গ্যাস সংকট
গ্যাস সংকট: সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে
সিলেটে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
গ্যাস সংকট নিরসনসহ ৫ দফা দাবিতে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে সিলেট জেলাজুড়ে এ ধর্মঘট শুরু করেছেন তারা।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
ধর্মঘটের ফলে পরিবহন সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। সিলেট নগরীসহ সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক প্রায় যানবাহন শূন্য রয়েছে। এতে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না যানবাহন। বিশেষ করে সকালে যানবাহন না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে প্রত্যেক মাসের ১৮ থেকে ২০ দিন পর থেকেই পাম্পগুলোতে অনুমোদিত লোড শেষ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সিএনজিচালিত যানবাহনের চালকরা।
এরই প্রেক্ষিতে গত রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলায় সিএনজিচালিত সব যানবাহনের সিএনজি লোডিংয়ে সব সংকট ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবিতে মানববন্ধন করে পরিবহন শ্রমিকরা।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সিলেটবাসী গ্যাস সংকটের কারণে দুর্ভোগে রয়েছে। বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস পাচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: বরগুনার সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট চলছে
বিগত কয়েক বছর থেকে গ্যাস সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় মন্ত্রী ও এমপিদের অবহিত করার পরও সমাধান হচ্ছে না।
এ সময় মঙ্গলবারের (২৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে গ্যাসের লোড বৃদ্ধি ও সংকট সমাধান না হলে বুধবার থেকে সিলেটের সব সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানান পরিবহন নেতারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমদ বলেন, বুধবারের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে বৃহস্পতিবার থেকে বিভাগজুরে ধর্মঘট পালন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ধর্মঘটের সঙ্গে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মত দিয়েছেন তারাও তাদের দাবি নিয়ে ধর্মঘট পালন করবেন।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ধর্মঘটে বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি ৬ দিন বন্ধ
শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশজুড়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে গ্যাস সরবরাহ। বর্তমানে যেখানে গ্যাসের প্রয়োজন ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট পার ডে), সেখানে সরবরাহ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি। প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বা সিলিন্ডার গ্যাসের দিকে। কিন্তু এগুলোর দামের অসঙ্গতি এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে জনজীবন শিকার হচ্ছে নানা বিড়ম্বনার। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা লাকড়ি বা মাটির চুলা ব্যবহার করতে পারলেও শহরের বাসাবাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্না করা দুরূহ। এমতাবস্থায় জরুরি হয়ে পড়েছে রান্নার জন্য গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা। তাই চলুন, গ্রাম বা শহরে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্নার করার উপযুক্ত কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গ্যাস ছাড়া রান্নার জন্য কয়েকটি আধুনিক চুলা
ইন্ডাকশন চুলা
তাড়িৎ চৌম্বক শক্তিকে ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তাপশক্তির যোগান দেয় ইন্ডাকশন চুলা। এর কাঁচ-সিরামিক প্লেটের নিচে থাকে তামার কয়েল, যেটি তাড়িৎ চৌম্বক শক্তির যোগান দেয়। প্লেটের উপর নির্দিষ্ট দাগাঙ্কিত স্থানে রাখা হয় রান্নার পাত্র।
বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা অবস্থায় চৌম্বক পদার্থের তৈজসপত্র রাখা হলে চুলাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শেষে পাত্র সরিয়ে ফেলা হলে চুলা সঙ্গে সঙ্গেই তাপ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে অধিকাংশ স্টেইনলেস-স্টিল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রয়েছে কাস্ট আয়রন এবং এনামেল্ড ঢালাই লোহা।
আরও পড়ুন: তীব্র গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরবাসী
এই চুলাগুলো সহজে পরিষ্কারযোগ্য এবং অল্প তাপেই গ্যাস ও অন্যান্য সাধারণ বৈদ্যুতিক চুলার থেকে দ্রুত রান্না করতে পারে। ইন্ডাকশন চুলা বিভিন্ন পাওয়ার রেটিংয়ের ভিত্তিতে ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার হয়ে থাকে। বাজারে সাধারণত ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াটের চুলাগুলো বেশি পাওয়া যায়। ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য যাবতীয় রান্নার কাজ এই চুলা দিনে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় সম্পন্ন করতে পারে। ফলে আবাসিক এলাকার সর্বোচ্চ ইউনিট রেট হিসেবে মাসে বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে ৯০০ থেকে ৯৬০ টাকা।
