শিক্ষাদান
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাদান না কি ব্যবসা?
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর সর্বসাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় যা জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারকে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ‘অলাভজনক হওয়ার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য শিক্ষাদান না কি মুনাফা অর্জন?’
দেশের নামজাদা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার প্রথম সারির কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়াতে পরিবারের শুধু কোর্স আর ক্রেডিট ফি বাবদই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। অধ্যয়নরত বিষয় বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ খরচ ঠেকে ১৫ লাখে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রথম সারির একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোনো শিক্ষার্থী প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক করতে চাইলে তার খরচ পড়বে ৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। প্রকৌশল বাদে বিজ্ঞান বিভাগের অন্য কোনো বিষয়ে পড়তে চাইলে এ খরচ ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আরেকটি প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে গ্রাজুয়েশন খরচ এর চেয়েও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রেডিটে খরচ পড়ে ৮ হাজার টাকার ওপরে। এর সঙ্গে আছে ভর্তি ফি, কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি ও লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার মতো খরচ। এতে করে সব ক্রেডিট শেষ করে একজন শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েশনে খরচ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
একই অবস্থা আফতাবনগরের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজার বিবেচনায় মানসম্পন্ন কোনো বিষয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ৭ লাখ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট বিবিএ সম্পন্ন করতে প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ লাগে ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এসব খরচের বাইরেও রয়েছে বাড়তি অনেক আনুষঙ্গিক খরচ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বিশাল চাপ
যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের খরচ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ ১৬ গুণ বেশি। খরচের এই বিশাল বড় বৈষম্যের শিকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সানোয়ার আহমেদ, দুই ছেলেকেই ভর্তি করিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে সানোয়ার আহমেদ বলেন, ‘দুই ছেলেকে পড়াতে খরচ হবে ৩০ লাখের মতো টাকা। চাকরি করে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানের আরেক বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা এখনো কলেজে পড়ে। মেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়েছি। পড়াশোনার পেছনে প্রতি সেমিস্টারে লাখ টাকা ঢালতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে ছেলেকে বলেছি, পাবলিকে চান্স না পেলে তাকে আর অনার্স করাব না; কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দেব। মাসের বেতন, জীবনের সঞ্চয় সব চলে যাচ্ছে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে।’
ইসরাত জাহানের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পড়ছেন প্রথম সারির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি দুজনই চাকরিজীবী। এরপরও প্রতি সেমিস্টারে মেয়েকে টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে বাড়তি খরচ কম না। সব মিলিয়ে দুইজন দুই লাখ টাকা আয় করলেও সন্তানকে পড়াশোনা করাতে কোনো কোনো সময়ে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয় ।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ
বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্লাসের পাশাপাশি টিউশনি করেন। অনেকে ব্যস্ত থাকেন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। টাকা জোগাড়ে কেউ কেউ নাইট শিফটে পার্ট টাইম চাকরি পর্যন্ত করেন।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘আমি ফার্মাসিতে পড়ি। পুরো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে আমার ১৫ লাখের মতো টাকা লাগবে। শুরুর দুই বছর বাবা টাকা দিতে পারলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন আর টাকা দিতে পারছেন না সেভাবে। এজন্যই নিজেই টাকা আয়ের চেষ্টা করছি। আপাতত ক্লাসের পরে তিনটি টিউশনি করছি। এতে করে যে টাকা আসে তা সেমিস্টার ফি বা ক্রেডিট ফির জন্য যথেষ্ট না হলেও কিছুটা সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা আর কি।’
আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সাদি বলেন, ‘একে তো ক্রেডিট খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে চাইলেই পার্ট টাইম কাজ করা যায় না। তাই আমিসহ আমার অনেক বন্ধু বাধ্য হয়ে রাতের বেলা কল সেন্টারে কাজ করি খরচ যোগাতে।’
শিক্ষার মান নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বেশিরভাগই পড়াশোনা করছেন কিছু শেখা বা দক্ষতা অর্জনের জন্য নয়, কেবল একটি সনদের আশায়। মূলত মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাজুয়েশনের সনদ কিনছেন— এমনটাই মনে করেন তারা।
পাবলিকে আসন নেই, প্রাইভেটে ব্যবসা
প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাস করে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৫৫ হাজারের মতো। এর সঙ্গে মেডিকেল, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন যোগ করলে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ সিটের মতো দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার। অর্থাৎ, যারা সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল করেছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে ভর্তি হতে হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অডিট ফার্ম দিয়ে প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করাতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউজিসি তালিকাভুক্ত ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা বছরের পর বছর কোনো বার্ষিক প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। এ ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সিন্ডিকেট সভা হলেও আর্থিক সভা হয় না বললেই চলে। এতে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকার টিউশন ফি কোথায় কোন খাতে খরচ হয়, তা নিয়ে আদৌ কোনো স্বচ্ছতা থাকে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা ৪-৫ লাখ টাকা করে পান। ছাত্রদের টাকায় বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা আয়েশি জীবনযাপন করছেন, দামি গাড়িতে চড়ছেন, কিনেছেন দামি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তের কোনো জোর নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি থেকে সাবধান করা হলেও ক্ষমতার জোরে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
