ক্যাফে
ক্যাফে: কোক স্টুডিও বাংলায় হৃদয়ের সুর আর পুরনো দিনের স্মৃতির এক দারুণ ফিউশন
কিছু গান শুধু শোনা হয়, আর কিছু গান আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে—যেন একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। ঠিক তেমনি ‘ক্যাফে’ গানটি শুনলে মনে হবে বাংলা ও ল্যাটিন সুরের মিশ্রণ ঘটেছে, কারণ এটি একটি আধুনিক বাংলা গান যা ল্যাটিন সঙ্গীতের প্রভাবকে ধারণ করে।
শায়ান চৌধুরী অর্ণবের এই নতুন কাজ, ‘ক্যাফে’ ঠিক সেইরকম একটি গান ও আধুনিক বাংলা সংগীতের অংশ। যেখানে ঐতিহ্যবাহী বাংলা গানের সঙ্গে ল্যাটিন সুরের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।
এছাড়া একটা উষ্ণ, আবছা আলোয় ভরা ঘরকে যদি শব্দ দিয়ে ধরে রাখা যেত, সেটা এই গানটাই হতো। এটি মূলত একটি সংগীত শৈলী, যা দুইটি ভিন্ন ধারার সুর ও তালকে একত্রিত করে।
তাছাড়াও এই গানটি আমদের মধ্যে নতুন ও আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দেয় যে— জীবনের "Real Magic" আসলে দুটো মনের নীরবতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ঢাবিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ক্যাম্পাস স্ট্যান্ডআপ কমেডি শো ‘হাসির আড্ডা'
গানটিতে বাংলা গানের স্বাভাবিক ঢঙ এবং ল্যাটিন সঙ্গীতের ছন্দ, যেমন সালসা বা অন্যান্য ল্যাটিন নাচের গানের সুরের প্রভাব থাকে। বিশেষ করে ঐতিহ্য আর নতুনত্বের দারুণ বোঝাপড়া।
এই গানের শেকড়টা মজবুত দুটো জায়গায়— একটা হলো গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের (মহীনের ঘোড়াগুলি) সেই প্রিয় নস্টালজিক সুর "আমার প্রিয় ক্যাফে", আর অন্যটা হলো এডি পালমিয়েরির ক্লাসিক "Café"-এর দারুণ ছন্দ। এছাড়া প্রযোজক শুভেন্দু দাশ শুভ খুব দক্ষতার সঙ্গে দুটো ভিন্ন ধারাকে এমনভাবে এক করে দিয়েছেন যে সুরটা শুনতে একইসঙ্গে চেনা আর দারুণ ফ্রেশ লাগে।
এদিকে তানযীর তুহিনের কণ্ঠস্বরে বাংলার সেই চেনা "নস্টালজিয়া" দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ক্যাফে যেন ছোট ছোট ব্যক্তিগত গল্পের একটি জীবন্ত বই। এই গানের ভেতরের কথাগুলো তার আন্তরিক উষ্ণতায় যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
গাবুর পারকাশন যেন সেই পুরনো ছন্দের ধারক, একটা জটিল অথচ মসৃণ রিদম তৈরি করেছে। আর লিভিয়া মাত্তোসের অ্যাকর্ডিয়ন ইউরোপীয় ফোক-জ্যাজের একটা জাদুকরী, মিষ্টি ছোঁয়া দিয়েছে। যখন ব্রাস সেকশন (ফ্র্যান্সিস আর অপূর্ব) বাজনা শুরু করে, তখন শান্ত গানটা যেন উড়তে শুরু করে, ভেতরের সেই নীরব ভাবনাগুলো একটা প্রাণবন্ত নাচে বদলে যায়।
আরো পড়ুন: ‘আমিই নজরুল সম্মাননা’ পেলেন খিলখিল কাজী, ইয়াসমিন মুশতারী ও অনুপম হায়াৎ
‘ক্যাফে’কে একটা ফিউশন বলার চেয়ে আগে একটা অনুভূতি বলাই ভালো। গানের নোটে বলা সেই শান্ত শক্তিকে এটা ধরে রেখেছে: শেষ বিদায়, প্রথম দেখা, বা দুটো মনের মাঝে একটুখানি চুপ থাকা। এই দারুণ মিউজিক পিসটা প্রমাণ করে যে কিছু আবেগ—যেমন নিখুঁত কফি বা নীরব মুহূর্ত—ভাষা বা দেশের সীমানা বোঝে না।
এই একটা গান তৈরি করতে যতজন যুক্ত ছিলেন, সবার জন্যেই এটা একটা দারুণ অর্জন। মিথুন চক্রবর্তী, প্রদ্যুৎ চ্যাটার্জিয়ার মতো শিল্পীরা তো আছেনই, সঙ্গে আছেন ফয়জান আর আহমদ (বুনো) এবং সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের নেতৃত্বে থাকা বিশাল ক্রিয়েটিভ আর সাউন্ড টিম।
তারা শুধু একটা গান বানাননি; তারা এমন একটা জায়গার নীরবতা ধরে রেখেছেন যেখানে সবার ব্যক্তিগত গল্পের টুকরোগুলো মিশে থাকে।
আরো পড়ুন: ধ্রুপদী সঙ্গীতে মুগ্ধতা ছড়াল সিদ্ধেশ্বরী ’৬৯ ব্যাচের সঙ্গীতানুষ্ঠান
৩৯ দিন আগে
গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা
গাজা উপত্যকায় সাগরতীরের একটি জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ৫০০ পাউন্ড ওজনের একটি বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
এ ধরনের শক্তিশালী ও নির্বিচার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহারে একদিকে ব্যাপক বিস্ফোরণ তৈরি করতে পারে, অন্যদিকে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ধাতব টুকরা (শ্র্যাপনেল) ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের বরাতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, নারী-শিশু ও বয়স্কহ বহু অরক্ষিত বেসামরিক মানুষের উপস্থিতি জেনেও এ ধরনের গোলাবারুদের ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই বেআইনি ও এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