ইনফ্রারেড চুলা
বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে আভ্যন্তরীণ তামার কয়েলকে উত্তপ্ত করে রান্নার জন্য তাপ উৎপন্ন করে ইনফ্রারেড চুলা। এগুলো মূলত হ্যালোজেন লাইট (যা ইন্ডাকশন লাইট নামেও পরিচিত) ব্যবহার ইনফ্রারেড বিকিরণ প্রক্রিয়ায় পাত্র গরম করে। এগুলোতে ইন্ডাকশন চুলার মতো নির্দিষ্ট কোনো তৈজসপত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নেই। তবে চুলার পৃষ্ঠের সঙ্গে সমতলে থাকা অর্থাৎ ফ্ল্যাট পাত্রগুলোতে গরম করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।
গ্যাস সংকট: ৪ সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ
চট্টগ্রামে আবাসিক গ্যাস সংকট কিছুটা কমলেও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট এখনো কাটেনি।
গত ৯ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সহ চারটি সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অন্য তিনটি সার কারখানা হলো- কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), সিইউএফএল এর ডিএপি-১ ও ডিএপি-২ ইউনিট।
গ্যাস সংকটের পাশাপাশি কারখানাগুলোয় চলমান কারিগরি সমস্যাকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
জানা গেছে, গত ১৯ জানুয়ারি সকাল থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দুই দিন পর আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট থেকেই যায়। গ্যাসের চাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভারী শিল্প কারখানাগুলোকে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ফলে গত ৯ দিন ধরে চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: তীব্র গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরবাসী
এদিকে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই আবার কারখানা চালু হবে বলে জানান, সিইউএফএলের কর্মকর্তারা।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে গত ১৯ জানুয়ারি রাত থেকেই সিইউএফএল কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধের আগ পর্যন্ত সিইউএফএল থেকে প্রতিদিন ১২০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হতো।
দেশে সার উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে কাফকো ও সিইউএফএল।
কেবলমাত্র কাফকো থেকেই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন সার দেশের বিভিন্ন গুদামে পাঠানো হয়। দেশে মোট ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন দেশীয় কারখানাগুলো উৎপাদন করে। বাকি ১৭ লাখ টন কাফকো ও বিদেশ থেকে আমদানি করে।
তবে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এবং কারখানার যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ শেষ হলে- পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
গ্যাস বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল) সূত্র বলছে, প্রথমে কারিগরি সমস্যার কারণে চট্টগ্রামের কাফকো ও সিইউএফএল এর কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়, পরে গ্যাস সংকটে ব্যাহত হয় উৎপাদন। এরপরে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পরে, আবারও কারিগরি সমস্যায় বন্ধ হয় উৎপাদন।
চট্টগ্রামে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্প কারখানায় দৈনিক চাহিদা ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের।
এর মধ্যে চাহিদার দুই–তৃতীয়াংশ পরিমাণ গ্যাসও পাচ্ছে না কারখানাগুলো।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকট পুঁজি করে সিলিন্ডার ও বৈদ্যুতিক চুলার দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরামিকস ছাড়া চট্টগ্রামে নিবন্ধন করা কারখানা আছে ৪ হাজার ৯৪৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪টি পোশাক কারখানা, বাকি ৩ হাজার ৯২৫টি নন-আরএমজি কারখানা।
আর ছোট-বড় মিলিয়ে চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা রয়েছে ২৯টি। অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানা আছে ৮টি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনছেন কারখানা মালিকরা। এতে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রামের শিল্প খাত।
দেশের অন্য অঞ্চলে নিজস্ব গ্যাসকূপ থেকে সরবরাহ দেওয়ায় সেখানে গ্যাসের সংকট খুব বেশি নেই। এলএনজি টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তাই এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হলেই চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। আর তাতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২০০-এর বেশি শিল্পগ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম, জিপিএইচ ইস্পাতসহ বড় বড় কারখানা আছে ১৫ থেকে ২০ট। এর বাইরে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি সার কারখানা ও রাউজান ও শিকলবাহায় দুইটি করে চারটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে।
