খরচ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাদান না কি ব্যবসা?
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর সর্বসাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় যা জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারকে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ‘অলাভজনক হওয়ার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য শিক্ষাদান না কি মুনাফা অর্জন?’
দেশের নামজাদা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার প্রথম সারির কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়াতে পরিবারের শুধু কোর্স আর ক্রেডিট ফি বাবদই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। অধ্যয়নরত বিষয় বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ খরচ ঠেকে ১৫ লাখে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রথম সারির একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোনো শিক্ষার্থী প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক করতে চাইলে তার খরচ পড়বে ৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। প্রকৌশল বাদে বিজ্ঞান বিভাগের অন্য কোনো বিষয়ে পড়তে চাইলে এ খরচ ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আরেকটি প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে গ্রাজুয়েশন খরচ এর চেয়েও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রেডিটে খরচ পড়ে ৮ হাজার টাকার ওপরে। এর সঙ্গে আছে ভর্তি ফি, কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি ও লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার মতো খরচ। এতে করে সব ক্রেডিট শেষ করে একজন শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েশনে খরচ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
একই অবস্থা আফতাবনগরের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজার বিবেচনায় মানসম্পন্ন কোনো বিষয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ৭ লাখ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট বিবিএ সম্পন্ন করতে প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ লাগে ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এসব খরচের বাইরেও রয়েছে বাড়তি অনেক আনুষঙ্গিক খরচ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বিশাল চাপ
যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের খরচ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ ১৬ গুণ বেশি। খরচের এই বিশাল বড় বৈষম্যের শিকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সানোয়ার আহমেদ, দুই ছেলেকেই ভর্তি করিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে সানোয়ার আহমেদ বলেন, ‘দুই ছেলেকে পড়াতে খরচ হবে ৩০ লাখের মতো টাকা। চাকরি করে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানের আরেক বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা এখনো কলেজে পড়ে। মেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়েছি। পড়াশোনার পেছনে প্রতি সেমিস্টারে লাখ টাকা ঢালতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে ছেলেকে বলেছি, পাবলিকে চান্স না পেলে তাকে আর অনার্স করাব না; কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দেব। মাসের বেতন, জীবনের সঞ্চয় সব চলে যাচ্ছে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে।’
ইসরাত জাহানের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পড়ছেন প্রথম সারির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি দুজনই চাকরিজীবী। এরপরও প্রতি সেমিস্টারে মেয়েকে টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে বাড়তি খরচ কম না। সব মিলিয়ে দুইজন দুই লাখ টাকা আয় করলেও সন্তানকে পড়াশোনা করাতে কোনো কোনো সময়ে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয় ।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ
বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্লাসের পাশাপাশি টিউশনি করেন। অনেকে ব্যস্ত থাকেন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। টাকা জোগাড়ে কেউ কেউ নাইট শিফটে পার্ট টাইম চাকরি পর্যন্ত করেন।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘আমি ফার্মাসিতে পড়ি। পুরো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে আমার ১৫ লাখের মতো টাকা লাগবে। শুরুর দুই বছর বাবা টাকা দিতে পারলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন আর টাকা দিতে পারছেন না সেভাবে। এজন্যই নিজেই টাকা আয়ের চেষ্টা করছি। আপাতত ক্লাসের পরে তিনটি টিউশনি করছি। এতে করে যে টাকা আসে তা সেমিস্টার ফি বা ক্রেডিট ফির জন্য যথেষ্ট না হলেও কিছুটা সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা আর কি।’
আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সাদি বলেন, ‘একে তো ক্রেডিট খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে চাইলেই পার্ট টাইম কাজ করা যায় না। তাই আমিসহ আমার অনেক বন্ধু বাধ্য হয়ে রাতের বেলা কল সেন্টারে কাজ করি খরচ যোগাতে।’
শিক্ষার মান নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বেশিরভাগই পড়াশোনা করছেন কিছু শেখা বা দক্ষতা অর্জনের জন্য নয়, কেবল একটি সনদের আশায়। মূলত মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাজুয়েশনের সনদ কিনছেন— এমনটাই মনে করেন তারা।
পাবলিকে আসন নেই, প্রাইভেটে ব্যবসা
প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাস করে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৫৫ হাজারের মতো। এর সঙ্গে মেডিকেল, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন যোগ করলে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ সিটের মতো দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার। অর্থাৎ, যারা সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল করেছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে ভর্তি হতে হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অডিট ফার্ম দিয়ে প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করাতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউজিসি তালিকাভুক্ত ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা বছরের পর বছর কোনো বার্ষিক প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। এ ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সিন্ডিকেট সভা হলেও আর্থিক সভা হয় না বললেই চলে। এতে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকার টিউশন ফি কোথায় কোন খাতে খরচ হয়, তা নিয়ে আদৌ কোনো স্বচ্ছতা থাকে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা ৪-৫ লাখ টাকা করে পান। ছাত্রদের টাকায় বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা আয়েশি জীবনযাপন করছেন, দামি গাড়িতে চড়ছেন, কিনেছেন দামি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তের কোনো জোর নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি থেকে সাবধান করা হলেও ক্ষমতার জোরে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
কিসের ভিত্তিতে এমন আকাশচুম্বী টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আসে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কাছে জিম্মি। কোষাধক্ষ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ হয় ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশে। এই বোর্ড যতটা না শিক্ষাকেন্দ্রিক, তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসাকেন্দ্রিক।
করপোরেট শিক্ষা বাণিজ্য
দেশে নব্বইয়ের দশকে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা হয় এবং সে অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধরনের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার বড় একটি সংযোগ ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বিডিরেনের সেবা গ্রহণের আহ্বান ইউজিসির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, ‘যে সময় দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নিও লিবারেলিজমের ঢেউ চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করেছে। তখন থেকেই শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের পরিণত করার প্রয়াস হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রকমের আত্মপ্রকাশ।’
মানস বলেন, ‘দেশের বাইরে হার্ভাড বা কলম্বিয়ার মতো নামকরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে টাকা আয় করে তাদের আয়ের ধরন মোটেও এমন নয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ব্যাপারটি অনেকটা গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও স্বরূপ বুঝতে কষ্ট হয় না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মানহীন প্রমাণ করে নিজেদের ব্যবসার কৌশল অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের সারিতে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘এটা মূলত ব্যবসায়িক কৌশল। আগে যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সুযোগ পেত না, তাদের শিক্ষার জন্য বড় মাধ্যম ছিল জেলাভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে পড়াকে নিজেদের স্ট্যাটাস রক্ষার অংশ হিসেবে দেখেন। শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের বড় কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পলিসি।’
অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষানুরাগী প্রমাণ দিয়ে ব্যবসায়িক নানা সুবিধা নিচ্ছে উল্লেখ করে মানস বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টারশিয়ারি শিক্ষা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছেন তারা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে পরোক্ষ সুবিধা নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসায়িক ভ্রমণ কিংবা অনুদানের সুবিধা নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক লাভ আদায় করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’
দায় আছে ইউজিসির
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন লাগামহীন খরচ এবং সর্বাত্মক ব্যবসায়ী মনোভাব রুখতে ইউজিসিকে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষক ও অধিকারকর্মীরা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যার সিংহভাগই রাজধানীতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে যা হয় তাকে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।’
তিনি বলেন, ‘দিন দিন এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক রকমের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী শেখাচ্ছে, তাদের কারিকুলাম কেমন, সেসব নিয়ে আলোচনা হয় না বললেই চলে। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে এদের সঠিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইউজিসির।’
বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসি বদ্ধ পরিকর জানিয়ে কমিশন সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করা ইউজিসির বড় লক্ষ্য। এর পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানেও ইউজিসি সোচ্চার বলে জানান তিনি।
১২০ দিন আগে
নতুন বছরে সঞ্চয় বাড়ানোর কয়েকটি উপায়
বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালেও জনজীবনের ওপর সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান নিষ্পেষণ। জীবনযাত্রার ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্রমশঃ হুমকিতে ফেলছে। মৌলিক চাহিদা মেটাতেই যেখানে ঋণ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা, সেখানে সঞ্চয়ের প্রসঙ্গটি প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। আবার সঞ্চয় ব্যতীত জীবন আরও অবনতির দিকে ধাবিত হয়।
তবে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও চরম সংকট মোকাবিলায় মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। চলুন, আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সঞ্চয় বৃদ্ধির কয়েকটি প্রয়োজনীয় উপায় জেনে নেওয়া যাক।
সঞ্চয় বৃদ্ধির ৫টি কার্যকর কৌশল
জীবনের দৈনন্দিন লেনদেনে নিম্নোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি অবলম্বনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের নির্ভরযোগ্য সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে-
সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট তৈরি
প্রত্যেকটি ছোট ছোট বিষয়কে বিবেচনায় রেখে একটি বিশদ বাজেট পরিকল্পনা গড়ে দিতে পারে আর্থিক ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। এখানে আয়ের উৎসের বিপরীতে ব্যয়ের শ্রেণি বিভাজন হওয়ার কারণে সম্ভাব্য খরচের খাতগুলো স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
আরো পড়ুন: ই-রিটার্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে
বাজেটে সঞ্চয়ের জন্য জায়গা রাখার কৌশল হচ্ছে শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় ব্যয়ের খাতগুলোকে আমলে নেওয়া। সেই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত খরচগুলো চিহ্নিত করে রাখা উচিত, যেন সেগুলো থেকে দূরে থাকা যায়।
আকস্মিক জটিলতাগুলোর জন্য আগে থেকেই বিকল্প রাস্তা বের করে রাখা জরুরি। বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝে এমন সময় আসা খুবই স্বাভাবিক যখন সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোবে না। এই বিষয়গুলোকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি বিকল্প নিরাপদ পন্থা বের করে রাখতে হবে। এর জন্যও কিছু জরুরি তহবিল রাখা বাঞ্ছনীয়।
