গাজা উপত্যকা
ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল আরও ৪৮ ফিলিস্তিনির
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আরও অন্তত ৪৮ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০) এ হতাহতের তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ।
গাজা শহরের শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহত ও আহতরা জিকিম ক্রসিং এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। এটি উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ। তবে কে গুলি চালিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি এবং ওই ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আল-সারায়া ফিল্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে শতাধিক আহত ও নিহতদের নিয়ে আসা হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগের প্রধান ফারেস আওয়াদ জানান, কিছু লাশ অন্য হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিতে অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই খাবারের খোঁজে জড়ো হয়েছিলেন।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলাগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল যোদ্ধাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায়। তাছাড়া বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকেই দায়ী করে। কারণ তাদের ভাষ্যে, হামাসের যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, অনাহারে এক শিশুসহ আরও সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে অনাহারে ৮৯ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ৬৫ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও রয়ে গেছে বাধা
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে উপত্যকাটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। একের পর এক অনাহারে মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে ইসরায়েল।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তা সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কাজ করা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় ২২০টিরও বেশি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন গড়ে জাতিসংঘের ৫০০–৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করত। সে তুলনায় বর্তমানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না গাজাবাসী। তাছাড়া এখনো গাজায় প্রবেশ করা সহায়তা যথাযথভাবে বিতরণে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘ। কারণ অধিকাংশ ট্রাক ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ভিড় করা জনতার মাধ্যমে খালাস হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ প্রবেশে সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
অন্যদিকে, ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে খাবার নিতে গিয়ে মে থেকে এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে এবার কানাডা ও মাল্টার সম্মতি
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা ও অনাহারে একের পর এক মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমা বিশ্বও।
দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও মাল্টা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন। এর আগে মাল্টার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ক্রিস্টোফার কুটাজার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানবিষয়ক অধিবেশনে মাল্টার অবস্থান ঘোষণা করেন।
তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হামাসের ‘সন্ত্রাসবাদ’ পুরস্কৃত করার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু লেখেন, ‘আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদি রাষ্ট্র গড়া হলে, কাল সেটি আপনাদের জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
১২৭ দিন আগে
ত্রাণ প্রবেশে সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
গত কয়েক সপ্তাহে অনাহারে বহু ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় বাইরে থেকে খাদ্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। এই খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে এই সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে আকাশ ও স্থলপথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও পক্ষ থেকে গাজায় ত্রাণ ঢুকতে শুরু করে।
এর আগে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি এলাকার চলমান অভিযানে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করা হবে। রবিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে অন্যান্য এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণেই গাজার এই খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
রবিবার রাতে বিমান থেকে ফেলার একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েল। এতে দেখা যায়, আটা, চিনি ও টিনজাত দ্রব্য ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও রবিবার দুপুরে ত্রাণবাহী বিমান থেকে সহায়তা ফেলেছে।
ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, জাতিসংঘ যেন খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করতে পারে সে জন্য মানবিক করিডর চালু করা হবে এবং একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র চালু করে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