সরকারি এই সাতটি প্রতিষ্ঠানসহ সবগুলো শিল্প কারখনা ও আবাসিক গ্রাহককের গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া বেসরকারি শিল্প কারখানা ও আবাসিক গ্রাহকদের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালীতে স্থাপন করা দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকেই গ্রাহকদের এই গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
এরই মধ্যে শনিবার ভোর থেকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা। বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানের সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: কনকনে শীতেও তীব্র গ্যাস সংকটের মধ্যেই চলছে লোডশেডিং
গ্যাস নিয়ে শিল্প কারখানাগুলোর টালমাটাল অবস্থা হলেও এ নিয়ে অন্য কথা বললেন বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, গ্যাসের প্রেশারের এখন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সাধারণ যেসব গ্রাহক রয়েছে- শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বাসাবাড়ি, তাদের স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
তবে যারা বাল্ক গ্রাহক, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা, সেগুলোর মধ্যে কাফকোকে স্বল্প পরিমাণ করে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। কারণ উপর থেকে নির্দেশনা এসেছে।
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকট পুঁজি করে সিলিন্ডার ও বৈদ্যুতিক চুলার দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা
গ্যাসের তীব্র সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আবাসিক গ্রাহকরা এলপিজি সিলিন্ডার, বৈদ্যুতিক চুলা (ইন্ডাকশন) ও অন্যান্য চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে এই সংকটময় পরিস্থিতিকে পুঁজি করে গ্যাস সিলিন্ডার ও বৈদ্যুতিক চুলার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানান, নামকরা একটি কোম্পানির ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয় দোকানিরা নামকরা কোম্পানির সিলিন্ডারের জন্য ১ হাজার ৫৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কনকনে শীতেও তীব্র গ্যাস সংকটের মধ্যেই চলছে লোডশেডিং
বন্দর এলাকার চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা আমিনা বেগম বলেন, ‘গ্যাস না পাওয়ায় এখন বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছি।’
বৈদ্যুতিক চুলার কারণে মাসিক বিদ্যুৎ বিল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হযে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যুতের এই বাড়তি বিল গৃহস্থালির ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্যাস সংকট শুধু নারায়ণগঞ্জ সদরেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং পাইকপাড়া, বাবুরাইল, দেওভোগ, নিমতলা, নিতাই গঞ্জ, তামাকপট্টি, আমলাপাড়া, কালিয়ার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।
এসব এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস কোম্পানির অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
বিশেষ করে কাশীপুর, মাসদাইড় ও বারাইভোগের মতো এলাকায় বাসিন্দাদের ভোগান্তি তীব্র হয়েছে।
স্থানীয় একটি সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা’ উদ্যোগ গ্রহণ করে তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।’
তিতাস গ্যাসের কর্মচারীদের অপতৎপরতাকেই চলমান গ্যাস সংকটের মূল কারণ উল্লেখ করে তা বন্ধের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সংগঠনটির সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: দু-একদিনের মধ্যে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বাড়বে: নসরুল হামিদ
খুলনায় এলপি গ্যাস সংকট, বিপাকে ক্রেতারা
খুলনার বাজারে হঠাৎ করে এলপি (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম) গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা টাকা দিয়েও গ্যাস কিনতে পারছেন না।
গ্যাস নিয়ে লুকোচুরির কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে গেছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ায় বেশি দাম দিয়েই গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
আরও পড়ুন: এলপি গ্যাসের দাম কেজি প্রতি কমল ৮.৬৮ টাকা
গত কয়েকদিন নগরীর শেখপাড়া, ময়লাপোতা মোড়, সঙ্গিতা সিনেমা হলের মোড়, শেখপাড়া বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজারসহ ১০টির বেশি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে দু-একটি কোম্পানির বাইরে কোনো এলপি গ্যাস সিলিন্ডার নেই। আগে যেখানে তারা ছয়-সাতটি কোম্পানির এলপি গ্যাস রাখতেন, এখন তারা দু-তিনটি কোম্পানির কাছ থেকে সিলিন্ডার গ্যাস পাচ্ছেন। খালি সিলিন্ডার পড়ে আছে অনেক বিক্রেতার দোকানে।