আল-বাকা নামের ওই ক্যাফের ধ্বংসস্তূপ থেকে বোমাটির খণ্ডাংশের ছবি তুলেছে গার্ডিয়ান। গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ বোমা। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে ৫০০ পাউন্ড ওজনের এই বোমাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিস্ফোরণে যে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে, সেটিই বলে দিচ্ছে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ এর মতো শক্তিশালী বোমা।
কাফেতে হামলার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলিক সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘হামলার আগে বিমানের নজরদারির মাধ্যমে বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: ত্রাণকেন্দ্র থেকে ক্যাফে, কোথাও নেই ফিলিস্তিনিদের প্রাণের নিরাপত্তা
চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, ‘ওই হামলায় ২৪ থেকে ৩৬ জনের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। নিহতদের মধ্যে একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, একজন শিল্পী, ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহিনী ও চার বছরের একটি শিশু রয়েছে।’
জেনেভা কনভেনশনভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, ‘বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ঘটতে পারে বা সামরিক লক্ষ্যের চেয়েও অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো সামরিক হামলা করা নিষিদ্ধ।’
চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পারিবারিকভাবে পরিচালিত আল-বাকা ক্যাফে। বিনোদনের জন্য তরুণ ও গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে এটির বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। কোমল পানীয়, চা ও বিস্কুটের জন্য লোকজন এই ক্যাফেতে ভিড় করতেন।
দোতলা ক্যাফের উপরের ডেক ছিল খোলা। নিচের তলায় সৈকত কিংবা সাগরের দিকে বড় জানালা ছিল। যে কারণে এটির ভেতরের চলাচল উপর থেকেই সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্যারি সিম্পসন বলেন, ‘কাদের নিশানা করা করা হামলা করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তা সুস্পষ্ট করে বলেনি। কিন্তু তারা বলছে যে বেসামরিক হতাহত কমিয়ে আনতে আকাশ থেকে নজরদারি করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা জানত যে ওই ক্যাফেটিতে প্রচুর গ্রাহক ছিল।’
আরও পড়ুন: জাপানি দ্বীপপুঞ্জে দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প
‘আইডিএফ অবশ্য জানত যে, আকাশ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে এ ধরনের বড় বোমা হামলা চালালে বহু বেসামরিক লোকজন হতাহত হবেন। কাজেই এমন একটি ভিড়ে ঠাসা ক্যাফেতে এই হামলা ছিল অতিরিক্ত মাত্রায় ও নির্বিচার। যুদ্ধাপরাধ হিসেবে এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।’
১৫৪ দিন আগে
ত্রাণকেন্দ্র থেকে ক্যাফে, কোথাও নেই ফিলিস্তিনিদের প্রাণের নিরাপত্তা
গাজা উপত্যকার প্রতিটি স্থানই ফিলিস্থিনিদের জন্য মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। ত্রাণকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি কোনো সতর্কতা ছাড়া এবার ক্যাফেতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩০ জুন) ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা ও গুলিতে কমপক্ষে ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফে আল-বাকাতে ৩০ জন এবং খাবারের সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জাওয়াইদা শহরের কাছে একটি ভবনে চালানো আরেক হামলায় ছয়জন নিহত হন বলে জানিয়েছে আল-আকসা হাসপাতাল।
এ ছাড়া, গাজা শহরের একটি সড়কে আরও দুটি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হন বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সোমবারের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। এরমধ্যে আল-বাকা ক্যাফেতে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। তাছাড়া, ত্রাণকেন্দ্র ও হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ক্যাফেতে হামলা
আল-বাকা ক্যাফেটি ছিল যুদ্ধ শুরুর পর গত ২০ মাস ধরে খোলা থাকা গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি। এটি ছিল ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার স্থান হিসেবে মানুষের একটি ভরসার জায়গা।
পড়ুন: রাতভর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭২