তবে গাজার বাসিন্দারা এই ত্রাণবিরতিকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন। অনেকেই নানা ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কারণ, রবিবার যুদ্ধবিরতির পরপরই গাজার একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক নারী ও তার চার সন্তান নিহত হন। এছাড়াও, মধ্য গাজার আল-আকসা ও আল-আওদা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার গণিত শিক্ষক ও সাত সন্তানের বাবা ইয়াদ আল-বান্না বলেন, ‘মানবিক করিডর খোলা হলেও মজুদ সংকট এত গভীর, এটি এক বা দুই সপ্তাহ চললেও তেমন পরিবর্তন আসবে না। দুর্ভিক্ষ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, রবিবার বাজারে আটা ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের সরবরাহ বা দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি; আটার দাম রাতারাতি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
আল-নাসের হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক জানান, অপুষ্ট শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো চিকিৎসা সহায়তা এখনো হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছেনি।
এছাড়া, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেছেন। উত্তর গাজার এক শিক্ষাবিদ হিকমাত আল-মাসরি বলেন, ‘আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ পদ্ধতিটি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অপমানজনক। যুদ্ধের শুরুতে এই ব্যবস্থা বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।’
আরও পড়ুন: ইরানে আদালতে সশস্ত্র হামলায় নিহত ৯, আহত ২২
রবিবারও আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের প্যাকেটের আঘাতে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার জানান, রবিবার গাজায় কিছু ক্ষেত্রে চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ইসরায়েল। এক সপ্তাহের জন্য সহায়তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।তিনি বলেন, ‘এটা কিছুটা অগ্রগতি, তবে দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য সংকট রোধে বিশাল পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। তবে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ, জাতিসংঘ যথাযথভাবে সহায়তা বিতরণ করতে ব্যর্থ।
তবে জাতিসংঘ বলেছে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য যে অনুরোধগুলো করেছে, তার বেশিরভাগই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বাতিল করেছে। অক্সফামের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক প্রধান বুশরা খালিদি বলেন, ‘এখন যা প্রয়োজন, তা হলো গাজার সব সীমান্ত অবিলম্বে খুলে দিয়ে পূর্ণ, নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। এর কম কিছু হলে তা কেবল একটি কৌশলগত চাল হিসেবেই বিবেচিত হবে।’
এদিকে, স্কটল্যান্ড সফরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির আলোচনা থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়িয়েছে। এরপর কী ঘটবে, তা তিনি জানেন না।
১৩০ দিন আগে
প্রস্তাবিত মানবিক শহর হবে ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্দিশিবির: ইহুদ ওলমার্ট
গাজা উপত্যকার রাফাহ অঞ্চলকে ‘মানবিক শহর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কার্টস যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য সেটি মূলত একটি ‘বন্দিশিবির’ (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প) হবে বলে জানিয়েছেন অবৈধ রাষ্ট্রটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট।
সেখানে ফিলিস্তিনিদের বাধ্যতামূলকভাবে ঠেলে দেওয়া হলে তা ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইহুদ ওলমার্ট বলেন, ইসরায়েল এরইমধ্যে গাজা ও পশ্চিমতীরে যুদ্ধাপরাধ করছে। আর এ শিবির নির্মাণ হলে তা হবে আরও ভয়াবহ মাত্রার অপরাধ।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মানবিক শহরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইহুদ ওলমার্ট বলেন, ‘আমি দুঃখিত, তবে এটা হবে একটি বন্দিশিবির। যেখানে বন্দিদের নির্যাতন করা হবে।
‘সম্প্রতি সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ গাজার ধ্বংসস্তূপে এই মানবিক শহর নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন কার্টজ। যেখানে প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ এবং পরবর্তীতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকে রাখা হবে। এই শিবিরে একবার ঢোকানো হলে ফিলিস্তিনিরা কেবল অন্য দেশে যাওয়ার জন্যই বের হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বন্দিদের ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের শাস্তি দিতে এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প কিংবা বন্দিশিবির স্থাপন করা হয়। হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দির জন্য ১৯৩৩ সালে নাৎসি জার্মানিতে প্রথম কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তখন এই ক্যাম্পে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
ইহুদ ওলমার্ট বলেন, যদি ফিলিস্তিনিদের নতুন মানবিক শহরে জোরপূর্বক পাঠানো হয়, তাহলে সেটিকে জাতিগত নির্মূল বলাই যায়। যদিও এখনও এমন কিছু ঘটেনি, তবে এমন একটি শিবির গঠনের চেষ্টা হলে এটিই হবে ওই ঘটনার অবধারিত ব্যাখ্যা।
তবে বর্তমানে গাজায় চলমান ইসরায়েলের অভিযানকে তিনি জাতিগত নির্মূল হিসেবে দেখছেন না। তার ভাষ্যে, যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়া আন্তর্জাতিক আইনে বৈধ এবং তারা কিছু এলাকায় পুনরায় ফিরে এসেছেন।
