নগরায়ন
নগরায়নের চাপে সবুজ হারাচ্ছে ঢাকা
বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মেগাসিটি আমাদের রাজধানী ঢাকা। এক সময় সবুজ গাছপালা আর খোলামেলা পরিবেশের জন্য নাম ছিল এই ঢাকার। তবে আধুনিক হয়ে উঠতে গিয়ে শহরটি হারিয়েছে সেই প্রাকৃতিক জৌলুস।
আজ ঢাকার যেদিকেই তাকানো হবে, দেখা যাবে সুউচ্চ সব ভবন, কতশত কারখানা; সবমিলিয়ে একদম আধুনিকতায় মোড়ানো ব্যস্ততম এক মহানগরী। তবে বিনিময়ে হারিয়েছে সেই সবুজ পরিবেশ, বাসযোগ্যতা ও বায়ুমান নিয়ে তৈরি হয়েছে গুরুতর উদ্বেগ।
একদিকে গাছপালার প্রাকৃতিক বাতাসের পরিবর্তে ঢাকার ঘরবাড়ি ও অফিসগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। অন্যদিকে, আশঙ্কাজনকহারে কমে আসছে সবুজ বনভূমির পরিমাণ।
মহানগরী ঢাকা একসময় পরিচিত ছিল ‘বাগানের শহর’ নামে। তবে ১৯৮১ সাল থেকে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে শহরটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগর সম্প্রসারণ হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে রাজধানীর সবুজের পরিমাণ, বিশেষত গাছপালা আশঙ্কাজনকভাবে বিলীন হয়েছে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে হাজার হাজার গাছ কাটা পড়েছে। ফলে বর্তমান সময়ে এসে অতিরিক্ত গরম, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়েছে ঢাকা।
১৯৮১ সালের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের (ইউডিডি) এক জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় ১৯ শতাংশ ভূমি সবুজে আচ্ছাদিত ছিল।
আশির দশকের উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এমনকি ধানমণ্ডি, মিরপুর ও উত্তরার মতো আবাসিক এলাকাগুলোর সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙিনায় প্রচুর গাছ ছিল।
সংখ্যায় বলতে গেলে সে সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় (তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন অঞ্চলে) আনুমানিক ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ পূর্ণবয়স্ক গাছ ছিল।
আরও পড়ুন: সেন্ট মার্টিনকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের
ঢাকায় গাছ কাটার হার আধুনিকায়নের গতিকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন ভবন, রাস্তা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য পার্ক ও খোলামেলা জায়গা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, ফলে নগর উন্নয়ন ও পরিবেশগত স্থায়িত্বের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহানা করিম বলেন, ‘ঢাকায় অবকাঠামো বাড়ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হচ্ছে পরিবেশের বিনিময়ে। উচ্চ ভবন ও বাণিজ্যিক এলাকার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে শুরু করেছে এই সবুজের অভাব।’
শুধু বিশেষজ্ঞরা নন, ঢাকার গাছপালা আশঙ্কাজনভাবে কমার কারণে শহরটির বসবাসকারীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা তারেক রহমান বলেন, ‘এখন সব জায়গায় এসি লাগানো হচ্ছে, কিন্তু প্রাকৃতিক ছায়ার যে আরাম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা তা এসিতে নেই। যেসব উপাদান এই শহরটিকে বাসযোগ্য করে তুলেছিল, আমরা সেগুলোই হারিয়ে ফেলছি।’
অতিরিক্ত উত্তপ্ত শহর ঢাকা
১৯৮১ সালের হিসাব তো আগেই দেখানো হয়েছে, এবার আসা যাক বর্তমান সময়ে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ বিভাগ জানিয়েছে, তাদের হিসাবে ২০২৫ সালে ঢাকা শহরের রাস্তার পাশে থাকা পূর্ণবয়স্ক গাছের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও কম। আশির দশকের ১৯ শতাংশ বনভূমি এসে এখন ঠেকেছে ৬ শতাংশেরও নিচে।
বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সবুজ জায়গা মাত্র ০ দশমিক ৪২ বর্গমিটার, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী যেটি হওয়া উচিত ৯ বর্গমিটার।