আল জাজিরা জানায়, ক্যাফেতে নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব ছাড়াও নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। সেখানে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন তারা।
এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন, ‘আমরা ক্যাফেতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ খুঁজে পেয়েছি। এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সম্পৃক্ততা ছিল না। এটি মানুষে ভরা ছিল, শিশুরাও ছিল একটি জন্মদিন পালনের জন্য।’
এপিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আলি আবু আতেইলা জানান, গাজা সিটির আল-বাকা ক্যাফে লক্ষ্য করে যখন বিমান হামলা চালানো হয়, তখন তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
আলি আবু বলেন, ‘কোনো সতর্কতা ছাড়াই, হঠাৎ একটি যুদ্ধবিমান এসে জায়গাটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়, ভূমিকম্পের মতো কাঁপিয়ে তোলে পুরো এলাকাটি।’
বিস্ফোরণে ক্যাফেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং স্থানে একটি বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়।
কোনো সতর্কতা ছাড়াই হামলা
গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, ক্যাফেতে হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। এই এলাকা অনেক বিপর্যস্ত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখানকার তাঁবুগুলোর মধ্যে ভীষণ গরম থেকে কিছুটা মুক্তির সুযোগ ছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতার কারণে রক্তের দাগ এখনো মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক লাশ ও শরীরের অংশ খণ্ড খণ্ড অবস্থায় এখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার গাজা শহরের জয়তুন এলাকায় একটি খাদ্য বিতরণ গুদামেও হামলা চালানো হয়। সেখানে খাবার নিতে আসা অন্তত ১৩ জন নিহত হন। এ ছাড়াও গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতেন।
সেখানে হামলার আগে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে এলাকাটি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল বলে জানান হামাদা আবু জারাদেহ নামে এক ব্যক্তি। তিনি হামলার আগে পালাতে সক্ষম হন।
হামদা বলেন, ‘আমরা জানি না কী করব, কোথায় যাব? ৬৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমরা পুরো পৃথিবী থেকে বিমুখ। প্রতিদিন মৃত্যুই আমাদের একমাত্র সঙ্গী।’
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে হামলা
এপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় ১১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসন: যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খাবারের খোঁজে বের হওয়া আরও ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ তথ্য জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফান্ডের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্র থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধদের লাশ তাদের কাছে এসেছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিতর্কিত ও বিশৃঙ্খল ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের কারণে গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতাল আরও জানায়, রাফাহ শহরেও ওই ফান্ডের একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছেও এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নেতজারিম করিডরের কাছে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় আরও একজন নিহত হয়েছেন।
মনজের হিশাম ইসমাইল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জিএইচএফের খান ইউনিসের কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে জনতার ওপর গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ মাহমুদ মোকাইমার জানান, তিনি অন্যদের সঙ্গে হাঁটার সময় দেখতে পান ট্যাংক ও অন্যান্য যানবাহনে করে সেনারা দ্রুত ছুটে আসছে। তারা প্রথমে সতর্কমূলক গুলি ছুড়লেও পরে সরাসরি জনতার ওপর গুলি চালায়।
ইউসুফ বলেন, ‘তারা আমাদের লক্ষ্য করে এলোমেলোভাবে গুলি চালায়।’
তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন এবং তাকে উদ্ধার করতে আসা এক ব্যক্তিও গুলিবিদ্ধ হন। ইউসুফ আরও বলেন, ‘সেনারা ছয়জনকে ধরে নিয়ে গেছে, তার মধ্যে তিনটি শিশু। আমরা জানি না তারা এখনও বেঁচে আছে কি না।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব হামলার বিষয়ে তথ্য পর্যালোচনা করছে।