এদিকে, কার্টজের মানবিক শহরের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে যে এলাকায় মানবিক শহর তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখান থেকে সেনা না সরাতে চাওয়ার শর্তে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বড় বাধা তৈরি হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে এমন বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওলমার্ট বলেন, ‘গাজার অর্ধেক মানুষকে সরিয়ে এনে একটি শিবির বানাতে চাইছে তারা। অথচ তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নাকি তারা এটি নির্মাণ করছে— যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটি আসলে তাদের বিতাড়নের, ঠেলে ফেলে দেওয়ার কৌশল। এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা অন্তত আমার নেই।’
ইসরায়েলের মানবাধিকার আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের নীলনকশা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ সতর্ক করে বলছেন, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি গণহত্যার অপরাধেও পরিণত হতে পারে।
এদিকে, যারা এই মানবিক শহরের পরিকল্পনাকে নাৎসি জার্মানির বন্দিশিবিরের সঙ্গে তুলনা করছেন, তাদের উপর চড়াও হয়েছে দেশটির সরকার। তাদের দাবি, ফিলিস্তিদের বাঁচাতেই তারা এমনটা করতে চাইছেন।
এমন তুলনার জন্য ইয়াদ ভাশেম নামের এক সাংবাদিককে ‘গুরুতর ও অনুপযুক্ত বিকৃতির’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে ইসরায়েলের হলোকাস্ট স্মৃতিসংগ্রহ কেন্দ্র।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ওলমার্ট এই সাক্ষাৎকার দেন ঠিক যেদিন পশ্চিম তীরে দুই ফিলিস্তিনির দাফন সম্পন্ন হয়। ওই দুজনের মধ্যে একজন ছিলেন আমেরিকান নাগরিক, যাদের ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দারা হত্যা করেছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে ওলমার্ট বলেন, ‘এটা ক্ষমার অযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য। একদল মানুষের দ্বারা অব্যাহত, সংগঠিত, নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলক পদ্ধতিতে এসব হামলা পরিচালিত হচ্ছে।’
এই হামলাকারীদের সাধারণত ‘হিলটপ যুবক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যাদের একপ্রান্তিক চরমপন্থী হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ওলমার্ট বলেন, আমি তাদের ‘হিলটপ নৃশংসতা’ বলে আখ্যায়িত করতে চাই।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যে সংগঠিত সহায়তা ও সুরক্ষা কাঠামো দিচ্ছে, সেটি ছাড়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এমন অব্যাহত ও বিস্তৃত সহিংসতা চালানো সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
যেসব চরমপন্থী মন্ত্রীরা গাজা ও পশ্চিমতীরে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন, ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণকে অনুমোদন দিচ্ছেন এবং আইনপ্রয়োগ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন—তাদেরকে দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য বাইরের শত্রুর চেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করেন ওলমার্ট।
তিনি বলেন, ‘এই লোকগুলো আমাদের ভিতরের শত্রু।’
তার মতে, গাজায় চরম মানবিক দুর্দশা ও পশ্চিম তীরে বসতিদের বর্বরতা—এই দুটি বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ক্ষোভকে শুধু ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
ওলমার্ট বলেন, ‘আমেরিকায় ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বাড়ছে। তারা ইহুদিবিদ্বেষী— এই বলে হয়তো আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি। তবে আমি মনে করি, তারা ইহুদীবিদ্বেষী বরং টেলিভিশন বা সামাজিকমাধ্যমে যা দেখছেন তাতে অনেকেই ইসরায়েলবিরোধী হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু এটিই স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া। তোমার সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো।’
আন্তর্জাতিক চাপের ভার অনুভব করলে ইসরায়েলের জনগণের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন ওলমার্ট। এ সময় দেশে কার্যকর রাজনৈতিক বিরোধীশক্তির অভাবে তিনি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি জানান। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ানকে ওলমার্ট জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের প্রাথমিক সামরিক অভিযানে তিনি সমর্থন দিলেও, চলতি বছরের বসন্তে সরকার ‘জনসমক্ষে ও নির্লজ্জভাবে’ শান্তি আলোচনার পথ ছেড়ে দিলে তিনি বুঝতে পারেন ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।
তিনি বলেন, ‘আত্মরক্ষার যুদ্ধ যে অন্যকিছুতে রূপ নিয়েছে, তা দেখে আমি লজ্জিত ও মর্মাহত। আমি এখন যেটা করতে পারি তা হলো, এই অন্যায়গুলো স্বীকার করা এবং সমালোচনা করা—যাতে আন্তর্জাতিক জনমত জানতে পারে, ইসরায়েলের ভেতরেও অনেক ভিন্ন কণ্ঠস্বর আছে।’
এসব যুদ্ধাপরাধ কোনো সংগঠিত নৃশংস অভিযানের অংশ নয় বরং এটি অবহেলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের অগ্রহণযোগ্য মাত্রা মেনে নেওয়ার ফল বলে মত দেন তিনি। ওলমার্ট বলেন, কম্যান্ডাররা কি এসব কাজের আদেশ দিয়েছেন? কখনোই না।
তিনি বিশ্বাস করেন, যখন এমন কিছু করা হয়েছে যার পরিণতিতে বহু নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, তখন সেনাবাহিনী চুপচাপ থেকেছে। এ কারণেই এই সরকারের ওপর যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানো থেকে আমি নিজেকে আটকাতে পারি না।
