকালে আগুন লাগার খবরে ভবনটির আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
২৯২ দিন আগে
পুরান ঢাকায় হরিজন উচ্ছেদ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন চুন্নু
পুরান ঢাকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদ না করে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার (১২ জুন) সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এই আহ্বান জানান।
চুন্নু বলেন, ' আমি সংসদ নেতাকে অনুরোধ করব, বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত মানবিক কারণে তাদের উচ্ছেদ না করতে।’
তিনি উল্লেখ করেন, হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা কয়েক দশক ধরে ঢাকা শহরের কিছু এলাকায় বসবাস ও সেবা করে আসছে।
পুরান ঢাকার বংশালের আগা সাদেক রোডের কাছে মীরনজিলা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের কথা উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংক সংকট সমাধানে সরকার ব্যর্থ : জিএম কাদের
তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের বসবাসের জায়গায় বাজার তৈরি করতে চায়।’
তিনি উল্লেখ করেন, এটি সত্য যে এই জায়গার মালিক নয় হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ নয়।
‘কিন্তু তারা যুগ যুগ ধরে সিটি করপোরেশনের এই জায়গায় আছে, তাদের উচ্ছেদের আগেই বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।’
তিনি বলেন, গতকাল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে হরিজন শিশুরা রাস্তায় শুয়ে পড়ে। ‘ফলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, একজন কর কমিশনার গ্রামীণ ফোনসহ চারটি মোবাইল কোম্পানির ১৭০ কোটি টাকা মওকুফ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থসচিব ও অর্থমন্ত্রী কোথায়? দেশের স্বার্থে এটাকে যথাযথভাবে দেখতে হবে।’
আরও পড়ুন: সিন্দবাদের দৈত্যের মতো দেশ শাসন করছে আ.লীগ সরকার: জিএম কাদের
৫৪০ দিন আগে
ঈদের পরে পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান: ডিএসসিসি মেয়র
ঈদুল ফিতরের পরে পুরান ঢাকার অবৈধ রাসায়নিক গুদামগুলোর বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) উদ্যোগে মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মেয়র তাপস বলেন, ‘পুরাতন ঢাকায় আমরা আর ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে পারি না। কিছুদিন আগে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ও এটা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ইতোমধ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তরের জন্য যে গুদামঘর ও কারখানা প্রয়োজন তা শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে শ্যামপুরে শিল্পাঞ্চল করে দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকায় যারা রাসায়নিক ব্যবসা করছেন তাদের প্রতি আমার নিবেদন এবং কঠোর হুঁশিয়ারি থাকবে। আপনারা আইন অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সেখানে স্থানান্তরিত হোন। না হলে ঈদের পরে আমরা চিরুনি অভিযান করব।’
রাসায়নিক দ্রব্যাদির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এমন ভবনগুলো সিলগালা করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, সেখানে তালিকাভুক্ত ১৯২৪টি রাসায়নিক দ্রব্যাদির গুদাম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মেয়র বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সেখানে ব্যবসা করছেন। আমরা ঈদের পরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে সবগুলো বন্ধ করে দিব। সেসব ভবনের উপরে অনেকেই আবাসন হিসেবে ব্যবহার করেন আবার নিচে গুদামঘর। এটি অত্যন্ত বিপদজনক। তাই প্রয়োজনে সেসব ভবন সিলগালা করে বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ করে দেব। এতে পুরো ভবন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন যে ভোগান্তি হবে সেজন্য আপনারা আমাদের দোষারোপ করতে পারবেন না।’
ডিসিসিআইর সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মো. আব্দুল বাকী মিয়াসহ পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতারা।
৬১১ দিন আগে
পুরান ঢাকায় ছাপাখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে
শুক্রবার রাতে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিতে একটি ছাপাখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে জিনাত প্রিন্টিং ওয়ার্কস লিমিটেডে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরাও।
আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: উত্তরার কাঁচাবাজারের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে
বঙ্গবন্ধু টানেলের পরিত্যক্ত ওয়্যার হাউজে আগুন নিয়ন্ত্রণে
৬২৯ দিন আগে