স্প্রেডশিটযুক্ত (এক্সেল) মোবাইল বা কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই পদক্ষেপটি সহজেই নেওয়া যায়। এই সফ্টওয়্যার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এগুলো রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সম্পন্ন, অর্থাৎ তাৎক্ষণিক নিজের তৈরি করা বাজেটের ওপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়। ফলে শুধু পরিকল্পনাই নয়, সে অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যানগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, সেদিকেও খেয়াল রাখা সম্ভব হয়। প্রতিটি ব্যয়ের খাতের জন্য মাসিক আয়ের যে শতাংশ বরাদ্দ ছিল, সেই সীমা অতিক্রম করছে কিনা তা নজরে আসে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
পুনরাবৃত্তিমূলক খরচ কমানো
প্রয়োজনীয়তার মাত্রার নিরিখে প্রতি মাসের জন্য অবধারিত খরচগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করা উচিত। এগুলোর মধ্যে কিছু থাকে যেগুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না, যেমন: বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল। আবার এর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং এনার্জি সেভিং যন্ত্রাদি ব্যবহারের মাধ্যমেও খরচ অনেকটা কমে আসে।
পুনরাবৃত্তিমূলক খরচের কিছু খাত রয়েছে যেগুলো মূলত জীবনধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট বিল, ফোন বিল, ওটিটি সাবস্ক্রিপশন এবং জিমের সদস্যতা। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক পরিষেবা বাদ দিয়ে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বিশেষ করে আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ক্যাবল টিভি ও ওটিটি বিলের পুরোটাই বাদ দেওয়া যায়। ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা হলে ফোনের বিলের ওপর থেকেও চাপ কমে যাবে।
আরো পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
তাছাড়া নিতান্তই বাদ দেওয়া সম্ভব না হলে ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে বা দর কষাকষির মাধ্যমে কম খরচের পরিষেবা নেওয়া যেতে পারে।
কৌশলগত বিনিয়োগ
বিনিয়োগ আসলে সঞ্চয়ের কোনো প্রত্যক্ষ উপায় নয়। কিন্তু এই বিচক্ষণ কার্যক্রমটির পথ ধরে আসে সঞ্চয়ের সুযোগ। সঞ্চয়পত্র বা সরকারি বন্ডের মতো তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোতে বিনিয়োগ করা হলে সঙ্গতিপূর্ণ রিটার্ন দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনে।
ঝুঁকি বেশি থাকা খাতগুলোর মধ্যে স্টক ও মিউচুয়াল ফান্ড বা এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড দিয়ে সর্তকতার সঙ্গে বিনিয়োগ পোর্টফোলিও গড়া যেতে পারে। এগুলো সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে টেক্কা দিতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। মোটা দাগে বলতে গেলে, এ বছরের শুরু থেকে সঞ্চিত ১০০ টাকা নতুন বছরে গিয়ে হয়ে যাবে ৮৮ টাকা। ফলে ১০০ টাকা দামের কোনোকিছু কিনতে গেলে তার সঙ্গে আরও ১২ টাকা যুক্ত করতে হবে। তাই কমপক্ষে ১৩ শতাংশ রিটার্ন দেওয়া কোনো খাতে বিনিয়োগ করা হলে প্রাপ্ত মুনাফা থেকে লেনদেনের পরও ১ টাকা সঞ্চয় হিসেবে থেকে যাবে।
এভাবে সুচিন্তিত বিনিয়োগ পরোক্ষভাবে সঞ্চয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে। এছাড়া সরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াতের সুবিধাটিও অর্থ সঞ্চয়ের একটি কার্যকর মাধ্যম।
ডিসকাউন্ট ও ফ্রি অফারে গুরুত্বারোপ
দৈনন্দিন কেনাকাটার সময় মূল্যহ্রাস ও ফ্রি সামগ্রীগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া টাকা বাঁচানোর সবচেয়ে পুরনো ও সহজ উপায়। ব্র্যান্ড, সাধারণ, খুচরা ও পাইকারি-নির্বিশেষে প্রতিটি বিপণী বছরজুড়ে নানা উপলক্ষে ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক বা রিডিমযোগ্য পয়েন্টের ব্যবস্থা রাখে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দৌলতে এগুলো আরও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থাকার কারণে যাতায়াত খরচ বাঁচিয়ে ঘরে বসেই হ্রাসকৃত মূল্যে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। জনপ্রিয় পেমেন্ট গেটওয়েগুলো ব্যবহারেও থাকে মূল্যছাড়ের অফার।
এছাড়া সিজনাল সেলস ও স্টক ক্লিয়ারেন্স ইভেন্টগুলোর প্রতিও নজর রাখা উচিত। সাশ্রয়ী মূল্যে পছন্দের জিনিসটি কেনার জন্য এটি সবচেয়ে আদর্শ উপায়।
সর্বদা সাশ্রয়ী বিকল্প পন্থা অবলম্বন
সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম সহনীয় যতক্ষণ না সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে, ততক্ষণ অপেক্ষা করা উচিৎ। বিশেষ করে সাধারণ মুদিপণ্যের ব্যাপারে এই পদক্ষেপ নিতে হবে। দাম না কমলে তা পরিহার করতে হবে। মৌসুমি সবজি ও ফলমূলের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
যাতায়াতের যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে দর কষাকষি করা উচিত। বর্তমানে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা সর্বত্র বিদ্যমান। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব কম যাতায়াত করে প্রাত্যহিক কর্ম সম্পাদনের চেষ্টা করা উচিত। একটি ছোট ফোন কল বা হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব, যার জন্য আগে সশরীরে দেখা করার কোনো বিকল্প ছিল না।
এই কার্যক্রমগুলো প্রতিদিনের যাতায়াত খরচকে অল্প অল্প করে কমিয়ে দেয়। অথচ সপ্তাহ ও মাসের হিসাবে এগুলোই খরচের বোঝাও ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করে।
এই পন্থাগুলো মূলত জীবনধারণ পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। পরিমিত বাজেট অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে সঞ্চয়ের অভ্যাসের জন্য মনকে প্রস্তুত করাও জরুরি।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
২০২৫ সাল আসতে আর বেশি দেরি নেই। প্রত্যেকের আর্থিক জীবনপ্রবাহেও পড়বে নতুন বছরের প্রভাব। তাই এখন থেকেই ব্যয়ের বাজেট প্রণয়ন ও সঞ্চয় বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
শেষাংশ
সঞ্চয় বৃদ্ধির উল্লিখিত কৌশলগুলোকে সমন্বয় করা মূলত আর্থিক স্থিতিশীলতারই নামান্তর। বাজেট প্রাথমকিভাবে আর্থিক স্বচ্ছতার ভিত্তি স্থাপন করে। পুনরাবৃত্তিমূলক খরচগুলো কমানো গেলে তা দিন শেষে অতিরিক্ত সঞ্চয়ের জন্যই জায়গা তৈরি করে।
এছাড়া, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো কৌশলগত বিনিয়োগ। ডিসকাউন্ট, ফ্রি অফারের পাশাপাশি যেকোনো কাজে সাশ্রয়ী বিকল্প পন্থা অবলম্বন অনাকাঙ্ক্ষিত চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই পদ্ধতিগুলো বাজেটবান্ধব জীবনধারণের প্রতি তাগিদ দেয় যেখানে থাকবে না ঋণের দুশ্চিন্তা ও অপ্রাপ্তির বিড়ম্বনা।
৩৪২ দিন আগে
কমলা চাষে পরিশ্রম-খরচ দুটোই কম: নওগাঁর উদ্যোক্তা শফিকুল
নওগাঁর মহাদেবপুরে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন শফিকুল ইসলাম রানা নামে একজন যুব কৃষি উদ্যোক্তা।
পাঁচ বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নে ঈশ্বর লক্ষীপুর গ্রামে ১০ কাঠা জমিতে ৪৫টি কমলা গাছের চারা রোপণ করেন। বাংলাদেশের সাধারণত সবুজ রঙের কমলা চাষ হলেও রানার বাগানের কমলাগুলো কমলা রঙের।
রানা চুয়াডাঙ্গা থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। চারার মূল্য, পরিচর্যা, জমির তৈরি ইত্যাদি বাবদ তার মোট খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
এ উদ্যোক্তা জানান, গত বছর গাছগুলোতে প্রথমবার ফল ধরে। সেবার তেমন ভারো ফলন হয়নি। তবে চলতি মৌসুমে গাছে গাছে পর্যাপ্ত ফল এসেছে। জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে গাছে মুকুল এসেছে। গড়ে চার মাস পর নভেম্বর মাসে কমলাগুলো পেড়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময়।
রানা বলেন, বর্তমানে প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি করে কমলা রয়েছে। সেই হিসেবে ৪৫টি গাছ থেকে এবছর কমপক্ষে ৯০০ কেজি কমলা পাওয়া যাবে।
এরই মধ্যে এই বাগানের কমলা স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। এসব বাজারে তারা ২০০ টাকা কেজি দরে কমলাগুলো বিক্রি করছেন। স্থানীয় গ্রামীণ বাজার ছাড়াও ক্রেতারা সরাসরি বাগান থেকেও কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই হিসেবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী বাগান মালিক।
কমলার বাগান পরিচর্যার কাজে সার্বক্ষণিক কাজ করেন রানার বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম।
তিনি জানান, কমলা চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। সামান্য কিছু জৈব সার এবং সামান্য সেচ দিতে হয়।
প্রতিবেশী ইউনুস ও ফরহাদ জানান, রানার বাগানের কমলাগুলো খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিদেশি যেসব কমলা বাজারে পাওয়া যায়, রানার বাগানের কমলা সেগুলো থেকে স্বাদে কোনোভাবেই কম না। তারা নিয়মিত বাগানে আসেন এবং কমলার স্বাদ গ্রহণ করেন।