এতে শহরের তাপমাত্রায় এক লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। ১৯৮১ সালের পর থেকে গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রা ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া, ধুলাবালি কণার (পিএম ২.৫) মাত্রায় বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দূষিত পাঁচটি শহরের তালিকায় নিয়মিত থাকতে দেখা যায় ঢাকাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গাছের বিশুদ্ধ বাতাসের অভাব।
আরও পড়ুন: তিন দিনে ঢাকা দক্ষিণে ৩১২২৬ টন বর্জ্য অপসারণ: ডিএসসিসি প্রশাসক
অনেকদির ধরেই সরকারের কাছে নগর পরিকল্পনায় বাধ্যতামূলক সবুজ এলাকা ও বৃক্ষরোপণের কড়া নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে ঢাকা তীব্র তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ বৃ্দ্ধি ও জনস্বাস্থ্যের অবনতির মতো মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
দশকের পর দশক ধরে বন উজাড়ে
আধুনিকতার পথে অগ্রগতির সঙ্গে টেকসই পরিবেশ বজায় রাখতে গিয়ে ঢাকা আজ একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে—প্রাকৃতিক পরিবেশের বলি না দিয়ে আধুনিক হতে পারবে ঢাকা?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে ঢাকার ক্রমবর্ধমাণ জনসংখ্যা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। সরকারি হিসাব বলছে, ১৯৮১ সালে যেখানে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ, ২০২৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এতে ১৯৮১-১৯৯১ পর্যন্ত এই দশ বছরে দ্রুত নগরায়নের প্রাথমিক লক্ষণস্বরূপ সড়ক সম্প্রসারণ ও প্লট উন্নয়নের কারণে ১০ থেকে ১৫ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। পরের ১০ বছরে অর্থনৈতিক মুক্ত বাজার নীতির পর নির্মাণ প্রবৃদ্ধির সময় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ নিধন করা হয়েছে।
এর পরের দশকে মহাখালী ও খিলগাঁও উড়ালসড়কসহ বড় রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের কারণে কাটা হয়েছে আরও অন্তত ৪০ হাজার গাছ।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের চুক্তির আহ্বান
তবে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত উত্তরা, ফার্মগেট ও শাহবাগ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।
এরপর ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে ৫ থেকে ৮ হাজার গাছ কমেছে ঢাকার। বনায়ন নীতি থাকলেও নির্মাণ চলমান থাকায় গাছের পরিমাণ কমেই চলেছে।
এসিতে কেউ পাচ্ছেন ঠান্ডা হাওয়া, কেউ পুড়ছেন গরমে
একসময় কেবল ধনী মানুষের বিলাসের সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হত এসি। কিন্তু এখন ঢাকার তীব্র গরমে এটি একপ্রকার প্রয়োজনীয়তায় পরিণত হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যে এসির ব্যবহার বাড়ছে, এতে যে শুধু তাপমাত্রাই বাড়ছে না, এটি বিদ্যুৎতের চাপ, বায়ুদূষণ ও সামাজিক বৈষম্যকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ টেকসই জ্বালানি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ঢাকায় এসির সংখ্যা গত ১৫ বছরে চারগুণ বেড়েছে। ২০১০ সালের দেড় লাখ ইউনিট থেকে এটি ২০২৪ সালে সাড়ে ৭ লাখে পৌঁছেছে।
আরও পরিষ্কারভাবে বলা হলে, রাজধানীর প্রায় তিনটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে একটি এখন এসির মালিক। তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকায় গ্রীষ্মকালে আবাসিক বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ এসি ব্যবহারেই ব্যয় হয়। ফলে জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ বাড়ে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