এর আগে তারা দাবি করে, কেউ সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করলে বা সেনাদের খুব কাছাকাছি চলে এলে তারা সতর্কতামূলক গুলি চালায়—যেটি ত্রাণ সংগ্রহের সময়ও হতে পারে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় সীমিত ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এসব কেন্দ্রে হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সোমবার স্বীকার করেছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হয়েছেন। সেনাদের ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আলোকে’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
এর আগে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে দায়িত্ব পালনরত সেনাদের জনতার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালাতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সেনার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক সময় যারা কোনো হুমকির কারণ ছিল না, তাদেরও লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী গুলি চালানো হয়েছে।
হাসপাতালেও হামলা
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরে অবস্থিত আল-আকসা হাসপাতালের আঙিনাতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে হাজারো পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ও আল-জাজিরার যাচাই করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর হাসপাতালজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, আশ্রয় নেওয়া মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকে, তাঁবুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম হাসপাতালের কাছে থেকে বলেন, ‘এই বিশাল বিস্ফোরণের আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। হামলার স্থান আমাদের সম্প্রচার পয়েন্ট থেকে মাত্র ১০ মিটার দূরে।’
এটি প্রথমবার নয়; ইসরায়েলি বাহিনী এ হাসপাতালের আঙিনায় কমপক্ষে ১০ বার হামলা চালিয়েছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানান তিনি।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের দেয়ালের ভেতরে বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে বোমা ফেলেছে, এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। তাছাড়া, রোগীদের জীবন মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ মাসে ইসরায়েল বারবার গাজার অসংখ্য হাসপাতালকে টার্গেট করেছে। ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্যখাতকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
আবারো জমি দখল ও উচ্ছেদের আশঙ্কা
ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে বাড়িঘর ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে, যা নতুন করে স্থল অভিযান শুরুর শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
একই সঙ্গে উত্তর গাজার বড় বড় এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের নতুন করে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল, যেখানে তারা এর আগেও অভিযান চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা, ৫ সন্তানের বাবা সালাহ (বয়স ৬০) বলেন, ‘বিস্ফোরণ থেমে নেই; ওরা স্কুল, ঘরবাড়ি সব বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে। খবরের কাগজে শুনি যুদ্ধবিরতি নাকি আসছে, অথচ এখানে আমরা কেবল মৃত্যু ও বিস্ফোরণই দেখতে পাচ্ছি।’
গাজা শহরের জয়তুন এলাকার পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি ট্যাংক এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করেছে। একই সময়ে বিমান হামলায় চারটি স্কুল ধ্বংস করা হয়েছে। এর আগে ওই স্কুলগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জয়তুনে কমপক্ষে ১০ জন এবং গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আরও অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন অথবা জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তুতি
এদিকে, এই হামলাগুলোর মধ্যেই নতুন যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী কাতার নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় ফেরার ব্যাপারে ‘গভীর আগ্রহ’ রয়েছে, তবে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে।