তবে চলমান সব পরিস্থিতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনাভিত্তিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার শেষ বাস্তব প্রচেষ্টা চালানো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওলমার্ট এখনো বিশ্বাস করেন— দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান সম্ভব।
তিনি সাবেক ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের আল-কিদওয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সমাধানের পক্ষে কাজ করছেন। এমনকি যদি নেতানিয়াহু চায়, তাহলে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সুযোগও এখন পর্যন্ত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে সেই নেতানিয়াহুকেই সম্প্রতি অবাক হয়ে দেখেছেন ওলমার্ট। কারণ যে ব্যক্তি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের যুদ্ধাপরাধের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিচ্ছেন!
আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যা: প্রতিবাদকারীদের ওপর যেভাবে নীরবতা ছড়িয়ে চলেছে হলিউড
১৪৪ দিন আগে
গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা
গাজা উপত্যকায় সাগরতীরের একটি জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ৫০০ পাউন্ড ওজনের একটি বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
এ ধরনের শক্তিশালী ও নির্বিচার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহারে একদিকে ব্যাপক বিস্ফোরণ তৈরি করতে পারে, অন্যদিকে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ধাতব টুকরা (শ্র্যাপনেল) ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের বরাতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, নারী-শিশু ও বয়স্কহ বহু অরক্ষিত বেসামরিক মানুষের উপস্থিতি জেনেও এ ধরনের গোলাবারুদের ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই বেআইনি ও এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
আল-বাকা নামের ওই ক্যাফের ধ্বংসস্তূপ থেকে বোমাটির খণ্ডাংশের ছবি তুলেছে গার্ডিয়ান। গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ বোমা। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে ৫০০ পাউন্ড ওজনের এই বোমাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিস্ফোরণে যে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে, সেটিই বলে দিচ্ছে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ এর মতো শক্তিশালী বোমা।
কাফেতে হামলার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলিক সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘হামলার আগে বিমানের নজরদারির মাধ্যমে বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: ত্রাণকেন্দ্র থেকে ক্যাফে, কোথাও নেই ফিলিস্তিনিদের প্রাণের নিরাপত্তা
চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, ‘ওই হামলায় ২৪ থেকে ৩৬ জনের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। নিহতদের মধ্যে একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, একজন শিল্পী, ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহিনী ও চার বছরের একটি শিশু রয়েছে।’
জেনেভা কনভেনশনভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, ‘বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ঘটতে পারে বা সামরিক লক্ষ্যের চেয়েও অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো সামরিক হামলা করা নিষিদ্ধ।’
চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পারিবারিকভাবে পরিচালিত আল-বাকা ক্যাফে। বিনোদনের জন্য তরুণ ও গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে এটির বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। কোমল পানীয়, চা ও বিস্কুটের জন্য লোকজন এই ক্যাফেতে ভিড় করতেন।
দোতলা ক্যাফের উপরের ডেক ছিল খোলা। নিচের তলায় সৈকত কিংবা সাগরের দিকে বড় জানালা ছিল। যে কারণে এটির ভেতরের চলাচল উপর থেকেই সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্যারি সিম্পসন বলেন, ‘কাদের নিশানা করা করা হামলা করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তা সুস্পষ্ট করে বলেনি। কিন্তু তারা বলছে যে বেসামরিক হতাহত কমিয়ে আনতে আকাশ থেকে নজরদারি করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা জানত যে ওই ক্যাফেটিতে প্রচুর গ্রাহক ছিল।’
আরও পড়ুন: জাপানি দ্বীপপুঞ্জে দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প
‘আইডিএফ অবশ্য জানত যে, আকাশ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে এ ধরনের বড় বোমা হামলা চালালে বহু বেসামরিক লোকজন হতাহত হবেন। কাজেই এমন একটি ভিড়ে ঠাসা ক্যাফেতে এই হামলা ছিল অতিরিক্ত মাত্রায় ও নির্বিচার। যুদ্ধাপরাধ হিসেবে এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।’
১৫৪ দিন আগে
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: দাবি ট্রাম্পের
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপশি, হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, হামাস যদি এই চুক্তি মেনে না নেয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এমন এক সময়ে ট্রাম্প এই ঘোষণা দিয়েছেন, যখন তিনি হোয়াইট হাউসে আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।-খবর এপি ও গার্ডিয়ানের