নগর অধিকারকর্মী ফারুক হোসেন বলেন, ‘ধনীরা এসি চালিয়ে স্বস্তিতে থাকেন, অথচ দরিদ্ররা লোডশেডিং আর অসহনীয় গরমে কষ্ট করে।’ বিশেষ করে বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুরনো মডেলের এসিগুলো হাইড্রোফ্লোরোকার্বন গ্যাস ছাড়ে, যা অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ঢাকার এই শীতলকরণ প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো (কিগালি সংশোধনী ও প্যারিস চুক্তি) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন ৩ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠান
পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যবিদ শিরিন কবির বলেন, ‘ঢাকা যদি তার গাছ, পার্ক ও প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের পথ সংরক্ষণ করত, তাহলে এত বেশি কৃত্রিম শীতলকরণের প্রয়োজন হতো না। আমরা এমন শহর তৈরি করছি, যেটিকে বাসযোগ্য রাখতে যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’
বেঁচে থাকার জন্য বনায়ন
ঢাকার পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি ইউএনবিকে বলেন, ‘তীব্র গরম, বায়ুদূষণ ও দ্রুত সবুজ হারানো প্রতিরোধে ঢাকার জন্য পুনরায় বনায়ন অপরিহার্য। ঢাকায় বনায়ন এখন শুধু পরিবেশগত চাহিদা নয়, এটি টিকে থাকার কৌশল। শহরটি দ্রুত তার সবুজ আচ্ছাদন হারাচ্ছে, আর সঙ্গে হারাচ্ছে পরিষ্কার বাতাস, ছায়া ও জীববৈচিত্র্য।’
এ কারণে তিনি মিশন গ্রিন বাংলাদেশের মাধ্যমে গ্রিন ভলান্টিয়ার প্রোগ্রাম শুরু করেছেন বলে জানান। সেখানে তরুণদের সরাসরি শহরকে সবুজ করায় যুক্ত করার আশাও প্রকাশ করেন তিনি।
এই তরুণ পরিবেশকর্মী আরও জানান, তারা গাছ লাগানোর অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, সচেতনতা কার্যক্রম চালান এবং ছোট শহুরে বনও তৈরি করে থাকেন। যেমন: ৫৫টি কদমগাছ নিয়ে গড়া ‘কদমতলা ইনিশিয়েটিভ’।
তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য পরিবেশগত কাজকে সহজলভ্য, হাতে-কলমে ও সমাজভিত্তিক করে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, আজ আমরা যে গাছ লাগাচ্ছি, তা আগামী দিনের জন্য একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য ঢাকার প্রতিশ্রুতি।’
সরকার ও বিভিন্ন এনজিওর সৌজন্যেও একাধিক বৃক্ষরোপণ অভিযান চালানো হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে এক লাখের বেশি চারা রোপণ করা হয়েছে এই শহরে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, ভাঙচুর, অবহেলা বা অনুপযুক্ত (বিদেশি বা দুর্বল মূলবিশিষ্ট) প্রজাতির গাছের চারা ব্যবহারের কারণে এগুলোর অন্তত ৩০ শতাংশ প্রথম বছরেই মারা গেছে।
১৬১ দিন আগে
গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া, খুলনায় মিলছে না খেজুরের রস
কুয়াশার দখলে তখনো সকাল। ঘুম ভাঙেনি সূর্যের। শেষ হয়নি আলো-আঁধারির যুদ্ধও। মাঠের কোণায় একটি ছায়ামূর্তি দেখা যায়। দূর থেকে ভেসে আসে ‘র-অ-অ-অ-স খেজুরের রস’। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয় অবয়ব। কাঁধের ভারের দুই পাশে দুটি মাটির কলস ঝুলছে। প্রত্যাশিত সেই মুখ দেখেই শিশু-কিশোররা ‘দে ছুট’। কারো হাতে জগ কারো হাতে পাতিল। পাখিদের সঙ্গে মিশে যায় শিশু-কিশোরের কোলাহল। মুখর হয়ে উঠে বাড়ির উঠান। শীতের বাংলায় অতি পরিচিত এ দৃশ্য।
মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন গাছিরা। কে কত আগে গাছ প্রস্তুত করতে পারেন, কার গাছ কত ভালোভাবে চাঁচ দেওয়া হলো এসব নিয়ে আলোচনা চলে নিজেদের মধ্যে।
তবে বর্তমানে চিরায়ত সেসব দৃশ্য চোখে পড়ে না খুব সহজেই। খুলনা অঞ্চলে হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু খেজুরের রস। নতুন প্রজন্মের এসব দৃশ্য অনেকটাই অপরিচিত। অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে খেজুরের রসের স্বাদ থেকে।
খেজুর গাছ কাটার পেশায় জড়িতরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। সে কারণে খুলনায় ঐহিত্যবাহী খেজুরের রস এখন সোনার হরিণ। শিশির পড়া সকালে কম্বল পেঁচিয়ে বিছানার উপর থেকে আর শোনা যায় না খেজুরের রস বিক্রির ডাক-হাক।
সেই সঙ্গে প্রায় হারিয়ে গেছে রাত জেগে খেজুর রসের সেই পিঠা, পায়েস বানানোর সময় বৌ-ঝিদের মিলনমেলা। খুলনায় খানিকতটা ভাটা পড়েছে উৎসবের আনন্দে।