শফিকুল ইসলাম রানার এই কমলা চাষের সফলতা স্থানীয় অনেক উদ্যোক্তাকে আকৃষ্ট করেছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহাদেবপুরের মাটি বরেন্দ্র অঞ্চল ভুক্ত। এই জমিতে কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কমলা চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। একবার গাছ লাগালে অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এক্ষেত্রে সামান্য জৈব সার সেচ এবং নিড়ানি দিতে হয়। তারপরেও এটি লাভজনক। কমলা চাষে যদি কেউ এগিয়ে আসেন কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
৩৬৮ দিন আগে
সিলেটের জাফলং ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
বিচিত্রতার কষ্ঠিপাথরে বাংলাদেশকে যাচাই করতে হলে ঘুরে আসতে হবে দেশটির উত্তর-পূর্বের সিলেট বিভাগ। শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এর সমৃদ্ধ জেলাগুলো দেশের সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। শুধুমাত্র এক জাফলং ভ্রমণ যে কোনও জাতীয়তার পরিব্রাজকের মনে এক টুকরো বাংলাদেশকে গেঁথে দিতে যথেষ্ট। প্রকৃতি কন্যা হিসেবে খ্যাত এই পর্যটনস্থল ভ্রমণের নানা দিক নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, পাহাড়, নদী ও বনের এই অনিন্দ্য সমারোহকে খুব কাছ থেকে দেখার উপায়টি জেনে নেয়া যাক।
জাফলং-এর নামকরণের ইতিহাস
জাফলং-এর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খাসি জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের ইতিহাস। সংক্ষেপে বলতে গেলে খাসিদের মালনিয়াং রাজ্য থাকাকালে এর রাজধানীগুলোর একটি ছিলো বল্লাপুঞ্জি। এই বল্লাপুঞ্জি মূলত জাফলয়েরই একটি এলাকা।
প্রাচীন এই মালনিয়াং রাজ্যেই উৎপত্তি হয়েছিলো জাফলং নামটির, যার মাধ্যমে আনন্দের হাট বোঝানো হতো।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
জাফলং-এর ভৌগলিক অবস্থান
এই দর্শনীয় জায়গাটির অবস্থান সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়টি মেঘালয় সীমান্তে আলাদা করেছে বাংলাদেশ ও ভারতকে। সীমান্তবর্তী জায়গাটি পড়েছে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর অববাহিকায়।
ভারতের ডাউকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
জাফলং ভ্রমণের সেরা সময়
এটি এমন এক জায়গা যা প্রতি ঋতুতেই নতুন রূপে সেজে ওঠে। তবে বৃষ্টির মৌসুমে এই প্রকৃতি কন্যা নিজের সকল সৌন্দর্য্য যেন উজাড় করে দেয়। স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীর নিচে পাথরের ছোঁয়াছুয়ি খেলা, আর সংগ্রামপুঞ্জীর মায়া দৃষ্টি ভরে নিতে চাইলে আসতে হবে বর্ষাকালে। তাছাড়া জুন থেকে অক্টোবরের এই সময়টাতে; এমনকি নভেম্বরেও পাহাড়ের সবুজটা যেন আরও বেশি করে ফুটে ওঠে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
৭৮০ দিন আগে
হজ প্যাকেজের খরচ কমল ১১,৭২৫ টাকা
সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনার অধীনে হজ প্যাকেজের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা হ্রাস করা হয়েছে। কারণ, সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ইচ্ছুক হজযাত্রীদের জন্য এই পরিষেবা চার্জ কমিয়েছে।
এ বছর ১১ হাজার ৭২৫ টাকা বাদ দিয়ে হজ পালনের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের প্রত্যেককে ছয় লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা দিতে হবে।
এছাড়া যারা প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় যাবেন, তাদের প্রত্যেককে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: হজের খরচ কমানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি: ধর্ম মন্ত্রণালয়
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে নিবন্ধন করেছেন তারা খাবারের দাম ফেরত দিলে ঢাকায় হজ অফিস থেকে ৪৬ হাজার ৭২৫ টাকা ফেরত পাবেন।
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো আগে নিবন্ধন করা প্রত্যেক হজযাত্রীকে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা ফেরত দেবে।
এদিকে, সরকার হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের কোটা পূরণ হলে হজ নিবন্ধনের সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক হজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোকে ২৭ মার্চ তাদের শাখা খোলা রাখতে বলেছে।
১ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রতিটি হজযাত্রীর জন্য ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করে যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি ছিল।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় হজের বর্ধিত ব্যয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
এর মধ্যে প্রতিটি যাত্রীর জন্য বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