কিসের ভিত্তিতে এমন আকাশচুম্বী টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আসে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কাছে জিম্মি। কোষাধক্ষ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ হয় ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশে। এই বোর্ড যতটা না শিক্ষাকেন্দ্রিক, তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসাকেন্দ্রিক।
করপোরেট শিক্ষা বাণিজ্য
দেশে নব্বইয়ের দশকে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা হয় এবং সে অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধরনের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার বড় একটি সংযোগ ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বিডিরেনের সেবা গ্রহণের আহ্বান ইউজিসির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, ‘যে সময় দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নিও লিবারেলিজমের ঢেউ চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করেছে। তখন থেকেই শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের পরিণত করার প্রয়াস হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রকমের আত্মপ্রকাশ।’
মানস বলেন, ‘দেশের বাইরে হার্ভাড বা কলম্বিয়ার মতো নামকরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে টাকা আয় করে তাদের আয়ের ধরন মোটেও এমন নয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ব্যাপারটি অনেকটা গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও স্বরূপ বুঝতে কষ্ট হয় না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মানহীন প্রমাণ করে নিজেদের ব্যবসার কৌশল অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের সারিতে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘এটা মূলত ব্যবসায়িক কৌশল। আগে যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সুযোগ পেত না, তাদের শিক্ষার জন্য বড় মাধ্যম ছিল জেলাভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে পড়াকে নিজেদের স্ট্যাটাস রক্ষার অংশ হিসেবে দেখেন। শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের বড় কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পলিসি।’
অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষানুরাগী প্রমাণ দিয়ে ব্যবসায়িক নানা সুবিধা নিচ্ছে উল্লেখ করে মানস বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টারশিয়ারি শিক্ষা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছেন তারা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে পরোক্ষ সুবিধা নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসায়িক ভ্রমণ কিংবা অনুদানের সুবিধা নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক লাভ আদায় করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’
দায় আছে ইউজিসির
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন লাগামহীন খরচ এবং সর্বাত্মক ব্যবসায়ী মনোভাব রুখতে ইউজিসিকে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষক ও অধিকারকর্মীরা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যার সিংহভাগই রাজধানীতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে যা হয় তাকে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।’
তিনি বলেন, ‘দিন দিন এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক রকমের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী শেখাচ্ছে, তাদের কারিকুলাম কেমন, সেসব নিয়ে আলোচনা হয় না বললেই চলে। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে এদের সঠিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইউজিসির।’
বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসি বদ্ধ পরিকর জানিয়ে কমিশন সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করা ইউজিসির বড় লক্ষ্য। এর পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানেও ইউজিসি সোচ্চার বলে জানান তিনি।
১২০ দিন আগে
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সঙ্গে কাজ করবে সেভ দ্য চিলড্রেন
খেলার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি দেশব্যাপী প্রচলিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে।
এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে যে, লেগো ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রকল্প চ্যাম্পিয়নিং প্লে- এর সহায়তায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি দেশব্যাপী শিশুদের জন্য খেলার মাধ্যমে শেখার পদ্ধতি প্রচলনে ও সুষ্ঠু খেলার পরিবেশ তৈরিতে নেতৃত্ব দেবে।
বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে এই সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর শিক্ষা সেক্টরের পরিচালক আরতি বিনোদ অতিথিদের স্বাগত জানান এবং প্রকল্প পরিচালক শাহীন ইসলাম চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং এর মূল কাজগুলো শেয়ার করেন। চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রকল্প গাইবান্ধায় শিশুদের জন্য খেলার মাধ্যমে শেখার পদ্ধতি পরিচিত করার উদ্দেশে বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে ‘ম্যাজিক ব্যাগ’ নামে একটি ব্যাগ সরবরাহ করে থাকে। যার মধ্যে বিভিন্ন খেলার উপকরণ দেয়া হয় এবং সেগুলো দিয়ে খেলতে খেলতে শিশুর হাতেখড়ি হয়।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ‘সেনাবাহিনীর হামলা’য় সেভ দ্য চিলড্রেনের ২ কর্মী নিখোঁজ
এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ৭১টি লার্নিং সেন্টারের জন্য ‘ম্যাজিক ব্যাগ’ সরবরাহ করবে। সেভ দ্য চিলড্রেনের চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রজেক্ট বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কর্মকর্তাদের খেলার উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওরিয়েন্টেশনও প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক শিশু সাহিত্যিক আনজীর লিটন বলেন, ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রকল্পের ‘ম্যাজিক ব্যাগ’ আমরা বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রাক-প্রাথমিক সেন্টারে ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছি। শিশুর শৈশবকে সহজ ও সুন্দর করবে এটি। আমি আশা করছি এই যৌথ কাজের ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব লাকী ইনাম।
তিনি বলেন, ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রজেক্টের দেওয়া ম্যাজিক ব্যাগের সহায়তায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর শিশুরা খেলার মাধ্যমে শিখতে পেরে আনন্দিত হবে। আমি আশা করছি যে, ভবিষ্যতে সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি যৌথভাবে আরও গঠনমূলক কাজ করবে।’
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সঙ্গে আরও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক, রেহনুমা আখতার এবং চ্যাম্পিয়নিং প্লে প্রকল্পের কর্মকর্তা, জেনেল গোমেজ।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ফ্রি স্বাস্থ্য পরামর্শ সেবা পাইলটিং করছে সেভ দ্য চিলড্রেন
৯৩৩ দিন আগে