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। ৬০ দিনের একটি অস্ত্রবিরতি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় শর্তে রাজি হয়েছে ইসরায়েল—এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবো।’
হামাসকে কাতার ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা চূড়ান্ত প্রস্তাব পৌঁছে দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্যের ভালোর জন্য হলেও হামাস এই চুক্তি মেনে নেবে। কারণ, চুক্তি না মানলে পরিস্থিতি ভালো হবে না—বরং খারাপের দিকেই যাবে।’
এটিই সবচেয়ে ভালো ও চূড়ান্ত প্রস্তাব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প, যদিও আগের অভিজ্ঞতার বিবেচনায় হামাসের কাছে তা সন্দেহপ্রবণ মনে হতে পারে। কী কী শর্তে যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে ইসরায়েল, তা এখনো পরিষ্কার না।
এরআগে গেল মার্চে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে লড়াই বন্ধে হামাসকে চাপে রাখতে নাটকীয়ভাবে বারবার সময়সীমা বেঁধে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো শর্তে জিম্মিদের ছেড়ে দিতে তারা প্রস্তুত। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, হামাসকে ভেঙে দেওয়া ও নিরস্ত্রীকরণ করলেই কেবল এই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।
১৫৬ দিন আগে
ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন গাজাবাসীরা
ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বুধবার (১১ জুন) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ত্রাণ সংগ্রহে গিয়ে অন্তত ২১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর সঠিক প্রেক্ষাপট তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অথচ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বুধবার (১১ জুন) ভোরে মধ্য গাজায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দিকে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে তারা। তবে দক্ষিণ গাজায় প্রাণহানির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তারা।
ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রের পথে প্রাণহানি
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহরের কাছে ত্রাণ সহায়তা নিতে যাওয়ার পথে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসন: গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল
মধ্য গাজার আল-আওদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে আরও ৭জন নিহত হয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে রয়েছেন অনেক নারী ও কিশোর, যারা সহায়তা নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সাফা ফারমাওয়ি নামে একজন ফিলিস্তিনি নারী জানান, তার ১৬ বছরের মেয়ে গাজাল ইয়াদ রাফাহতে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে।
দুঃখভারাক্রান্ত মনে তিনি বলেন, ‘আমি আর মেয়ে দুজনেই সহায়তা নিতে গিয়েছিলাম। ও আগে গিয়েছিল। পরে খুঁজেও ওকে পাইনি। তখন লোকজন বলল, তোমার মেয়ে শহীদ হয়েছে।মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ ব্যবস্থা চালু পরই হচ্ছে এমন হামলা।’
জাতিসংঘ স্বীকৃতি না পাওয়া একটি নতুন সংস্থা সহায়তা বিতরণ চালু করার পর থেকে প্রতিদিনই ত্রাণ নিতে যাওয়া ব্যাক্তিদের লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটছে। প্রত্যক্ষদর্শী ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ নিতে যাওয়া জনতার ভিড়ে গুলি চালাচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, একটি হামলায় তাদের অন্তত ৫ জন স্থানীয় সহায়তাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হামাসকে দায়ী করেছে ফাউন্ডেশনটি।
তাদের দাবি— সহায়তাকর্মীরা তাদের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। তবে বিতরণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে কোনো ধরনের সহিংসতার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।
ইসরায়েলের পরিচালিত নতুন এই ত্রাণ ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে সহায়তা না দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর এই বিষয়টিকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।
হামাসকে ত্রাণ চুরি থেকে বিরত রাখতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যদিও এই চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ।
প্রায় তিন মাসের অবরোধের পর গত ২০ মে থেকে গাজায় প্রবেশ করে মানবিক সহায়তা। তবে যে পরিমাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে তা প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসীর জন্য অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন অনেকে। আরও সহায়তা না এলে এই অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি মদদপুষ্ট ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা হামাসের
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৫ হাজার ১০৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৪ জন।
১৭৫ দিন আগে
শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে আজ মুক্তি দিতে পারে হামাস
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়নসহ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিজেদের কাছে থাকা সর্বশেষ জীবিত মার্কিন জিম্মি এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে জানিয়েছে হামাস।
