কর্মকাণ্ড
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা ১ হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৪১ জন।
বুধবার(৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মাদারীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান শাজাহান খান।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে মোট ১৮৮ জন নিহত ও ৪ হাজার ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ৮ হাজার ১০৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং ১ হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়ের করা মামলাগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও তার দোসররা নির্বাচন প্রতিহতের নামে অযৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে অগ্নিসন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার মতো অগ্নিসন্ত্রাসের ঘৃণ্য খেলায় লিপ্ত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার নামে অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল ও অবরোধের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তারা ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা, রেললাইন উপড়ে ও লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবন ও যানবাহন ভাঙচুর করে জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের চিঠি
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে ছয় শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ডভ্যান, ৩টি সিএনজি, ৪টি প্রাইভেটকার, ১১টি পিকআপ, ৫টি ট্রেন, ১৫টি মোটরসাইকেল, ৩টি লেগুনা, ১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস, ১টি অটোরিকশা, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি বাড়ি, ১টি বৌদ্ধ মন্দির ও ১টি নৌকাসহ ৩২৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, চালক, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকে অবরোধ ও হরতালে নিহত, আহত বা পঙ্গু হয়েছেন।
এসব ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ট্রেনে নাশকতায় নিহত হয়েছেন ৯ জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত ও শাস্তি দিতে দেশে দক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা এবং আইন রয়েছে। বিদ্যমান আইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
পুলিশকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দৃঢ়ভাবে মোকাবিলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার স্বার্থে যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘(সতর্ক থাকুন) যাতে ভবিষ্যতে কেউ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা দিতে না পারে এবং কেউ আর অগ্নিসংযোগের সহিংসতা চালানোর সাহস না করতে পারে এবং কেউ জনগণের জীবনের সামগ্রিক নিরাপত্তাকে ব্যাহত করতে না পারে।
বুধবার পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ এর দ্বিতীয় দিনে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে উৎপাদন খরচ পরিশোধ করুন: প্রধানমন্ত্রী
বিরোধী দল বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা আন্দোলন করতে পারে। ঠিক আছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এটি করা যেতে পারে। সেখানে কোনও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হলে তার বিরুদ্ধে সবাইকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মতো অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা একটি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘সুতরাং, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আজকের অগ্রগতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসেনি। বরং তার সরকারকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল এবং অনেক পরিকল্পনা নিতে হয়েছিল। সুতরাং, সরকার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে দেশে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কোভিড-১৯ মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছে, দৃঢ় নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে ইতিবাচক দিকে সচল রেখেছে এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
‘আমরা এই কঠিন কাজগুলো সফলভাবে করতে পেরেছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সারা বিশ্ব থেকে প্রশংসা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে ধন্যবাদ জানান কারণ বাহিনীও এই সাফল্যে অবদান রেখেছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়।
কেউ যাতে এই অগ্রগতিতে বাধা না দিতে পারে সেজন্য তিনি আবারও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক কিছু হতে পারে – যে কেউ যে কোনো দল, মত ও ধর্মেরই হোক, কিন্তু আপনাদেরকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কেউ কোনও কাজকে ধ্বংস বা বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এবং দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণের স্বার্থে কোনো সেক্টরে আমাদের চলমান অগ্রগতিতে বাধা দিতে না পারে।’
আরও পড়ুন: জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সেবা অব্যাহত রাখুন: পুলিশ সদস্যের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
প্রযুক্তিভিত্তিক পুলিশ সেবা সম্প্রসারণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণার আহ্বান
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য স্টিভ চ্যাবট ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য রো খান্না মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
চ্যাবট বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল সেটি ভুললে চলবে না। ওহাইও’র ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্টে আমার হিন্দু ভোটারদের সহায়তায় রো খান্না ও আমি হিন্দুসহ বাঙালিদের ওপর চালানো ব্যাপক নৃশংসতা, নির্দিষ্ট করে বললে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য রেজ্যুলেশন পেশ করেছি।’
চ্যাবোট জানান, তারা অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে গণহত্যার লাখ লাখ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেবে না।
আরও পড়ুন: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণা করুন: মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের রেজ্যুলেশন পেশ
তিনি টুইটারে লিখেন, ‘গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে, আমাদের সহকর্মী আমেরিকানদের জানায় এবং এই ধরনের অপরাধ সহ্য করা বা ভুলে যে যাওয়া হবে না তা অপরাধীদের জানতে দেয়।’
রো খান্না বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে প্রথম রেজ্যুলেশন পেশে রিপাবলিকান স্টিভ চ্যাবোটের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত, যেখানে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভুলে যাওয়া গণহত্যায় লাখ লাখ বাঙালি, হিন্দু নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।’
‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ শিরোনামের ৮ পৃষ্ঠার রেজ্যুলেশনে পাকিস্তান সরকারের এই গণহত্যার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতিটি দেয়ার কথা বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং যেসব অপরাধী এখনও জীবিত আছে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এটি ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা করে। যেখানে স্বীকার করা হয় যে বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা। যা এই ধরনের নৃশংসতার শিকারদের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে এবং তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।
রেজ্যুলেশনটি স্বীকার করে যে সমগ্র জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এই অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষের অধিকারের সুবিধা ভোগ করার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ উপভোগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: গণহত্যার ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
বার্মিজ সেনাদের নৃশংসতা মানবতার বিরোধী এবং গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে সরকার: বিএনপি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টার অংশ হিসেবে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে এবং গ্রেপ্তার বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করেছে, তখন তারা (সরকার) সহজে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, মানুষ হত্যা করছে এবং মিছিল-মিটিং বানচাল করছে।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকার সংবিধানকে আওয়ামী সংবিধানে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল
সমাবেশে বিএনপি নেতা আরও বলেন, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট এবং অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করায় মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ক্যাডাররা’ গণতন্ত্রকে বিলুপ্ত করতে, গণতন্ত্রকামী জনগণকে আতঙ্কিত করতে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সারাদেশে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছে।
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা বলি আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল। তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়ে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তারা সন্ত্রাস, নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং ভয়ভীতির পথ অবলম্বন করে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে আতঙ্কিত করা। সে কারণেই আওয়ামী সরকার তার সন্ত্রাসী ও ঘাতক বাহিনীকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাতে লেলিয়ে দিয়েছে।’
গত আগস্ট থেকে বিএনপি জনগণের বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে তাদের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের তিন নেতা নিহত হয়েছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দলীয় কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে।
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর ওপর হামলার নিন্দা জানান তিনি। ‘এমনকি তারা আমাদের নারী নেত্রীদেরও রেহাই দেয়নি এবং তাদের ওপর হামলা করেছে।’
আরও পড়ুন: অচিরেই দেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অধিকাংশ অর্জন আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। ‘তারা লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি এবং জনগণের বেঁচে থাকার সব উপায় ধ্বংস করেছে। তারা প্রতিটি খাতে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করছে।
তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে গুম করে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার অভিযোগও করেন। ‘এনফোর্সড ডিসপিয়ারেন্স বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা বাড়ছে।’
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার অনেক এলাকায় বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না, অথচ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এসব করবেন না। বাংলাদেশের জনগণকে এভাবে নিপীড়ন করে দমন করা যাবে না। তুমুল গণআন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা পরাজিত হবেন।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, কিন্তু সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
‘আসলে তাদের (সরকার) মেরুদণ্ড নেই। যেহেতু তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তাই তারা মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে পারে না এবং তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন জোগাড় করতে পারে না।’
এ পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসনকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সকল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট লুটেরা বান্ধব: মির্জা ফখরুল
বার বার কর্মকর্তা বদলিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বারবার বদলির কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেন ও ডুয়েল গেজ রেল যোগাযোগ উন্নতকরণ প্রসঙ্গে শনিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দুটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শুরু না হলে আরও দুর্ঘটনা বাড়বে এবং উন্নয়ন ব্যয় বাড়বে।
এর আগে এদিন দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২০-২১ সালে নতুন যোগদানকৃত নার্সিং কর্মকর্তাদের বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় তিনি বলেন, দেশে পাঁচ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন নার্স। দুই হাজারের মানুষের জন্য আছেন একজন ডাক্তার। যা অত্যন্ত অপ্রতুল। মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় ডাক্তার ও নার্স আরও বাড়াতে হবে।
বহির্বিশ্বে নার্সদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি নার্সদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহে দ্বিতীয় ওসমানী হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এজন্য ছয় মাস আগে ওইখানে জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু শুনতে পেরেছি- সেই সরকারি জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি দুষ্টচক্র। আমি সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বলছি- দ্রুত সেই চক্রকে চিহ্নিত করুন, যাতে বেআইনিভাবে কেউ এই সরকারি জায়গা দখল করতে না পারে এবং দ্রুত সেই জায়গা হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হোক।