দোহায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, ‘মূল বাধা হলো, দুপক্ষই আলোচনার টেবিলে ফিরছে না। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ফলে যে গতি তৈরি হয়েছে, তা এখন কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি জানান, দুয়েকদিনের মধ্যেই এই আলোচনা শুরু হবে এমনটা তারা আশা করছেন না। তবে আলোচনায় ফেরার উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আশা প্রকাশ করেন মাজেদ আল আনসারি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আলোচনায় ইরান ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্ভাবনাগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) ইসরায়েলি সেনাপ্রধান জানান, বর্তমান স্থল অভিযান প্রায় লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
এরপর, রবিবার (২৯ জুন) নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে থাকা যেসব বন্দি এখনও জীবিত বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে—তাদের উদ্ধার করতে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
ফিলিস্তিনি ও মিসরীয় সূত্রে জানা গেছে, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে, তবে নতুন যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
এদিকে, হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, গত চার সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো খবর আসেনি। তারা একটি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা গাজার জনগণকে রক্ষা করবে এবং মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্যও তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
১৫৬ দিন আগে
ঢাকার জনপ্রিয় ১০টি বুক ও স্টাডি ক্যাফে: বইপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য
বইয়ের সঙ্গে কফি বা অন্যান্য কোমল পানীয় পরিবেশন মূলত ইউরোপ-আমেরিকার ধারা। কিন্তু প্রিয় বই হাতে নিয়ে আয়েশ করে চা বা কফিতে চুমুক দেয়াটা যে কোনও ব্যস্ত-সমস্ত শহরবাসীরই কাম্য। কেননা শুধু জ্ঞানার্জনের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরিতে নয়, এরকম স্থান যান্ত্রিক জীবনে বিস্তর প্রশান্তির জন্যও সহায়ক। স্বল্প পরিসরে হলেও এই ধরণের অভিজ্ঞতা বিগত কয়েক দশক ধরে পেয়ে আসছেন বাংলাদেশের বইপ্রেমীরা। চলুন, ঢাকা শহরে অবস্থিত ১০টি চমৎকার বুক ও স্টাডি ক্যাফের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
বইপোকাদের জন্য ঢাকার সেরা ১০টি বুক ও স্টাডি ক্যাফে
পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র
দেশ ও বিদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ বইয়ের ভান্ডার হিসেবে দেশের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮৭ সালের ১২ জুলাই। ১৯৯৯ সালে পাঠক সমাবেশ রিডার্স ক্লাব কর্মসূচির ফলে সংগঠনটির সঙ্গে পাঠকদের সখ্যতা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে আরও যোগ হয়েছে শিশু কর্নার। বসে বই পড়ার জায়গা কম থাকলেও এর দেশি-বিদেশি অরিজিনাল প্রিন্টের সংগ্রহ কাছে টানে বইপ্রেমীদের।
শাহবাগ মোড়ের জাতীয় জাদুঘর থেকে কাঁটাবনের দিকে কিছুটা এগুলেই আজিজ সুপার মার্কেটের বিপরীত পার্শ্বে এর অবস্থান। এছাড়া কাঁটাবনের এলিফেন্ট রোডের ২৭৮/৩ ঠিকানায়ও একটি শাখা রয়েছে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের। প্রায় ৬ হাজার বর্গ ফুটের এই জায়গায় লাইব্রেরি ছাড়াও ঠায় পেয়েছে সাইলেন্ট রিডিং রুম এবং ক্যাফে। প্রতিদিন এর কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হয়।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
দ্যা রিডিং ক্যাফে
২০১৪ সাল থেকে চালু হওয়া দ্যা রিডিং ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতা আতিকুর রহমান। রাজধানী জুড়ে ক্যাফেটির মোট ৪টি শাখা; গুলশান, বনানী, উত্তরা, এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি। সবগুলোতেই প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১২০ জন অতিথির জন্য আয়োজন চলে।
বিদেশী ফিকশনধর্মী বইগুলোর আধিক্য থাকায় তরুণদের আনাগোণাটাই বেশি হয় এখানে। তবে সেই সাথে বাচ্চাদের বইও রয়েছে। এমনকি শিশুদের খেলা করার জন্য আলাদা একটি জোনও রয়েছে।
পছন্দের বইটি পড়ার পাশাপাশি ব্যবস্থা রয়েছে চা-কফি খাওয়ার।
দ্যা রিডিং ক্যাফে পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত হয় সকাল ১০টায়, আর বন্ধ হয়ে যায় রাত ৯টার দিকে।
আরও পড়ুন: কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
নার্ডি বিন কফি হাউজ
ফারিয়া মাহজাবিন এবং মাসরু হাসান কমল ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু করেন এই কফি শপটি।
গুটি কয়েক বইয়ের তাকগুলোকে ইউরোপীয় কায়দায় সামঞ্জস্য করা হয়েছে পুরো শপের আভ্যন্তরীণ নকশার সঙ্গে।