নগরীর শামসুর রহমান সড়কের এলপি গ্যাস বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি মাসে ছয়টি অপারেটরের প্রায় ২০০টি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করেন তিনি। অপারেটরদের কাছ থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় গত মাসে তার ৪০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে।
তিনি জানান, বেশি দাম দিয়েও এলপি গ্যাস দোকানে তুলতে পারছেন না তিনি। স্বাভাবিক সরবরাহ দেয়া কোম্পানিগুলো এখন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও পাবেন কিনা সে আশা পাচ্ছেন না তিনি।
একই কথা জানান গোবরচাকা বউ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সবুজ। তিনি জানান, প্রতি মাসে দুটি এলপিজি কোম্পানি অন্তত ৫০টি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করলেও এখন ঠিকমতো পণ্য পাচ্ছেন না। গ্যাসের সংকট জানিয়ে সরবরাহকারীরা পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছেন না। তবে বেশি দাম অফার করলে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সরবরাহ কমার বিষয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য দিতে নিষেধ রয়েছে বলে জানান কয়েকজন।
তাদের ভাষ্য মতে, ডলার সংকটে পণ্য আমদানিতে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় বেশির ভাগ কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে লোকসানে পড়েছে। এরই মধ্যে সব কোম্পানির বিপণন ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে।
নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে (২ জানুয়ারি) এলপি গ্যামের দাম কমিয়ে দেয় সরকার। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৫ টাকা কমিয়ে এক হাজার ২৩২ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।
দাম কমানোর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল জানান, ডিসেম্বর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস প্রতি মেট্রিক টন ৬৫০ মার্কিন ডলার ছিল। জানুয়ারি মাসে যা কমে যায় ৫৯০ ও ৬০৯ ডলারে।
কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক হাজার ৩৫০ টাকার নিচে কোনো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বসন্ধুরা গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় ওই গ্যাস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ টাকায়। আবার কোনো কোনো বিক্রেতা ১৫০০ টাকায়ও গ্যাস বিক্রি করছেন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা এলপি গ্যাস দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তোবারক হোসেন তপু বলেন, কোম্পানিগুলো গ্যাস দিচ্ছে না। ৫০ সিলিন্ডার চাইলে ১০টি দিচ্ছে। তারা আমাদের বলছে, এলসি খোলা যাচ্ছে না, ডলার সংকট। সত্য-মিথ্যা তারাই জানে।
তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের হাতে কিছু নেই। গ্যাস বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে ৮/১০টি কোম্পানি। তারা যা বলবেন, সেটাই মেনে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় এলপি গ্যাস ক্রস ফিলিং চক্রের ৩ সদস্য আটক
খুলনায় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ঊর্ধ্বমুখী
দেশব্যাপী গ্যাস সংকট চললেও থেমে নেই সিলেটে নতুন অনুসন্ধানের কাজ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন গ্যাসের উৎস অনুসন্ধানে সরকার যথেষ্ট কাজ করেনি এমন সমালোচনার মধ্যেও পেট্রোবাংলা সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের অধীনে বিয়ানীবাজার এবং এর পার্শ্ববর্তী বড়লেখা ও কানাইঘাট উপজেলায় অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, নতুন গ্যাসের উৎস অনুসন্ধানের আশায় নতুন কূপ খননের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকায় অনুসন্ধান কাজের অংশ হিসেবে ভূকম্পন (সিসমিক) জরিপ চলছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আরও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে আমরা বুঝতে পারব নতুন এলাকায় গ্যাসের মজুদ আছে কি না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের দিকে যাব।’
তিনি বলেন, তিনটি উপজেলার ১৯১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনার জন্য চায়না পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ইজিপি ইন্টারন্যাশনালকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পের ২৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট গ্যাসফিল্ডের ১০ নম্বর কূপে খনন করবে চীনের ‘সিনোপেক’
ঢাকায় পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেন, নতুন কূপ খননের উদ্যোগটি ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল সময়কালে মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও কূপ খনন করার কাজ সরকারের পরিকল্পনার অংশ, যা গ্যাস সংকটের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎস থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে পারে।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান দেখায় যে দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন বলছে, সারাদেশে তাদের কারখানায় গ্যাস সরবরাহ না হওয়ায় তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরেকটি উন্নয়নে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের একটি পরিত্যক্ত কূপের (কূপ-১) পুনরায় খনন কাজ শুরু করেছে।