স্থানীয় সময় রবিবার (১১ মে) হামাসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আলেক্সান্ডারকে সোমবার (১২ মে) মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হামাসকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল— প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি উপহার দাও এবং বিনিময়ে তিনি আরও বড় একটি উপহার দেবেন।’
এমন এক সময়ে এই ঘোষণা এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গতি আনতে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপরই মার্চে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো বন্দিমুক্তির কথা এসেছে। উইটকফ বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতি সদিচ্ছা প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস।’
রবিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হামাসের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টার প্রতি সদিচ্ছার একটি পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: এক মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস, ইসরায়েলের সন্দেহ
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আশাকরি, এটি সেই চূড়ান্ত ধাপগুলোর প্রথমটি, যা এই নিষ্ঠুর সংঘাতের অবসান ঘটাবে। আমি সেই উদযাপনের দিনের অপেক্ষায় আছি।’
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিনাশর্তে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। এই পদক্ষেপটি একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে।
তবে এর আগে হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নেতানিয়োহু। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার শর্তে আলেকজান্ডারসহ চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হামাস। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই আবার যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল।
উইটকফ বলেন, আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে হামাসের লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করা, আরও বন্দিমুক্তি নিশ্চিত করা এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়ানো।
এদিকে, হামাসের নেতা খালিল আল-হায়া বলেন, গত কয়েক দিনে দলটি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি, যুদ্ধের সমাপ্তি, গাজায় বন্দি থাকা ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়, এবং গাজার শাসনক্ষমতা একটি নিরপেক্ষদের হাতে হস্তান্তর করার লক্ষ্যে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস।
এদিকে গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলের হামলা। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, শনিবার রাত ও রবিবার সকালের বিমান হামলায় গাজায় ১৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ নিয়ে ইসরায়েলে হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় প্রায় ৫২ হাজার ৮০০ প্রাণহানি হয়েছে।
২০৭ দিন আগে
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৬
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দিনভর এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স।
সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু বেসামরিক আবাসিক বাড়ি, জনসমাগমের স্থান ও তাবুকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বাসাল বলেন, ইসরায়েলি এসব হামলায় গাজা শহরের পশ্চিম ও দক্ষিণে দুটি বাড়িতে হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় উত্তর গাজার বেইত হানুনে তিনজন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার আল-জাওয়াইদা শহরের একটি বাড়িতে হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন।
গাজার দেইল আল বালাহ শহরের একটি ক্যাফেতে হামলায় ৪ জন, মাগাজি শরণার্থী শিবিরের উত্তরে ফিলিস্তিনি জনসমাগমস্থলে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫ জন নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২১ ফিলিস্তিনি নিহত
মধ্য গাজার আল জাওয়াইদা, খান ইউনিসের আল মাওয়াশিতে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আরও ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র বাসাল।
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে। এতে অন্তত ২ হাজার ১১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হন আরও ৫ হাজার ৪৮৩ জন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শনিবারের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৫১ হাজার ৪৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর সর্বমোট আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৫২৪ জন।
ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর।
হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, শনিবার পূর্ব গাজার শুজাইয়া পাড়ায় একটি বাড়িতে অবস্থানকারী ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যোদ্ধারা। এতে বেশ কয়েকজন সৈন্য হতাহত হয়েছেন।
গত শুক্রবার দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন বলে শনিবার সন্ধ্যায় পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ও ইসরায়েল পুলিশ। ইসরায়েলি নিহতরা হলো সাঁজোয়া যানের কর্পস অফিসার ও প্লাটুন কমান্ডার ইডো ভোলোচ(২১) ও সীমান্ত পুলিশের আন্ডারকভার অফিসার ইতজাক কাহানা (১৯)।