আরামপ্রদ বসার জায়গাগুলোতে কফি আর বই নিয়ে নিমেষেই একটি অলস বিকেল কাটিয়ে দেয়া যায়। এখানকার বইয়ের বিভাগটি ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়াদের জন্য উৎকৃষ্ট। তবে সেগুলো শুধু এই ক্যাফেতে পড়ার জন্য, কেনার উপায় নেই।
কফি হাউজটির অবস্থান ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের আহমেদ কাজী টাওয়ার নামের ৩৫ নম্বর বাড়িটির আন্ডারগ্রাউন্ডে। এখানে আগত টিনেজ ও তরুণ-তরুণীদের মূল আকর্ষণ থাকে বাহারি পদের কফি এবং স্ন্যাক্স। প্রতি চুমুকের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় আড্ডা, আর মাঝে মাঝে লাইভ মিউজিক। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে নার্ডি বিন কফি হাউজ।
আরও পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
বেঙ্গল বই
বইয়ের মাঝে ডুব; এই স্লোগান নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বেঙ্গল বইয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর। দেশ-বিদেশের বইয়ের পাশাপাশি এখানে রয়েছে পুরনো মূল্যবান বই ও ম্যাগাজিন। নিরিবিলিতে বসে বই পড়ার আধুনিক ক্যাফেতে রয়েছে চা-কফি ও ফ্রেশ জুস খাওয়ার ব্যবস্থা। আছে আকাশ কুসুম নামের শিশু কর্ণার, যেখানে শিশুরা আঁকাআঁকি, পড়াশোনা ও খেলাধুলা করতে পারে।
বিভিন্ন সময়ে এর আয়োজনগুলোর মধ্যে থাকে কবিতা পাঠের আসর, পাঠচক্র, প্রকাশনা উৎসব, নতুন লেখক ও তাদের লেখা নিয়ে সভা, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।
বেঙ্গল বইয়ের বর্তমান অবস্থান ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাসা। শুক্র ও শনিবার যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু হয় সকাল ৯টায়, আর শেষ হয় রাত ৯টায়। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কাজ চলে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: টাকা কীভাবে এলো? মানব সভ্যতায় টাকার ইতিহাস
বাতিঘর
২০০৫-এর ১৭ জুন চট্টগ্রামের চেরাগি মোড়ে ১০০ বর্গফুটের ছোট্ট দোকান থেকে বাতিঘরের পথচলা। প্রতিষ্ঠাতা দীপঙ্কর দাশ। এখন চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট মিলিয়ে বাতিঘরের মোট শাখা ৬টি। বাতিঘরের সংগ্রহে রয়েছে আড়াই হাজার প্রকাশনা সংস্থার প্রায় লক্ষাধিক বই।
দ্বিতীয় শাখা হিসেবে ঢাকার বাংলা মোটরের আউটলেটটি চালু হয়েছিল অনেক পরে; ২০১৭ সালে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের সাত তলায় এই বইঘরটি বানানো হয়েছে লালবাগ কেল্লার আদলে। বাংলা- ইংরেজি দুই ভাষার বইগুলো পাঠকরা ভেতরে বসেই পড়তে পারেন। ছেলে-বুড়ো সবার রুচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সমৃদ্ধ করা হয়েছে বইয়ের সংগ্রহ। এমনকি প্রত্যেকটি শাখাতেই রয়েছে আলাদা শিশু-কিশোর কর্নার। সরকারি ছুটির দিনসহ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে বাতিঘর।
৬১৪ দিন আগে
ইউক্রেনে ক্যাফেতে রুশ হামলায় ৫১ জন নিহত
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গ্রাম হ্রোজার একটি ক্যাফেতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রুশ রকেট হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং কিয়েভের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, কয়েক মাসের মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক হামলার মধ্যে বৃহস্পতিবারেরটি অন্যতম।
উদ্ধারকারীরা হ্রোজা গ্রামের একমাত্র ক্যাফের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন আঘাত হানে তখন শিশুসহ কমপক্ষে ৬০ জন ক্যাফেটিতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, জেলেনস্কি ইউক্রেনের মিত্রদের সমর্থন জোগাড় করতে স্পেনে প্রায় ৫০ জন ইউরোপীয় নেতার উপস্থিতিতে ‘গ্রানাডা সম্মেলন’-এ যোগ দিয়েছেন।
সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি রাশিয়ার এই ধরনের হামলাকে ‘নৃশংস রুশ অপরাধ’ এবং ‘সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড’ বলে নিন্দা করেছেন।
কিয়েভ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গ্রামটিতে একটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এটি প্রমাণ করে, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইউক্রেনের সাহসী জনগণকে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে, তাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে সহায়তা করার জন্য সবকিছু করতে পারে।’
খারকিভের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম হ্রোজায় যুদ্ধের আগে প্রায় ৫০০ জন বাসিন্দা ছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে, এরপর ইউক্রেন তার এই অঞ্চলটি পুনরুদ্ধার করে।