আরও পড়ুন: খেজুরের রস কাঁচা না খাওয়ার পরামর্শ খুলনার সিভিল সার্জনের
৬৯২ দিন আগে
প্রধান শহরগুলোর জন্য বড় নগরায়ন প্রকল্প সরকারের
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্রুত নগরায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
ইউএনবির দেখা একটি নথি অনুযায়ী, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উন্নত আবাসন, পার্ক ও জলাশয়ের ব্যবস্থাপনা, যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।
নথিতে উল্লেখ আছে, ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা শহরের ভবনগুলোর জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকির মূল্যায়নও চলছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন এলাকার মাস্টারপ্ল্যান (২০২০-২০৪১) প্রণয়ন’- শীর্ষক একটি সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০ বছরে চার ধাপে বাস্তবায়নের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
এছাড়া সারাদেশে পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে ‘নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা আইন’-এর খসড়া তৈরির কাজ চলছে।
ঢাকায় কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন এবং ১২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যার আওতায় রয়েছে পাঁচটি ইন্টারসেকশন, ১৩টি খিলান সেতু এবং চারটি আন্ডারপাস ও ছয়টি সেতু প্রশস্তকরণ।
আরও পড়ুন: আশ্রয়ণ প্রকল্প: ‘এহন আমাগের দিন ঘুরতে শুরু করছে’
এছাড়া রাজউকের অধীনে ঢাকার নতুন বাজার এলাকা থেকে মাদানী এভিনিউ বরাবর বালু নদী পর্যন্ত ৪টি সেতুসহ ৬ দশমিক ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।
নথিতে বলা হয়েছে, শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে চট্টগ্রামে ৩৫টি খাল পরিষ্কার ও পুনঃখননের কাজ চলছে।
লালখানবাজার থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজও চলছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার রিং রোড প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।
সরকারি কাগজপত্র অনুসারে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ইটের বিকল্প হিসেবে আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব ইট (ব্লক) ব্যবহার করতে সরকার উৎসাহিত করছে।
এতে বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব ‘অটোক্লেভ এরেটেড কংক্রিট প্যানেল’ তৈরির জন্য একটি পাইলট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে।
এর ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার সরকারের নীতির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের তুলনায় কাজ উন্নত হয় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এছাড়াও, উন্নত বিশ্বে অনুসৃত নির্মাণ প্রকৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দ্রুত ভবন নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভুমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বহুতল ভবনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনায় স্থানীয় উপকরণ, প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নির্মাণ শিল্পকে আধুনিক ও টেকসই করার কথা বলা হয়েছে।
চাহিদা ও গুরুত্ব অনুযায়ী পুরানো সরকারি ভবনগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থার (সিসমিক রেট্রোফিটিং) আওতায় আনা হচ্ছে।
নথিতে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনাটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সব সরকারি ভবনকে পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও সবুজ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করে তুলবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংককে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান নসরুল হামিদের
১১৫২ দিন আগে