এদিকে চলমান যুদ্ধের মধ্যে হামাস শনিবার একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির শর্তে সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের একসঙ্গে মুক্তি দিতে প্রস্তুত হামাস।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজায় তাদের খাদ্য মজুদ সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে। তারা তাদের মজুদের সর্বশেষ খাদ্যটুকু স্থানীয়দের মাঝে বিতরণ করেছেন।
এমতাবস্থায় গাজায় সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১২টি প্রধান সাহায্যকারী সংস্থা।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
২২২ দিন আগে
বোমার ভয়ের চেয়েও ক্ষুধায় কাতর ফিলিস্তিনিরা
‘আমার নিজের সামান্য খাবার থেকে প্রায়ই আমার ছেলেকে ভাগ দিতে হয়, এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাবো—ধীরে ধীরে আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ বলছিলেন ৪৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি।
উপত্যকাটির শিশুরা গড়ে দিনে একবারেরও কম খাবার পাচ্ছে। দেখা যায়, বাবা-মা নিজের খাবারটুকু তুলে দিচ্ছেন সন্তানের মুখে। নিজেরা থাকছেন অভুক্ত। অনেক সময় সন্তানের মুখে তুলে দেওয়ার খাবারটুকুও পান না তারা। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।ইসরায়েলের বোমার চেয়ে যেন ক্ষুধায় বেশি কাতর ফিলিস্তিনিরা। গত সাত সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় খাদ্যসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গাজাবাসীর দুর্ভোগ চরম সীমায় পৌঁছেছে। হিকমাত বলেন, ‘আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।’
গত ২ মার্চ গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এতে গাজাবাসীর জীবন অবর্ণনীয় কষ্ট ও হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা, চিকিৎসাকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত
একদিকে ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে গাজার মানুষের কাছে না আছে খাবার, না পানি, না বিদ্যুৎ—জেনারেটরও শেষের পথে। অন্ধকারের অতলে পতিত হতে যাচ্ছে লাখ লাখ অসহায় মানুষ।
মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এবারের সংকট সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।
এরই মধ্যে অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে হচ্ছে এখান থেকে সেখানে। যদিও কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালের মতো বেসামরিক স্থাপনায় আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনারা। এদিকে খাদ্য, জেনারেটরের জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই শেষের পথে। নতুন করে কিছু প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার ওপর পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বারবার জানিয়ে আসছে ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গাজায় এই অবরোধ দিয়েছেন তারা, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছেনা। যেটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
আরও পড়ুন: গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
আট সপ্তাহ হতে চলেছে গাজায় এই অবরোধ জারি রেখেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় তেমন কোনো আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়াই এই অবরোধ বহাল রাখতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী নেতানিয়াহু।
এদিকে গাজায় দীর্ঘমেয়াদে সেনাদের উপস্থিতি বজায় রাখা এবং ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে তাদের নিজভূমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে।
গাজায় নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরির নামে মূলত ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে উপত্যকাটির ভূমি দখল করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল— এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যাপারটিও সেনাবাহিনী ও বেসরকারি ঠিকাদারদের হাতে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের।
এতে গাজায় সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা এখন ইসরায়েলের বিমান হামলার চেয়ে বেশি দুর্ভিক্ষকে ভয় পাচ্ছেন।
যু্দ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তা প্রায় শেষ। উদভ্রান্তের মতো ত্রাণ দেওয়া তাঁবুগুলোতে খালি হাঁড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এক হাজার ৪০০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: গাজায় ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা
অক্সফামের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে এক বেলারও কম খাবার পায়। যদিও নতুন করে ইসরায়েলের আদেশে পায় ৪ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা সরে যেতে হচ্ছে অন্য আশ্রয়ের খোঁজে তাই সঠিক পাওয়াটা মুশকিল ছিল।
গাজার দেইর আল বালাহর চিকিৎসাকর্মী আমান্দে বাজেরোল জানান, উত্তর গাজা থেকে ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে ফিলিস্তিনিরা এই শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ রাস্তায়, কেউবা ভাঙা বাড়িগুলোর মধ্যে তাঁবু টানিয়ে থাকছেন; যা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।তিনি বলেন, ‘এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা আমাদের নেই। বার্ন ক্লিনিকগুলোতে ১০টার মধ্যেই রোগীর ভর্তি নেওয়া বন্ধ করতে হয়। কারণ আমরা ঔষধের মজুত যত বেশিদিন সম্ভব টিকিয়ে রাখতে চাইছি।’
উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজা রাফায় ব্যাপকভাবে অভিযান চালিয়ে বর্তমানে উপত্যকাটিতে পার্শ্ববর্তী মিসর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ফিলিস্তিনের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমিই এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