১৪ মার্চ হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলেন সরকার নির্ধারিত প্যাকেজের খরচে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজ করবে।
এতে প্রশ্ন করা হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকার কেন হজের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে না?
চলতি বছরের হজ প্যাকেজ সংশোধন নিয়ে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
গত ১৫ মার্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এরপর ১৭ মার্চ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিমানের ভাড়া যৌক্তিকভাবে কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়।
এদিকে গত ১৯ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, এ বছর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: এবছর আর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই: বিমানের এমডি
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর নির্দেশ সরকারের
৯৮৮ দিন আগে
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় খরচ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজ উপলক্ষে প্যাকেজ প্রস্তুত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আজ হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন খাতের ব্যয় পর্যালোচনা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মিনার তাঁবুর সি-ক্যাটাগরির মূল্য অনুসারে সরকারি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিনার তাবুর অবস্থান সংক্রান্ত ক্যাটাগরি গ্রহণের ভিত্তিতে বেসরকারি এজেন্সিগুলো সরকারি প্যাকেজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্ব-স্ব হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। তাবুর অবস্থান ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজের ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে।’
গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর 'সাধারণ প্যাকেজ' এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। বেসরকারি হজ প্যাকেজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা।
গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর 'সাধারণ প্যাকেজ' এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
চলতি বছর হজ পালনে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় হজচুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
হজচুক্তি অনুযায়ী এ বছর আগের মতোই এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞাও উঠে গেছে।
এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘রুট টু মক্কা চুক্তি’ অনুযায়ী ওই বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছর থেকে এবার হজ প্যাকেজের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর রিয়ালের মূল্য ছিল ২১ টাকা, এখন নেই রিয়ালের মূল্য ৩০ টাকা। এক লাখ টাকার বেশি এখানেই চলে আসে। আনুষঙ্গিক ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। বিভিন্ন খাতে সমন্বয় করে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারির মধ্যেই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
এবার বিমান ভাড়া কত জানতে চাইলে ফরিদুল খান বলেন, ‘এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। বিমান ভাড়া কেন বেড়েছে তা আপনাদের বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান ভাড়া বেড়েছে। বিমান ভাড়া নিয়ে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনদিন বসেছি। বর্তমান সময় আমাদের অনুকূলে না থাকার কারণে বিমান ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।’
গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার।
আগের মতো তিনটি বিমান সংস্থা (বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও নাস এয়ার) এবারও হজযাত্রীদের পরিবহন করবে বলেও জানান ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
এবার একটি প্যাকেজ কেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার একটি প্যাকেজই আমাদের থাকবে। এটার বিষয়ে আর অন্য কোন ব্যাখ্যা নেই।’
বেসরকারিভাবে মিনায় ডি-ক্যাটাগরি অনুসারে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬০ টাকার মতো পড়বে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মূলত আমরা ব্যয়ের খাত দিয়ে দিয়েছি। হাব (হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এটা নির্ধারণ করবে। সি-ক্যাটাগরি নিয়েও তারা প্যাকেজ নির্ধারণ করতে পারবে। আমরা তাদের গাইড লাইন দিয়ে দিয়েছি।’
হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বেসরকারি হজ প্যাকেজ আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করা হবে।’
করোনাভাইরাস মহামারির আগে ২০১৯ সালে স্বাভাবিক হজ হয়েছে। তখন বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন মানুষ হজ পালন করেন। ২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে হজ সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়, সেখানে বাংলাদেশিদের হজযাত্রীর কোটা ১০ হাজার বৃদ্ধি করা হয়। ২০২০ সালে এক লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশি হজে যেতে পারতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ পালন করতে পারেনি। ২০২১ সালেও বিদেশিদের জন্য হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
করোনা মহামারি কমে এলে গত বছর (২০২২) বিভিন্ন দেশের কোটা অর্ধেক করে হজ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার মুসলমান হজ পালন করেন। করোনা মহামারির কারণে গত বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
আরও পড়ুন: সৌদি হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর বৈঠক
১০৩৭ দিন আগে
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নিরাপত্তায় খরচ হবে ৭ মিলিয়ন ডলার!
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয় করা হবে। বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতারা উপস্থিত থাকবেন এই অনুষ্ঠানে। আর তাই তাদের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি রাখছে না যুক্তরাজ্য।
সোমবারের এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্রিটিশ এমআই ৫ ও এমআই ৬ গোয়েন্দা সংস্থা, লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিক্রেট সার্ভিস একসঙ্গে কাজ করবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই নিউজ রাজপরিবারের সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইমন মরগানকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘এটি যুক্তরাজ্যের পুলিশের জন্য সর্বকালের সবচেয়ে বড় পুলিশি অপারেশন।
সাইমন মরগান বর্তমানে বেসরকারি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা ট্রোজান কনসালটেন্সি’র তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও কয়েকটি বড় অনুষ্ঠানে আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। যেমন ২০১১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডেলটনের বিয়েটাও বড় ঘটনা ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে আপনি এটার তুলনা করতে পারবেন না।’
ওই বিয়েতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
এএনআইয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্ক পোস্টের মতে ২০১১ সালের বিয়ের জন্য পুলিশের খরচ ছিল আনুমানিক ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মরগান জানান, অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ার দিন লন্ডনকে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ছেয়ে ফেলা হবে। বাড়ির ছাদ ও দর্শণার্থীদের জন্য নির্ধারিত পয়েন্টগুলো থেকে শুরু করে ভিড়ের মধ্যেও পুলিশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন। কারণ পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ‘সন্ত্রাসবাদের’ আশঙ্কা করছেন।
এএনআই জানায়, লন্ডনের স্থানীয় কিছু অনলাইন পোর্টালের তথ্যমতে, শহরের কিছু অংশ ইতোমধ্যে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সম্ভবত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে আরও রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
মরগান আরও বলেন, সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা উইলিয়াম ও কেটের বিয়ের চেয়েও অনেক বেশি।
অন্যদিকে, প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলকেও রাজকীয় সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। তবে তারা তাদের রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার সময়, রাজকীয় নিরাপত্তার অধিকার হারিয়েছিলেন।
বেশিরভাগ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সম্ভবত অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ায় একসঙ্গে বাসে করে যাবেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো কেউ কেউ তাদের নিজস্ব পরিবহনে করেই সেখানে উপস্থিত হবেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যারা থাকছেন
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৫ সিরীয় সেনা নিহত: সানা
জোরপূর্বক গুম: জাতিসংঘ ২১ দেশের ৬৯৬ মামলা পর্যালোচনা করবে
১১৭৪ দিন আগে