এটি রাশিয়ান সামরিক হামলার মূল লক্ষ্য কুপিয়ানস্ক থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) পশ্চিমে অবস্থিত।
জেলেনস্কি মঙ্গলবার সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করতে এবং পশ্চিমের সরবরাহ করা সরঞ্জাম পরিদর্শন করতে এই এলাকা পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দিমিত্রো নেচভোলট দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, তিনি তার ৬০ বছর বয়সী বাবাকে খুঁজছেন।
নেচভোলট জানান, তার বাবার লাল গাড়িটি তখনও ক্যাফের কাছাকাছি পার্ক করা ছিল। তার বাবা জীবিত নাকি মৃত তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষায় আছেন।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি স্পেনের গ্রানাডায় ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা সমর্থন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ান সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭
জেলেনস্কি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়া শুধু একটি কারণে এইরকম সন্ত্রাসী হামলা করছে, তা হলো তার গণহত্যামূলক আগ্রাসনকে পুরো বিশ্বের জন্য নতুন আদর্শে পরিণত করা।’
তিনি আবও বলেন, ‘এখন আমরা ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। বিশেষ করে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা, আমাদের সৈন্যদের শক্তিশালী করা, আমাদের দেশকে সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করা। আমরা সন্ত্রাসীদের জবাব দেবো।’
সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, জার্মানি ইউক্রেনকে আরেকটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ করবে।
তিনি আশঙ্কা করেন, রাশিয়া আবার শীতের মাসগুলোতে ইউক্রেন জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শহরগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।
গত শীতকালে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যার ফলে ইউক্রেনজুড়ে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়।
ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উচ্চ মাত্রার স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা দেখিয়েছে। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া আবারও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর হামলা চালাবে বলে উদ্বেগ বাড়ছে।
জেলেনস্কি উল্লেখ করেছেন, গ্রানাডা শীর্ষ সম্মেলনে কৃষ্ণ সাগরে ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য যৌথ দায়িত্ব’ এর উপরও আলোকপাত করা হবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে বেসামরিক শিপিং লক্ষ্যবস্তুতে সামুদ্রিক মাইন স্থাপন করতে পারে এবং তারা ইউক্রেনের উপর দোষারোপ করতে পারে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত
এর আগে বৃহস্পতিবার ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ইরানের তৈরি ২৯টি ড্রোনের মধ্যে ২৪টি জব্দ করেছে। রাশিয়া যেগুলো ওডেসা, মাইকোলাইভ ও কিরোভোহরাদ অঞ্চলে চালাচ্ছে।
কিরোভোহরাদ আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান আন্দ্রি রায়কোভিচ বলেছেন, এই অঞ্চলে একটি অবকাঠামোতে আঘাত করা হয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্য জরুরি পরিষেবাগুলো মোতায়েন করা হয়েছিল, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, গত দিন অন্যান্য রাশিয়ান হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনে দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এবং পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের ক্রাসনহোরিভকা শহরে হামলায় একজন মারা যায়। এসময় কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন।
আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিনের মতে, খেরসন অঞ্চলের বেরিসলাভ শহরের একটি হাসপাতাল রুশ হামলায় ধ্বংস হয়েছে এবং দুই চিকিৎসাকর্মী আহত হয়েছে।
ইউক্রেনও সীমান্তজুড়ে নিয়মিত ড্রোন হামলা করে রাশিয়াকে বিপর্যস্ত করেছে।
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে গভর্নর রোমান স্টারোভয়েট বলেছেন, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ফলে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্ত শহর রিলস্কে কামান ছুঁড়েছে, এতে একজন বাসিন্দা আহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৭৯০ দিন আগে