মানবাধিকার ও ত্রাণকর্মীরা বলছেন, তাদের কাজ করার পরিধি ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে চলেছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে খান ইউনিসের আল নাসের হাসপাতাল ও গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হাসপাতালে ওই হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ত্রাণকর্মী বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা আমাদের আশেপাশে থাকতে চায়। তাদের ধারণা, আমরা সঙ্গে থাকলে আইডিএফ কম হামলা চালাবে তাদের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে আমাদের দুই কিলোমিটার দূরত্বে হামলা চালানো হতো। ফলে আমরা সরে যেতে পারতাম। ধীরে ধীরে সেটি ৩০০ মিটারে নেমে আসে, এখন তো ৩০ মিটারে চলে এসেছে। একদম পাশেই হামলা চালানো হয়।’
ওই ত্রাণকর্মী আরও বলেন, ‘কখনো কখনো সরে যাওয়ার জন্য ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়, যা অসুস্থ রোগীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোটেই পর্যাপ্ত নয়। আমাদের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।’
এ প্রসঙ্গে আইডিএফ জানায়, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিজেদের কার্যক্রম চালায়। আর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েই তারা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যেটি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করা হয়।
তাদের অভিযোগ, গাজাতে যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছায় তার বড় একটি অংশ আত্মসাৎ করে হামাস। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পাশাপাশি বেসামরিক বাসিন্দাদের কাছে চড়াদামে এগুলো বিক্রি করতে তারা এই কাজ করে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলকে এআই সরবরাহের প্রতিবাদ: মাইক্রোসফটের ২ প্রকৌশলী বরখাস্ত
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সরিয়ে বেসরকারি ঠিকাদারদের দিয়ে গাজায় ত্রান পাঠাবে ইসরায়েল। তবে কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে তার কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে, শিগগিররই গাজায় মানবিক সহায়তা না পাঠানো হলে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে।
এরই মধ্যে আরেকটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মধ্যস্ততাকারী দেশগুলো। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ কিংবা ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের মতো মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। তাই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠেছে।
২২৮ দিন আগে
আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে: খলিলুর রহমান
রোহিঙ্গা সংকটকে গাজা উপত্যকার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে। সেটি নিয়ে কারও মিছিল-মিটিং নেই।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিথ ছিলেন।
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নামে বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলা চালিয়েছে একদল তরুণ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড (ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া) করারই একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটার একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গাজাতে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্ব বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া হবে খুবই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে—রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারও মিটিং-মিছিল নেই, আলাপ-আলোচনা নেই। আছে, হচ্ছে,...এগুলো নিয়ে রাস্তায় নামা, লুটপাট করা। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।’
‘পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে বাংলাদেশ মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়, এই দায় আমাদের সবসময় মেটাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
খলিলুর রহমানের ভাষ্য, “কিন্তু আমার ঘাড়ের ওপর একটা সমস্যা বসে আছে। নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? আর অন্যরা একটু বেশি মুসলমান। আমরা কিন্তু খুব লজ্জা লাগে, যখন বাইরের দেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ‘আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তো কোনো কথাবার্তা নেই? তোমরা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলো’।”
‘আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের বুঝতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করবো, দেখুন, বাইরের কথা...আলাপ আপনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঘরের সমস্যা, এটা নিয়ে প্রথম দাঁড়িয়ে যাবেন। তানাহলে আমরা দেশের স্বার্থ রাখতে পারবো না,’ বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হলেন ড. খলিলুর রহমান
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এতে আরও বলা হয়, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গত রাতে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। পরবর্তীতে গাজা যুদ্ধে আইডিএফের নির্বিচার হামলায় অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
২৪০ দিন আগে