এ কূপ থেকে প্রতিদিন ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই কেন্দ্রে দুইটি কূপ রয়েছে। ১৯৯৯ সালে কূপ-১ এর গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে তা বন্ধ করা হয়। ২০১৬ সালের শুরুতে আবার সেই কূপ থেকে উৎপাদন শুরু হয় এবং সেই বছরের শেষের দিকে আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: খালি হাতে ফিরিনি, তেল-গ্যাসের নিশ্চয়তা বড় অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
মিজানুর রহমান জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে আরও তিনটি কূপ খনন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২৫ সালের মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন যে ২০১৫ সাল থেকে স্থানীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে এবং নতুন অনুসন্ধানের কাজ না করা হলে ভবিষ্যতে এই হ্রাস অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: প্রিপেইড গ্যাস মিটারের আওতায় আসছে সিলেট
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমলে সরকার হ্রাস করবে: নসরুল হামিদ
বর্তমান জ্বালানি ও গ্যাস সংকটকে সাময়িক আখ্যায়িত করে কয়েক মাস ধৈর্য ধরতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি-বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের দাম কমলে আমরা নিশ্চিতভাবে সে অনুযায়ী স্থানীয় দাম সমন্বয় করব।’
রবিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দয়া করে, এক-দুই মাস ধৈর্য ধরুন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হোন। আগামী মাসের শেষের দিকে সরকার লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসবে।’
তার দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সরকার পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে যা বিশ্ব বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বত্র এবং আমরা এর বাইরে নই’, যোগ করেন তিনি।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্যাস কোম্পানি শেভরন যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা: অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এফইআরবির সভাপতি শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম ও অধ্যাপক এম শামসুল আলম। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহ অনুষ্ঠানটির সঞ্চলনা করেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার প্রধানমন্ত্রীর
পেট্রোলিয়ামের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের সংকট ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় বিরোধীদল বিএনপির নিন্দা করেন নসরুল।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই করেনি। এ কারণেই তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
বিএনপির সময়ে দিনে ১৬-১৭ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকত বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে গ্যাস নেয়ার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের অনুমতির বিষয়ে ভারতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি।
তিনি বলেন, ওই গ্যাস লাইন নির্মিত হলে আমরা মিয়ানমার থেকে কম দামে গ্যাস পেতাম।
তিনি বলেন, ‘অনেক ভূতাত্ত্বিক ও বিশেষজ্ঞ আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তারা পরামর্শ দিয়েছেন এলএনজি আমদানি করা ভালো হবে। কারণ আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে গ্যাস পেতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।’
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনোকোফিলিপসসহ তিনটি বিদেশি কোম্পানিকে উপকূলীয় এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চুক্তি দেয়া হয়েছিল।
প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘কিন্তু একপর্যায়ে তারা গ্যাস ব্লকগুলো ছেড়ে দেয় এই বলে যে গ্যাস উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। কারণ তারা কম দামে অন্যত্র গ্যাস পেয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ হাজার ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক বিডিংয়ের জন্য সরকার বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি এর প্রতিবেদন পাব এবং উপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সাম্প্রতিক দশকে গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগের অভাবে জ্বালানি খাতের সমস্যা বর্তমানে শাখা ও উপ-শাখায় প্রসারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কার করেছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী গ্যাস ব্লক-১১ এ গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারেনি বাংলাদেশ। কেন আমরা আমাদের এলাকায় অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হলাম এই প্রশ্নের উত্তর জরুরি।’
এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলপিজির মতো পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম নির্ধারণের বৈধ কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আইনকে অমান্য করে পেট্রোলিয়ামের দাম নির্ধারণ করেছে যার কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ছে
দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। কারণ গ্যাসের বিশাল ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী, দেশে রবিবার ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। যদিও ১২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বাভাস ছিল।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘স্পষ্টতই কর্তৃপক্ষকে প্রাক্কলিত পরিমাণের চেয়ে বেশি লোডশেডিং হবে।’
সরকারী তথ্য অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে ১২ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ১৫০০ মেগাওয়াট ব্যবধান।
বিপিডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন ‘এই ব্যবধান লোডশেডিং এর মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।’
সাধারণত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৩০০-১৪০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠা-নামা করে এবং এই বছরের ১৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা তিনগুণ বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী
বিপিডিবির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৪০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ২০০ মেগাওয়াট, খুলনায় ২২০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ২২০ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১৪০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১২০ মেগাওয়াট, সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট এবং গত রংপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল।
অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিপিডিবি’র পরিসংখ্যান বিশ্বাস করেন না। বরং লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শামসুল আলম। ‘বিপিডিবি কখনই তার পাওয়ার সাপ্লাই পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না।’
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক গ্রাহকই ব্যাপক লোডশেডিং এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার ভোক্তা হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হয় এবং প্রতিবারই আধা ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, নাখালপাড়া, শান্তিনগর, মগবাজার, নিকেটন, গুলশান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডাসহ অন্যান্য এলাকার গ্রাহকেরাও জানিয়েছেন।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এ ধরনের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ
বিপিডিবি কর্মকর্তারা গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসকে দায়ী করেছেন।
তারা জানান, তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারণে ৩৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন: ‘গ্যাসের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহের উন্নতি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাধারণত স্বাভাবিক হবে।’
তিনি আরও দাবি করেন, যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমি সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি না করার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে।
বিশ্ব বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৩৫ ডলারের বেশি বিক্রি হচ্ছে, যেখানে কয়েক মাস আগে তা ছিল ২৫ ডলারের নিচে। ফলস্বরূপ, স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে প্রতিদিন দুই হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। যার ফলে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এর ঘাটতি সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: শতভাগ বিদ্যুতায়ন একটি যুগান্তকারী অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীতে গ্যাস সংকট বৃহস্পতিবার থেকে আরও কমতে পারে
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে প্রতিদিন ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস (এমএমসিএফডি) সরবরাহ করতে পারে যা রাজধানীতে গ্যাস সংকট আরও কমাবে।
বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই সংকটের সময় গ্রাহকদের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ তথ্য জানিয়েছে।
বর্তমানে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ১২০০ এমএমসিএফডি উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ১১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন করছে।
সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ২৯৫০ এমএমসিএফডিসহ একটি এলএনজি কার্গো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে।
আরও পড়ুন: বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রসেস ট্রেনের একটিতে উৎপাদন পুনরায় শুরু
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন আরও সময় লাগছে।
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে রমজানের প্রথম দিন রবিবার দেশের গ্যাস উৎপাদন প্রায় ৪৫০ এমএমসিএফডি নেমে আসে।
সোমবার বিকাল থেকে গ্যাসক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ট্রেনের একটিতে উৎপাদন পুনরায় শুরু হওয়ায় সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস ফিল্ড প্রক্রিয়া সিস্টেম লক্ষ্য করেছে যে দুটি উৎপাদন কূপ থেকে বালি বের হচ্ছে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কূপ দুটি থেকে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিবিয়ানায় সম্পূর্ণ উৎপাদন শুরু না হওয়ায় গ্যাস সংকট অব্যাহত
এ ঘটনায় সামগ্রিক গ্যাস উৎপাদনের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। কেননা ত্রুটির ফলে গ্যাস সরবরাহের চাপ কমে যাওয়ায় অনেক অঞ্চলে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, শংকর, কাঁঠালবাগান, মধুবাজার, কলাবাগান, রামপুরা, ওয়ারী, মগবাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল, বনশ্রী, গোপীবাগ, মিরপুর, ইস্কাটনসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা খাবার রান্না করার জন্য গ্যাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) তাৎক্ষণিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় যার ফলে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিং দেখা দেয়।
বিবিয়ানায় সম্পূর্ণ উৎপাদন শুরু না হওয়ায় গ্যাস সংকট অব্যাহত
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উৎপাদন শুরু না হওয়ায় সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশে গ্যাস সংকট অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, তারা গ্যাস পাচ্ছেন না। যার কারণে তারা পবিত্র রমজানে তাদের খাবার রান্না করতে বিকল্প চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে রমজানের প্রথম দিন রবিবার দেশের গ্যাস উৎপাদন প্রায় ৪৫০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে) কমেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস ফিল্ড প্রক্রিয়া সিস্টেম লক্ষ্য করেছে যে দুটি উৎপাদন কূপ থেকে বালি বের হচ্ছে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কূপ দুটি থেকে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
এ ঘটনায় সামগ্রিক গ্যাস উৎপাদনের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। কেননা ত্রুটির ফলে গ্যাস সরবরাহের চাপ কমে যাওয়ায় অনেক অঞ্চলে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি
সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) তাৎক্ষণিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় যার ফলে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিং দেখা দেয়।
শেভরন ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
শেভরন বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টকে পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি করেছেন।
উৎপাদন ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি দেখা দেয়ার পর ৩ এপ্রিল প্লান্টটির দুটি ট্রেনের মধ্যে দুটি এবং ছয়টি উৎপাদন কূপের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
সরকারি সূত্র জানায়,৩ এপ্রিল দেশে গ্যাস উৎপাদন হয় দুই হাজার ৫২৪ দশমিক চার এমএমসিএফডি। যার মধ্যে বিবিয়ানার ৮৮৬ দশমিক ৯ এমএমসিএফডি। তবে এ গ্যাস ক্ষেত্রটির উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২০০ এমএমসিএফডি।
বিপিডিবি এর তথ্যে দেখা যায়, ২০৬৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২০টিরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম গ্যাসের স্বল্পতার জন্য বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষ উদ্বিগ্ন
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোবাংলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট দেখা দিতে পারে।
গ্যাস সংকটে জনগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা আশা প্রকাশ করেছে, যত দ্রুত সম্ভব রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ শেষ করে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, শংকর, কাঁঠালবাগান, মধুবাজার, কলাবাগান, রামপুরা, ওয়ারী, মগবাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল, বনশ্রী, গোপীবাগ, মিরপুর, ইস্কাটনসহ বেশ কিছু এলাকার গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, তারা খাবার রান্নার জন্য গ্যাস পাচ্ছেন না।
এছাড়া গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকায় সিএনজি চালিত মোটরযানও বিপাকে পড়েছে।